সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজের কর্নেল সমগ্র প্রথম খন্ড এর অংশ -২৯

হরনাথবাবু তাঁকে মুক্ত করে ফার্মে নিয়ে যান। সব ঘটনা শুনে উনি খুব গম্ভীর হয়ে বলেন, আপনি শিগগির চলে যান রাঙাটুলি থেকে। রাত বারােটা নাগাদ একটা ট্রেন আছে। আপনি আর এখানে থাকলে আমিই এবার বিপদে পড়ব।

কর্নেল সমগ্র ১ম খণ্ড 

কথা শেষ করে হালদারমশাই আবার নস্যি নিয়ে বললেন, হেভি রহস্য। আর হরনাথবাবুর বিহেভিয়ারও মিসটিরিয়াস। কী কন জয়ন্তবাবু? হালদারমশাইয়ের ভঙ্গিতে বলালম, হিঃ! …. সে-বেলা হালদারমশাইকে বাড়ি ফিরতে দিলেন না কর্নেল।

হালদারমশাই স্নান করে ধাতস্থ হয়েছিলেন। ব্যাগ থেকে প্যান্টশার্ট বের করে ননাংরা পােশাক বদলে ফিটফাট হয়ে চুল আঁচড়ে খাওয়ার টেবিলে বসেছিলেন। খেতে খেতে তাঁর রাঙাটুলি-অ্যাডভেঞ্চার আবার একদফা শুনিয়েছিলে। কিন্তু কর্নেল কোনও প্রশ্ন বা মন্তব্য করেননি। কর্নেলকে কেমন যেন অন্যমনস্ক দেখাচ্ছিল। 

খাওয়ার পর ড্রয়িং রুমে এলাম আমরা। হালদারমশাই সােফায় হেলান দিয়ে পা ছড়িয়ে বসে বললেন, কর্নেলস্যারের রাঙাটুলি যাওয়া উচিত। আমিও যামু। বাট ইন ডিসগাইজ। 

হাসতে হাসতে বললাম, আপনার ভাে সাধুবাবার ছদ্মবেশ ধরার অভ্যাস আছে। ভবানীমন্দিরে গিয়ে ধুনি জ্বেলে বসবেন। ‘তা কর্নেলস্যার কইলে আপত্তি নাই। 

কর্নেল চোখ বুজে চুরুট টানছিলেন। বললেন, ‘হালদারমশাই কি হরনাথবাবুকে চাই চিচিং ফাঁক কথাটা বলেছিলেন? 

হালদারমশাই সােজা হয়ে বসে বললেন, ইয়েস। রিঅ্যাকশন বুঝতে চাইছিলাম। 

কর্নেল সমগ্র প্রথম খন্ড এর অংশ -২৯

কী বললেন হরনাথবাবু? ‘শুধু কইলেন, বুঝছি ক্যান চন্দ্রিকারে মারছে। কিন্তু একটা আশ্চর্য ব্যাপার কর্নেলস্যার।’ বলে হালদারমশাই হঠাৎ গুম হয়ে গেলেন। 

কর্নেল বললেন, কী আশ্চর্য ব্যাপার? ‘ডিস্কোর ললাকেরা আমারে কিডন্যাপ করছিল শুনিয়াই হরনাথবাবু কইছিলেন, সেই ডিস্কো হারামি আবার রাঙাটুলিতে ফিরছে? অরে গুলি করিয়া কুত্তার মতন মারব। জিগাইলাম, ডিস্কো কেডা। শুধু কইলেন, অরে চিনবেন না। 

‘আপনি অমরেন্দ্র সিংহরায়ের কথা শুনেছেন বলছিলেন। হরনাথবাবুর সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক কেমন বুঝলেন ? 

‘ভাল। হরনাথবাবু কইলেন ওনার বেস্ট ফ্রেন্ড। আলাপ করতে চাইছিলাম। কিন্তু চান্স পাইলাম না। 

‘হরনাথবাবুকে আপনি চন্দ্রিকা এবং ইন্দ্রজিৎ ব্যানার্জির সম্পর্কের কথা বলেছিলেন ? 

‘হঃ। ডিটেলস সবকিছু কইছি ওনারে।

কী বুঝলেন? মানে—ইন্দ্রজিৎবাবুকে উনি চেনেন? ‘চেনেন। রাঙাটুলি ইন্দ্রজিৎবাবুর শ্বশুরবাড়ি। আর কী কইছিলেন য্যান ? হালদারমশাই স্মরণ করার চেষ্টা করলেন। একটিপ নস্যি নিয়েই মনে পড়ল। বললেন, ‘হঃ! ধানবাদের লােক ইন্দ্রজিৎবাবু। পলিটিকস করতেন। নাটকও করতেন। লােকাল এম এল এর রাইটহ্যান্ড ছিলেন। হরনাথবাবু চন্দ্রিকার সঙ্গে ম্যারেজের চেষ্টা করছিলেন। কিন্তু চন্দ্রিকা এম এল এর পােলার লগে পলাইয়া গেছিল। 

কর্নেল সমগ্র প্রথম খন্ড এর অংশ -২৯

‘কিন্তু ইন্দ্রজিত্ত্বাবুর সঙ্গে চন্দ্রিকার মেলামেশা সম্পর্কে হরনাথবাবুর কী রিঅ্যাকশন ? 

