তবে সে নিজের অস্তিত্ব মােষণা করেছে।
অশােকবাবু অবাক হয়ে বললেন, ‘ডিস্কো বলে তাে কেউ আছেই। পুলিশমহলেও সবাই জানে। নতুন করে তাকে অস্তিত্ব ঘােষণা করতে হবে কেন?
কর্নেল একটু হেসে বললেন, কিন্তু আমার কাছে তাকে বারবার নিজের অস্তিত্ব ঘােষণা করতে হচ্ছে। সম্ভবত সে আঁচ করেছে, তার প্রকৃত পরিচয় জানার কোনও
এ আমার হাতে এসে গেছে।
কী সূত্র ? ‘এটাই সমস্যা অশােকবাবু। মানুষ অনেক সময় জানে না যে সে কী জানে। আমি নিজেই এখনও জানি না যে আমি এমন কী জানি, যার মধ্যে লুকিয়ে আছে লিস্কোর প্রকৃত পরিচয়। | অশােকবাবু হাসতে হাসতে বললেন, আপনার হেঁয়ালি বােঝার সাধ্য আমার নেই।
কর্নেল মেঝেয় দৃষ্টি রেখে ঘরের ভেতর চক্কর দিতে শুরু করলেন। এই সময় ঠাৎ আমাকে ভীষণ চমকে দিয়ে টেলিফোনটা বেজে উঠল। অশােকবাবু ফোন তুলে সাড়া দিলেন। তারপর গম্ভীরমুখে বললেন, কর্নেল। আপনাকে চাইছে কেউ। | কর্নেল বললেন, হ্যা। সে লক্ষ্য রেখেছে আমি এখানে এসেছি। এগিয়ে এসে উনি টেলিফোন নিলেন অশােকবাবুর হাত থেকে। বললেন, কর্নেল নীলাদ্রি সরকার ছি।
প্রথম খন্ড এর অংশ -২৬
মিঃ ডিস্কো নাকি? ধন্যবাদ। আপনার উপহার পেয়ে খুশি হয়েছি। না, না। গােপেনবাবুকে ঝামেলায় ফেলব না। কেন এ কথা ভাবছেন? নাহ্। আপনার সমােগিতা ভবিষ্যতে আরও চাইব। আশা করি পাব। ….. ধন্যবাদ, ছাড়ছি।
অশােকবাবু আরও গম্ভীর মুখে বললেন, ‘ডিস্কোর অনেক ডামি আছে শুনেছি। আপনি যদি ভাবেন ডিখে নিজে কথা বলল আপনার সঙ্গে, তা হলে ভুল করবেন।
‘হ্যারি ওলসন ডিস্কোর যে কণ্ঠস্বর শুনেছিলেন, তাঁর সঙ্গে মিলে গেল এবার। এর আগে তার ডামির গলা শুনেছি। ওলসন বলেছিলেন, খুব মিঠে অমায়িক স্বরে কথা বলে ডিস্কো। বলে কর্নেল আবার ঘরের মেঝে পরীক্ষায় ব্যস্ত হলেন।
ডিটেকটিভ ইন্সপেক্টর কাগজেমােড়া ছােরাটা একটা কিটব্যাগে ঢােকালেন। বললেন, আপনি কি কিছু খুঁজছেন কর্নেল?’
কর্নেল সহাস্যে বললেন, ‘জানি না কী খুঁজছি। তবে বলা যায় না, ওই যে পদ্যে আছে : যেখানে দেখিবে ছাই, উড়াইয়া দেখ তাই, পাইলে পাইতে পারাে অমূল্য রতন। স্বভাব অশােকবাবু! আমার এই বিদঘুটে স্বভাব কিছুতেই ছাড়তে পারি না। | ‘ঠিক আছে। আপনি ছাই উড়িয়ে দেখুন অমূল্য রতন পান কি না। আমি এটা এখনই গিয়ে ফরেনসিক ল্যাবে পাঠানাের ব্যবস্থা করি।
অশােকবাবু বেরিয়ে গেলেন। দরজার ওধারে দুজন সাদা পােশাকের পুলিশ দাঁড়িয়ে ছিল। তারা অশােকবাবুর সঙ্গে চলে গেল।
প্রথম খন্ড এর অংশ -২৬
আমি একটা চেয়ারে বসে পড়লাম। কর্নেল এবার হাঁটু গেড়ে আতশ কাচ দিয়ে মেঝেয় কী দেখছিলেন। একটু পরে উঠে দাঁড়িয়ে বললেন, ‘ঘরের মেঝে পরিষ্কার করা হয়েছে। তবু লাল সুরকি জিনিসটা এমন যে, মেঝেয় এঁটে যায়। | ‘লাল সুরকি খুজছিলেন নাকি? * ‘হা। ওলসন হাউসের গলিতে উল্টোদিকে একটা বাড়ি হচ্ছে। গলিতে বৃষ্টিধােয়া লাল সুরকি পড়ে আছে। কাজেই চন্দ্রিকাকে খুনের রাতে যে ওই ছােরা এখানে এনে রেখেছিল, তার জুতােয় সুরকির ছাপ আছে। কাজেই ডিস্কো সত্যিই সহযােগিতা করছে।
কর্নেল দরজার দিকে ঘুরেছেন এবং আমি চেয়ার থেকে উঠেছি, একজন কালাে রােগাগড়নের লােকের আবির্ভাব হলাে। বড়বাবু নাকি?’ বলে উনি উঁকি দিলেন ঘরের ভেতর। তারপর কর্নেলকে বললেন, বড়বাবু কোথায় গেলেন স্যার?
কর্নেল নির্বিকার মুখে বললেন, একটু বেরিয়েছেন। কিছু বলতে হবে? “আজ্ঞে না স্যার। শুনলাম, বড়বাবুর ঘরে কারা কথাবার্তা বলছে। তাই — ‘আপনিই কি এ বাড়ির কৈয়ারটেকার চাঁদুবাবু? ‘হ্যা স্যার! চাঁদুবাবু বিনীতভাবে বললেন। বড়বাবু তাে আজকাল বিশেষ আসেন না। এলেও বিকেলের দিকে। সেইজন্যে খোঁজ নিতে এলাম, যদি কিছু দরকার-টরকার হয়।
‘গােপেনবাবুকে আপনি বুঝি বড়বাবু বলেন?
কর্নেল সমগ্র প্রথম খন্ড
‘আজ্ঞে। এই কোম্পানির দুই পার্টনার। গেপেনবাবু আর রথীনবাবু। রথীনবাবুকে বলতাম ছােটবাবু। ক’বছর আগে রথীনবাবু মারা যাওয়ার পর থেকে কারবার বন্ধ হয়ে গেল। ছােটবাবু ভেতর ভেতর কোম্পানিকে ফাঁসিয়ে শেষ করে দিয়েছিলেন। বড়বাবু সরল লােক। রথীনবাবুকে বিশ্বাস করেই সর্বস্বান্ত হওয়ার দাখিল।
‘রথীন চৌধুরী? বেহালায় থাকতেন শুনেছি? ‘আজ্ঞে ! আপনি চিনতেন?’ চাঁদুবাবু প্রশ্নটা করে নিজেই উত্তর দিলেন, “চিনবেন বৈকি স্যার। বড়বাবুর চেনা যখন, তখন নিশ্চয় সব শুনেছেনও বটে।
আমি চমকে উঠেই সামলে নিয়েছিলাম। কেঁচো খুঁড়তে সাপ বেরিয়ে আসা একেই বলে। তবে বরাবর দেখে আসছি, যে-কোনও রহস্যেরই জাল বহু বহু দুর পর্যন্ত ছড়ানাে থাকে।
সমগ্র প্রথম খন্ড এর অংশ -২৬
কর্নেল ঘড়ি দেখে বললেন, “আমার দেরি হয়ে যাচ্ছে। গােপেনবাবু গেলেন তাে গেলেন। চাঁদুবাবু বললেন, ‘এসে পড়বেন। একটু অপেক্ষা করুন। চা-ফা খেতে চাইলে বলুন, এনে দিচ্ছি।
কর্নেল একটা চেয়ার টেনে বসলেন। আমিও বসলাম। কর্নেল বললেন, ‘নাহ্। চা খাব না। আপনার সঙ্গে গল্প করে সময় কাটাই। আপনি তাে বহু বছর এ বাড়িতে আছেন।
‘তা কুড়ি একুশ বছর হবে স্যার।
বাড়ির মালিক কে?
পুরনাে মালিক ছিলেন মােহনপুরের মহারাজা। তাঁর কাছ থেকে কিনেছিলেন আগরওয়ালবাবু। মারােয়াড়ি বিজনেসম্যান স্যার! তাঁরই ছেলে এখন মালিক। শুনেছি, বাড়িটা ভেঙে মাল্টিস্টোরিড বিলডিং হবে। কিন্তু হবে কী করে কে জানে! এতগুলাে কোম্পানি ভাড়াটে হয়ে আছে। তাদের ওঠাবেন কী করে। ঝামেলা আছে। অনেক ঝামেলা!
কর্নেল চুরুট ধরিয়ে বললেন, ‘বড়বাবু বলছিলেন, রাতবিরেতে নাকি এই ঘরে পাড়ার মস্তানরা এসে আড্ডা দেয়।
প্রথম খন্ড এর অংশ -২৬
চাঁদুবাবুর চোখ গুলিগুলি হয়ে উঠল। ফিসফিস করে বললেন, আমি ঠেকাব কী করে। জেনেশুনেও চুপ করে থাকি স্যার। ওরা যখন আসে, বুঝতে পারি। কিন্তু যদি বলি, কে? অমনই বলবে, তাের বাপ। শাসাবে। কী করব বলুন স্যার?
‘আপনি ওদের দেখলে চিনতে পারবেন? চাঁদুবাবু আঁতকে উঠে বললেন, ‘ওরে বাবা! আমার বডি ফেলে দেবে।
না। এমনি কথার কথা বলছি। চেহারা নিশ্চয় মনে আছে?
চাঁদুবাবু করজোড়ে বললেন, না স্যার! ওসব কথা আলােচনা করতে বড়বাবুও আমাকে নিষেধ করেছেন।
‘আপনি ডিস্কোর নাম শুনেছেন? ‘ডিস্কো ?
Read More