হেমেন্দ্র।
‘তুমি বলেছিলে হেমেন্দ্রের ডিস্কো হওয়ার চান্স আছে। নাহ্। ডিস্কো অন্য কেউ। হি ইজ আ বিগ গাই। পুলিশের কথা এটা।
কর্নেল ফ্রি স্কুল স্ট্রিটে পৌঁছে মুখ খুললেন। ওলসন হাউসে ঢুকব। একটু Lরকার আছে।
বাড়িটার কাছে একটা পুলিশ ভ্যান দেখে বুঝলাম, কড়া পুলিশ পাহারা বহাল লাহে। সাদা পােশাকের পুলিশ দেখলে আমি চিনতে পারি। তারা দুদিকের ফুটপাতেই দাঁড়িয়ে আছে ছড়িয়ে ছিটিয়ে। কেউ খৈনিওয়ালার কাছে বসে গল্প করছে আর খৈনি ডলছে।
গাড়ি থেকে বেরিয়ে গলির মুখে একজন সাদা পােশাকের অফিসার কর্নেলকে দেখে হাসলেন। কর্নেল তাঁর পাশ কাটিয়ে বাড়িতে ঢুকলেন। দেখলাম, ছােট্ট লনের ওপাশে বেঞ্চে কজন সশস্ত্র কনস্টেবল বসে আছে।
বারান্দায় হ্যারি ওলসন বেতের চেয়ারে বিমর্ষমুখে বসেছিলেন। কর্নেলকে দেখে হাত তুলে অভিনন্দন জানালেন। আমরা বসলাম। কর্নেল বললেন, আশা করি কোনও অসুবিধে হচ্ছে না মিঃ ওলসন?
ওলসন বললেন, ‘হচ্ছে। তাছাড়া পুলিশ আমার বাকি জীবনকাল পর্যন্ত আমাকে পাহারা দেবে না। তখন ডিস্কো আমাকে খতম করবে। কাজেই ঠিক করেছি, বাড়ি বেচে দেব। বােম্বে চলে যাব, আমার এক আত্মীয়ের কাছে।
‘আপনার ভাড়াটেদের খবর কী? ‘ওরা আছে। বাইরে শিকার ধরতে যাচ্ছে আগের মতাে। তবে কাউকে সঙ্গে আনতে পারছে না। ওলসন ফিসফিস করে বললেন ফের, একজন পুলিশ অফিসার আমাকে বলেছেন, ডিস্কো ওপরতলায় খুব চাপ দিচ্ছে পুলিশ তুলে নিতে। কাজেই আপনি যতই চেষ্টা করুন, পুলিশ চলে যাবে।
কর্নেল সমগ্র প্রথম খন্ড এর অংশ -৩১
কর্নেল একটু হেসে বললেন, বাড়ি যে বেচবেন বলছেন, কিনবে কে ভেবেছেন?
‘মেয়েগুলােকে বলেছি, ডিস্কোকে বলাে, সে কিনে নিক। কিন্তু ওরা বলছে, ডিস্কোর সঙ্গে যােগাযােগ করতে পারছে না। আমিও ফোন করেছিলাম। রিং হচ্ছে।কেউ ধরছে না।
‘ডিস্কো যদি বাড়ি না চায় ?
ওলসন একটু চুপ করে থেকে বললেন, ‘পড়ে থাকবে। আমি চলে যাব। কয়েকটা দিন অপেক্ষা করুন মিঃ ওলসন। ওলসন হাসবার চেষ্টা করে বললেন, অপেক্ষা করে লাভ কী? ‘ডিস্কোকে আমি চিট করে ফেলব। সে যে–ই হােক। ওলসন মাথা নাড়লেন। বিশ্বাস করি না। রাজনীতিওলারা তার মুরুব্বি। ‘আপনাকে একটা প্রশ্ন করতে এসেছি। ঠিকঠাক জবাব পেলে আমার সুবিধে হবে।
বলুন। আপনাকে আমি কিছু গােপন করিনি। করব না।’ ‘আপনি তাে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে সেনাবাহিনীতে ছিলেন। তাে’।
ওলসন কর্নেলের কথার ওপর বললেন, ‘ওঃ ! সে এক সুখের দিন গেছে। এ নিয়ে আপনার সঙ্গে ঘণ্টার পর ঘণ্টা আলােচনা করেছি। স্মৃতি সুখের। আপনার সঙ্গে ডিগবয়ে আলাপ হয়েছিল। যাই হােক, এখন আমার কিছু বলতে ইচ্ছে করছে স্মৃতি সুখের বটে, তবে এ মুহূর্তে কষ্টের।
‘মিঃ ওলসন! আপনি বর্মাফ্রন্টে থারটিন্থ ডিভিসনে ছিলেন।
ও
‘সাধারণ সৈনিক মাত্র। ‘রিট্রিটের পর ডিভিসন ভেঙে দিয়ে যে দলটাকে রাঁচি ক্যান্টনমেন্টে পাঠানাে হয়, আপনি সেই দলে ছিলেন।
‘হা। আপনাকে তাে কতবার সে–সব কথা বলেছি। ‘আপনাকে জিজ্ঞেস করা হয়নি এতদিন, আপনার কি অপারেশন অর্কিডের কথা স্মরণে আছে?
কর্নেল সমগ্র প্রথম খন্ড এর অংশ -৩১
ওলসন একটু নড়ে বসলেন। হ্যা, হ্যা। অপারেশন অর্কিড! বিহারে তখন রাজনৈতিক আন্দোলন চলছিল। প্রচণ্ড অন্তর্ঘাত শুরু করেছিল ওরা। ট্রেনের লাইন ওপড়ানাে। অস্ত্র লুঠ। আমি কনভয়ের ওপর পর্যন্ত হামলা।
১৯৪২ সালের আগস্ট আন্দোলন বলা হয়। বিহারে সেই আন্দোলন দমন করতে ব্রিটিশ আর্মি অপারেশন অর্কিড শুরু করে। যাই হােক, আপনি কি রাঙাটুলি সেনাঘাঁটি—
ওলসন দ্রুত বললেন, হ্যা। মনে আছে। ওখান থেকে যে সেনাদল অপারেশন অর্কিডে যােগ দেয়, তাতে আমিও ছিলাম।
‘সামরিক রেকর্ডের একটা বইয়ে পড়েছি, একটা পরিত্যক্ত খনির ভেতর প্রচুর সােনাদানা মজুত রেখেছিলেন ব্রিটিশ সরকার। খনির মুখ পাথর দিয়ে সিল করে স্বাভাবিক রাখা হয়েছিল। সেই জায়গার একটা ম্যাপ তৈরি করেন লেটন্যান্ট জেনারেল হেনরি প্যাটার্সন। ম্যাপটা তাঁর ক্যাম্প থেকে পরে কীভাবে চুরি যায়।
ওলসন মাথা নাড়লেন। আমি জানি না। শুনিনি। ‘কিন্তু অপারেশন অর্কিডের আর একটা উদ্দেশ্য ছিল জায়গাটা খুঁজে বের করা। কারণ ম্যাপ চুরির পর হেনরি প্যাটার্ন আত্মহত্যা করেছিলেন।
কর্নেল সমগ্র প্রথম খন্ড এর অংশ -৩১
ওলসন একটু অবাক হয়ে বললেন, “আমাদের যেখানে সেখানে নিয়ে মাটি খোঁড়ানাে হতাে। মনে পড়ছে। কেন খোঁড়ানাে হতাে, ভেবেই পেতাম না। আমাদের প্রশ্ন করা নিষেধ ছিল।
কর্নেল আস্তে বললেন, ‘রাঙাটুলির আর্মিবেসের কন্ট্রাক্টর অজয় রায়কে আপনি চিনতেন। ম্যাপ চুরির সঙ্গে জড়িত সন্দেহেই তাঁর জেল হয়েছিল। তাই না?
ওলসন তাকয়ে রইলেন কর্নেলের দিকে। কর্নেল পকেট থেকে পুরনাে একটা খাম বের করে বললেন, ‘পুলিশ চন্দ্রিকার ফ্ল্যাট সার্চ করে এই চিঠিটা পেয়েছে। এটা আপনি চন্দ্রিকার মা স্নেহলতা রায়কে লিখেছিলেন।
ওলসন জড়ানাে গলায় বললেন, কনডােলেন্স লেটার। ‘হ্যা। অজয়বাবুর মৃত্যুর পর সান্ত্বনা দিয়ে লেখা চিঠি। কিন্তু এতে প্রমাণ হচ্ছে, আপনি অজয়বাবুকে ভাল চিনতেন। তিনি আপনার বন্ধু ছিলেন। এবার আমার প্রশ্ন, ডিস্কো বা তার লােকের চাপে, নাকি চন্দ্রিকা এই চিঠি আপনাকে দেখিয়ে পরিচয়
Read More