শরদিন্দুর মদ খাওয়া সম্পর্কে তােমার কী ধারণা?”
জয়া একটু চুপ করে থেকে বলল, “ওর মদ খাওয়ার কথা আমি বিশ্বাস করি না।”
“কিন্তু মর্গের রিপাের্টে পাওয়া গেছে, ওর পেটে অ্যালকোহল ছিল। “বিশ্বাস করিনি। এখনও করি না।”
“মাধবজি দেখেছিলেন, যেরাতে শরদিন্দু মারা যায়, সেরাতে-তখন দশটা বাজে, জয়ের সঙ্গে ব্যালকনিতে বসে মদ খাচ্ছিলাে।
জয়া নিস্পলক চোখে তাকাল। “..মাধবজি বালেছেন?” “হ্যা। উনি দেখেছিলেন।”
জয়া মুখ নামিয়ে আস্তে বলল, “সেদিন সন্ধ্যায় আমার মেজাজ ভাল ছিল না। ওকে নিয়ে কানাজোল জুড়ে স্ক্যান্ডাল ছড়িয়েছিল। লােকে আড়ালে আমার নামেও কদর্য তামাশা করত। এমন কি আমাদের বাড়িতেও গােপনে আলােচনা চলত দারােয়ানের ঘরে। রঙ্গিয়া এসে বলে যেত। তো সেদিন সন্ধ্যায় খামােকা।
সঙ্গে সা’: লুম। বললুম, আমাকে যদি কোথায় না নিয়ে যেতে পারাে, হলে চলে । । জয়া ধরা গলায় বলতে থাকল, “সেরাতে ও খেতে এল না। মাধবজির এখানে আছে খবর পেলুম। আমিও খাইনি। শরীর খারাপ বলে দরজা আটকে তয়ে পড়লুম। অনেক রাতে দরজায় নক করে ডাকল। আমি দরজা খুলিনি।” | জয়া চুপ করলে কর্নেল বললেন, “তার?” । তারপর আর সাড়া পেলুম না। মিনিট পাঁচেক পরে উঠে গিয়ে দরজা খুলে দেখলুম, বারান্দায় নেই। ভাবলুম, ছােড়দার ঘরে শুয়েছে। সেরাতে আমার কী য হয়েছিল!” | “জয়ের সঙ্গে শরদিন্দুর সম্পর্ক কেমন ছিল?”
কর্নেল সমগ্র ২য় খণ্ড এর অংশ-১১
“বড়দা ভীষণ খেয়ালি। মাঝেমাঝে ওকে ডেকে নিয়ে গিয়ে গল্প করত।” । “আচ্ছা জয়া, কেন তােমার সন্দেহ যে শরদিন্দু চিতার আক্রমণে মারা যায়নি ?” | জয়া একটু উত্তেজিত হল। “কেন ও অত রাতে বড়দার জুতে যাবে?
ইসাইড করার ইচ্ছে থাকলে অন্যভাবে কি করা যেত না? তাছাড়া ওর ডিতে যেসব ক্ষতচিহ্ন ছিল, তা চিতার নখ বা দাঁতের বলে আমার মনে হয়নি।” । “কিন্তু মর্গের ডাক্তার তাে—”
“ডাক্তারের রিপাের্ট আমি বিশ্বাস করি না। কেউ তাকে ঘুষ খাইয়ে মিথ্যা রিপাের্ট লিখিয়েছে।”
“তুমি কি বলতে চাইছ শরদিন্দুকে খুন করা হয়েছিল।” “হ্যা। তাছাড়া কিছু হতেই পারে না।” “কেন ওকে খুন করবে কেউ ?”
আবার একটু চুপ করে থাকার পর জয়া আস্তে বলল, “আমার সন্দেহ হয় বড়দা জানে, কে কেন ওকে খুন করেছে। বড়দা খুনীকে গার্ড করেছে। বড়দাই হয়তো ব্যাপারটা ঢাকতে চিতাবাঘের কঁাধে দোষ চাপিয়েছে।
কর্নেল তাদৃষ্টে ওকে লক্ষ্য করছিলেন। বললেন, “কো বড়দাকে সন্দেহ হয়, জয়া?”
বড়দার হাবভাব দেখে। সেদিন থেকে বড়দার পাগলামি বেড়ে গেছে। তাছাড়া লক্ষ্য করেছি, মাঝে মাঝে লুকিয়ে কাঁদে। রাত্রে মাতাল-অবস্থায় চুল আঁকড়ে ধরে বলে, আর আমার বাঁচতে ইচ্ছে করছে না, আমি শিগগির মরে যাব।”
“তুমি শুনেছ নিজের কানে ?”
‘হ্যা”। জয়া গলার স্বর আরও চেপে বলল, “দুদিন আগে রাত বারােটা গাদ ঘুম ভেঙে গেল। বৃষ্টি হচ্ছিল। দরজা খুলে বারান্দায় গেলুম। হঠাৎ শুনি বড়দার ঘর থেকে কান্নার আওয়াজ আসছে ‘ ছুটে ওর ঘরের দিকে গেলুম। চমকে উঠলুম বড়দার কথা শুনে। বড়দা কঁদিতে কাদতে বলছে, আমিই জয়াকে বিধবা করে ফেলেছি। ভগবান, আমাকে শিগগিরি মেরে ফেললাে! দরজায় নক করে ওকে ডাকলাম। অমনি আলাে নিভে গেল ঘরের ভেতর। বড়দার কোনাে সাড়াই পেলুম না। তখন অবাক হয়ে ফিরে এলাম।” “তােমার মনে হয় না হঠাৎ ঝোঁকের বশে জয় মানুষ খুন করতে পারে?”
কর্নেল সমগ্র ২য় খণ্ড এর অংশ-১১
জয়া জোরে মাথা নেড়ে বলল, “না। বড়দা মনে মনে ভীষণ ভিতু। খুব দয়ালু ছেলে বড়দা। ওই যে চিড়িয়াখানা করেছে, জন্তু আর পাখিগুলােকে কী যে ভালবাসে ভাবতে পারবেন না। তাছাড়া ওর মুখেই যত হাঁকডাক। ভেতর ভেতর খুব ভিতু আর গােবেচারা।”
কালে চোখ বুজে দাডিতে হাত বুলােচ্ছিলেন। হঠাৎ চোখ খুলে বললেন, “জয়ের কাকাতুয়ার জিভ কেটে যােবা করে দিয়েছিল কেউ। এসম্পর্কে তােমার কী ধারণা?” | জয়া ঈষৎ লজ্জিত ভঙ্গিতে বলল, “রঙ্গিয়ার কাছে শুনেছি বড়দা নাকি পাখিটাকে অসভ্য কথা শেখাত।” ।
“বেশ। তাই যদি হয়, কে পাখিটার জিভ কেটেছিল বলে তােমার সন্দেহ হয়?”
জয়া বেশ কিছুক্ষণ চুপ করে থাকার পর আস্তে বলল, “আমার সন্দেহ কাকাবাবুকে।”
“বিপ্রদাসবাবুকে ?” জয়া মাথাটা একটু দোলাল। “কেন, বলতে আপত্তি আছে?”
জয়া মুখ তুলল এবং কিছু বলতে গিয়ে ঠোট ফাক করল। কিন্তু বলল না। সেই সময় বিজয় হন্তদন্তভারে ঘরে ঢুকে বলল, “জানিস জয়া? আমাদের বাড়িতে নিচা ভূত আছে।”
কর্নেল বললো, “ক ব্যাপার, বিজ?”
বিজয় ধপাস করে একটা গদি-আঁটা চেয়ারে বসে বলল, “ইশ! এখনও বুকটা কাপছে। ভাবা যায় না।’
কর্নেল সমগ্র ২য় খণ্ড এর অংশ-১১
জয়া বিরক্তভাবে বলল, “কী হয়েছে বলবে তাে?” | বিজয় চাপা গলায় বলল, “কয়েক লাইন লিখেছি—বেশ এগােচ্ছে লেখা, হঠাৎ আলাে নিভে গেল ঘরের। তারপর খসখস শব্দ-কেউ যেন ঘরে ঢুকেছে। আমি সঙ্গে সঙ্গে পালিয়ে এসেছি। ইশ! এখনও বুকটা–”
কর্নেল উঠে দাঁড়িয়ে বললেন, “এস তাে দেখি।” বিজয় কুষ্ঠিতভাবে একটু হেসে বলল, চলুন। কিন্তু আমি পেছনে থাকব।” জয়াও অনুসরণ করল। কিন্তু কর্নেল বললেন, “য়া, তুমি বারান্দায় থাক— অল তােমার দরজায় তালা এঁটে তবে এস।”
ওয়া বিস্মিত হল। বলল। “ঠিক আছে। আমি এখানেই থাকছি।” ওয়ার ঘরের পাশেরটা তালাবন্ধ। তার পরেরটা বিজয়ের ঘর। ঘরে আলাে পছে দেখে বিজয় অবাক হয়ে বলল, “এ কী! আলাে জ্বলছে দেখছি যে ! রি অদ্ভুত ব্যাপার তো !
কর্নেল ও বিজয় ঘরে ঢুকল। বিজয় বলল, “তার চেয়ে অদ্ভুত, আমি টেবিলল্যাম্প জ্বেলে লিখছিলুন। কিন্তু দেখুন কর্নেল, টেবিললাস্পের প্লাগটা সহবাের্ডে অফ করা আছে। ওটা অন করেই লিখছিলম। আর বড় আলােটা কেউ জ্বেলে দিয়ে গেছে।”
কর্নেল টেবিলের দিকে তাকিয়ে ছিলেন। বললেন, “বিজয় কি বাংলাভাষায় কবিতা লেখ ?”বিজয় অবাক হয়ে বলল, “না তাে। হিন্দি আমার মাতৃভাষা।
Read More