খসড়া পাণ্ডুলিপি /রব্বানী চৌধুরী 

খসড়া পাণ্ডুলিপি /রব্বানী চৌধুরী 
পেইজ ১
বাবার সেবা করব
খাওয়াদাওয়ার চিন্তা নেই
শান্তি ঘুমের এ কোন মোটেল?
বাবার হোটেল!
কাপড়চোপড় মাগনা মিলে
পকেট খরছ ইন টোটেল
বাবার হোটেল!
টি ভি-বিদ্যুৎ-টেলিফোন
গ্যাস-পানি ও শ্যাম্পু-তেল
বাবার হোটেল!
খেলনা কেনা, বিয়েশাদি, আর কী বাকি?
ভাবতে ভাবতে মাথাই বেল
বাবার হোটেল!
বাবার মতো দাতা নেই কেউ
সন্তানেরা হয় কি লুটেল?
বাবার হোটেল!
যাদের ঘরে সুসন্তান হয়
তাঁদের জীবন হয় না ফেল
বাবার হোটেল!
বাবা আমার গর্ব
বাবার সেবা করব।
৩০-১-২০২২
পেইজ – ২
টুকরো ছড়া
ব্যাঙে চড়ে বাঘ
ফড়িং করে রাগ
খুকু হাসে কুটকুট
মিথ্যাবাদী ভাগ!
ঠকায় যারা ঠকে
যা ইচ্ছে তা বকে!
বকতে বকতে বক্তা
ন্যায়নীতি হয় তক্তা!
কুটুম বলে, কাটুম!
রোজ বিহানে খালি পায়ে
সবুজঘাসে হাঁটুম।
কাটুম বলে, কুটুম!
দেশের জন্য জীবন দিয়ে
গোলাপ হয়ে ফুটুম।
যে দেশে যাই স্বদেশ খুঁজি,
বাংলা আমার বুকে বুঝি!
ভাষার মাসে আশার কথা
চাষার কথা শিখি
জনম থেকে মরণদিন
বাংলা যেন লিখি।
২১/২/২০২১
পেইজ ৩
জন্ম আমার হয়েছিল
গানের দেশ বঙ্গে
যেখানে যাই বাংলাভাষা
থাকে আমার সঙ্গে!
 ছ
পায়রা নাচে ঘরের চালে
ফাল দিও না পরের তালে!
ভাবনা গেছে নদীর জলে
বিবেক গেছে খালে
ছাগলবুদ্ধি আছে যার
নাচে পরের তালে!
বাবারে বাবা কই থাকো?
গাছের তলে বই থাকো!
বসলে কি আর যাবে দিন?
সময় নষ্ট বাড়ে ঋণ!
দাদু আর নানু
চুল ধরে টানু?
টানব কী? খালি মাথা!
বেলগাছে ঝরে পাতা।
পাতা খায় ছাগলে
যা-তা  বলে পাগলে।
১৩/২/২১
পেইজ ৪
শেয়াল শিখে আইসিটি
ইমেলে রোজ পাই চিঠি।
চিঠির মাঝে টাকা চায়
সত্যকে কি ঢাকা যায়?
সব কথা যায় না বলা
সব পথে যায় না চলা
সব পাঠে থাকে না জ্ঞান
সব কাজে রাখে না মান।
কাক বলেছে– আঁকবি না
টাক বলেছে — ডাকবি না
দু’জন মিলে ঝগড়া করে
কঠিন-জীবন বাক বিনা!
জানার শেষ নেই
আলোর দেশ নেই
জানতে হলে পড়ো
আলোর পথ ধরো!
সত্যকথা চাপা রাখে
মিথ্যা বলে জবর
মিথ্যাবাদী ধ্বংস হবে
করতে হবে সবর।
২০২-৬-২০২০
পেইজ ৫
চাল বলে, চলন!
ভালো পথে থাকো যদি
আমার হবে জ্বলন!
আমি দিলে খারাপ চাল
কেটে যাবে তোমার গাল
তুমি আমি ভালো হলে
মিথ্যা হবে দলন!
বাঁচতে হলে ধৈর্য ধরো
বৃক্ষটাকে যত্ন করো।
পাঠ পাঠ কথা ছিল
মাঠ মাঠ গল্প
জ্ঞানীগুণী লোকজন
কথা বলে অল্প।
ক্ষতি যারা করে হয় ক্ষতিকর
ক্ষতি যারা করে নয় অতি পর!
আয় ভাই হেঁটে যাই
নীতিকথা বেটে যাই
বাটলে তো কমে না
ভালো লোক দমে না।
পেইজ ৬
ভয় বলে – ‘ভীতি!
এইদেশে আমাদের
কবে হবে ইতি?’
ভীতি বলে –‘ভয়!
যতদিন সুনীতির
হবে না রে জয়!’
ভয়ভীতি কাটো
নীতিপথে হাঁটো !
১৩-৪-২০২0
নরম বিবি শরম করে
খড়ম পরে পায়
খড়ম করে খটর খট
জানল সারা গাঁয়!
এই খড়মটা নিলে হাতে
পড়বে সেটা কারও দাঁতে
তার বিরুদ্ধে বললে কথা
খড়ম-পেটা খায়!
চাঁদ হাঁটে না, আমি হাঁটি?
ভাবনাতে যে সময় মাটি!
চাঁদের মতো সেবাকারী
মানুষ যারা আস্ত খাঁটি।
চাঁদের আছে আদরটা
বিছিয়ে দেয় চাদরটা
সবকে দেখে সম চোখে
বিড়াল কিবা বাঁদরটা।
চাঁদের মতো মন যার
লাগে না আর ধন তাঁর।
পেইজ ৭
সবাইকে যে আলো দেয়
তাঁকেই বলি চাঁদ
ভালো মানুষ কাজে হয়/
বাদবাকি বরবাদ!
কাজেকামে ভালো হও
পথে পথে আলো হও!
আলো যারা হতে চায়
সত্যের পথে যায়।
২১-১০-১৬
পৃথিবীর পথে পথে
যত ফুল আছে
মানুষের মতে মতে
তত ভুল আছে!
ভুল থেকে শিখে যারা
দুনিয়াতে টিকে তাঁরা
ভুলটাকে ফেলে দিলে
শত মূল আছে।
২১/১০/১৬
এপার বাংলা ওপার বাংলা
ধর্ম করে বাস
ধর্ম যদি ভুলতে পারো
গড়বে ইতিহাস।
পেইজ ৮
দেশপ্রেমিক অক্ষয়
বাঁচতে যদি হয়
মনটা থেকে সরিয়ে ফেলো সকল রকম ভয়।
বলতে যদি হয়
সত্য কথা বলবে শুধু হারবে না নিশ্চয়।
মরতে যদি হয়
দেশের জন্য মরো তুমি  দেশপ্রেমিক অক্ষয়।
২৪/২/২০২১
মুখ কালো করবে না
সাদা বলে – কালো
তোর মাঝে নেই ভাই
কোনরূপ আলো!
মুখ যদি কালো করি
বুবু দেয় চিমটা
কুসুমটা কালো হলে
নষ্ট যে ডিমটা।‘
কালো বলে – সাদা
ঠিককথা দাদা
আমি যেই থাকব না
থাকবে না বাধা।
পেইজ ৯
সময় মতো কাজ করবে
একটা সময় গরম থাকে
একটা সময় ঠান্ডা
একটা সময় ভালোই থাকে
একটা সময় ডান্ডা!
একটা সময় আসবে আর
একটা সময় যায়
সময় মতো না করলে কাজ
করবে যে হায় হায়!
১৭/১/২০২১
সত্যের সাথে থাকবে
সত্য ও মিথ্যার
মাঝামাঝি কিছু নেই
তাই আমি প্রতিদিন
সত্যের পিছু নেই।
সত্যের সাথে আমি থাকব
স্বদেশের ছবি বুকে রাখব ।
গাঁয়ের নাম জয়কলস
বধূর কাঁখে ছয় কলস।
ছয় কলসে পানির গান
ধুইলে যায় না মানীর মান।
২৪-৯-১৯
পেইজ ১০
মন বড়ো রাখবে
মানুষের মন
বড়ো থেকে ছোটো হলে
হারায় অর্জন।
মানুষের মন
ছোটো থেকে বড়ো হলে
বেড়ে যায় ধন।
জ্ঞান বড়ো ধন
জ্ঞানী হতে আজ থেকে
করো সবে পণ।
১১-৯-২০১৫
আসল খুঁজতে হবে
ফুলের গন্ধে পাখি আসে
পাখির ডাকে ফুল
মানুষ যারা করবে কাজ
থাকতে পারে ভুল।
ভুলের ঊর্ধ্বে কেউ নয়
সাগর সমান ঢেউ নয়
গন্তব্যে পৌঁছতে হলে
খুঁজতে হবে মূল।
১৮-১-২০২১
পেইজ ১১
দেশকে ভালো বাসবে
একটি ছড়া তোমার জন্য একটি ছড়া আমার
একটি ছড়া দুখীর জন্য একটি নয়া জামার।
একটি ছড়া দেশের জন্য ষোল কোটির হাত
সবার মনে জাগলে মায়া থাকবে না রে রাত!
একটি ছড়া স্বদেশপ্রেম মুখটা করে আলো
শাপলাফুলে সূর্য হাসে দেশকে বাসি ভালো।
ফুলের বন্ধু পাখি হয় রে নদীর বন্ধু জল
বাড়ির বন্ধু গাছগাছালি গাছের পাকা ফল।
মাঠের বন্ধু সোনালি ধানরাখাল বাজায় বাঁশি
আমার বন্ধু বাংলাদেশ ছড়ায় মুখের হাসি।
চাঁদকে আমার ভালো লাগে মায়ের মতো মুখ
পুকুর আমার ভালো লাগে শীতল করে বুক।
সূর্য আমার ভালো লাগে বাবার মতো চোখ
বাংলা আমার ভালো লাগে জানেন বিশ্বলোক।
পেইজ ১২
দেশের ছবি
ধানের গন্ধে আগন এলো  সোনালি রং হেমন্ত
সূর্যের আলো ছড়ায় হাসি ময়না-ঠোঁটে  যেমন তো!
শালিকপাখির ডানায় নাচে নতুন ধানের বারতা
মাঠের খবর কিষাণ জানে মাটির খবর আরও তা।
ছয় ঋতুতে রঙের খেলায় ফুলপাখিতে অমত কার?
সর্ষেফুলের হলুদ খোঁপায়  বাংলাদেশটা চমৎকার।
যেদেশেতে জন্ম যার সেদেশ তাকে টানে
জন্মভূমির জন্য কার মমতা নেই প্রাণে?
জন্মভূমির মাটির গন্ধ ফুলের মতো মিঠা
গরম দিনের বৃষ্টি যেন ঠাণ্ডা জলের ছিটা!
বাংলা আমার জন্মভূমি মায়ের মতো মুখ
এ বাংলাতে পা রাখলেই নামবে স্বর্গ সুখ।
বিদেশ থেকে লিখছি বলে কেউ দিয়ো না খোঁটা
বাংলাদেশের স্মৃতি আমার গন্ধরাজের বোঁটা ।
ঘুমের ঘোরে দেশে যাই জাগরণেও ভাবি
ধান সবুজের এমন দেশ বিশ্বে কোথায় পাবি?
২১/১০/১৩
পেইজ ১৩
আষাঢ়মাস
আষাঢ়
কলার ভেলা ভাসার
কথা মনে পড়ে;
বৃষ্টি ঝরে
মুষলধারে
পুকুর পাড়ে
বকের সারি সাদা;
গাঁদা
ফুল ফোটে
ওঠে
জালে মাছ
রাস্তায় কাদা।
দাদা
কদম ফুলের ঘ্রাণে
ধরে নাচ
শাপলাফোটা বিল
আকাশ ভরা নীল
নদী ফোলা
পালতোলা
নাও,
মাঝি বৈটা টানে
ভাটিয়ালি গাও।
বাংলার বর্ষা
থই থই প্রাণে!
৫/৭/২০২৪
পেইজ ১৪
বৈশাখে
বৈশাখে
আম ঝুলে ওই শাখে!
ঘুঘু ডাকে
কদমের ফাঁকে ফাঁকে!
দেয়া হাঁকে
খোকা ভয়ে মাকে ডাকে !
বলি কাকে?
নীলাকাশ ডাকে ডাকে —
শাপলার বিলটাকে
সোনারং চিলটাকে
বটের ওই ছায়াটাকে
গাঁয়ের ওই মায়াটাকে
মাটির ওই আলটাকে
জেলের ওই জালটাকে
লাল নীল ঘুড়িটাকে
বুবুর ওই চুড়িটাকে
দাদার ওই ছাতাটাকে
ধানের ওই পাতাটাকে
পাতার ওই বাঁশিটাকে
খোকার ওই হাসিটাকে
ইলিশের ভাজাটাকে
শাড়ি পরে সাজাটাকে
গলে ফুলমালাটাকে
ঘটিবাটি থালাটাকে
ঢোল হাতে ঢুলিটাকে
আলপনা-তুলিটাকে
ডাকে ডাকে
হ্যাঁ হ্যাঁ ডাকে,
জলভরা নদীটাকে
ডাকে বৈশাখ;
বাংলায় জেগে ওঠে
খুশির ওই নয়া বাঁক!
১৩/০৪/১৪
পেইজ ১৫
জন্মভূমি বাংলাদেশ
গায়ের পথে সাঁকো
দেশের ছবি আঁকো।
আঁকতে গিয়ে মাঠ
বটের গাছে বসে দেখি
বক-শালিকের হাট।
হাট নয় তো ওড়াওড়ি
রাখাল করে ঘোরাঘুরি।
ঘুরতে ঘুরতে দুপুর
বাঁশির টানে সকাল গেল
সূর্য হলো উপুড়!
সূর্যতেজে পথিক
পায় না খোঁজে গতিক
মেলল ধরে ছাতা,
বাংলা আমার সবুজ মাঠে
কচি ধানের পাতা।
পাতায় পাতায় হাসে
জন্মভূমি বাংলাদেশ
সবাই ভালোবাসে।
দেশপ্রেম যার বুকে আছে
তাঁর তো কোন ভয় নেই
সারাজীবন ভয় করে যে
তার তো কোন জয় নেই।
বুকের  ভেতর তুলকালাম
স্বর্গ হচ্ছে জন্মভূমি, এটা ত নয়
ভুল কালাম
বাংলাদেশ, ও আমার বাংলাদেশ
দেশের মাটি দেখেই দিলাম
ফুল-সালাম।
১৩-৫-১৮
পেইজ ১৬
খাটি মানুষ হতে হবে
নিজের চিন্তা করি যদি পরের চিন্তা শুধুই মাটি
আমি তো নই মানুষ খাঁটি।
নিজের ভালো প্রকাশ করি পরের ভালো দিচ্ছি কাটি
আমি তো নই মানুষ খাঁটি।
বিপদ দেখলে সরে পড়ি নিরাপদের পথেই হাঁটি
আমি তো নই মানুষ খাঁটি।
মানুষ হতে এসো সবাই একে-অন্যের দুঃখ বাটি
আমরা হবো মানুষ খাঁটি।
১৯/১২/২০২০
দেয়ানেয়া করতে হয়
দেয়ার কাছে নেয়া গেল নেয়ার কাছে দেয়া
এ জগতে বাঁচতে হলে লাগবে দেয়া-নেয়া।
নেয়ার চিন্তা করবে যারা দেয়ার চিন্তা কম
এ জগতে মানুষ নামের তারাই খুব অধম।
দেয়ার বেলা মনটা খুলে যারাই দেবেন ভাই
ইতিহাসের পাতায় কিন্তু তাঁরাই পাবেন ঠাঁই।
৪-১১-১৯
পেইজ ১৭
সাবার জন্য
খুকু
হাসে
কমলগঞ্জে
ওড়ে মন যে
ঘাসে!
বাবার কাছে
মায়ের কাছে
সাবা
লেখাপড়া করে একদিন
বড়ো হয়ে যাবা।
সত্যপথে চলতে গেলে
খেতে হবে থাবা!
কষ্ট করে এগিয়ে গেলে
আলোর পথই পাবা।
আগুন খেয়ে আগুন হজম
করতে যদি পারো
গুণী হবে সন্দেহ নেই
দুর্ভাবনা ছাড়ো!
টাকাছাড়া জীবন নেই
টাকা সবই নয়
ন্যায়নীতি যার ব্রত হয়
বিশ্ব করে জয়।
একটি কথা জ্ঞানের কথা
চিন্তা করেই বলো
একটি কথা রাখলে তুমি
করবে সবে ফলো!
বিনয় করে বললে কথা
বলবে না কেউ যা তা
এমন শিশু যার ঘরে হয়
ধন্য পিতামাতা।
১৩-২-২০২২
পেইজ ১৮
পরের টাকায় লোভ করবে না
মানুষ আছে সারা দেশে
স্বপ্নেও নয় বাস্তবে
কিন্তু বলো ভালো মানুষ
একটিও কি পাস তবে?
ভালো মানুষ আছে যারা
পরের টাকা খায় না
এমন মানুষ দেখার জন্য
সবার থাকে বায়না!
১৫-৯-১৯
সত্যকথায় ফাঁক থাকে না
ছন্দ মাত্রা অন্ত্যমিল
এসব কিন্তু ছড়ার দিল।
ভাব, বিষয় ও সহজ পাঠ
বেতাল হলেই লাগবে গাঁট।
ডাকলে নদী বইলে জল
ছড়ার ছন্দ অবিকল।
সূর্য নাচে চন্দ্র নাচে
এমন কথা ছড়ায় আছে।
বানান ভুল তো সবই ভুল
ফুটবে না রে ছড়ার ফুল।
ফুলের হাসি পাখির ডাক
সত্যকথায় নেই তো ফাঁক।
২৭/৭/২০২১

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *