কোথাও কেউ নেই শেষ–পর্ব হুমায়ূন আহমেদ

কোথাও কেউ নেই শেষ–পর্ব

তুই ভেতরে যা। তোর বউ বোধ হয় রেগে যাচ্ছে।যাচ্ছি। চল তোকে একটা সিগারেট খাওয়াই। ঘরে সিগারেট টোটেলি স্টপড। কোথেকে শুনেছে ক্যানসার মেয়েছেলের কারবার।ইয়াদ রাস্তা পর্যন্ত এল। দু’টা সিগারেট কিনল। বাকেরকে একটা দিয়ে নিজে একটা ধরাল, ফুর্তির ভঙ্গিতে বলল, কাল তোর জন্যে ছবি এনে রাখব। আন্ধা-কানুন। মারাত্মক।

বাকের বলল, সিগারেট খাচ্ছিস গন্ধে তোর বউ বুঝে ফেলবে?……বাথরুমে ঢুকে হেভি ওয়াসিং দিব কেউ টের পাবে না। বিয়ে করা বড় যন্ত্রণা রে দোস্ত। ভাল কথা ঐ তিন মেয়েওয়ালা বাড়ির ব্যাপারটার খোঁজ পাওয়া গেছে। তুই যা ভাবছিলি তাই। পাক্কা খবর আছে আমার কাছে।

তাই নাকি?……..হাই ক্লাস মেয়েছেলে–শুধু মালদার পার্টির জন্যে। রুই-কাতলাদের জিনিস। তবে দোস্ত একটা রিকোয়েস্ট তুই এদের ঘাটাস না। বিপদে পড়বি।

কি বিপদ?……….রুই-কাতলা ঘটালে বিপদ হয় না? পাগলামি করবি না। খবরদার। কাল বলব সব কিছু। সন্ধ্যায় সন্ধ্যায় চলে আসবি।

বাকের ঘড়ি দেখল। মাত্র আটটা দশ। সময় কাটানোই একটা সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। বারোটার আগে ঘুম আসে না। বারোটা পর্যন্ত সে করবে কী? মুনার খোঁজে যাওয়াটা খুবই উচিত। মামার কাছে থাকলেও তো মেয়েটা একা। তাছাড়া আপন মামাও নিশ্চয়ই না। আপন মামা হলে ভাগীর খোঁজখবর করত। এর মধ্যে একবারও তো খোঁজ করতে দেখেনি।

এদিকে বকুলদেরও একটা খবর নেয়া দরকার। জহিরের অবস্থাটা কী। এত বড় রুগী গ্রামে নিয়ে ফেলে রেখেছে বেকুবীর চূড়ান্ত করছে। মুনার সঙ্গে কথা বলে আবার ঢাকা আনার ব্যবস্থা করতে হবে। এই কথাটা বলার জন্যেই মুনার কাছে যাওয়া দরকার। অনন্য কিছু না। রাগ করে ঘরে বসে থাকার কোন অর্থ হয় না। রাগ বড় না রুগী বড়?

মুনা খুব সহজ স্বরে বলল, ভেতরে আসুন বাকের ভাই। মুনার গলায় মাফলার জড়ানো। মুখ শুকিয়ে এতটুকু হয়ে গেছে। চোখ ঈষৎ লাল। বাকের চিন্তিত মুখে বলল, অসুখ নাকি?……….হ্যাঁ জ্বর। গতকাল মাত্র কমেছে। এখন আবার শরীর খারাপ লাগছে। আবার জ্বর আসবে কী না কে জানে। এ বাড়িতে এসেই জ্বরে পড়লাম। এই জন্যেই আপনাকে খবর দিতে পারিনি। কিছু মনে করবেন না বাকের ভাই।

আরে কি মুশকিল। মনে করার কি আছে?………এ বাড়ির দোতলার একটা ঘরে মুনা থাকে। মুনা বাকেরকে সরাসরি তার ঘরে নিয়ে গেল। ঘরটা বেশ বড়। মুনার যাবতীয় জিনিসপত্র গাদাগাদি করে রাখা। কিছুই গোছানো নেই।

বাকের বিস্মিত হয়ে বলল, এই অবস্থা কেন?……….টেম্পোরারি থাকার জন্যে আসা তাই কিছুই গুছাইনি। হোস্টেল টোস্টেল কিছু আমার জন্যে পান কী না দেখবেন তো। অবিবাহিত মেয়েদের একা থাকা যে কি সমস্যা।

হুট করে চলে এলে একটা খবর দিলে না।………মামা জোর করে নিয়ে এল। একা একা একটা বাড়িতে থাকি শুনেই মাথা খারাপের মতো হয়ে গেল। আমার নিজেরও ভয় ভয় লাগছিল। কাজের মেয়েটা চলে গেল তো। বাকের ভাই আপনি দাঁড়িয়ে আছেন কেন বসুন। খাটটায় বসুন। আমি চট করে আসছি।

চা-টা কিছু খাব না কিন্তু।………..চা আনছি। আপনাকে বলল কে?…………বাড়ি একদম খালি খালি লাগছে। লোকজন নাই।…………………..অনেক লোক। বিয়ের দাওয়াতে গেছে। এগারটার দিকে আসবে।

মুনা নিচে নেমে গেল। বাকের দীর্ঘ সময় একা একা বসে রইল। মেঘ ডাকছে। ঝড়বৃষ্টি শুরু হলে মুশকিল। এতক্ষণ ধরে মুনা নিচে কী করছে কে জানে। একটা সিগারেট খেতে পারলে হত। সিগারেট পকেটে আছে।

দেয়াশলাই নেই।…………….অনেক দেরি করে ফেললাম। তাই না বাকের ভাই?………….মুনার হাতে ট্রে। ট্রেতে রাতের খাবার।…………………………এসব কী?………………ভাত নিয়ে এসেছি। বসে যান।…………………………আরে কি মুশকিল।

কথা বাড়বেন না তো বসে পড়ুন। আপনার জন্যে আলাদা কিছু করিনি। আমারটাই আপনাকে দিচ্ছি। আমি রাতে কিছু খাব না। জ্বর আসছে।

আবার জ্বর আসছে?……………………হ্যাঁ আসছে। এই দেখুন কত জ্বর।……………..মুনা বাকেরকে স্তম্ভিত করে দিয়ে বাকেরের হাত ধরল। সত্যি সত্যি জ্বর এবং অনেক জ্বর। এতটা জ্বর নিয়ে কেউ এমন স্বাভাবিক ভাবে কথা বলছে কী করে কে জানে।

হাত ধরায় লজ্জা পেলেন নাকি বারেক ভাই?………….না লজ্জা পাব কেন? জ্বর দেখাবার জন্যে হাত ধরেছি। অন্য কিছু তো না।

মুনা হাসতে হাসতে বলল, তা ঠিক। ভাত নিয়ে বসুন।…………মুনা হাসতে হাসতে বলল, তা ঠিক। ভাত নিয়ে বসুন। আপনাকে কেউ তো আদর করে খাওয়ায় না। আদর করে খাইয়ে দি।

বাকেরের চোখ ভিজে উঠল। সে আতংকে কাঠ হয়ে গেল। টপ করে যদি এক ফোঁটা চোখের পানি পড়ে যায় বড় মুশকিল হবে। মুনা দেখে ফেলবে। আর সে যা মেয়ে এই জিনিস দেখলে

বাকের ভাই!………………………..বল।………………..আপনি কি আমাকে পছন্দ করেন?…………………..বাকেরের অস্বস্তির সীমা রইল না। এইসব আবার কি ধরনের কথা? জ্বরে কি মেয়েটার মাথা খারাপ হয়ে গেল নাকি? ভাত শেষ করে একজন ডাক্তার নিয়ে আসতে হবে। ডিলে করা ঠিক হবে না।

কথা বলছেন না কেন? আমাকে পছন্দ করেন?………………কেন করব না। করি। কতটুকু পছন্দ অল্প না অনেকখানি?………………….জানি।………..আমি কিন্তু আপনাকে পছন্দ করি না বাকের ভাই।…………জানি।……….আপনি একজন অপদাৰ্থ মানুষ। আকাজের মানুষ।…………..জানি।

জানেন তো নিজেকে বদলান না কেন?…………বাকের জবাব না দিয়ে ভাত মাখতে লাগল। সে এখন বেশ আরাম পাচ্ছে। চোখের পানি শুকিয়ে গেছে। এ্যাকসিডেন্ট হবার সম্ভাবনা নেই।

নিজেকে বদলান না কেন?……………..বদলেছি তো।…………কিছুই বদলাননি। আগে যেমন এখনো তেমনি আছেন। ভবঘুরের মতো চলাফেরা, গুণ্ডামি, বড় বড় কথা। এইসব ছাডুন তো।

আচ্ছা ছাড়ব।………….আর ছাড়বেন। এই জীবনে ছাড়বেন না; বরং এক কাজ করুন খুব ভাল, খুব লক্ষ্মী এ রকম একটা মেয়েকে বিয়ে করে ফেলুন। তাতে কাজ হতে পারে। মেয়েরা মানুষ বদলাতে ওস্তাদ।

বাকেরের খাওয়া শেষ হয়ে গেছে। তবু থালা হাতে বসে আছে। মুনা তার সামনে। কী সুন্দর সরল মুখ অথচ কি কঠিন একটা মেয়ে।

বাকের ভাই।………………….উঁ।………………কয়েকদিন জ্বরে খুব কষ্ট পেয়েছি। জ্বরের সময় মনে হত আমার মতো একলা এই পৃথিবীতে কেউ নেই। খুব কষ্ট হত।…………….কি যে কাণ্ড তোমার। একটা খবর দিলে চলে আসতাম না? রাত দিন থাকতাম। খবর দিবে না। কিছু না।

জ্বরের সময় আমি আরেকটা জিনিস বুঝতে পারলাম যে আপনাকে আমি খুব পছন্দ করি। আপনার মত বাজে ধরনের একজন মানুষকে এতটা পছন্দ করি ভেবে নিজের ওপর খুব রাগ হচ্ছিল।

রাগ হওয়ার কথা।…………….তারপর মনে হল আপনার মত ভাল মানুষই বা কজন আছে। আপনি যে একজন ভালমানুষ সেটা কী আপনি জানেন?……….কি সব কথাবার্তা তুমি বলছ?

সবদিন কি এইসব কথা বলা যায়? হঠাৎ এক আধাদিন বলতে ইচ্ছা করে। বাকের ভাই আমি খুব একলা হয়ে পড়েছি। আর পারছি না।…………………মুনার চোখ দিয়ে জল পড়তে লাগল। বাকের কি বলবে কিছু বুঝতে পারল না। কী বললে মুনা খুশি হবে? সে যা করতে বলবে তাই করবে। ছাদ থেকে লাফিয়ে পড়তে বললে লাফিয়ে পড়বে।

ঝড়বৃষ্টি আসবে বাসায় চলে যান। আপনার বাসা তো আবার নেই। কোন একটা দোকানেটোকানে গিয়ে উঠে পড়ুন। ঐ কাঠের দোকানেই তো এখন থাকেন?………………..হ্যাঁ।

আপনাকে এই রকম আর আমি থাকতে দেব না। সুন্দর একটা একতলা বাড়ি ভাড়া করব। সারাদিন যত ইচ্ছা গুণ্ডামি করবেন। সন্ধ্যার পর ফিরে আসবেন। রাতে দু’জন মুখোমুখি বসে ভাত খাব।

মুনার গলা ধরে এল। কথা শেষ করতে পারল না। বাকের একটা ঘোরের মধ্যে তার ঘরে ফিরে এল। বৃষ্টি হচ্ছিল সে পুরোপুরি ভিজে গেছে। কাদায় পানিতে মাখামাখি। অথচ কিছুই বুঝতে পারছে না। ভেজা কাপড়েই সে তার বিছানায় বসে আছে। ঘোর কাটল রাত তিনটার দিকে।

পুলিশের বাঁশি বাজছে। ওসি সাহেব দরজায় লাথি দিচ্ছেন। পুলিশ কর্কশ গলায় ডাকছেন–বাকের, এই বাকের।………………বাকের দরজা খুলতেই তাকে অ্যারেস্ট করা হল। অভিযোগ গুরুতর। জোবেদ আলি খুন হয়েছে। খুন করার দৃশ্য এবং খুনির পালিয়ে যাবার দৃশ্য তিনজন দেখে ফেলেছে। তিনজনই বলছে– খুন করছে বাকের।

বাকেরের এই মামলা দীর্ঘদিন ধরে চলল। ডেটের পর ডেট পড়ে। মামলা পরিচালনা করলেন মুনার সেই পরিচিত উকিল। কখনো তিনি মুনাকে বললেন না যে মামলা টিকবে না। উল্টোটাই বললেন। একবার না। অনেকবার বললেন। বলার সময় প্রতিবারই কিছুটা বিষন্ন হলেন।

ব্যাপারটা কি জানেন, ওরা মামলাটা খুব সুন্দর করে সাজিয়েছে। আমি কোন ফাক ধরতে পারিনি। মোটিভ আছে প্রত্যক্ষদশীর সাক্ষী আছে। মিথ্যা মামলার সাজানোটাই হয় অসাধারণ। এই ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে। আমি আপনাকে মিথ্যা কোন আশ্বাস দিতে যাচ্ছি না। মনে হচ্ছে কনভিকশন হয়ে যাবে।

উকিলের মুখ বিষন্ন দেখা যায়।…………….বিষন্ন দেখায় না। শুধু বাকেরকে। মুনার সঙ্গে তার যতবারই দেখা হয় সে ততবারই বলে, কোনমতে যদি বের হতে পারি তাহলে সিদ্দিক শালাকে পুতে ফেলবে। তবে আমাকে আগেই যদি ঝুলিয়ে দেয় তাহলে তো কিছু করার নেই।

ভয় লাগে না বাকের ভাই। যদি সত্যি সত্যি…………….আরে না। ভয় লাগে না।………..সত্যি ভয় লাগে না।…………………রাতের বেলা একটু গা ছমছম করে। রাতের বেলা ফাঁসি দিলে একটা ভয়ের ব্যাপার হত। ফাসিটা তো দিনে দেয়। তাই ভয়টা থাকে না।

পাগলের মত কথাবার্তা বলছেন বাকের ভাই।………..পাগলের মতো বলব কেন এটা হচ্ছে ট্রথা। রাতের বেলা মরা খুবই ভয়ংকর। দিনের মৃত্যু কিছু না। সিদ্দিক শালাকে আমি রাতের বেলা মারব। ওয়ার্ড অব অনার।

মামলা চলতে থাকে।………….মুনা অপেক্ষা করে।………..ক্লান্তির অপেক্ষা। দীর্ঘ দিবস। দীর্ঘ রজনী কিছুতেই যেন মার কাটে না।

আশা ও আনন্দের কথায় ভর্তি করে সুন্দর সুন্দর চিঠি লেখে বকুল। তার ছেলের কথা লেখে, ছেলের দুষ্টামির কথা লেখে, জহির যে ক্রমে ক্রমেই সেরে উঠছে সে কথাও লেখে। সে নিজেও সেরে উঠেছে। সেই কথাও থাকে।

এখন সে আর পুরনো দুঃস্বপ্ন দেখে না। স্বামীর গায়ে হাত রেখে নিশ্চিন্তে ঘুমায়। তাকে সাবধান করে দিতে অশরীরী কেউ আর আসে না। কত সুন্দর সুন্দর চিঠি কিন্তু মুনার পড়তে ভাল লাগে না।

চিঠি লিখে জাহানার নামের অপরিচিত একটি মেয়ে। অচেনা একজন কিন্তু বড় চেনা একজন। বড় সুন্দর করে সে লেখে–আপা, আমরা দু’জন কিছু কী করতে পারি আপনার জন্যে? আপনার জন্যে ও বড় কষ্ট পাচ্ছে। একটা কিছু করার সুযোগ আপনি ওকে দিন। বাকের সাহেবের মামলা যেদিন কোর্টে উঠে ও সেই সব দিনগুলিতে মামুন কোর্টে উপস্থিত থাকে। লজ্জায় আপনার সামনে যেতে পারে না। এক’দিন সে বলল, আপনি নাকি খুব কাঁদছিলেন বলতে বলতে সেও খুব কাদল। আপা, আপনি ওকে কিছু করার সুযোগ দিন।

এই মেয়েটির চিঠি পড়তে তার ভাল লাগে। কিন্তু জবাব দিতে ইচ্ছা করে না। বড় আলস্য লাগে। মাঝে মাঝে এমন ক্লান্তি লাগে যে কোর্টে যেতে পর্যন্ত ইচ্ছা করে না। তবু তাকে যেতে হয়। এক কোণে বসে থেকে সে প্রাণপণে চেষ্টা করে হাই গোপন করতে। কোর্ট থেকে বেরুতে বেরুতে কোন কোন দিন তিনটা সাড়ে তিনটা বেজে যায়। ক্ষিধেয় শরীর কেমন করতে থাকে। কিন্তু কিছু খেতে ইচ্ছা করে না। ঝিম ধরা দুপুরে সে রাস্তায় একা একা হাঁটে।

হাঁটতে হাঁটতেই কোনো কোনো দিন হঠাৎ সুখের কোনো কল্পনা মাথায় চলে আসে যেন সে রিকশা করে যাচ্ছে হঠাৎ পথে বাকেরের সঙ্গে দেখা। বাকের তাকে দেখে হাসিমুখে এগিয়ে আসছে। উৎসাহ নিয়ে বাকের বলল–যাচ্ছ কোথায়?

মুনা বলল, তা দিয়ে আপনার দরকার কি?…………না কোনো দরকার নেই। এমনি জিজ্ঞেস করলাম।………………বলতে বলতে বাকেরের মুখ একটু যেন বিষন্ন হয়ে গেল। মুনা বলল, আপনার কোনো কাজ না থাকলে আসুন তো আমার সঙ্গে এক জায়গায় যাব।

বাকের রিকশায় উঠল। আনন্দে তার চোখ ঝিকমিক করছে। বৃষ্টি শুরু হল তখন। তারা হুঁড তুলল না। বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে দু’জন এগুচ্ছে। হাওয়ায় মুনার চুল উড়ছে। বাকের বলছে বাতাসটা খুব ফাইন লাগছে তো। বড় ফাইন।

মুনার কোনো কল্পনাই দীর্ঘস্থায়ী হয় না। ঝিম ধরা ক্লান্ত আকাশের দিকে তাকিয়ে সে ছোট্ট নিঃশ্বাস ফেলে। আকাশের রঙ ঘন নীল। সেখানে–সোনালি ডানার চিল চক্রাকারে ওড়ে।

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *