অমরেন্দ্র সিংহরায়ের বাড়ি শহরের শেষ প্রান্তে। রাস্তা থেকে বাড়িটা বেশ উঁচুতে। বাউণ্ডারি ওয়ালে ঘেরা পুরনাে আমলের দোতলা বিশাল বাড়ি। চারদিকে গাছপালা জঙ্গল হয়ে আছে। নিরিবিলি সুনসান পরিবেশ। গেট থেকে বাড়িটাকে হানাবাড়ি দেখাচ্ছিল। বললাম, এমন ভূতের পুরীতে ভূতেদের কালাে বেড়াল সাজার দরকারটা কী? নিজমূর্তিতেই দেখা দিতে পারে।
” কর্নেল হাসলেন। ভূতের স্বভাব হালদারমশাইয়ের মতাে। ছদ্মবেশ না ধরলে পেশাগত যােগ্যতার প্রমাণ কীভাবে দেবে?
‘ঠিক বলেছেন। আমার ধারণা, এবার হালদারমশাইও তাঁর পেশাগত যােগ্যতার প্রমাণ দিতে নিশ্চয় ছদ্মবেশে এসেছেন।
কথাটা বলেই চমকে উঠলাম। পাঁচিলের ওপর সত্যিই একটা কালাে বেড়াল গুটিসুটি হেঁটে চলেছে। সেই রক্তখেকো কালাে বেড়ালটা নিশ্চয়। ব্যস্তভাবে বললাম, কর্নেল ! সেই বেড়ালটা। | ‘হ্যা। দেখেছি। কিন্তু গেটে ভেতর থেকে তালা আটকে বাড়ির লােকেরা দুপুরবেলার ভাতঘুম দিচ্ছে নাকি? কর্নেল বাইনােকুলারে চোখ রেখে ফের বললেন, ‘রায়সায়েবের ঘরের জানালা বন্ধ। সুনন্দার ঘরটা দেখা যায় না এখান থেকে। সত্যকামের ঘরের জানালা বন্ধ থাকা স্বাভাবিক। এখন সে অফিসে। কিন্তু বেচু-মাই গুডনেস। কালাে বেড়ালটা বেচুর ঘরের জানালা গলে ঢুকে গেল।
কর্নেল সমগ্র প্রথম খন্ড এর শেষ অংশ
বুকের ভেতরটা ছাৎ করে উঠেছিল। অমরেন্দ্রর মুখে রক্তখেকো কালাে বেড়ালটার কথা শুনেছিলেন। দিনদুপুরে তার এই গতিবিধি ভৌতিক রহস্যকে জমজমাট করে ফেলল দেখছি। নাহ্। চিচিং ফাঁক-রহস্যের সঙ্গে এটার কোনও সম্পর্ক থাকতেই পারে না। বাড়িতে নির্ঘাৎ ভূতপ্রেত আছে। কর্নেল কথাটা বলব ভাবছি, সেই সময় দেখলাম, মধ্যবয়সী একটা রােগাপটকা লােক লাঠি উঁচিয়ে বেরিয়ে পড়ল। কালাে বেড়ালটাকে দেখা যাচ্ছিল না বটে, বােঝা গেল লােকটা বীরবিক্রমে তর্জনগর্জন করে তাকেই তাড়া করেছে। | একটু পরে সে ঘুরে দাঁড়াল এবং আমাদের দেখতে পেয়ে দৌড়ে এল। কর্নেল সহাস্যে বললেন, কী বেচু? দিনদুপুরে ভূত ঢুকেছিল ঘরে?’
বেচু সেলাম ঠুকে ফতুয়ার পকেট থেকে চাবি বের করে তালা খুলে দিল গেটের। কাঁচুমাচু মুখে বলল, কর্তামশাই দিদিকে নিয়ে কিছুক্ষণ আগে বেরিয়েছেন। বলে গেছেন, আপনি যে-কোনও সময় এসে যাবেন, লক্ষ্য রাখিস। কিন্তু স্যার, এদিকে এক বিচ্ছিরি উৎপাত। ‘কালাে বেড়াল?
কর্নেল সমগ্র প্রথম খন্ড এর শেষ অংশ
আমরা ভেতরে ঢুকলে বেচু গেটে আবার তালা আটকে দিয়ে বলল, হ্যা স্যার। সবে এত ক্ষণে খেয়েদেয়ে উঠেছি, ব্যাটাছেলে কোত্থেকে এসে লুকোচুরি খেলতে শুরু করেছে। রােজ যখন-তখন এসে জ্বালাচ্ছে। কার বেড়াল কে জানে! তবে সাংঘাতিক বেড়াল স্যার। রক্ত খায়। | প্রাঙ্গণ পেরিয়ে বেচু আমাদের হলঘরে নিয়ে গিয়ে বসাল। তারপর বলল, গতবার এসে যে ঘরে ছিলেন, সেই ঘরেই আপনাদের থাকবার ব্যবস্থা করা আছে। কিন্তু আমারও ভুল, দিদিমণিরও ভুল।
চাবি দিদিমণির কাছে। এখানেই একটু জিরিয়ে নিন বরং। আমি খাওয়াদাওয়ার যােগাড় করি। দেরি হবে না। সে সুইচ টিপে ফ্যান চালিয়ে দিল। কর্নেল বললেন, “আমরা ট্রেনেই খেয়ে নিয়েছি বেচু। তুমি বসাে। রায়সায়েব ফেরা না পর্যন্ত গল্প করা যাক। | বেচু মেঝেয় বসল। কামশাই হরনাথবাবুর বাড়ি গেলেন। আপনি তাে স্যার চেনেন হরনাথবাবুকে। ওঁকে কাল থেকে নাকি খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। শুনছি, মাঠের ফার্ম থেকে ডাকাতরা ধ” নিয়ে গেছে। আজকাল রাঙাটুলিতে ডাকাতদেরই রাজত্ব।
Read More