হালদারমশাই মাথা নেড়ে বললেন, ‘ভাল না। কইলেন, হতভাগিনী বুদ্ধির দোষে মারা পড়েছে। এক্সপ্লেন করলেন না। শুধু বুঝলাম, একসময় ইন্দ্রজিৎবাবুরে লাইক করতেন। এখন আর করেন না। আপনি রাঙাটুলি যান কর্নেলস্যার! হেভি মিস্ট্রি। তাছাড়া কোন ভদ্রমহিলার হাজব্যান্ডরে কিডন্যাপ করল কেডা, বুঝি না। মন্দিরে টাকার ব্যাগ রাখল। তারপর তারে ছাড়ল কি না—’ শ্বাস ছেড়ে চুপ করে গেলেন হালদারমশাই। 

কর্নেল বললেন, ‘ডিস্কো ইন্দ্রজিৎবাবুকে কিডন্যাপ করেছিল। এক লাখ টাকা নিয়ে ছেড়ে দিয়েছে। 

‘আঁ? কন কী? 

‘ভবানীমন্দিরে যে ভদ্রমহিলাকে দেখেছেন, তিনি ইন্দ্রজিৎবাবুর স্ত্রী মৃদুলা দেবী। 

‘খাইছে। হালদারমশাই গুলি গুলি চোখে তাকিয়ে রইলেন। গোঁফের ডগা তিরতির করে কাঁপতে লাগল। 

কর্নেল হাসলেন। “আপনি রাঙাটুলি যাওয়ার পর অনেক ঘটনা ঘটেছে। সময়মতাে বলব। 

টেলিফোন বাজল। কর্নেল ফোন তুলে সাড়া দিলেন। বলছি। …হা মিঃ ডিস্কো! বুঝতে পারছি আপনার প্রবলেম। …..শুনুন। চিচিং ফাঁক আমার কাছে আছে। তা তাে জানেন। আমি আপনার কথায় রাজী। … হা। রাঙাটুলির ভবানীমন্দিরেই ফেরত দেব। শুধু একটা শর্ত। ..না।

কর্নেল সমগ্র প্রথম খন্ড এর অংশ -২৯

আপনার প্রকৃত পরিচয় জেনে আমার কোনাে লাভ আছে বলে এখন মনে করছি না। তবে শর্তটা হলাে, আপনাকে আমি নিজের হাতে চিচিং ফাঁক তুলে দেব। … নাহ্। আমি একা যাব এবং আপনিও একা আসবেন। ভদ্রলােকের চুক্তি। … ঠিক আছে। আগামী শুক্রবার রাত দশটা?….. তা-ই হবে। রাখছি। 

হালদারমশাই শুনছিলেন। বললেন, ‘ডিস্কো ? কর্নেল বললেন, হ্যা। ‘অরে চিচিং ফাঁক দেবেন কইলেন। হােয়াট ইজ দ্যাট থিং?’ 

একটা কোড নাম্বার। ‘কিসের কোড নাম্বার। 

‘জানি না। তবে ওটা ডিস্কোর দরকার। ওটার জন্যই চন্দ্রিকাকে খুন হতে হয়েছে। 

‘হেভি রহস্য। বলে গুম হয়ে গেলেন প্রাইভেট ডিটেকটিভ কে, কে হালদার।  

কর্নেল টেলিফোন তুলে ডায়াল করতে থাকলেন। সাড়া পেয়ে বললেন, ‘অরিজিৎ! …. হঁ্যা অশােকবাবুকে ….জাস্ট আ মিনিট! স্বপন দাশের ব্যাকগ্রাউন্ড…ঠিক আছে। ওর দোকানের ঠিকানাটা চাই। ….হ্যা, বলাে। . কর্নেল প্যাড টেনে ঠিকানা লিখে নিলেন। তারপর বললেন, ‘হালদারমশাই বহাল তবিয়তে ফিরেছেন। বলছেন, হেভি মিস্টি। … সন্ধ্যার পর এস বরং ডিটেলস আলােচনা হবে। ছাড়ছি।

 

Read More

সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজের কর্নেল সমগ্র প্রথম খন্ড এর অংশ -৩০ 

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *