তাতে তােমার জীবন নিরাপদ হবে।”
“কেন? আমাকে কি কেউ রমলার বা শরদিন্দুর মতাে মেরে ফেলবে?” “তাহলে তুমি জানাে শরদিন্দু চিতাবাঘের হাতে মারা পড়েনি?” জয় গলার ভেতর বলল, “হ্যা!” “শরদিন্দুকে কে মেরেছে বলে তােমার ধারণা, জয় ?”
বলব না। মুখ বন্ধ।” “বেশ কীভাবে ওকে মারা হয়েছিল, সেটা অন্তত বলাে।” “বাঘনখ দেখেছেন কি? আগের যুগে এসব অস্ত্র বাবহার করা হত।” “দেখেছি—অনেক রাজবাড়ির অস্ত্রাগারে আছে।”
ইতিহাসে পড়েছি শিবাজি বাঘনখ দিয়ে আফজল খাকে মেরে ফেলেছিলেন। বাঘনখ আমাদের বাড়িতেও আছে। মানে–ছিল। আর নেই। শরদিন্দু মারা যাওয়ার পর আর দেখতে পাচ্ছি না।”
“কোন ঘরে তােমাদের অস্ত্রাগার ?”
“আমার ঘরের পাশের ঘরে। বাইরে তালাবন্ধ। কিন্তু আমার ঘর দিয়ে ঢােকা যায়।”
“শরদিন্দ কেন অত রাতে চিড়িয়াখানায় গিয়েছিল ?”
“আমি পরিতােষের সঙ্গে ওর মিটমাট করিয়ে দিতে চেয়েছিলাম। পরিতােষ ব্যাংকের চুরিকরা টাকার একটা শেয়ার হিসেবে চৌষট্টি হাজার টাকা দিতে রাজি হয়েছিল। চুরিকরা টাকার অর্ধেকটা পরিতােষের কাছে মজুত ছিল। পরিতােষ চোর, জুয়াড়ি, স্কাউন্ডেল। কিন্তু বােনকে ভীষণ ভালবাসত। বােনের খোঁজেই সে এখানে—”
জয় থামলে কর্নেল বললেন, “! বালাে ডার্লিং!” “রমলার কথা বলব না। অনা কথা জানতে চাইলে বলব।” “বেশ। বললা, শরদিন্দু কাভাবে মারা পড়ল ?”
কর্নেল সমগ্র ২য় খণ্ড এর অংশ-১৩
জয় একটু চুপ করে থাকার পর বলল, “পরিতােযের নামেও হুলিয়া ঝুলছে পুলিশের। ব্যাংকে চুরির পর শরদিন্দুকে ধরল। তার জেল হল। কিন্তু পুলিশ পরিযিকেও সন্দেহ করেছিল। তাই সে গা ঢাকা দিয়েছিল ব্যপারটা আঁচ করেই।”
“শরদিন্দু কীভাবে মারা পড়ল বললা?”
“আউট-হাউসে পরিতােষের থাকার কথা ছিল। রাত এগারােটা নাগাদ আমি শরদিন্দুকে সঙ্গে নিয়ে চুপিচুপি গেলুম। মিটমাট হয়ে গেল। শরদিন্দু আমার অনুরােধে একটু হুইস্কি খেতে গিয়ে শােয়ে বেশ কয়েক পেগ খেয়ে ফেলেছিল। তখন সে বেশ মাতাল হয়ে পড়েছে। আসলে মদ খাওয়ার অভ্যাস বেচারার সত্যি ছিল না। সে মাতাল অবস্থায় অনেক কথা বলছিল। টাকাগুলাে পাপের। কিন্তু সে মিছিমিছি জেল খেটেছে। কাজেই টাকাগুলাে তার ধর্মত পাওনা। টাকা পেয়ে সে কলকাতা নিয়ে যাবে জয়াকে। এবাড়িতে তার থাকা তার নিজের পক্ষে এবং জয়া বা আমাদের সবার পক্ষেই অপমানজনক। কারণ লােকে ৬াল ছড়াচ্ছে শরদিন্দু-জয়াকে নিয়ে।..
এইসব বলার পর হঠাৎ সে বলে সল, রমলাকে খুন করা হয়েছে। কে খুন করেছে এবং কোথায় ডেডবডি কোনাে আছে সে জানে। তবে এখন বলবে না। পরিতােষ টাকা দিলেই সে এদিকে পরিতায় আর আমি ওর কথা শুনে তাে ভীষণ উত্তেজিত। *|{াসাধি করেই ওর কাছে কথাটা আদায় করা গেল না। শরদিন্দু গো ধরে , পরদিন এমনি সময় পরিতােষ যখন টাকা নিয়ে আসবে, টাকা আগে শুনে তবে সে সেকথা ফাস করবে। যাইহােক পরিতােষ গেল গঙ্গার পাড় দিয়ে। আমি তাকে এগিয়ে দিয়ে আউট-হাউসের দরজা বন্ধ করছি, তখনই শরদিন্দুর চাপা গােঙানি শুনতে পেলাম।
তখন চিতাবাঘের খাঁচাটা ছিল বাইরে। খাচার সামনে শরদিন্দ পড়ে ধড়ফড় করছে আর তার খুনী পালিয়ে যাচ্ছে। একে রমলাকে খুন করা হয়েছে শুনে আমার মাথার ঠিক নেই, তার ওপর ওই সাংঘাতিক ঘটনা। আউট-হাউসের যে ঘরে আমরা কথা বলছিলাম, সেই ঘরের জানালা দিয়ে আলাে আসছিল। সেই আলােয়—থাক। আমার মাথা ঘুরছে।” | জা দুহাতে মাথা আঁকড়ে ধরে দুহাঁটুর ফাকে মুখ নামাল। কর্নেল তার পিঠে হাত রেখে বললেন, “জয় ! ডার্লিং! মন শক্ত করাে।”
কর্নেল সমগ্র ২য় খণ্ড এর অংশ-১৩
জয় মাথা তুলে শ্বাসপ্রশ্বাসের সঙ্গে বলল, “আমার বােন আমারই দোষে বিধবা হয়ে গেছে কর্নেল । আমার আর বাঁচতে ইচ্ছা করে না। অথচ মরতেও পারি না। খালি মনে হয়, রমলা হয়তাে বেঁচে আছে। শরদিন্দু হয়তাে টাকা পাওয়ার লােভে মিথ্যা বলেছিল। হয়তাে রমলাকে কোথাও লুকিয়ে রাখা হয়েছে। কর্নেল, এই ধাঁধার জন্যই আমার মরা হল না। নইলে কবে আমি- ” হরটিলার মন্দিরে জয়ের কুকুরটার ডাক ভেসে এল। জয় অমনি সনি বলে চেঁচিয়ে উঠে দৌড়ে গেল।
কর্নেল ভাবলেন তাকে অনুসরণ করাবেন। কিন্তু করলেন না। মানে হল, জয় এখন নিরাপদ—অন্তত তিনি যতক্ষণ কানাজোলে আছেন।
একটাই উল্পে তপত—বপ্রসাসের এi। ভৌতিক ছড়টি। নিছক রসিকতা না হতেও পারে।… বিজয়ের সংশয় ॥
খেতে প্রায় রাত দশটা বেজে গেছে। ডাইনিং রুমে এরাতে জয়া খেল কর্নেল ও বিজয়ের সঙ্গে। জয়ের খাবার কলাবতী পৌছে দিয়ে এসেছে। | জয়া চলে গেলে কর্নেল বিজয়াকে বললেন, “এসো বিজয়, কিছুক্ষণ গল্প করি। নাকি তােমার কবিতার মুড চলে যাচ্ছে?”
বিজয় হাসল। “নাঃ! কোনাে মুড নেই আজ। আমার তাে ঘরে ঢুকতেই ভয় হচ্ছে। ভাবছি, আপনার কাছে এসে শােব।”
নি “স্বচ্ছন্দে। গেস্টরুমে তাে আরেকটা খাট আছে। অসুবিধে নেই।” বিজয় খুশি হয়ে বারান্দায় গিয়ে ডাকল, “বুদ্ধ! শুনে যা!” বুদ্ধ এলে সে তাকে তার ঘরে তালা আটকে দিতে বলল। চাবি দিল। বুদু একটু পরে চাবিটা ফেরত দিয়ে গেল। গেস্টরুমের দ্বিতীয় খাটে বিছানা পাতাই ছিল। বিজয় বলল “যাক। নিশ্চিত হওয়া গেল।”
কর্নেল সমগ্র ২য় খণ্ড এর অংশ-১৩
কর্নেল চুরুট টানছিলেন। ধোঁয়ার ভেতর হঠাৎ বললেন, “আচ্ছ। বিজয়, জয় হঠাৎ কলকাতা থেকে পড়াশুনা ছেড়ে চলে এসেছিল কেন বলাে তাে?” | বিজয় বলল, “ছেড়ে ঠিক আসেনি। বি. এ. পাশ করেছিল। কিন্তু এম. এ. তে ভর্তি হয়নি।”
শরদিন্দুর সহকর্মী পরিতােষকে তুমি কখনও দেখেছ?” “না তাে!” বিজয় অবাক হল। “কেন?” “জয়ের সঙ্গে তার আলাপ ছিল।” “বিজয় আরও অবাক হয়ে বলল, তাই বুঝি! জয়া বলছিল নাকি?” কর্নেল চোখ বুজে বললেন, “হ্যা।”
“সেটা সম্ভব। জয় শরদিন্দুর কলিগকে দেখে থাকবে। তবে আমি তাকে দেখা দূরের কথা, সবে আজ বিকেলে মাধবজির মুখে তার নাম শুনলাম।” বিজয় একটু পরে ফের বলল, “জয়া বলেছে দাদার সঙ্গে পরিতােষের আলাপ ছিল?”
“হ্যা।” “আমি বিশ্বাস করি না। জয়া বড় ভুলভাল কথা বলে।” “তাহলে তুমি রমলাকেও চেনাে না?” বিজয় চমকে উঠল। “রমলা! সে আবার কে!”
“পরিতােষের বােন। জয়ের সঙ্গে তার একটু বিরতি দিয়ে চুরুটের ধোঁয়ার মধ্যে কর্নেল বললেন, “জয়ের সঙ্গে রমলার এমোশানাল সম্পর্ক ছিল।”
“বলেন কী! জয়া বলেছে আপনাকে? নাকি জয়ের কাছ থেকে শুনলেন?”
Read More