সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজের কর্নেল সমগ্র প্রথম খন্ড এর অংশ -২৫

দীপ্তি তখনই তার বাবার অফিসের ফোন নাম্বার বলল। কর্নেল বললেন, আমি আপনার বাবার অফিসে যেতে চাই। অফিসের চাবি দরকার হবে।

কর্নেল সমগ্র ১ম খণ্ড 

দীপ্তি তার হ্যান্ডব্যাগ খুলে রিঙে ঝােলানাে একটা চাবি বের করল। চাবিটা কর্নেলকে দিয়ে সে বলল, বাবা চাবিটা আপনাকে দিতে বলেছেন। কিন্তু সে কুণ্ঠার সঙ্গে আস্তে বলল ফের, আমাকে আপনার সঙ্গে যেতে নিষেধ করেছেন। চাবিটা আপনার কাছে থাক। পরে আমি এসে নিয়ে যাব’খন। | ‘অফিসের ঠিকানা চাই যে। কর্নেল টেবিল থেকে ছােট্ট একটা প্যাড আর ডটপেন দিলেন। দীপ্তি ঠিকানা লিখতে ব্যস্ত হলাে। কর্নেল বললেন, আপনাদের বাড়ির ঠিকানা এবং ফোন নাম্বারও লিখুন। দরকার হলে আপনার বাবার সঙ্গে কথা বলব। 

দীপ্তি প্যাড এবং কলম কর্নেলকে ফেরত দিয়ে বলল, আমাদের বাড়ির ফোনটা ১, অনেকদিন থেকে ডেড। একটা কথা কর্নেলসায়েব। বাবা তাে ভীষণ ভীতু মানুষ, 

তাই বলছি, বাবার সঙ্গে যদি দেখা করার দরকার হয়, বরং প্রণবকাকুর বাড়িতে অ্যারেঞ্জ করা যায়। প্রণবকাকুর ঠিকানা আমি জানি না। আপনি হয় তাে জানেন? 

নাহ। কর্নেল প্যাড থেকে ঠিকানা লেখা পাতাটা ছিড়ে নিলেন। আমার সঙ্গে ভদ্রলােকের বহুবছর আগে আলাপ হয়েছিল। উনি যে আমার কথা মনে রেখেছেন, এতেই আমি খুশি। আপনি ঠিকানা যােগাড় করে আমাকে জানিয়ে দেবেন।দীপ্তি রাহা চলে যাওয়ার পর বললাম, ‘ডিস্কোর ফোন নাম্বারের সঙ্গে মিলল তাে?

কর্নেল সমগ্র প্রথম খন্ড এর অংশ -২৫

‘মিলবে বৈকি। কর্নেল মিটিমিটি হেসে বললেন। তবে মনে হচ্ছে, ডিস্কো আর ওই ফোন ব্যবহার করছে না কিংবা করবে না। 

‘কেন? 

কর্নেল আমার প্রশ্নের জবাব না দিয়ে টেবিলের ড্রয়ার থেকে সেই চিরকুট দুটো বের করলেন। তারপর পাশের ঘরে চলে গেলেন। আলমারি খােলা ও বন্ধ করার আবছা শব্দ হলাে। কর্নেল ফিরে এসে বললেন, তুমি ঠিকই ধরেছ। গােপেনবাবুর পােড়াে অফিসে ফাইলের তলায় যে ড্যাগারটা আছে, ওটা দিয়েই চন্দ্রিকাকে খুন করা হয়েছিল।  ব্যস্তভাবে বললাম, এখনই ওটা পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া উচিত। বলা যায় 

, ইতিমধ্যে ওটা সরিয়ে ফেলা হয়েছে কি না? 

হয়নি। তুমি নিশ্চিন্ত থাকতে পারাে। 

কর্নেল ফোনের কাছে গেলেন। ডায়াল করে কার সঙ্গে চাপা স্বরে কী সব কথাবার্তা বলার পর ফোন রেখে চুরুট ধরলেন। বললাম, রহস্য কিন্তু আরও জট পাকিয়ে গেল। কারণ ডিস্কো যার হাতে চন্দ্রিকার ফ্ল্যাটের চাবি পাঠিয়েছিল, সেই স্বপন দাশকে গুলি মেরে চাবিটা হাতিয়ে অন্য কেউ চন্দ্রিকার ঘরে ঢুকেছে এবং তাকে খুন করেছে। কিন্তু মার্ডারউইপন ডিস্কো পেল কী করে? চন্দ্রিকা খুন হওয়ার পর নিশ্চয় সে-ও ওই ফ্ল্যাটে গিয়েছিল। নাহ! কিছু বােঝা যাচ্ছে না।

কর্নেল সমগ্র প্রথম খন্ড এর অংশ -২৫

 ‘কী বােঝা যাচ্ছে না? ‘ডিস্কো বা তার ডামি বলুন, কী চেলা বলুন—গােপেনবাবুর অফিসের ফোন ব্যবহার করেছে। কাজেই গােপেনবাবুর অফিস ডিস্কোর একটা ডেরা। সেখানে মার্ডারউইপন লুকিয়ে রাখল কে ? কেনই বা রাখল? যদি ডিস্কো ওটা চন্দ্রিকার ঘরে পেয়ে থাকে, সে তার ওই ডেরায় রাখতে গেল কেন?  ‘একটু অপেক্ষা করাে। ডিটেকটিভ ইন্সপেক্টর অশােক গুপ্ত আসছেন সদলবলে। তাঁদের নিয়েই আমরা মার্ডারউইপন উদ্ধার করতে যাব। আশা করি, তারপর ডিস্কোর এই খেলার উদ্দেশ্য বােঝা যাবে’.. 

ধর্মতলা স্ট্রিটে একটা গলির পাশে বিশাল পুরনাে বাড়িটা হঠাৎ চোখে পড়লে দিনদুপুরে কেমন গা ছমছম করে। গলি দিয়ে বাড়িতে ঢুকতে হয়। সিঁড়ির পাশে অগুনতি লেটার বক্স। অনেক কোম্পানি এবং লােকের নাম লেখা প্ল্যাস্টিক বা কাঠের ফলকও আছে। কোনও আলাের বালাই নেই। পুলিশের গাড়ি খানিকটা দূরে একটা চার্চের কাছে উল্টোদিকে পার্ক করা হয়েছিল। লক্ষ্য করলাম, সাদা পােশাকের পুলিশ একজন-দুজন করে বেরিয়ে আনাচে-কানাচে এসে দাঁড়াচ্ছে। 

অশােকবাবু, কর্নেল এবং আমি তিনতলায় পৌঁছে করিডরে কাউকে দেখতে পেলাম না। করিডরে ঘুরে গিয়ে বাড়ির কোণার দিকে শেষ হয়েছে। একটা ঘরের দরজায় রেঙা এক টুকরাে ফলকে লেখা আছে ‘পরমা ফিল্ম ডিস্ট্রিবিউটার্স লিঃ। কর্নেল তালা খুললেন। ঘরের ভেতর থেকে ভ্যাপসা গন্ধ বেরিয়ে এল। কর্নেল ঘরে ঢুকে সুইচ টিপে আলাে জ্বেলে দিলেন। দক্ষিণের একটা জানালা খুলে দিলেন। 

কর্নেল সমগ্র প্রথম খন্ড এর অংশ -২৫

ঘরটা বেশ বড়। কয়েকটা টেবিল এবং অনেকগুলাে চেয়ারে সাজানাে অফিস। টেবিলগুলাে খালি। একপাশে একটা বড় সেক্রেটারিয়েট টেবিল এবং চারদিকে গদিআটা চেয়ার সাজানাে আছে দেখে বােঝা গেল, এটাই গােপেনবাবুর আড্ডাস্থল। টেবিলে ফোনও আছে। কর্নেল প্রথমে ফোন তুলে পরীক্ষা করে বললেন, ‘ফোনটা চালু আছে। 

অশােকবাবু র্যাকের কাছে গিয়ে বললেন, ফাইলের পাহাড় দেখছি!সব নামাতে হলে আমার লােকজনকে ডাকতে হবে। 

কর্নেল এগিয়ে গিয়ে বললেন, নাহ্। চোখে পড়ার মতাে জায়গায় ড্যাগারটা রাখা হয়েছে। 

‘কৈ? কোথায় ? 

কর্নেল একটা থাকের মাঝখান থেকে কাগজের একটা মােড়ক টেনে বের করে বলেন, এই নিন। খুলে দেখুন। 

কর্নেল সমগ্র প্রথম খন্ড এর অংশ -২৫

অশােকবাবু মােডকটা টেবিলে রাখলেন। তারপর সাবধানে খুললেন। রক্তের মালচে ছােপমাখা একটা ছােরা দেখা গেল। আমি আঁতকে উঠেছিলাম ছােরাটা ‘দেখে। বললাম, ‘ছােরার বাঁটে খুনীর আঙুলের ছাপ থাকতে পারে। 

কর্নেল হাসলেন। পুলিশের গােয়েন্দারা সেটা জানেন। তবে তুমি একটু ভুল রহ জয়ন্ত। খুনীর আঙুলের ছাপ সম্ভবত ওতে পাওয়া যাবে না। ডিস্কো বা তার অমি কিংবা তার চেলাদের আঙুলের ছাপও পাওয়ার নিশ্চয়তা নেই। কারণ ছােরার ঘটে গােপেনবাবু হাত দিয়ে থাকতে পারেন। 

অশােকবাবু বললেন, যাই হােক। ফরেনসিক ল্যাবে এটা পাঠাতেই হবে। 

অবশ্যই পাঠাবেন। বলে কর্নেল আঙুল দিয়ে মােড়কের ভেতর একটা জায়গা দেখালেন। তবে অশােকবাবু, মার্ডার উইপনটা আমাকেই উপহার দিয়েছে ডিস্কো। দেখুন, লেখা আছে : কর্নেল নীলাদ্রি সরকারকে উপহার। ইতি—ডিস্কো। 

অশােকবাবু পড়ে দেখে বললেন, ‘আশ্চর্য স্পর্ধা এই লােকটার।। | কর্নেল বললেন, ‘স্পর্ধা কি না বলতে পারছি না।

 

Read More

সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজের কর্নেল সমগ্র প্রথম খন্ড এর অংশ -২৬

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *