সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজের কর্নেল সমগ্র ২য় খণ্ড এর অংশ-১২

হিন্দিতেই 

“ওই বাংলা দুলাইন পদা তাহলে তােমার নয়। ভূতটাই লিখে গেছে।” বিজয় কবিতার খাতার ওপর ঝুঁকে গেল। বলল, “কী আশ্চর্য !” কর্নেল বললেন, “ভূতটা রসিক। পড়ে দেখ, কী লিখেছে।” বিজয় বাংলা পড়তে পারে। সে পড়ল :

কর্নেল সমগ্র

“বামুন গেছে যমের বাড়ি। 

বুড়াে ঘুঘু ছিড়বে দাড়ি” ।  বিজয় হাসতে হাসতে বলল, “ধাঁধা নাকি? কিছুই তাে বােঝা যাচ্ছে না। ‘ ল !” 

‘র্নেল ম হয়ে বললে, “তােমার খাতায় ছড়া লিখে আমার সঙ্গে: তা করে গেছে কেউ। তুমি হয়তাে জানাে না বিজয়, আমাকে পুলিসমহলে সিকতা করে বুড়ো ঘুঘু বলে থাকে। কিন্তু বামুন গেছে যমের বাড়ি—মাই ডানস! কর্নেল নড়ে উঠলেন। “বিপ্রদাস মুখুয্যেমশাইয়ের কোনো বিপদ ৫ানি : কিংবা মাধবজিবি, তুমি বৃদ্ধরামকে বর্মা, সবজি ঠিক আছেন কি না খোজ নিয়ে আসুক!” 

 বিজয় বারান্দার থামের পাশে কার্নিশে ঝুকে বুদ্ধকে ডাকতে থাকল। কর্নেল পদাটা ছিড়ে নিয়ে বেরিয়ে এলেন। তখন জয়া বলল, “কী হয়েছে, কর্নেল ?” কলে এগিয়ে গিয়ে বললেন, “ঘরে চলাে, বলছি!” 

 পরিতােষ এবং রমলা ॥ পরম ফিরে এসে খবর দিয়েছিল, মাধবজি দোঁহা আওড়াতে আওড়াতে ব্রেটি পাচ্ছেন। তবিয়ত ঠিক আছে। বুদ্বুরামের মুখ দেখে মনে হচ্ছিল সে বিরক্ত 3ছে কর্নেলের ব্যাপার-স্যাপার দেখে। এই বুড়াে ভদ্রলােক এসে তার ঝামেলা 

কর্নেল সমগ্র ২য় খণ্ড এর অংশ-১২

বাড়াচ্ছেন, যেন এরকম তার মনােভাব। খামােকা তাকে ভাগলপুর পাঠাতে চাওয়া! দৌড়াতে দৌড়ুতে ঠাকুরদালানে পাঠানাে হয়েছেটা কী এত ? 

কথাটা রঙ্গিয়া চুপিচুপি জয়াকে বলতে এসেছিল, কর্নেল তখনও জয়ার কাছে বসে কথা বলছিলেন তার ঘরে। জয়া বলেছিল, “বৃদ্ধটা খুব কুঁড়ে আসলে। নছি সিংয়ের সঙ্গে দাবা খেলতে পেলে আর কিছু চায় না। কিছুক্ষণ পরে, কর্নেল নিচের তলায় উকি মেরে দেখলেন, তাই বটে। সদর দরজার পাশের ছােট্ট ঘরটায় নছি সিং আর সে থাকে। সেই ঘরে দুজনে দাবা নিয়ে বসেছে। 

বিজয় তখন তার ঘরের দরজা বন্ধ করে কবিতা লিখতে বসেছে ফের। কর্নেল গেস্টরুমে কিছুক্ষণ একা গুম হয়ে বসে থাকলেন। তারপর টর্চ নিয়ে বেরুলেন। বাড়ি একেবারে সুনসান। কিচেনে কলাবতী, রঙ্গিয়া আর বৈজু ঠাকুরকে চাপা গলায় কথা বলতে দেখা যাচ্ছিল। নানকুর ঘরের দরজা বন্ধ। ভেতরে আলাে জ্বলছে। সে কী করছে বােঝা গেল না। বিজয় বলেছে, নানকু রাতের খাওয়া সেরে নিয়ে চিড়িয়াখানার আউট-হাউসে শুতে যায় ইদানীং শরদিন্দুর মৃত্যুর পর তার ওপর জয়ের নাকি এই কুম। 

বৈজুর ঘর আর নানকুর ঘরের মাঝামাঝি খিড়কিরাস্তার করিডাের। কর্নেল নিঃশব্দে সেই দরজা খুলে এবং ভেজিয়ে দিয়ে বেরুলেন। সেপ্টেম্বরের নক্ষত্রজ্বলা আকাশের নিচে জংলা জমি জুড়ে যেন রহস্য থমথম করছে। ভ্যাপসা গরম। বেশ কিছুদিন এ তল্লাটে বৃষ্টি হয়নি। কর্নেল টর্চ জ্বালতে গিয়ে জ্বাললেন না। জয়ের ঘরের ব্যালকনি থেকে নেমে আসা ঘােরানাে লােহার সিঁড়ির কাছে গিয়ে একটু দাঁড়ালেন। অমনি জয়ের কুকুরটার গজরানি কানে এল। কিন্তু কুকুরটা ওপরে গজরাচ্ছে না, সামনের দিকে জংলা জমিতেই সে কোথাও আছে। জয়ের ঘরে আলাে জ্বলছে। কুকুরটা কি সারারাত বাইরে ছাড়া থাকে ? 

কর্নেল সমগ্র ২য় খণ্ড এর অংশ-১২

কর্নেল নানা ও পুকুরের সঙ্গমস্থলে যেতেই ফের কুকুরটা গরগর করে উঠল। পুকুরপাড় ধরে একটু এগিয়ে কলে বুঝালেন, কুকুরটাহাটিলার ওখানে আছে। কারণ তিনি যত এগােচ্ছিলেন, তত তার গজরনি বাড়ছিল। তারপর তার গায়ে টর্চের আলাে পড়ল। কর্নেল থমকে দাঁড়িয়ে বললেন, “জয় নাকি?” 

টর্চ নিভে গেল। কর্নেল পা বাড়িয়ে বললেন, “এখানে কী করছ জয়।?” 

অন্ধকার থেকে জয় বলল, “য়াই করি, আপনার কী মশাই ? আপনাকে সাবধান করে চিচ্ছি–এক পা এগােবেন না। সনিকে লেলিয়ে দেব।” 

“সনি আমাকে ভয় পায়। তুমি চেষ্টা করে দ্যাখাে ডার্লিং, যদি ওকে—” “ডার্লিং? গায়ে পড়ে আত্মীয়তা আমার বরদাস্ত হয় না বলে দিচ্ছি।” 

“অভ্যাস—নিছক অভ্যাস ডার্লিং বলা। কর্নেল হাসলেন। যাই হােক, আশাকরি বুঝতে পারছ সনি আমাকে ভয় পায়।” 

জয় ধমক দিল। “সনি! সনি! কী হয়েছে তাের?” হরটিলার সিড়ির ওপদিকে সনির ডাক শােনা গেল। এবার যেন নিরাপদে পেীছে কর্নেলকে যাচ্ছেতাই গালাগালি দিতে শুরু করেছে। জয় বলল, “আশ্চর্য তাে!” 

“জয়! তার চেয়ে আশ্চর্য তােমার এখানে দাঁড়িয়ে থাকা। তুমি কি হরটিলার মন্দির পাহারা দিচ্ছ?” 

জয়ের গলার স্বর বদলে গেল। “আপনি কেমন করে জানলেন” “জানি। তােমার বুদ্ধির প্রশংসা করি, ডার্লিং! 

জয় দাঁড়িয়েছিল একটা পাথরের কাছে। কয়েক পা এগিয়ে এসে মুখােমুখি দাঁড়াল। কর্নেল চাপা স্বরে বললেন ফের, “কিছুক্ষণ আগে জয়া তােমাকে যা সব বলে এসেছে, তা আমারই পরামর্শে। ভেবেছিলাম, তুমি ওর কথায় পাত্তা দেবে না। কিন্তু পাত্তা দিয়েছ এবং সরাসরি কাজে নেমেছ দেখে আমি খুশি হয়েছি, ডার্লিং!”

কর্নেল সমগ্র ২য় খণ্ড এর অংশ-১২

“কে আপনি? আমাদের ব্যাপারে আপনার কেন মাথাব্যথা বলুন তাে?” “আমি তােমাদের হিতৈষী।” একটু চুপ করে থাকার পর জয় বলল, “আপনি পুলিশের লােক?”। 

“মমাটেও না।” কর্নেল তার কাঁধে হাত রেখে বললেন, “সনি পাহারা দিক। ততক্ষণ আমরা ভােলা জায়গায় গিয়ে কথা বলি, যাতে আড়ি পেতে কেউ না শােনে। এস।” 

জয় কথা মানল। নালার ধারে কিছুটা এগিয়ে অনেকটা জায়গা জুড়ে খােলামেলা ঘাসজমি। চারদিকে আলাে ফেলে নিশ্চিন্ত হয়ে কর্নেল চাপা স্বরে বললেন, “হরটিলার শিবলিঙ্গের বেদির তলায় কী আছে, তুমি জাননা জয়”? 

জয় খুব আস্তে বলল, “আমার সন্দেহ হচ্ছে— 

-বলাে ডার্লিং!” রমলার ডেডবডি লুকোনাে আছে হয়তাে।” কর্নেল চমকে উঠলেন। “কে রমলা!” 

স্কাউঙুেল পরিতােষের বোন।” “পরিতােষ মানে—যে ছিল শরদিন্দুর ব্যাংকের সহকর্মী?” 

“হ্যা। পরিতােষ জুয়াড়ি চোর বদমাস। কিন্তু তার বােন রমলা ছিল উল্টো।” বলে জয় ওঠার চেষ্টা করল। “না, এর বেশি আমার বলা চলে না। আমার মুখ বন্ধ ।” 

 কর্নেল তাকে টেনে বসতে বাধ্য করলেন। জয় একটু অবাক হয়ে বলল, “আপনার গায়ে দেখছি সাংঘাতিক জোর। আপনাকে ভীষণ বুড়াে দেখে ভেবেছিলাম। আপনি কেন এসব সাংঘাতিক ব্যাপারে নাক গলাচ্ছেন ?” 

“প্লিজ ডার্লিং। আমি তােমার হিতৈষী বন্ধু। আমাকে কিছু গােপন কোরাে

 

Read More

সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজের কর্নেল সমগ্র ২য় খণ্ড এর অংশ-১৩

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *