সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজের কর্নেল সমগ্র ২য় খণ্ড এর অংশ-৭

 পাঁচিলের গায়ে ছিল ইসগেট। সেটা কবে ভেঙে পড়েছে এবং বন্যা ঢােকার আশঙ্কু নালার বুক একে পাচিল গেথে সীমানার পাচিলের সঙ্গে মিলিয়ে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু বৃষ্টির

কর্নেল সমগ্র 

লে নালাটা প্রায় বারােমাস ভরে থাকে। কাঠের সাঁকোর ওধারে খােলামেলা ঘাসের জমি, অযত্নলালিত কিছু ফুল লের গাছ, তারপর রাজবাড়িটা। খিড়কির ফটকের কাছে পেঁৗছুনাের আগেই ঠাৎ খিড়কির বড় কপাটের অন্তর্গত চোরকপাট খুলে রঙ্গিয়া প্রায় দৌড়ে ধরুল। বেরিয়ে বিজয় ও কর্নেলকে দেখে থমকে দাঁড়িয়ে গেল। তার মুখে তিঙ্ক লেগে আছে। বিজয় বলল, “কী রে রঙ্গি?” 

রঙ্গিয়া হাঁফিয়ে বলল, “দিদিজি বেহেশ হয়ে পড়েছিল দরজার কাছে। অনেক রে হোশ হয়েছে। কথা বলতে পারছে না। বড়কুমারজিকে খবর দিতে বলল মা। 

বিজয় বলল, “তােকে যেতে হবে না আর। চল, দেখি কী হয়েছে।” 

রঙ্গিয়া দৌড়ে বাড়িতে ঢুকে গেল। বিজয় চাপা স্বরে কর্নেলকে বলল, “নানকুটা খুব পাজি। রঙ্গিয়ার ওপর বড় লােভ। তাই যেতে দিলাম না।” 

কর্নেল হঠাৎ বললেন ‘আচ্ছা বিজয়, কাকাতুয়াটাকে যেদিন কেউ জিভ কেটে বােবা করে দিয়েছিল, সেদিন কি নানকু জয়ের চিড়িয়াখানায় ছিল ?” 

বিজয় বলল, “জানি না। তবে এর ব্যাপারটা বলি শুনুন। নানকু আগে ছিল সার্কাসের দলে। ওর পরামর্শেই তাে দাদা চিড়িয়াখানা করেছিল। সেসব প্রায় বছর পাঁচেক হয়ে এল প্রায়। আমি তখন কলকাতায় ছিলম। দাদা তাে আগেই চলে এসেছিল। তারপর এইসব করেছিল।” 

কর্নেল সমগ্র ২য় খণ্ড এর অংশ-৭

“নানকুর দেশ কোথায়, জানাে ?” “বলে তাে সাহেবগঞ্জের লােক।” 

দোতলায় সিঁড়ির মুখে গিয়ে কর্নেল ইতস্তত করছিলেন। বিজয় বলল, “আসুন, আসুন! জয়ার কী ব্যাপার দেখি। হঠাৎ কেন অজ্ঞান হল কে জানে!” 

ওপরের বারান্দায় যেতেই কানে এল কলাবতী কাউকে ডাক্তার ডাকতে বলছে। বুদ্বুরাম গাল চুলকোতে চুলকোতে জয়ার ঘর থেকে বেরিয়ে আসছিল। বিজয়দের দেখে বলল, “দিদিজির তবিয়ত খারাপ। ডাক্তারবাবুকে ডেকে আনতে যাচ্ছি ছােটকুমার সাব!” 

জয়ার ঘরের পর্দা তুলে বিজয় বলল, “কী হয়েছে, জয়া ? মাথা ঘুরে পড়ে গিয়েছিলি শুনলুম। এই দ্যাখ, কর্নেলসায়েব তােকে দেখতে এসেছেন।” 

ঘরের ভেতরকার কড়ামিঠে গন্ধটা কর্নেলের নাকে আচমকা ঝাপিয়ে এসেছিল। কর্নেল দ্রুত দরজার পর্দা টেনে দুপাশে সরিয়ে দিয়ে জয়ার দিকে এগিয়ে গেলেন। জয়া হেলান দিয়ে পালঙ্কে বসে আছে। ফানটা ফুল স্পিডে ঘুরছে মাথার ওপর। জয়ার চোখদুটো নিস্পলক নকশা 

জয়া কিছুক্ষণ বিজয় বা কার্নেল কারুর কোনো প্রশ্নের জৱাব দিল না। তারপর কর্নেল চাপা স্বরে বললেন, “বিজয়, কলাবতী বা তার মেয়েকে বলো, এককাপ কড়া কফি নিয়ে আসুক।” 

 বিজয়ের কথায় ওরা চলে গেলে কর্নেল জয়ার দিকে তীক্ষ্ণদৃষ্টে তাকিয়ে বললেন, “জয়া, তুমি কি জানাে মি কে? 

জয়া খুব আস্তে মাথাটা একটু দোলাল। বিজয় বলল, “আমি কিন্তু বলিনি ওকে। শুধু কাকাবাবু—মানে মুখুয্যেমশাইকে না জানালে বিবেকে বাধে, তাই” 

কর্নেল তাকে থামিয়ে বললো, “জয়া, ঘরে ক্লোরােফর্মের গন্ধ কেন? কেউ তােমাকে ক্লোরােফর্ম শুকিয়ে অজ্ঞান করে ফেলেছিল, তাই না?” 

কর্নেল সমগ্র ২য় খণ্ড এর অংশ-৭

জয়ার চোখ ফেটে জল বেরিয়ে এল। সে বােবার মত তাকিয়ে রইল শুধু। 

“কিছু নিয়ে গেছে কি ঘর থেকে ?” 

জয়া আবার মাথা দোলাল। বিজয় চমকে উঠেছিল। বলল, “এ তাে অসম্ভব শাপার! দিনদুপুরে কেউ এই ঘরে ঢুকে ওকে অজ্ঞান করাবে এবং কিছু চুরি করে সবার চোখ এড়িয়ে পালিয়ে যাবে! নাঃ—আমি বিশ্বাস করি না।” 

কর্নেল মৃদু ভৎসনার সুরে বললেন, “আঃ! তুমি একটু চুপ করাে, বিজয় ! আমাকে কথা বলতে দাও।” 

জয়া পালঙ্কের পাশে রাখা গােলাকার টেবিল থেকে জলের গেলাসটা নিল। এক চুমুক জল খেয়ে গেলাসটা রেখে আবার কার্নেলের দিকে ভিজে চোখে তাকাল। 

কর্নেল বললেন, “কথা বলতে কষ্ট হচ্ছে তােমার?” জয়া মাথা দোলাল। 

“ঠিক আছে। পরে শুনব। কফি নিয়ে আসুক। গরম কফি খেলে গলাটা ঠিক হয়ে যাবে। তবে শুধু ইশারায় দেখিয়ে দাও, কোথায় তােমার ওপর কেউ ক্লোরােফর্ম নিয়ে ঝাপিয়ে পড়েছিল।” 

জয়া ইশারায় দরজার কাছটা দেখিয়ে দিল। তখন কর্নেল ঘরের বাতি জ্বেলে দিলেন। জানালাগুলাের পর্দাও সরিয়ে দিলেন। তারপর পকেট থেকে আতসকাচের মতাে দেখতে প্রকাণ্ড একটা গােল এবং হ্যান্ডেল লাগানাে কাচ নিয়ে দরজার মেঝের ওপর হুমড়ি খেয়ে বসলেন। 

ওই অবস্থায় বাইরের বারান্দায় গেলেন। তারপর ফিরে এসে বললেন, “লােকটা খালি পায়ে এসেছিল মনে হচ্ছে। কলাবতী, রঙ্গিয়া, বুদ্বুরাম সবাই এ ঘরে খালিপায়ে ঢুকেছে। লােকটা জুতপায়ে ঢুকলে তা সত্ত্বেও একটু-আধটু চিহ্নও মেঝেয় পেতুম।” 

একটুখানি চোখ বুজে থাকার পর চোখ খুলে ফের বললেন, “আচ্ছা বিজয়, এ বাড়ির দোতালায় আর নিচের তলায় কতগুলাে ঘর আছে?” 

কর্নেল সমগ্র ২য় খণ্ড এর অংশ-৭

বিজয় হিসেব করতে থাকল। ইতিমধ্যে কলাবতী কফি নিয়ে এল। কর্নেল বললেন, “ঠিক আছে। তুমি এখন এস, কলাবতী!” 

কলাবতী সলজ্জ হেসে বলল, “আপনাদের জনা কফি, আছে সায়েব!” কর্নেল হাসলেন। “তুমি বুদ্ধিমতী কলাবতী!” : 

কলাবতী ট্রে রেখে চলে গেল। কর্নেল নিজের হাতে পট থেকে কফি ঢেলে জয়াকে দিলেন। ততক্ষণে বিজয়ের হিসেব শেষ হয়েছে। সে বলল, “বড় ভুল হয় আমার। মনে হচ্ছে, নিচের তলায় আটখানা আর ওপরে পাঁচখানা ঘর।” 

জয়া মৃদু স্বরে বলল, “না। ওপরে ছখানা।” বিজয় বলল, ও, হাঁ। জয়ের—মানে দাদার ঘরের পাশে একটা ঘর আছে। ভুলে গিয়েছিলাম।” 

কর্নেল জিগ্যেস করলেন, “সে-ঘরে কী আছে?” বিজয় বলল, “জানি না। তালাবন্ধ আছে—ছেলেবেলা থেকেই দেখছি। বাড়িতে 

Read More

সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজের কর্নেল সমগ্র ২য় খণ্ড এর অংশ-৮

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *