আউটহাউসের টিলায় উঠতে উঠতে হঠাৎ রাঘবেন্দ্র ডাকলেন, “কর্নেল সরকার!”
“বলুন?” “বুদ্রামকে কেন আপনার সন্দেহ?” কর্নেল একটু হাসলেন। “সামান্য একটা কারণে। তার গায়ে একটা ছাইরঙা স্পাের্টিং গেঞ্জি দেখেছি আজ সকালে। অবশ্য কাছে থেকে নয়, বাইনোকুলারে দূর থেকে। তবে আমার বাইনােকুলারটি অত্যন্ত শক্তিশালী এবং বিশ্বাসযােগ্য।”
“আপনার হেঁয়ালি বােঝা কঠিন।” রাঘবেন্দ্র হাসতে লাগলেন।…
জয় কঁাধে কাকাতুয়া নিয়ে নির্বিকার ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে কর্নেল ও রাঘবেন্দ্রকে দেখছিল। নানকু ঘাস কুচো করছিল। পাশে গামলায় ভেজানাে মটর আর হােলা। মুখ ঘুরিয়ে সে একবার দেখল মাত্র।
কর্নেল বললেন, “এক মিনিট মিঃ শর্মা। আমি আগে জয়কে কয়েকটি প্রশ্ন করে নিই।”
রাঘবেন্দ্র বললেন, “ওকে। করে নিন।”
কর্নেল বললেন, “জয়, তুমি কি জানাে হরটিলার শিবলিঙ্গের বেদিটা সিন্দুক নয়, আসলে একটা পাতাল-খন্দক এবং নিচে গঙ্গা বইছে?”
জয় অবাক হল। কয়েকমুহুর্ত তাকিয়ে থাকার পর মাথাটা নাড়ল। “তুমি ওই বেদির চাবি থাকার কথা জানতে ?” ‘না। শুধু জানতাম বেদির তলায় নাকি গুপ্তধন আছে,
“কে বলেছিল তােমাকে?” “মনে নেই। ছােটোবেলায় শুনেছি কারাে কাছে।” “তাহলে চাবির কথা জানতে না?”
“না, না, না। এক কথা হাজারবার বলতে ভাল লাগে না।” বলে রাঘবেন্দ্রের দিকে ঘুরল। আমাকে গ্রেফতার করতে এসে থাকলে করুন। দেরি করে লাভ নেই।”
কর্নেল সমগ্র ২য় খণ্ড এর অংশ-২০
কর্নেল বললেন, “আরও প্রশ্ন আছে জয়!”
“ঝটপট করুন।” বলে সে বাঁকা হাসল। “পরিতােষ সম্পর্কে প্রশ্ন থাকলে বলে দিচ্ছি, সে ভাগলপুরে চলে গেল। রমলার মেয়েকে নিয়ে চলে যাবে কলকাতা। তাকে”
বাধা দিয়ে কর্নেল বললেন, “জয়, বিজয়ের কাছে তােমার তাে কোনাে কথা গােপন থাকেনি কোনােদিন—তাই না?”
‘হা, কেন?”
“৯ই সেপ্টেম্বর রমলা আসছে, তাকে বলেছিলে?” জয় তাকালাে কর্নেলের দিকে। নাসারন্ধ্র ফুলে উঠল। বলল, “হ্যা।” “বিজয় দাড়ি রাখতে শুরু করেছে, ৯ই সেপ্টেম্বরের পরে–তাই তাে?” জয় চুপ করে থাকল। “জবাব দাও, জয়!” নানকু কাজ থামিয়ে এদিকে ঘুরে কান করে শুনছিল। সে বলে উঠল, “কুমারসাব। আর মুখ বন্ধ করে থাকবেন না। এরপর আপনার জানটাও চলে যাবে”
জয় ঘুরে গিয়ে তাকে লাথি মারল। নানকু লাথি খেয়ে পড়ে গেল। তারপর দ্রুত উঠে একটু তফাতে সরে গেল। আর আমি চুপ করে থাকব না। সব বলে দেবকে ময়ালসাপের খাঁচা খুলে দিয়েছিল, কে কাকাতুয়ার জিভ কেটে যােবা করে দিয়েছে, কে বহুরানীকে স্টেশন থেকে : করে এনে–
জয় আবার তাকে লাথি মারতে গেল, কর্নেল ধরে আটকালেন। জয় হাঁপাতে হাঁপাতে বলল, “নেমকহারাম! মিথ্যাবাদী! যা—আজ থেকে তাের চাকরি খতম! দূর হয়ে যা গিদ্ধড় কা বাচ্চা! বােবা কাকাতুয়া ভয় পেয়ে তার কাঁধ থেকে উড়ে ক্যানারি পাখির খাঁচার ওপর বসল। তখন নানকু পাখিটাকে ধরে দাঁড়ে বসাতে গেল।
কর্নেল সমগ্র ২য় খণ্ড এর অংশ-২০
কর্নেল এবার পকেট থেকে একটা ভাজ করা কাগজ বের করে বললেন, “এই লেখাটা তুমি চিনতে পারাে কি না দেখ তাে জয়!”
জয় তাকিয়ে দেখে বলল, “আমি বাংলা পড়তে পারি না।”
“মিথ্যা বােলাে না জয়! তােমরা দুভাই-ই বাংলা শিখেছিলে কলকাতায়।” কর্নেল তার কাঁধে হাত রাখলেন। জয় মুখ নামিয়ে কাদতে থাকল। কর্নেল বললেন, “এই পদ্যটা বিজয়ের হাতের লেখা—তাই না ?””জয় মাথাটা একটু দোলালাে। এবার কর্নেল রাঘবেন্দ্রের দিকে ঘুরে বললেন, “আমার প্রশ্ন শেষ। আপনি স্টেটমেন্ট নিতে চাইলে নিতে পারেন এবার।”
রাঘবেন্দ্ৰ কঁধ ঝাকিয়ে দুহাত একটু দুলিয়ে হাসতে হাসতে বললেন, “আগে আপনার কাছে পুরাে ব্যাকগ্রাউন্ড না নিয়ে আমি আর একপাও বাড়াতে চাইনে কর্নেল।”
মর্মান্তিক ॥
আগাগােড়া সব শােনার পর রাঘবেন্দ্র উত্তেজিতভাবে বললেন, “তাহলে এখনই গিয়ে ছােটকুমারসাবকে গ্রেফতার করা দরকার।”
কর্নেল বললেন, “কেন?”
রাঘবেন্দ্র ভীষণ অবাক হয়ে গেলেন। “কেন করব না? তিনিই তাে রমলা দেবীকে” কর্নেল হাসলেন। বাধা দিয়ে বললেন, “ইন্ডিয়ান পেনালকোড অনুসারে মার্ডার একটা কগনিজিবল অফেন্স। পুলিশ কারুর কাছে অভিযােগ না পেলেও নিজে থেকে অ্যাকশান নিতে পারে। ঠিক কথা। কিন্তু এক্ষেত্রে রমলার ডেডবডি কোথায় ? ডেডবডি পেলে তবে তাে কাউকে গ্রেফতারের কথা ওঠে। তাছাড়া জয় তাে নালিশ করছে না। করলেও প্রথমে দরকার ডেডবডি।” ।
আউটহাউসের সেই ঘরটায় বসে কথা বলছিলেন তারা। জয় দ্রুত বলল, “না। আমার কোনাে নালিশ নেই কারুর বিরুদ্ধে।
কর্নেল সমগ্র ২য় খণ্ড এর অংশ-২০
রাঘবেন্দ্র বললেন, “আপনাকে আমরা প্রসিকিউশন উইটনেস করতে পারি।” “বাট ইউ নিড দি ডেডবডি। পাতাল-খন্দকে ডুবুরি নামাতে পারেন অবশ্য।” রাঘবেন্দ্র গম্ভীর হয়ে বললেন, “চেষ্টা করে দেখব।”
“কিন্তু ডেডবডি যতক্ষণ না পাচ্ছেন, বিজয়কে গ্রেফতার করবেন কোন আইনে?”
রাঘবেন্দ্র বিব্রত হয়ে একটু হাসলেন। তারপর বললেন, “কেন? বিপ্রদাসকে মার্ডারের চার্জ আনা যায় না?”
না। কারণ আমি তার ডিফেন্স উইটনেস। বিজয় কাল সারা সকাল থেকে আমার সঙ্গে ঘুরছিল। বিপ্রদাসবাবুকে খুন করেছে বুদ্ধরাম এবং জয়াকে যে অজ্ঞান করেছিল—সেও বুদ্রাম। কাজেই আইনত বিজয়কে ততক্ষণ গ্রেফতার করতে পারছেন না, যতক্ষণ না বুদ্বুরামকে গ্রেফতার করে তার কাছে কাফেসন আদায় করতে পারছেন। আমি আইনের কথাই বলছি মিঃ শর্মা!”
রাঘবেন্দ্র হাসতে হাসতে বললেন,“ওকে, ওকে! কিন্তু আপনি তাে দেখতেই পাচ্ছেন, বিজয়সাবই বুদ্বুরামের সাহায্যে”
কথা কেড়ে কর্নেল বললেন, “লেট বুদ্ধরাম কনফেস। আগে তাকে গ্রেফতার করুন। সে কী বলছে আগে জানা দরকার।
Read More