হ্যা, ডিস্কো। চাঁদুবাবু শ্বাসপ্রশ্বাসের সঙ্গে বললেন, ‘একটু-একটু মনে পড়ছে। একদিন রাত নটা নাগাদ ছছাটবাবুর সঙ্গে একজন ভদ্রলােক এসেছিলেন। ছােটবাবু তাঁকে ডিস্কো
বলছিলেন। তখন বড়বাবু ছিলেন না। ছােটবাবু আমাকে মদ এনে দিতে হুকুম করলেন। অত রাত্রে কি উৎপাত দেখুন স্যার! তা—
‘সেই ভদ্রলােকের চেহারা মনে আছে? ‘ফর্সা সুন্দর মতাে— চাঁদুবাবু আমাকে দেখিয়ে বললেন, এই স্যারের বয়সী হবেন। একেবারে সায়েবি চালচলন। তা ছ–সাত বছর আগের কথা। স্পষ্ট মনে পড়ছে না। তবে আপনি ডিস্কো বললেন—ওই কথাটা আজকাল খুব চালু কি না! তাই মনে পড়ে গেল।
বলে দুবাবু পা বাড়ালেন। যাই স্যার! রান্নার যােগাড় করতে হবে। একা মানুষ। বড়বাবুকে বলবেন যেন স্যার, আমি এসেছিলাম। চাঁদুবাবু চলে যাওয়ার পর বললাম, ব্যস! অনেক সূত্র পেয়ে গেলেন।
কর্নেল একটু হেসে উঠে দাঁড়ালেন। চলাে! কেটে পড়া যাক। তবে খুব আস্তে হাঁটবে। চাঁদবাবুর মুখােমুখি পড়ে যাওয়াটা ঠিক হবে না।’
কর্নেল সমগ্র প্রথম খন্ড এর অংশ -২৭
যদি নিচে দেখা হয়ে যায়? ‘হওয়ার চান্স নেই। তবে নেহাত দেখা হয়ে গেলে চুপচাপ গম্ভীর মুখে বেরিয়ে যাব।
গাড়ি স্টার্ট দিতেই কর্নেল বললেন, ‘সােজা মৌলালি সি আই টি রােড হয়ে গিন্টন স্ট্রিট। গােপেনবাবুর সঙ্গে দেখা করা দরকার।
‘বারােটা পনের বাজে। এখনই না গেলে নয়! ‘ডার্লিং। আজও আমার বাড়ি তােমার লাঞ্চের নেমন্তন্ন। ‘তারপর বলবেন, আজও অফিস কামাই করাে।
কর্নেল হাসলেন। অফিস কামাই করছ কোথায়? তুমি অফিসে জানিয়ে দাওনি একটা এক্সকুসিভ ক্রাইম স্টোরির পেছনে ছুটে বেড়াচ্ছ ? না জানিয়ে থাকলে
দ্রুত বললাম, “জানিয়েছি। কিন্তু এখনও তাে স্টোরির লেজটুকু ধরে আছি!’ ‘লেজ ধরলেই মাথা দেখতে পাবে।
মৌলালির ট্রাফিক জট ছাড়িয়ে যেতেই আধঘণ্টা লেগে গেল। লিন্টন স্ট্রিটের মমাড়ে পৌঁছে কর্নেল বললেন, ‘চাঁদুবাবু সম্পর্কে মুখ বুজে থাকবে কিন্তু!
বললাম, আমি সবসময় মুখ বুজে থাকব।
সংকীর্ণ রাস্তাটাকে গলি বলাই চলে। এঁকেবেঁকে কিছুদূর এগিয়ে কর্নেল বললেন, ‘পেয়ে গেছি।
একপাশে গাড়ি রেখে আমরা বেরােলাম। একটা বাড়ির দরজায় বেল টিপলেন কর্নেল। একটি কমবয়সী মেয়ে দরজা খুলে কর্নেলের দিকে অবাক চোখে তাকিয়ে বলল, কাকে চাই?
‘গােপেনবাবুর সঙ্গে দেখা করতে চাই। ‘দাদু তাে নেই। ঠাকুমা দাদু পুরী বেড়াতে গেছেন।
‘তােমার দীপ্তিপিসিকে ডাকো!
মেয়েটি ঘুরে প্রায় চিৎকার করে ডাকল, ‘ছােটপিসি! ছােটপিসি! তােমাকে ডাকছে।
বছর কুড়িবাইশ বয়সী এক তরুণী এসে বলল, আপনারা কোত্থেকে আসছেন? কর্নেল বললেন, ‘দীপ্তি রাহার সঙ্গে কথা বলতে চাই।
কর্নেল সমগ্র প্রথম খন্ড এর অংশ -২৭
তরুণী অবাক চোখে তাকিয়ে বলল, আমার নাম দীপ্তি। আপনারা ‘জাস্ট আ মিনিট! আপনার বাবা-মা পুরী গেছেন কবে? ‘এক সপ্তাহ আগে। সামনের মাসে ফিরবেন। কিন্তু আপনারা কোখেকে আসছেন?
কর্নেল একটু হেসে বললেন, “আমি তােমার বাবার একজন বন্ধু। তুমি নিশ্চয় প্রণব চ্যাটার্জিকে চেনাে ? তােমার বাবার কাছে আসতেন। ওঁর ধর্মতলার
অফিসেও যেতেন।
‘প্রণবকাকু-ফাংশন-টাংশন করতেন, তাঁর কথা বলছেন? ‘হা। বিখ্যাত ইমপ্রেসারিও প্রণব চ্যাটার্জি।
প্রণবকাকু এখন বােম্বেতে থাকেন শুনেছি। ‘তুমিই তা হলে আদি-অকৃত্রিম দীপ্তি রাহা?’
তার মানে ? ‘কিছু না। আমার এই কার্ডটা রাখাে। দরকার বুঝলে রিং কোরাে।
কর্নেল তার হাতে কার্ডটা দিয়ে হন্তদন্ত গাড়িতে উঠে পড়লেন। আমিও দেরি করলাম না। স্টার্ট দিয়ে বললাম, সােজা বেরিয়ে যাই? বেনেপুকুর রােড হয়ে ট্রামডিপাের পাশ দিয়ে এলিয়ট রােড।
কর্নেল সায় দিলেন। একটু পরে বললেন, ‘ডিস্কো বারবার আমাকে বােঝাতে চাইছে, হি ইজ জাস্ট নট আ নেম, হি রিয়্যালি একৃজিস্টস। হা—সে আছে।
‘আশ্চর্য! কিন্তু দীপ্তি সেজে যে-মেয়েটা চাবি দিয়ে এল, সে কে?
ডিস্কোর দলে মেয়েও আছে বােঝা গেল! ‘কিন্তু তারা তাে কলগার্ল! ওই মেয়েটিকে কলগার্ল বলে মনে হয়নি। ‘কিছু বলা যায় না।
কর্নেল চোখ বুজে হেলান দিলেন। বাকি পথ একেবারে চুপ। সানিভিলার লনে গাড়ি ঢুকলে চোখ খুলে আপন মনে শুধু বললেন, ‘ডিস্কো অসাধারণ ভাল খেলছে!
ষষ্ঠী দরজা খুলে মুচকি হেসে চাপাস্বরে বলল, ‘হালদারমশাই এয়েছেন! কর্নেল বললেন, “বাঃ! খাসা খবর!
ড্রয়িং রুমের সােফায় প্রাইভেট ডিটেকটিভ প্রায় লম্বা হয়ে নাক ডাকিয়ে ঘুমােচ্ছিলেন। কর্নেল ‘হালদারমশাই’ বলে ডাকার সঙ্গে সঙ্গে তড়াক করে সােজা হলেন। তারপর কাঁচুমাচু মুখে বললেন, রাত্রে ঘুম হয় নাই। তারপর লং ট্রেনজার্নি!
স্টেশন থিক্যা সােজা আপনার হাউসে—ওঃ! হেভি রহস্য কর্নেলস্যার! আপনাগাে আশীর্বাদে প্রাণ লইয়া ফিরছি, এই যথেষ্ট।
কর্নেল বললেন, ‘খুব উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছিলাম আপনার জন্য। আজ সকালেই জয়ন্তর সঙ্গে আলােচনা করছিলাম, আপনার কোনও বিপদ হলাে নাকি। ট্রাঙ্ককলও করছেন না আপনি।
হালদারমশাইয়ের মুঠোয় নস্যির কৌটো ছিল। এক টিপ নস্যি নিয়ে বললেন, ‘বিপদ কইলেন! হেভি বিপদ।
Read More