দেওয়ায় আপনি তাকে চার তলার ফ্ল্যাটটা ভাড়া দিয়েছিলেন? আশা করি, সঠিক জবাব দেবেন।
ওলসন আস্তে বললেন, চন্দ্রিকা আমাকে চিঠি দেখিয়েছিল। ওকে বলেছিলাম, এখানে তুমি থাকতে পারবে না। এখানে খারাপ মেয়েরা থাকে। কিন্তু চন্দ্রিকা বলেছিল, তার আশ্রয় নেই। সে কান্নাকাটি করছিল। তাই তাকে ফ্ল্যাটটাতে থাকতে দিয়েছিলাম। পরে বােকা মেয়েটা ডিস্কোর পাল্লায় পড়ে গেল। একটু চুপ করে
থেকে ওলসন আবার বললেন, ‘কথাটা অপ্রাসঙ্গিক ভেবেই আপনাকে বলিনি।
কর্নেল একটু হেসে বললেন, ‘মিঃ ওলসন! অনেক সময় আমরা জানি না যে আমরা কী জানি! এটাই সমস্যা আপনি কি জানেন, অজয়বাবু সত্যিই সেই গােপন নকশা চুরির সঙ্গে জড়িত ছিলেন ?
ওলসন গম্ভীর মুখে বললেন, “আমার সন্দেহ, নকশা উনিই চুরি করেছিলেন। লেফটন্যান্ট জেনারেল প্যাটা” জয়বাবুকে পছন্দ করতেন। বিশ্বাস করতেন খুব। এ কথা অজয়বাবুই আমাকে বলতেন। আমি তাে ছিলাম সাধারণ সৈনিক মাত্র।
‘অজয়বাবুর সঙ্গে কথাবার্তায় তেমন কিছু নিশ্চয় টের পেয়েছিলেন আপনি? ‘সম্ভবত। এত কাল পরে কিছু মনে নেই।
ধন্যবাদ! উঠি মিঃ ওলসন।
হ্যারি ওলসন গম্ভীর মুখে রইলেন। গেটের কাছে সেই পুলিশ অফিসার দাঁড়িয়েছিলেন। চাপা স্বরে বললেন, কী বলছে বুড়াে? কর্নেল বললেন, বাড়ি ছেড়ে চলে যেতে চাইছেন।
অফিসার হাসলেন। গেলে আমরাও ঝামেলা থেকে বেঁচে যাই। গাড়িতে আসতে আসতে বললাম, “অপারেশন অর্কিড! আপনি সেইজন্যই পরগাছারহস্য বলছিলেন ? কিন্তু শেষ পর্যন্ত ব্যাপারটা গুপ্তধনরহস্য হয়ে দাঁড়াল যে! ছ্যাঃ! যত সব চাইল্ডিশ ব্যাপার!
কর্নেল সমগ্র প্রথম খন্ড এর অংশ -৩২
কর্নেল বললেন, ‘দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ইতিহাস অনেক লেখা হয়েছে। কিন্তু আড়ালের রহস্যময় ইতিহাস এখনও লেখা হয়নি। বলা হতাে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যে সূর্যাস্ত হয় না। কথাটা ঠিকই। বিশাল একটা সাম্রাজ্য। অসাধারণ তার ভৌগােলিক বিস্তার। যুদ্ধের সময় ব্যাঙ্ক এবং ট্রেজারি থেকে কত কোটি কোটি টাকার সােনাদানা শত্রুপক্ষের হাতে
পড়ার ভয়ে লুকিয়ে রাখতে হয়েছিল ব্রিটিশ সরকারকে, কল্পনা করতে পারবে না। শত্রুপক্ষের বােমায় কত জায়গায় কত সােনাদানার গুপ্তভাণ্ডার চাপা পড়ে গেছে। পরে আর তা খুঁজে বের করা যায়নি। এখনও মাটির ভেতর সেগুলাে রয়ে গেছে। যক্ষের দল সেগুলাে পাহারা দিচ্ছে।
‘মাই গুডনেস! চিচিং ফাঁকের সঙ্গে সেই যখের ধনের সম্পর্ক আছে?” ‘চুপ! চুপ!’ কর্নেল সকৌতুকে অট্টহাসি হাসলেন। ” ষষ্ঠী দরজা খুলে দিলে কর্নেল জিজ্ঞেস করলেন, কেউ এসেছিল? ‘আজ্ঞে না তাে।
‘কেউ ফোন করেছিল? ‘দু’বার ফোং করেছিল। বললাম, বাবামশাই বেইরেছেন। এখনও ফেরেননি।
নাম জিজ্ঞেস করেছিলি? ‘আপনি বেইরেছেন শুনেই ফোং কেটে দিল। হ্যালাে হ্যালাে করলাম—’। ‘হ্যালাে হ্যালাে করেছিস। এবার শিগগির কফি কর। যেতে যেতে হঠাৎ ষষ্ঠী বলে গেল, ‘একই নােক বাবামশাই। গলা শুনেই
বুঝেছি।’
কর্নেল ইজিচেয়ারে বসে টুপি খুলে টাকে হাত বুলােতে থাকলেন। কিছুক্ষণ পরে ষষ্ঠী কফি নিয়ে এল। কফিতে চুমুক দিয়েছি, সেইসময় টেলিফোন বাজল। কর্নেল বললেন, ‘জয়ন্ত! ফোনটা ধরাে!
ফোন তুলে সাড়া দিলাম। কেউ বলল, কর্নেল নীলাদ্রি সরকার? আপনি কে বলছেন? আপনার লেটার বক্সে একটা জরুরি চিঠি আছে। লাইন কেটে গেল। হকচকিয়ে গিয়েছিলাম। কারণ লােকটার কণ্ঠস্বর কেমন ভারী এবং কর্কশ। তাছাড়া লেটার বক্সে চিঠি থাকার কথা টেলিফোনে বলাও অদ্ভুত।
কর্নেল সমগ্র প্রথম খন্ড এর অংশ -৩২
কর্নেল তাকিয়েছিলেন। একটু হেসে বললেন, ডিস্কো ? ‘কে জানে? আমি কর্নেল নীলাদ্রি সরকার কি না জিজ্ঞেস করেই বলল, আপনার লেটার বক্সে একটা জরুরি চিঠি আছে। কেমন বিশ্রী কণ্ঠস্বর।
কর্নেল হাঁকলেন, ষষ্ঠী!’ ষষ্ঠী পর্দার ফাঁকে উঁকি মারল। বললেন, ‘লেটার বক্সে একটা চিঠি আছে। নিয়ে আয়। ষষ্ঠী হন্তদন্ত চলে গেল।
বললাম, ‘লােকটা যে-ই হােক, আপনার গলার স্বর ওর কাছে অপরিচিত । আমাকেই আপনি বলে ধরে নিল। এটা একটা পয়েন্ট। নিশ্চয় ডিস্কোর কোনও বােকাসােকা ডামি।
কর্নেল শুধু বললেন, ‘হুঁ!’
একটু পরে ষষ্ঠী ফিরে এল একটা খাম নিয়ে। কর্নেল খামটা টেবিলল্যাম্প জ্বেলে দেখে নিয়ে খুললেন। ভাঁজকরা ছােট্ট একটি চিঠি বের করলেন। তারপর চোখ বুলিয়েই আমাকে দিলেন। দেখলাম, ইংরেজিতে টাইপকরা চিঠি। বাংলা করলে এরকম দাঁড়ায় :
‘ভদ্রলােকের চুক্তি। ঠিক আছে। কিন্তু কোনও চুক্তিই শূন্যে হয় না। একটা ভিত্তি থাকা উচিত। তাই চন্দ্রিকার জ্যাঠামশাই রাঙাটুলির হরনাথ সিংহকে অপহরণ করেছি। কথামতাে সময়ে জিনিসটি আপনি যথাস্থানে আমার হাতে দিলেই তাঁকে ছেড়ে দেব। ফাঁদ পাতবেন না। তা হলে একটি প্রাণ যাবে। –ডিস্কো পড়ার পর রাগে মাথায় আগুন ধরে গেল। বলালম, শয়তানটার কী স্পর্ধা আপনাকে এভাবে চিঠি লিখতে সাহস পেয়েছে?
কর্নেল নির্বিকার মুখে বললেন, ‘ডিস্কো দুঃসাহসী তাে বটেই।
কর্নেল সমগ্র প্রথম খন্ড এর অংশ -৩২
উত্তেজিতভাবে বললাম, একটা কথা আমার মাথায় কিছুতেই ঢুকছে না। ইন্দ্রজিৎবাবু ডিস্কোর হুমকিতে ভয় পেয়ে আপনার সাহায্য চেয়েছিলেন। অথচ ওঁকে ডিস্কো কিডন্যাপ করে এক লাখ টাকা দিব্যি আদায় করল। আপনি চুপচাপ থাকলেন। আবার শয়তানটা চন্দ্রিকার জ্যাঠামশাইকে—
হাত তুলে আমাকে থামিয়ে কর্নেল বললেন, ‘খামােকা উত্তেজিত হয়ে লাভ নেই জয়ন্ত। তােমার কফি হয় তাে ঠাণ্ডা হয়ে যাচ্ছে। কফি খাও। নার্ভ চাঙ্গা হবে। | কিছুক্ষণ পরে কলিং বেল বাজল। কর্নেল বললেন, ‘অরিজিৎ এল হয়তাে। তুমি কিন্তু মুখ বুজে থাকবে।’ | কিন্তু ডি সি ডি ডি অরিজিৎ লাহিড়ির বদলে হন্তদন্ত আবির্ভূত হলেন প্রাইভেট ডিটেকটিভ কে, কে হালদার।
ধপাস করে সােফায় বসে হাঁসফাঁস করে বললেন, ‘হরনাথবাবু কিডন্যাপড়। ওনার ওয়াইফ আমারে ট্রাংকলে খবর দিলেন। হরনাথবাবু ওনারে আমার নেমকার্ড দিয়া কইছিলেন, আমার কোনও বিপদ বাধলে জানাইবা। বলেই তড়াক করে সােজা হলেন। চাপা স্বরে বললেন, ‘রাত্রি সওয়া নয়টার ট্রেনে রওনা দিমু। কর্নেলস্যার। জয়ন্তবাবু। কাইন্ডলি ফলাে মি।
তারপর ঘড়ি দেখে সটান উঠে দাঁড়ালেন এবং জোরে বেরিয়ে গেলেন। কর্নেল তুম্বােমুখে বললেন, জয়ন্ত। এবার আর হালদারমশাইকে ফলাে করা ছাড়া উপায় নেই।…..
চতুর্থ স্তর আমরা রাঙাটুলি পৌঁছেছিলাম পরদিন বেলা দুটো নাগাদ। কর্নেলের হাবভাবে কোনও উদ্বেগ বা তাড়াহুড়াে ছিল না। স্টেশনটা মাঝারি ধরনের। অটোরিকশা, সাইকেলরিকশাে, ঘােড়ার গাড়ি, এমনকি প্রাইভেট কারও ভাড়া পাওয়া যায়। আমরা ঘােড়ার গাড়িই ভাড়া করেছিলাম।
Read More