সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজের কর্নেল সমগ্র প্রথম খন্ড এর অংশ -৭

ঝটপট বললাম, কিন্তু থিয়েটার শেষ হওয়ার পর আমরা আসছিলাম গাড়িতে। অতদুরে থিয়েটার রােডের ওই মােড়ে মেয়েটি কী করে অত শীগগির এসে পড়ল?’

কর্নেল সমগ্র ১ম খণ্ড 

কর্নেল একই ভঙ্গিতে বললেন, “তােমাকে বরাবর বলেছি জয়ন্ত! তােমার পেশার লােকেদের জন্য একটা জিনিস খুব জরুরি। তীক্ষ্ণ পর্যবেক্ষণ—সবসময়, সবকিছুর প্রতি। তুমি লক্ষ্য করােনি, নাটকে নাচতে নাচতে একটি মেয়ের চুলে গাছের একটা পাতা পড়ল আর ‘সে যন্ত্রণায় আর্তনাদ করে বেরিয়ে গেল। নাটকের মাঝামাঝি সময়ে প্রথম একটি মেয়ের মৃত্যু। তার মুখটা মনে ছিল। কাজেই তার 

আগেই চলে আসায় অস্বাভাবিক কিছু নেই। | ‘তা হলে আপনি ওকে চিনতে পেরেছিলেন। কিন্তু গাড়িতে আসার সময় চুপচাপ রইলেন। পরে আমাকে বললেন না কিছু। কেন?” 

বলেছিলাম। কলগার্ল মনে হচ্ছে বলেছিলেন শুধু। 

পুলিশের গােয়েন্দা বললেন, ‘হাতে সময় কম কর্নেলসায়েব! আমাকে উঠতে হবে। ডি সি ডি ডি সায়েব আমাকে বলেছেন – তাঁকে থামিয়ে কর্নেল বললেন, জাস্ট আ মিনিট! হালদারমশাইয়ের কথা আগে শুনে নিই। 

কর্নেল সমগ্র প্রথম খন্ড এর অংশ -৭

হালদারমশাই দুঃখিত মুখে বললেন, ‘অহন আর কী কমু কর্নেলস্যার? ইন্দ্রজিৎ ব্যানার্জি কইলেন, কী চাই? যেই ওনারে কইছি, কাইল আপনি কলগার্লেরে গাড়িতে উঠাইয়া লইয়া কই গেলেন জানতে চাই—আই অ্যাম এ প্রাইভেট ডিটেকটিভ, অমনি উনি দরজা আটকাইয়া পুলিশে ফোন করলেন। পুলিশ আইয়া আমারে ধমক দিয়াওঃ ! কী কারবার! কিছুতেই বুঝবে না। যত কই, কেসটা শােনেন—তত 

ধমক দেয়, শাট আপ! আর কক্ষনাে ঝামেলা করবেন না। 

অশােকবাবু একটু হেসে বললেন, আসলে মিঃ হালদারের অ্যাপ্রােচে গণ্ডগােল . ছিল। তাই থেকে একটু ভুল বােঝাবুঝি আর কী! চন্দ্রিকা মার্ডারের পর ওর ফ্ল্যাটে ড্রেসিং টেবিলের ড্রয়ারে মিঃ হালদারের কার্ড পেয়ে আমরা অবাক হয়েছিলাম। তারপর ওঁর সঙ্গে যােগাযােগ করলাম। 

হালদারমশাই বললেন, ‘হঃ! একখান কার্ড দিছিলাম অরে। ভেরি স্যাড! কর্নেল বললেন, ইন্দ্রজিহ্বাবুকে কি জানানাে হয়েছে খবরটা?’ 

অশােকবাবু বললেন, ‘ফোনে আমরা জানিয়েছি। মিঃ হালদারের কাছে ব্যাপারটা শােনার পর জানাতে হলাে। তারপর লাহিড়িসায়েব আমাদের থানায় রিং করে খোঁজ নিলেন। তখন বুঝলাম, ইন্দ্রজিৎবাবুর সঙ্গে ওঁর জানাশােনা আছে। আমাদের ফোন পেয়েই ভদ্রলােক ডি সি ডি ড-কে অ্যাপ্রােচ করেছেন সম্ভবত। যাই হােক, ডি সি ডি ডি আপনার কাছে আসতে বললেন। এখন মনে হচ্ছে, আপনি ব্যাকগ্রাউন্ডটা মােটামুটি জানেন। 

কর্নেল সমগ্র প্রথম খন্ড এর অংশ -৭

‘শুধু এটুকু জানি, ইন্দ্রজিৎবাবুকে কিছুদিন আগে কেউ ফোনে হুমকি দিয়েছিল, কি স্কুল স্ট্রিটের ওলসন হাউসের ছায়া মাড়ালে তাঁর বিপদ ঘটবে। স্বভাবত উনি অরিজিৎ লাহিড়িকে ব্যাপারটা জানিয়েছিলেন। তখন অরিজিৎ ওঁকে আমার নাম ঠিকানা দেন। 

শুনলাম আপনি গিয়েছিলেন ওবাড়িতে। ডেডবডি দেখে এসেছেন। হ্যাঁ। আপনাদের অফিসারদের ধারণা স্রেফ ডাকাতি এবং খুন। “ঠিক তা-ই মনে হয়েছিল আপাতদৃষ্টে। অশােকবাবু হাসলেন। কিন্তু এবার আর তা মনে হচ্ছে না। ডি সি ডি ডি সায়েব বললেন, আপনার সঙ্গে যেন যােগাযােগ আখে চলি।

কর্নেল একটু চুপ করে থেকে বললেন, কতকগুলাে ঘটনা এ মুহূর্তে আমাদের না আছে, যেগুলাের মধ্যে কোনও স্পষ্ট যােগসূত্র নেই। ঠিক আছে মিঃ গুপ্ত। আপনি প্রয়ােজন হলে পরে যােগাযােগ করবেন। আমার ফোন নাম্বার আপনার 

চয় জানা ? ‘হ্যাঁ। লাহিড়িসায়েব দিয়েছে। 

একটা কথা। ডিস্কো কে আপনি জানেন? অশােকবাবু গুম হয়ে রইলেন কয়েক মুহূর্ত। তারপর বললেন, ‘লােকটি কে আমি অন্তত জানি না। তবে কানাঘুষাে শুনেছি, হি ইজ আ বিগ গাই। ওপরতলায় প্রভাব আছে, এটুকু বুঝতে পারি। কিন্তু সম্প্রতি ওলসন হাউসে আপনারা হানা দিয়েছিলেন! 

পুলিশের গােয়েন্দা মুচকি হেসে বললেন, ‘জাস্ট আ শশা বিজনেস বলতে শান। এগুলাে আমাদের মতাে চুনােপুঁটিদের মাঝে মাঝে করতে হয়। আচ্ছা, আমি চলি।…. 

কর্নেল সমগ্র প্রথম খন্ড এর অংশ -৭

অশােক গুপ্ত চলে যাওয়ার পর হালদারমশাই চাপাস্বরে বললেন, ‘সব ফ্যাক্ট আমি পুলিশের দেই নাই কর্নেলস্যার। আপনারে দিমু। আগে দিলেই ভাল 

মি। মাইয়াডা তা হলে হয়তাে মারা পড়ত না। ব্যাড লাক। কনেল বললেন, আপনি এখনও খুব উত্তেজিত হালদারমশাই! আমার মনে , আগে উত্তেজনাটা কাটিয়ে ওঠা দরকার। ‘ক্যান?’ প্রাইভেট ডিটেকটিভ ভুরু কুঁচকে তাকালেন। কর্নেল হাসলেন। আপনার ভাষা। লক্ষ্য করেছি, উত্তেজনার সময় আপনি 

ও বাংলায় কথা বলেন না। | সারমশাই বিব্রতভাবে একটু হাসলেন। তারপর বললেন, ‘হঃ। ঠিক কইছেন— শ। ইউ আর রাইট কর্নেলস্যার। আমার ভীষণ খারাপ লাগছে। মেয়েটিকে 

৩ পারলাম না। অশােকবাবুকে অত করে বললাম, ফ্রি স্কুল স্ট্রিটের ওই বাড়িটা [ কর্নেল স্যারের কাছে যাওয়া যাক। উনি বললেন, ওবাড়িতে গিয়ে আর লাভ শ৬ি চালান গেছে। তবে বর্ণনা শুনলাম, হরি! গলা কাটছে। ওঃ! 

কর্নেল সমগ্র প্রথম খন্ড এর অংশ -৭

Megafone 

হালদারমশাই চোখ বুঝে শিউরে ওঠার ভঙ্গি করলেন। কর্নেল বললেন, কী ফ্যাক্ট দিতে চেয়েছেন বলছিলেন হালদারমশাই। 

‘হঃ! চোখ খুলে কে কে হালদার চাপা স্বরে বললেন, ‘চন্দ্রিকা রায় কইছিল, যে লােকটা তারে টেলিফোন করে, সম্ভবত সে একজন চীনাম্যান। নিউ মার্কেটে ভিড়ের মধ্যেও চন্দ্রিকার মনে হয়েছিল লােকটা চীনাম্যান | না কর্নেল স্যার। চন্দ্রিকা তারে দ্যাখে নাই। কথা শুনিয়াই  কর্নেল ওঁর কথার ওপর বলে উঠলেন, ! তার মানে, লােকটার যে সব কথা অদ্ভুত মনে হয়েছিল চন্দ্রিকার, সেটা কী চীনা ভাষার মতাে? 

 

Read More

সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজের কর্নেল সমগ্র প্রথম খন্ড এর অংশ -৮

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *