সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজের কর্নেল সমগ্র প্রথম খন্ড এর অংশ -৩০

হালদারমশাই বেজার মুখে বললেন, ‘ডি সি ডি ডি সায়েব আমারে পাত্তা দিতে চান না। ওনারে আমার সাংঘাতিক এক্সপিরিয়েন্সের কথা বললে জোক করবেন। | না। তবে আপনি এবার বাড়ি ফিরে বিশ্রাম নিন। সকাল সকাল শুয়ে পড়বেন। আপনার লম্বা একটা ঘুম দরকার।

কর্নেল সমগ্র ১ম খণ্ড 

প্রাইভেট ডিটেকটিভ উঠে দাঁড়ালেন। তারপর যথারীতি যাই গিয়া বলে বেরিয়ে গেলেন। 

বললাম, “আপনি ডিস্কোকে চন্দ্রিকার রাখা কাগজটা সত্যি দেবেন? কর্নেল চোখ বুজে বললেন, ‘দেব। ভদ্রলােকের চুক্তি, ডার্লিং। ‘কিন্তু তার আগে ওটা কিসের কোড জানা দরকার নয় কি? ফোনে একটি মেয়ে বলছিল, চন্দ্রিকা নার্কোটিকসের একটা পেটি আত্মসাৎ করেছিল। সেটার সঙ্গে এই কোডের সম্পর্ক থাকতে পারে। 

‘তা পারে। ‘তাহলে আগে আমাকে বাধা দিয়ে কর্নেল বললেন, ‘কিছুক্ষণ জিরিয়ে নাও। আবার বেরুতে হবে। 

‘কোথায়? ‘স্বপন দাশের নিউমার্কেটের দোকানে। 

নিউমার্কেটের ভেতর ভিড় ঠেলে অনেক গলিখুঁজি ঘুরে একটা ছােট্ট দোকানের সামনে দাঁড়ালেন। টেপরেকর্ডার বিক্রি হয় দোকানটাতে। ভিডিও ক্যাসেট ভাড়ায় পাওয়ার কথা খুদে ফলকে লেখা আছে। সাইনবাের্ডে দোকানের নাম জয় মা কালী ইলেকট্রনিকস।

কর্নেল সমগ্র প্রথম খন্ড এর অংশ -৩০

কাউন্টারে ব্যাগি প্যান্ট আর ‘আই লাভ ইউ’ লেখা ফতুয়াগােছের গেঞ্জি পরা তাগড়াই এক যুবক ক্যাসেট গােছাচ্ছিল। কর্নেলকে বলল, ‘বলুন স্যার। কর্নেল বললেন, স্বপনবাবুকে দেখছি না ? বেরিয়েছেন কোথাও? ১ যুবকটি ক্যাসেটগুলাে র্যাকে রেখে এসে বলল, ‘স্বপনদা নেই।’ কর্নেল হাসলেন। নেই তা তাে দেখতেই পাচ্ছি। আসেননি, মার্কি—’ 

স্বপনদা মারা গেছে। ‘সে কী! এই তাে কদিন আগে দেখলাম। হঠাৎ কী অসুখ হয়েছিল? ‘ফুড পয়েজন। 

ভেরি স্যাড। কর্নেল মুখে প্রচণ্ড দুঃখের ছাপ ফুটিয়ে বললেন, ‘আহা! অত ভাল ছেলেটা অকালে ঝরে গেল। আমার সঙ্গে কতদিনের চেনাজানা ছিল। আপনি কি স্বপনের আত্মীয় ? 

 ‘স্বপন আমাকে একটা ভিডিও ক্যাসেট যােগাড় করে দেবে বলেছিল। ‘আপনি মেম্বার? 

স্বপনের সঙ্গে আমার অন্য সম্পর্ক ছিল। আপনার নাম কী ভাই? ‘তরুণ’, সে ব্যবসাদারী ভঙ্গিতে বলল, আমি তাে আপনাকে চিনি না। মেম্বার হতে হবে। দুশাে টাকা ডিপােজিট। স্বপনদাকে যে ক্যাসেট চেয়েছিলেন, পেয়ে যাবেন। ‘পারবেন দিতে? ‘চেষ্টা করব। কী ক্যাসেট বলুন? ‘চিচিং ফাঁক। 

মুহূর্তে তরুণের মুখের ভাব বদলে গেল। ভুরু কুঁচকে বিকৃত মুখে বলল, কী ফালতু কথা বলছেন স্যার। ওই নামে কোনও ক্যাসেট নেই। 

কর্নেল অবাক হওয়ার ভঙ্গিতে বললেন, ‘সে কী! স্বপন বলেছিল—’ ‘ স্বপনদার চালাকি। আপনাকে ভুল বলেছে। 

কর্নেল সমগ্র প্রথম খন্ড এর অংশ -৩০

‘ভুল নয়। আসলে ওটা একটা থিয়েটারের নাটকের ক্যাসেট। স্বপন ওতে অভিনয় করেছিল। আপনি নিশ্চয় জানেন স্বপন থিয়েটারে অভিনয় করত? 

তরুণ একটু দ্বিধায় পড়ে গেল যেন। স্বপনদা বলেছিল চিচিং ফাঁক নামে নাটক করেছে? 

‘হ্যা। দারুণ নাটক নাকি। 

বােগাস। স্বপনদা স্টেজের কাজকর্ম করত। ‘তা-ই বুঝি ? কিন্তু স্বপন বলেছিল, কী যেন নাটকের দলটার নাম ই সৌরভ। নাট্যগােষ্ঠী। 

হবে। আমি জানি না। স্বপনদার মুখে শুনেছি, নাটকে নামার ইচ্ছে ছিল। একটা দলের সঙ্গে ভিড়েছে। স্টেজ ম্যানেজ করে-টরে।। 

‘আপনি ইন্দ্রজিৎ ব্যানার্জিকে চেনেন? 

নাহ্। ‘ডিস্কোকে? 

তরুণের মুখের ভঙ্গি আবার পলকে বদলে গেল। গলার ভেতর বলল, ‘নাহ্। তারপর সে নার্ভাস মুখে একটু হাসবার চেষ্টা করল। তাই বলুন! আপনি সি আই ডি অফিসার। দেখুন স্যার, দফায় দফায় এসে আমাকে আপনারা জ্বালাতন করছেন। এতে আমার বিজনেসের লস হচ্ছে। স্বপনদা আমার পার্টনার ছিল। সে কী কাজ করে ফেঁসে গেছে-মার্ডার পর্যন্ত হয়ে গেছে, আমি তার কিছুই জানি না। মিছিমিছি আমাকে হ্যারাস করছেন। 

কর্নেল সমগ্র প্রথম খন্ড এর অংশ -৩০

কাউন্টারে ইতিমধ্যে কয়েকজন খদ্দের এসেছিল, তারা হাঁ করে তাকিয়ে ছিল। তরুণ তাদের দিকে ঘুরল। কর্নেল মুখে সেই অবাক ভঙ্গিটি রেখেই শ্বাস ছেড়ে বললেন, ‘ভুল করছেন তরুণবাবু! 

তরুণ হাত নেড়ে বলল, থানায় গিয়ে দেখা করব। বড়বাবু আমার চেনা। আপনি এখন আসুন স্যার। 

কর্নেল ভিড় ঠেলে হাঁটতে থাকলেন। রাস্তায় গিয়ে মুচকি হেসে বললেন, ‘অনেক সময় অন্ধকারে ঢিল ছুঁড়ে দেখেছি, ঠিক জায়গায় লেগেছে। কী বুঝলে বলাে এবার? 

বললাম, স্বপন দাশ ইন্দ্রজিৎবাবুর দলে ছিল। আর এই তরুণচন্দ্র ডিস্কোর এক চেলা। 

কর্নেল গাড়িতে ঢুকে বললেন, আর কিছু বুঝলে? গাড়ি স্টার্ট দিয়ে বললাম, ইন্দ্রজিৎবাবুর সঙ্গে ডিস্কোর তাে শত্রুতা আছে। জিহ্বাবুর নাটকের দলে স্বপন দাশ সম্ভবত ডিস্কোর চর হয়ে ঢুকেছিল। জিহ্বাবুই তাে বলছিলেন, তাঁর দলে ডিস্কোর চর আছে। 

‘স্বপনকে কে খুন করল বলে মনে হয় তাহলে? 

ইন্দ্রজিৎবাবুকে সন্দেহ করা চলে। কর্নেল হাসলেন। তা হলে তােমার ধারণা অনুসারে চন্দ্রিকার খুনী ইন্দ্রজিৎবাবু?’ 

হকচকিয়ে গিয়ে বললাম, চন্দ্রিকাকে উনি খুন করবেন কেন? মােটিভ কী? তাকার লুকিয়ে রাখা ওই কাগজটা তাে আপনাকে ডিস্কোই চাইছে। ডিস্কোই 

জিহ্বাবুকে কিডন্যাপ করে এক লক্ষ টাকা আদায় করল। কাজেই অরিজিবুর থিওরি অনুসারে একজন তৃতীয় ব্যক্তি এই রহস্যের পিছনে আছে। সে ডিস্কোকে টেক্কা মেরে ওই কাগজটা অর্থাৎ চিচিং ফাঁকের কোড নাম্বার হাতাতে স্বপনকে দিয়ে চন্দ্রিকাকে মেরেছে।

চন্দ্রিকা টের পেয়েছিল থিয়েটার থেকে সে তার পিছু নিয়েছে এবং আপনার থিওরি অনুসারে চন্দ্রিকা তাই তার পার্স আপনার জিম্মায় পৌঁছে দিয়েছিল। তাই না?  কর্নেল অন্যমনস্কভাবে শুধু বললেন, ‘হুঃ ? ‘হেমেন্দ্র সে রাতে ওলসন হাউসের কাছে ছিলেন। কাজেই তৃতীয় ব্যক্তি হেমেন্দ্র।

 

Read More

সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজের কর্নেল সমগ্র প্রথম খন্ড এর অংশ -৩১

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *