সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজের কর্নেল সমগ্র ২য় খণ্ড এর অংশ-৮

কয়েকটা ঘরেই তালাবন্ধ আছে। 

জয়া বলল, “মায়ের কাছে শুনেছিলাম ও ঘরে আমার এক পিসি নাকি সুইসাইড করেছিলেন। তখন আমাদের জন্ম হয়নি। পরে বাবা ঘরটা অস্ত্রাগার করেন। আমাদের পূর্বপুরুষের সব অস্ত্রশস্ত্র এই ঘরে আছে।” 

কর্নেল সমগ্র

বিজয় বলল, “কে জানে! আমি ওসব খবর রাখি না।” কর্নেল বললেন, “জয়া, আর কথা বলতে আশা করি কষ্ট হচ্ছে না?” জয়া বলল, “না।” 

“তােমাকে অজ্ঞান করে ঘর থেকে কিছু নিয়ে গেছে কি না জিগ্যেস করলে তখন তুমি মাথা দুলিয়ে হ্যা বললে ! তার মানে তুমি জাননা চোর কী নিতে এসেছিল ?” 

জয়া মুখ নামিয়ে বলল, “জানি। জিনিসটা আমার কাছেই ছিল।” “কী সেটা?” 

জয়া একটু চুপ করে থেকে বলল, “কাকাবাবু একটা ছােট্ট কৌটোর মতাে জিনিস লুকিয়ে রাখতে দিয়েছিলেন। সেটা জামার ভেতর বুকের কাছে লুকিয়ে সবে ওপরে এসেছি”। 

বিজয় নড়ে বসে বলল, “তাই তাে! কাকাবাবু তাে এলেন না। নিশ্চয় খবর পেয়েছে কী হয়েছে।” 

জয়া বলল, “কাকাবাবু ভাগলপুর গেছেন। যাবার আগে আমায় জিনিসটা দিয়ে গিয়েছিলেন। দরজা বন্ধ করে সেটা কোথায় লুকিয়ে রাখব ভাবছি, হঠাৎ দরজায় কেউ নক করল। রাত্রে হলে জিগ্যেস না করে দরজা খুলতুম না। দরজা যেই খুলেছি, কেউ আমার ওপর এসে পড়ল। তারপর কিছু টের পাইনি। রঙ্গিয়া কখন এসে আমাকে পড়ে থাকতে দেখে ফ্যান চালিয়েছে। জলের ঝাপটা দিয়েছে। জ্ঞান হবার পর সব মনে পড়ল। তখন দেখি জিনিসটা নেই।” 

কর্নেল সমগ্র ২য় খণ্ড এর অংশ-৮

‘জামার ভেতর রেখেছিলে আগের মতাে?” কর্নেল জিগ্যেস করলেন। 

“হ্যা। জয়া কফির পেয়ালা পাশের টেবিলে রেখে বলল, “একপলকের জন্য লােকটার মুখে কালো কুচ্ছিত একটা মুখােশ দেখেছিলুম। তার গায়ে ছাইরঙের কলারওয়ালা গেঞ্জি ছিল।” 

কর্নেল উঠে দাঁড়ালেন। “তুমি বিশ্রাম করাে জয়া! পরে আবার কথা বলব।” 

বারান্দায় গিয়ে কর্নেল একটু দাঁড়ালেন হঠাৎ। বললেন, “বিজয়, খালি ঘরগুলাের চাবি কার কাছে থাকে ? 

বিজয় বলল, সম্ভবত কাকাবাবুর কাছে।” “জয়ের ঘরের পাশের ঘরটা একবার দেখে যাই, এস।” “কিন্তু তালাবন্ধ যে! ভেতরে তাে ঢােকা যাবে না।” “বাইরে থেকেই দেখে যাব।” বারান্দা দিয়ে এগিয়ে গেলেন দুজনে। বারান্দা পুব-পশ্চিমে এগিয়ে বিজয়ের  

বের পর ডানদিকে দক্ষিণে ঘুরেছে। পাশাপাশি দুটো ঘরের দরজা সেখানে। বিজয় প্রথম ঘরের দরজাটা দেখিয়ে বলল, “এটাই সেই ঘর। পাশেরটায় জয় থাকে। ৩ার ঘরে তালা এঁটে বেরােয়।” বলে সে জয়ের ঘরের পর্দাটা তুলে দেখিয়ে দিল। 

জয়ের ঘরের পর বারান্দাটা শেষ হয়েছে জাফরিকাটা দেয়ালে। চৌকোনা নকশাকাটা ঘুলঘুলি-গুলােতে বাইনােকুলার দিয়ে কর্নেল বাইরেটা দেখে বললেন, “পুকুরের পাড়ে ওই বাড়িটাই কি তােমাদের ঠাকুরদালান!” | বিজয় উঁকি মেরে দেখে বলল, “হ্যা। ওই যে পাশের ঘরের দরজার সামনে মাধব পাণ্ডাজি দাঁড়িয়ে আছে দেখছেন, উনিই মাইনে করা পূজারী।” 

“পুব-দক্ষিণ কোণের টিলাটা কি বাড়ির ভেতর, না বাইরে?” 

কর্নেল সমগ্র ২য় খণ্ড এর অংশ-৮

“বাড়ির চৌহদ্দি-পাঁচিলের ভেতরই। ওই টিলার মাথায় ছােট্ট মন্দিরটা দেখতে পাচ্ছেন, ওটা হরমন্দির। আর ঠিক এমনি একটা ছােট টিলা আছে দক্ষিণ-পশ্চিম কোনায়। সেটা এখান থেকে দেখা যাচ্ছে না। ওটার মাথায় ওইরকম ছােট্ট একটা মন্দির আছে। সেটা গৌরীমন্দির। লােকে বলে হরটিলা গৌরীটিলা।” 

কর্নেল একটু হাসলেন। “তােমার বাড়ির এলাকা দেখছি বিশাল। জঙ্গল পাহাড় জীবজন্তু আছে, আবার—” 

কথা কেড়ে বিজয় বলল, “একটা আলাদা পৃথিবী বলতে পারেন। তবে ভীষণ গােলমেলে পৃথিবী। এখনও অব্দি পুরাে এলাকার অনেকটাই আমার অচেনা। তেমনি রহস্যময়ও মনে হয়।” 

কর্নেল ঘুরে পা বাড়িয়ে বললেন, “একটা নকশা পেলে ভাল হত।” বিজয় বলল, “কিসের ?” 

“তােমাদের বাড়ির পুরাে চৌহদ্দির। বিশেষ করে বাড়িটার নিচের তলা এবং এই দোতলার।” 

“করে দিচ্ছি। আধঘণ্টা সময় দিন।” “তুমি তাে বললে অনেকটাই অচেনা তােমার। বিজয় হাসল। “জয়ার হেল্প নেব। তাছাড়া কলাবতীকেও ডাকব। দুজনের সবটাই নখদর্পণে। । 

জয়ের ঘরের পাশের ঘরটার দরজায় পর্দা নেই। মরচে ধরা তালা ঝুলছে। দেখে মনে হল, বহুকাল তালাটা খােলা হয়নি। কপাটের ফাকেও মাকড়সার জাল রয়েছে। ভেতরে কী সব অস্ত্র আছে কে জানে। 

 বারান্দা ঘুরেছে পশ্চিমে এবং বাঁকের মুখে নিচে নামার আরেকটা সিঁড়ি। কর্নেল সেই সিঁড়িতে নামতে যাচ্ছিলেন। বিজয় বলল, “ওটা বন্ধ রাখা হয়েছে। দাদার কুকুর নিচে গিয়ে বৈজু ঠাকুরকে ভয় দেখাত। শেষে কাকাবাবু নিচে সিঁড়ির দরজায় তালা আটকে দিয়েছেন।” 

বারান্দায় অজস্র ধাম। জয়ার ঘরের পর প্রথম সিঁড়ি। সেখান দিয়েই ওঠানামা করা হয়। কলি নিচে গিয়ে বিজয়কে বললেন, “তুমি এবার একটা কাজ করাে । 

কর্নেল সমগ্র ২য় খণ্ড এর অংশ-৮

 একে একে দারােয়ান নছি সিং, কলাবতী, রঙ্গিয়া, বৈজুঠাকুর, আর বুদ্বুরাম ডাক্তারবাবুকে ডেকে আনলে তখন তাকেও পাঠিয়ে দেবে। ওদের কাছে কিছু জানবার আছে।” | সিডির পাশেই গেস্টরুমে কর্নেল আছেন। ঘরে ঢুকে ক্যামেরা বাইনােকলার ইত্যাদি টেবিলে রেখে ঝটপট পােশাক বদলে তৈরি হলেন। কিছুক্ষণের মধ্যে একে-একে নছি সিং, কলাবতী ও তার মেয়ে রঙ্গিয়া, বৈজু শেষে বুদ্বুরাম এল বিজয়ের সঙ্গে। 

না—কেউ আজ সকাল থেকে সন্দেহজনক কিছু দেখেনি। প্রত্যেকেই বলল যে, অন্দরমহলে একটা চুহা বা বিন্নি ঘুসলেই তারা টের পাবে। কেননা অচেনা লােকের বাড়ি ঢােকার প্রশ্নই ওঠে না। কারণ পুবের খিড়কি আর দক্ষিণের খিড়কি ভেতর থেকে বন্ধ থাকে। বাকি রইল সদর দরজা। সেখানে করিডাের মতাে প্যাসেজের মুখে সারাক্ষণ নছি সিং বসে আছে। কেউ এলে তার অজান্তে বাড়ি ঢুকতে পারবে না। পেটিকোর সামনে হলঘরের দরজা ভেতর থেকে বন্ধ। পাশে বিপ্রদাসজির ঘরের বাইরের দরজা ভেতর থেকে বন্ধ। অতএব বাইরের কেউ বাড়ি ঢােকেনি বা বেরিয়েও যায়নি। 

ঘণ্টাখানেক পরে বিজয় নকশা নিয়ে হাজির হল। কর্নেল নকশার ওপর ঝুঁকে পড়লেন।… 

 

Read More

সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজের কর্নেল সমগ্র ২য় খণ্ড এর অংশ-৯

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *