তিনি শহীদ জননী হিসেবে পরিচিত। তিনি ছিলেন লেখিকা, শিক্ষাবিদ, কথাসাহিত্যিক এবং একাত্তরের ঘাতক দালাল বিরোধী আন্দোলনের নেত্রী। তিনি আজীবন একাত্তরের ঘাতক, দালাল, রাজাকার, আলবদর, আলশামশদের শাস্তির দাবিতে সংগ্রাম করেছেন। তিনি এক মহীয়সী নারী। তাঁর নিজের কষ্ট, ব্যথার ডায়েরি একাত্তরের দিনগুলো একটি যুগান্তকারী সৃষ্টি। তিনি স্বাধীনতাবিরোধী চক্রের বিরুদ্ধে গণ-আদালত গড়ে তোলেন।
গণ-আদালত ছিল স্বাধীনতাবিরোধী চক্রের অপকর্মের বিরুদ্ধে একটি প্রতীকী প্রতিবাদ। কিন্তু তৎকালীন সরকার তাঁর গণ-আদালতের সঙ্গে যুক্ত বরেণ্য ২৪ জন বুদ্ধিজীবীর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগ এনে মামলা দায়ের করে এবং তিনি মৃত্যুকালেও এ অভিযোগ থেকে মুক্তি পাননি।
- বিশিষ্ট এই লেখিকা জন্মগ্রহণ করেন – ৩ মে, ১৯২৯ সালে।
- বিশিষ্ট এই লেখিকার পৈত্রিক নিবাস – অবিভক্ত বাংলার মুর্শিদাবাদ জেলার সুন্দরপুর গ্রামে।
- অন্যতম এই লেখিকার পিতার নাম – সৈয়দ আবদুল আলী এবং মাতা সৈয়দ হামিদা বেগম।
- তাঁর পিতা আবদুল আলী ছিলেন – ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট।
- বিশিষ্ট এই লেখিকার শিক্ষাজীবন – তিনি ১৯৪২ সালে মাধ্যমিক পাশ করেন। ১৯৪৪ সালে রংপুর কারমাইকেল কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করে ১৯৪৫ সালে ভর্তি হন কলকাতা লেডি ব্রেবোর্ন কলেজে। লেডি ব্রেবোর্ন কলেজ (কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়) থেকে বি.এ পাশ করেন ১৯৪৭ সালে। ১৯৬০ সালে বি.এড ডিগ্রি অর্জন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। ১৯৬৪ সালে যুক্তরাষ্ট্র থেকে সার্টিফিকেট ইন এডুকেশন ডিগ্রি অর্জন করেন। যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফিরে ১৯৬৫ সালে বাংলায় এম.এ পাশ করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে।
- তিনি ময়মনসিংহ শহরে বিদ্যাময়ী বালিকা বিদ্যালয়ে বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন – ১৯৪৮ সালে।
- তিনি বিদ্যাময়ী বালিকা বিদ্যালয়ে কর্মরত ছিলেন – ১৯৪৮-৪৯ সাল পর্যন্ত।
জাহানারা ইমাম এর জীবনী ও সাহিত্যকর্ম
- তিনি ঢাকার সিদ্ধেশ্বরী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধন শিক্ষক ছিলেন – ১৯৫২-১৯৬০ সাল পর্যন্ত।
- তিনি বুলবুল একাডেমি কিন্ডারগার্টেন স্কুলের প্রধান শিক্ষক ছিলেন – ১৯৬২-১৯৬৬ সাল পর্যন্ত।
- ঢাকা টিচার্স ট্রেনিং কলেজের প্রভাষক হিসেবে তাঁর কর্মজীবন অতিবাহিত হয় – ১৯৬৬-১৯৬৮ সাল পর্যন্ত।
- তিনি কিছুদিন খন্ডকালীন শিক্ষক হিসাবে কাজ করেন – ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউটে।
- ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকালে তিনি হারা – পুত্র রুমী ও স্বামীকে।
- তিনি ’মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়ন ও একাত্তরের ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটি’ এর আহবায়ক হন – ১৯৯২ সালে।
- ’শহীদ জননী’ কার উপাধি – জাহানারা ইমাম।
- তাঁর রচিত শিশু সাহিত্যের মধ্যে রয়েছে – ‘গজকচ্ছপ’ (১৯৬৭), ‘সাতটি তারার ঝিকিমিকি’ (১৯৭৩), ‘বিদায় দে মা ঘুরে আসি’ (১৯৮৯) প্রভৃতি।
- তাঁর অনুবাদ গ্রন্থের মধ্যে রয়েছে – ‘জাগ্রত ধরিত্রী’ (১৯৬৮), ‘তেপান্তরের ছোট্ট শহর’ (১৯৭১), ‘নদীর তীরে ফুলের মেলা’ (১৯৬৬) প্রভৃতি।
- ’একাত্তরের দিনগুলি’ কোন জাতীয় রচনা – মুক্তিযুদ্ধ।
- ’একাত্তরের দিনগুলি’ স্মৃতিকথা লিখেছেন – জাহানারা ইমাম।
- ১৯৮৬ সালে-’একাত্তরের দিনগুলি’ স্মৃতিকথাটি প্রকাশিত হয় ।
- ’বীরশ্রেষ্ঠ’ কোন জাতীয় রচনা – মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক।
- তাঁর রচিত মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক গ্রন্থ ‘বীরশ্রেষ্ঠ’ প্রকাশিত হয় – ১৯৮৫ সালে।
- ’প্রবাসের দিনগুলি’ গ্রন্থের রচয়িতা – জাহানারা ইমাম।
- ’প্রবাসের দিনগুলি’ গ্রন্থটি প্রকাশিত হয় – ১৯৯২সালে।
- জাহানারা ইমাম রচিত ডায়েরিমূলক লেখা – ‘একাত্তরের ডায়রি’।
- ’বুকের ভিতর আগুন’ গ্রন্থের রচয়িতা – জাহানারা ইমাম।
- ’বুকের ভিতর আগুন’ গ্রন্থটি প্রকাশিত হয় – ১৯৯০ সালে।
জাহানারা ইমাম এর জীবনী ও সাহিত্যকর্ম
- তাঁর রচিত অন্যান্য গ্রন্থের মধ্যে রয়েছে – ‘অন্য জীবন’ (১৯৮৫), ‘জীবন মৃত্যু’ (১৯৮৮), ‘শ্রেক্সপীয়রের ট্রাজেডি’ (১৯৮৯), ‘নিসঙ্গ পাইন’ (১৯৯০), ‘নয় এ মধুর খেলা’ (১৯৯০), ‘নাটকের অবসান’ (১৯৯০), ‘দুই মেরু’ (১৯৯০), ‘ক্যান্সারের সঙ্গে বসবাস’ (১৯৯১), বাংলা উচ্চারণ অভিধান (যৌথভাবে সম্পাদিত) (১৩৭৫), ‘An Introduction to Bengali Language and Literature’ (Prat-1)(1983)।
- তিনি বাংলা একাডেমী সাহিত্য পুরস্কার পান – ১৯৯১ সালে।
- বিশিষ্ট এই লেখিকা ‘স্বাধীনতা পদক’ লাভ করেন – ১৯৯৭ সালে।
- অনত্যম এই লেখিকা ‘রোকেয়া পদক’ পান – ১৯৯৮ সালে।
- তিনি বিভিন্ন সময় অন্যান্য যে সকল পুরস্কার/পদকে ভূষিত হন – ‘বাংলাদেশ লেখিকা সংঘ সাহিত্য পুরুস্কার’ (১৯৮৮), ‘কমর মুশতারী সাহিত্য পুরস্কার’ (১৯৮৮), আজকের কাগজ হতে শতাব্দীর শ্রেষ্ট মুক্তিযোদ্ধা পুরস্কর (বাংলা ১৪০১ সনে), ’নারী গ্রন্থ প্রবর্তন’ (১৯৯৪), ‘অনন্যা সাহিত্য পুরস্কার’ (২০০১), ’ইউনিভার্সাল শিল্পী গোষ্ঠী পুরস্কর’ (২০০১), ‘শাপলা ইয়ূথ ফোর্স’, ’কারমাইকেল কলেজ গুণীজন সম্মাননা’, ‘মাস্টারদা সূর্যসেন পদক’, ‘মুক্তিযুদ্ধ উৎসব-ত্রিপুরা সাংগঠনিক কমিটি’, ‘বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ’, ‘রোটারাক্ট ক্লাব অব স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ’, বিশ্ববিদ্যালয় শিল্পী গোষ্ঠী পুরস্কার’ (২০০১), ’বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংঘ’ এবং ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনা’ প্রভৃতি।
- মুখের ক্যান্সারে আক্রান্ত হন – ১৯৮২ সালে।
- তিনি মৃত্যুবরণ করেন – ২৬ জুন, ১৯৯৪ সালে বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা ৭টায় মিশিগানের ডেট্রয়েট নগরীর সাইনাই হাসপাতালে ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে ৬৫ বছর বয়সে।
Read More