অমরেন্দ্র বললেন, ‘যােগেনের হাতের লেখা নয়, এটুকু আমি বুঝতে পেরেছি। আপনিই সেবার যােগেনের হাতের লেখা সনাক্ত করেছিলেন।
কর্নেল সায় দিলেন। বললাম, “দেখতে পারি ? কর্নেল কাগজটা আমাকে দিলেন। লাল ডটপেনে লেখা আছে ।
CHAICHICHINGFANK
বার কতক পড়ার পর বললাম, “দেখুন, আমার মনে হচ্ছে এতে লেখা আছে চাই চিচিং ফাঁক”।
কর্নেল হাসলেন। হুঁ, ঠিক ধরেছ। চাই চিচিং ফাঁক। অমরেন্দ্র হাসলেন না। রুষ্ট মুখে বললেন, সেটাই তাে অদ্ভুত। আমার বােনপাে ও তা-ই পড়ল। কিন্তু মানেটা কী এর ? আরব্য উপন্যাসের আলিবাবা ও চল্লিশ চােরের গল্পে চিচিং ফাঁক বললে নাকি লুঠের মালরাখা ঘরের দরজা খুলে যেত। আমি আলিবাবা না চোরদের সর্দার?
কর্নেল সকৌতুকে বললেন, তা ছাড়া আপনি আলিবাবার ভাই কাশেমও নন।
কক্ষনাে নই। সমস্তটাই দুর্বোধ্য আমার কাছে। অমরেন্দ্র কফিতে চুমুক দিয়ে ফে বললেন, “আপনি বলছিলেন বটুক চৌধুরীর ভূত আমার পিছু ছাড়েনি। আপনি নী মানুষ। ঠিক ধরেছেন। বটুকের লাশ সন্দেহ করে ড্যামের জলে পাওয়া বডিটা পুলিশ ওর চেলাদের হাতে তুলে দিয়েছিল। ঘটা করে দাহও করেছিল ওরা।
কর্নেল সমগ্র প্রথম খন্ড এর অংশ -৪
কিন্তু মার সন্দেহ, বটুক মারা পড়েনি। কোনও কারণে গা-ঢাকা দিয়ে আছে। গতবার আমার কর্মচারী যােগেনকে দিয়ে সে-ই আড়াল থেকে অদ্ভুত সব উড়াে চিঠি লিখত। এখন নিশ্চয় কোনও তান্ত্রিক সাধুর সাহায্যে আমাকে ভয় দেখাচ্ছে। কেন এ আপনিই বিশদ জানেন।
কর্নেল নিভে যাওয়া চুরুট ধরিয়ে বললেন, এ যুগে রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা পারটাই হয়তাে এমন যে পরস্পরের প্রতি রাগ মরে গিয়েও পড়ে না। | সি চেপে বললাম, আমাদের নিউজ ব্যুরাের চিফ নগেনদা রাজনৈতিক রাগ
সে একটা টার্ম ব্যবহার করেন। | অমরেন্দ্র কফির পেয়ালা শেষ করে বললেন, কিন্তু আমি তাে কবে রাজনীতি
কে সরে এসেছি। গত ভােটে আমি তাে বটুকের সুবিধে করে দিতেই শেষ মুহূর্তে মনেশন প্রত্যাহার করে নিয়েছিলাম। ঘরের খেয়ে বনের মােষ তাড়ানাে আমার গান না। বটুকের অবশ: অন্য ব্যাপার। এরিয়ার মাফিয়া ডন ওর হাতে ছিল।
যাইহােক, কর্নেল ! প্লিজ বটুকের ভূতের হাত থেকে আমাকে বাঁচান।
বলে রায়সায়েব উঠে দাঁড়ালেন। একটা ফোন করব। অলরেডি আপনার অসাক্ষাতে একটা করেছি —আপনার ওই লােকটিকে বলেই করেছি অবশ্য। হেমেনকে খবর দিয়ে গাড়ি পাঠাতে বলেছিলাম। দশটা বাজতে চলল। এখনও গাড়ি এল না। অদ্ভুত ছেলে তাে।
কর্নেল বললেন, রাস্তায় জল জমে গেছে হয়তাে। আপনি ফোন করুন।
অমরেন্দ্র রিং করে সাড়া পেলেন। বউমা নাকি? আমি বলছি-হ্যা। হেমেন— আচ্ছা ঠিক আছে। ফোন রেখে বললেন, ‘বেরিয়েছে এক ঘণ্টা আগে। আপনি ঠিকই বলেছেন। রাস্তায় জল জমে নিশ্চয় কোথাও আটকে গেছে। বৃষ্টি থেমেছে। মনে হচ্ছে। আমি বরং আর অপেক্ষা না করে বাসে বা মিনিবাসে চলে যাই। আপনাকে সব জানালাম। আমি কালই দুপুরের ট্রেনে ফিরে যাব। আপনি কবে যাচ্ছেন বলুন? | কর্নেল বললেন, ‘চেষ্টা করব শীগগির যেতে।
কর্নেল সমগ্র প্রথম খন্ড এর অংশ -৪
রাঙাটুলির ওদিকে জঙ্গলে একরকম অর্কিড দেখেছিলাম। তখন তত মনােযােগ দিইনি। সম্প্রতি একটা বইয়ে ওই অর্কিডের ছবি দেখলাম। আশ্চর্য ব্যাপার। এই অর্কিড | ‘গিজ কর্নেল! অর্কিড পরে হবে। সঙ্গে লােক দেব। যত খুশি কালেক্ট করবেন। আগে বটুকের ভূতটাকে শায়েস্তা করুন। অমরেন্দ্র সিংহরায় আমার দিকে ঘুরে নমস্কার করলেন। জয়ন্তবাবুকেও আমন্ত্রণ রইল। আচ্ছা, চলি।
ব্যস্তভাবে বেরিয়ে গেলেন কর্নেলের রায়সাহেব। কর্নেল সেই কাগজটা আর আতশ কাচ টেবিলের ড্রয়ারে ঢােকালেন। এতক্ষণে হাসির সুযােগ পেলাম। হাসতে হাসতে বলালম, আপনার বরাতে সব অদ্ভুত মক্কেল জোটে। এই রহস্যটাও কম অদ্ভুত নয়। চিচিং ফাঁক রহস্য।
কর্নেল গম্ভীর মুখে বললেন, ব্যাপারটা সম্ভবত হাস্যকর নয়, ডার্লিং। রাঙাটুলিতে গেলে তুমি খানিকটা আঁচ করতে পারবে। বটুক চৌধুরী রায়সায়েবের শ্যালক। হেমেনের কথা শুনলে একটু আগে। হেমেন্দ্র ওঁর একমাত্র ছেলে এবং একজন মস্ত ব্যবসায়ী। আমদানী-রফতানির কারবার আছে। যতটা জানি, বাবার সঙ্গে সম্পর্ক রাখতে চান না। রায়সায়েবের কাছে থাকেন ওঁর একমাত্র মেয়ে সুনন্দা। ভদ্রমহিলা বিধবা। সতুর কথা শুনেছসত্যকাম। সুনন্দা দেবীর ছেলে। মাইনিং এঞ্জিনিয়ার। দাদামশাই তাকে মানুষ করেছেন। যাইহােক, রাত বাড়ছে। তােমাকে সল্ট লেকে ফিরতে হবে। ইস্টার্ন বাইপাস ধরে যাও।
কর্নেল সমগ্র প্রথম খন্ড এর অংশ -৪
ওঠে দাড়িয়ে বললাম, হেমেনবাবু কোথায় থাকেন? ‘বেহালায়। কাজেই তােমাকে কখনই বলা যেত না রায়সায়েবকে একটা লিষ্ট দাও।’
হাসলাম। ‘ফ্রি ল স্ট্রিটের মেয়েটির মতাে কোনও মেয়ে হলে আমি বেহালা কেন, কাকদ্বীপে পৌছে দিয়ে আসতে রাজী।
কর্নেল জিভ কেটে বললেন, “আশ্চর্য জয়ন্ত তুমি একজন কলগার্লকে ভুলতে আমােনি দেখছি।
‘আমার কিন্তু ওকে মােটেই কলগার্ল বলে মনে হয়নি। আপনি সম্ভবত ভুল নে। মেয়েটি সত্যি ভয় পেয়ে আমাদের গাড়ির কাছে ছুটে এসেছিল। ওর খাবার্তা, তা ছাড়া চুপচাপ বসে থাকা—সব মিলিয়ে একজন বিপন্ন মেয়েরই এবভাব লক্ষ্য করেছি।
কথাগুলাে জোর দিয়ে বললাম। শােনার পর কর্নেল একটু হাসলেন। বিপন্ন ই পারে। কলগার্লদের জীবন তাে সবসময় বিপন্ন।.....
ন্য
এর্নেলের বাড়ি থেকে বেরিয়ে পার্ক সার্কাস হয়ে ইস্টার্ন বাইপাস ধরে যেতে যেতে আপথ ফ্রি স্কুল স্ট্রিটের মেয়েটির কথাই ভাবছিলাম।
Read More