হরটিলার পাথরের পাপে কলে পা রাখতেই কুকুরটা ওপরে গলগর করে উঠল। কর্নেল যখন কাছাকাছি পৌঁছলেন, তখন শুনলেন, জয় সনিকে ডাকাডাকি করছে।
কর্নেলকে দেখে সে গম্ভীর হল। কোনাে কথা বলল না। কর্নেল বললেন, “ডমর্নিং জয়।” জয় তারও জবাব দিল না।।
কর্নেল চড়ায় উঠে একটু হেসে বললেন, “আশাকরি, তুমি সারারাত এখানে বসে নেই?”
জয় বলল, “আপনাকে দেখে সনি এত ভয় পায় কেন? কী ব্যাপার?”
কর্নেল বললেন, “ফর্মুলা-টোয়েন্টির পাল্লায় পড়লে সব কুকুরই ভড়কে পিছু হটে।”
“তার মানে ? আপনার দেখছি সব তাতেই হেয়ালি ?” কনেলি তার একটু তফাতে পাথরটার অনাপ্রান্তে বসে বললেন, “কত এসেছ?”
জয় আস্তে বলল, “কতক্ষণ কী! আমি সারারাত এখানে আছি।” “সে কী!”
“মলার ডেডবডি খুনী সরিয়ে ফেলার জন্য ব্যস্ত হয়ে উঠেছে। আমি তা টের পেয়েছি।”
“কিন্তু তুমি ধরে নিচ্ছ এখানেই ওর ডেডবডি আছে?”
“জয়ার কাছ থেকে শােনার পর থেকে মনে হচ্ছে—” সে হঠাৎ থেমে বলল, “আপনি যা সব জয়াকে বলেছে, তা কি বিজয়কেও বলেছেন?”
“মােটামুটি আভাস দিয়েছি।” “বিজয় কী বলল ?”
“সে ডেডবড়িতে বিশ্বাস করে না। কারণ রমলাকে চেনে না। পরিতােষকেও চেনে না।”
“বিজয় পরিতােষকে না চিনতেও পারে।” “বমলাকে?”
কর্নেল সমগ্র ২য় খণ্ড এর অংশ-১৫
জয় রুক্ষস্বরে বলল, “বিজয় তাে বলেছে রমলাকে চেনে না। আবার একথা কেন?”
‘জয়! আমাকে একটা কথার জবাব অন্তত দাও। রমলার খোজে পরিতােষ কানাজোলে এসেছিল বলেছ। রমলা কবে তােমার কাছে এসেছিল ?”
জায় একটু চুপ করে থাকার পরে বলল, “আজ তারিখ কত?” ২৩ সেপ্টেম্বর।” “শরদিন্দু খুন হয়েছে ১৩ সেপ্টে ফর। রমলা এসেছিল ৯ সেপ্টেম্বর। কিছু বুঝলেন ?”
“শরদিন্দু যেভাবেই হোেক জানত রমলা এসেছে এবং তাকে খুন করা হয়েছে। তাই শরদিকে মরতে হয়েছে। বেঁচে থাকলে সে ১৪ সেপ্টেম্বর রাতেই ফাস করে দিত—”
“সে তো বলেছ। আমি জানতে চাই, রমলা ৯ সেপ্টেম্বর কোথায় এল ? সরাসরি রাজবাড়িতে তােমার কাছে তো?”
জয় একটু শাস ছেড়ে বলল, “রালা চিঠি লিখে জানিয়েছিল ৯ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যা সাড়ে-ছটায় আপ দিল্লি এক্সপ্রেসে পৌছুবে কানাজোল স্টেশনে। ছটার আগেই রেডি হয়ে বেরুতে যাচ্ছি, নানকু এসে খবর দিল ময়াল সাপটার খাচা খােলা-সাপটা পালিয়েছে। দৌড়ে জুতে গেলুম। একঘণ্টা তন্নতন্ন করে খুঁজে সাপটাকে পাওয়া গেল নালার কাঠের ব্রিজের তলায়। তাকে খাচায় পুরে স্টেশনে পৌছেছি প্রায় সওয়া সাতটা। ট্রেন মিনিট কুড়ি আগে ছেড়ে গেছে। খুঁজে-খুজে রমলাকে দেখতে পেলুম না।”
জয় থামলে কর্নেল বললেন, “তারপর ?” “ক্ষমা করবেন কর্নেল, আর আমি বলব না।”
“তুমি কলকাতা থেকে কেন হঠাৎ চলে এসেছিলেন জয়? কেন তুমি আর পড়াশুনা করতে চাওনি?”
কর্নেল সমগ্র ২য় খণ্ড এর অংশ-১৫
“জীবনের ওপর ঘেন্না ধরে গিয়েছিল। আর কোনাে কারণ নেই।” “কেন ঘেন্না ধরেছিল? “অত কেনর জবাব আমি দেব না। আপনি প্লিজ আমাকে বিরক্ত করবেন । আমার মাথা ঘুরছে।”
“রমলার ব্যাপারটা কী?” জয় খাপ্পা হয়ে উঠে দাঁড়াল। “আঃ! বড় জ্বালাতন করেন আপনি!”
বলে সে সনির খোঁজে মন্দিরের পূর্বপাশে গেল। সনি ঝােপের পাশে চুপচাপ দাঁড়িয়ে লেজ নাড়ছিল। দৌড়ে তার বকলেস ধরে গলায় পরানাে চেন খুলে তাকে টানতে টানতে জঙ্গল ভেঙে নেমে গেল জয়।
কর্নেল গম্ভীরভাবে কিছুক্ষণ বসে থাকলেন। তারপর মন্দিরের ভেতর শুড়িমেরে ঢুকলেন। পরীক্ষা করে দেখলেন বেদির ওধারে ভাঙা চাবিটা তেমনি আটকানাে আছে।
বেরিয়ে এসে পাথরটার কাছে দাঁড়িয়ে রইলেন কর্নেল ।
কর্নেল ভাবছিলেন, যদি সত্যি এই বেদির ভেতর রমলার লাশ লুকোনাে থাকে এবং খুনী যদি এতদিন পরে লাশটা সরানাের জন্য ব্যস্ত হয়ে ওঠে, তাহলে এই সিদ্ধান্ত করা যায় ।
(এক) সে খুন করেছিল কিন্তু লাশ ফেলে রেখে গিয়েছিল। অন্য কেউ লাশটা এই মন্দিরে বেদির তলায় লুকিয়ে রেখেছিল। এতদিনে সে লাশের খোঁজ পেয়েছে।
(দুই) এতদিনে খােজ পেয়েছে বলেই বেদির চাবি চুরি করেছে ঝুঁকি নিয়ে এবং ওঁত পেতে বেড়াচ্ছিল। বিপ্রদাসের জয়াকে কৌটো দেওয়া সে দেখেছিল। কৌটোতে কী আছে সে জানতে পেরেছিল।
কর্নেল সমগ্র ২য় খণ্ড এর অংশ-১৫
(তিন) বিপ্রদাসই লাশটা এখানে লুকিয়ে ফেলেছিলেন। নিশ্চয় কাউকে বাঁচানাের জন্যই এ কাজ করেছিলেন।
(চার) রমলা খুন হয়েছিল কারুর প্রতিহিংসা বশে কিংবা তাকে রেপ করাও হয়ে থাকবে।
(পাঁচ) নিচের নির্জন জঙ্গলেই কোথাও রেপ এবং গুম করে লাশ ফেলে রেখে পালিয়েছিল কেউ।
কিন্তু এই পাঁচটা পয়েন্ট পুরাে ঘটনাটা পরিষ্কার করছে না। প্রচুর ফাঁক থেকে যাচ্ছে। প্রশ্ন থাকছে অসংখ্য। কর্নেল আবার উদ্বিগ্ন হলেন বিপ্রদাসের জন্য। বিপ্রদাস অনেক প্রশ্নের জবাব দিতে পারবেন। সবার আগে এখন তাকে দরকার ।
টিলা থেকে নামতে চোখে পড়ল একটা সুন্দর প্রজাপতি সবে ঘুম ভেঙে {} থেকে শিশির ঝেড়ে উড়ে চলেছে। তাকে লক্ষ্য করে জোরে নামতে
থাকলেন। কিন্তু নিচে এসে হারিয়ে ফেললেন প্রজাপতিটাকে। পুকুরের কাছে আসতেই দেখা হয়ে গেল মাধবজির সঙ্গে। মাধবজি ঘাটের ধাপে বসে লােটা মাজছিলেন-বললেন, “নমস্তে কর্নেলসাব!”
“নমস্তে মাধবজি!” “বেড়াতে বেরিয়েছি বুঝি?”
কর্নেল ঘাটের মাথায় দাঁড়িয়ে কথা বলতে থাকলেন মাধবজির সঙ্গে। একথা সেকথার পর কর্নেল বললেন, “আচ্ছা মাধবজি, আপনার নজর তাে সবদিকেই থাকে।”
মাধবজী হাসলেন। “সব সময়ে থাকে না। কালও বলেছি আপনাকে।”
“বলেছেন।” কর্নেল হাসলেন। “কিন্তু ধরুন, বিশেষ কোনাে ব্যাপার ঘটলে আপনার নজরে পড়তে পারে।”
Read More