তিথির নীল তোয়ালে-পর্ব-(২২) হুমায়ূন আহমেদ

স্যার দেখলাম, ফুপু খুব সুন্দর ঝকমকা শাড়ি পরাকপালে টিপগা ভর্তি গয়নাগয়নার ভেতর লাল, নীল, সবুজ কত রকম পাথরপান খেয়ে ফুপুর ঠোট টকটকে লালফুপু বললেন, ওরে নুরু, দেখ, কি সুন্দর সুন্দর গয়না আমার গায়। 

তিথির নীল তোয়ালে

আমি বললাম, ফুপু, আপনি মনে হয় খুব সুখে আছেন ? 

ফুপু বললেন, হারে বােকা, খুব সুখে আছিস্বামীসন্তান সব সঙ্গে আছেতবে ছেলেটা বড় দুষ্টুমি করেসারাদিন আছে খেলার মধ্যেএকে নিয়ে আমি চিন্তায় অস্থিরশাসনও করতে পারি নাশাসন করতে গেলেই তাের ফুপা ছুটে এসে বলে কর কি, কর কি! আর আমার মেয়েও হয়েছে ভাইসােহাগীতার ভাইকে কিছু বললেই তার মুখ ভারবড় যন্ত্রণায় আছি রে নুরু { বলেই ফুপু আনন্দে হাসতে লাগলেনআমি বললাম, আপনার আনন্দ দেখে ভাল লাগছে ফুপু। 

ফুপু বললেন, তুই গরীব মানুষ, তােকে বিষয়সম্পত্তি দিয়ে এসেছিলামলুই তাে স্কুল করে বসে আছিস। 

আমি বললাম, আপনার কি এটা পছন্দ না ফুপু

ফুপু বললেন, অবশ্যই পছন্দতবে তুই আমার নাম দিয়েছিস, এটাতে খুব লজ্জায় পড়েছিনামটা বদলে দে। 

জ্বি আচ্ছা, দেব। 

  

লক্ষৌ টাইপটা কি?” 

দু ধরনের টাইপে কোরান শরীফ ছাপা হয় একটা কোলকাতা টাইপ একটা লক্ষে টাইপতিথি তুমি কি একটু ধরবে আমার সিগারেট নিভে গেছে ধরিয়ে নেইতিথি রিসিভার ধরে আছেমারুফ সিগারেট ধরাতে ধরাতে এতক্ষণ কি বলল তা গুছিয়ে নিলকোরান শরীফের ব্যাপারটা সে হঠাৎ করে নিয়ে এসেছেবড় ধরনের মিথ্যা বলার এক পর্যায়ে কোরান শরীফ নিয়ে এলে সুবিধা হয়যারা মিথ্যাটা শুনছে তারা নিশ্চিত হয় এটা মিথ্যা নাকোন মুসলমান ছেলে সংস্কারের কারণেই হােক বা অন্য যে কোন কারণেই হােক কোরান শরীফ জড়িয়ে মিথ্যা বলে না। 

হ্যালাে তিথি । 

শুনলেতো আমার ঘটনা? শুনলামআই এ্যাম সরি। 

তুমি কেন সরি হবেসরি হলাম আমিআমার যে কি খারাপ লাগছিল তােমাকে বুঝিয়ে বলতে পারব না। 

আমি বুঝতে পারছিনা তুমি বুঝতে পারছ নাযাই হােক এখন তােমার খবর বলআমার বলার মত কোন খবর নেইআমি কিছুক্ষণ পর সিলেট রওনা হচ্ছিকোথায় রওনা হচ্ছ?সিলেট ?কেন ?” 

মাকে নিয়ে আসতে যাচ্ছিবিয়ের ব্যাপারটা মাকে বলতে হবে না? বাবাকে রাজি করিয়েছিমাকে রাজি করাতে হবেমজার ব্যাপার কি জান। সিলেট যাচ্ছি 

আমি একা। 

একা মানে?” 

একা মানে একাঅল বাই মাইসেলফবাবা আর আমি আমাদের দুজনের যাবার কথা ছিলএখন ঠিক হয়েছে বাবা যাবেন নাআমি একা যাবএকটা স্লিপিং বার্থ রিজার্ভ করা আছে। 

তিথি !বল। 

আমি কি যেতে পারি তােমার সঙ্গে? প্রথমত একা একা তুমি রাতের ট্রেনে যাবে ভাবতেই আমার খারাপ লাগছেদ্বিতীয়ত সারারাত গল্প করতে করতে যাওয়ার আলাদা আনন্দ আছে‘ 

সারারাত গল্প করার আনন্দতাে অনেক পাবে| তা পাব, তবে সেটা হবে বিয়ের পরেবিয়ের আগে সারারাত গল্প করার আনন্দ অন্য রকম। 

তুমি জানলে কি ভাবে?” 

অনুমান করছিকল্পনায় বুঝতে পারছিপ্রকৃতি আমাকে কল্পনা করার অসাধারণ ক্ষমতা দিয়েছেনতােমার ট্রেন টায়?” 

রাতে সাড়ে দশটায়আমি ঠিক দশটার সময় কমলাপুর রেল স্টেশনে উপস্থিত থাকবআরে না নাঅসম্ভব। 

শােন তিথি, নেপােলীয়ান যখন তার সৈন্যবাহিনী নিয়ে আল্পস পর্বতমালার সামনে এসে দাড়ালেন এবং ঠিক করলেন তিনি তাঁর সৈন্যবাহিনী নিয়ে পর্বতমালা অতিক্রম করবেন তখন তাঁর সেনাপতিরা বলল, এটা অসম্ভবতার উত্তরে তিনি বললেন, অসম্ভব হচ্ছে এমন একটি শব্দ যা শুধু বােকাদের অভিধানেই পাওয়া যায়। 

নেপােলীয়ানের পক্ষে যে কথা বলা সম্ভব তাকি তােমার পক্ষে বলা সম্ভব? তুমিতাে নেপােলীয়ান না। 

কে বলল আমি নেপােলীয়ান নাআমি অবশ্যই নেপােলীয়ানআমি ঠিক দশটায় ট্রেনে চেপে বসবসারারাত গল্প করবতুমি মনে করে ফ্লাস্ক ভর্তি করে চা নেবে। 

মারুফ শােন, দয়া করে এই কাজটা করবেনপ্লীজপ্লীজস্টেশনে দেখা হবে। 

মারুফ টেলিফোন নামিয়ে রাখলআজ তার মনটা খুব ভালআজিজ সাহেবের কাছ থেকে দশ হাজার টাকা নেয়া হয়েছেনীলা পাথর কেনার টাকাবিয়েতে কাজে লাগবেপরে সুন্দর কোন গল্প বলে আজিজ সাহেবকে ঠাণ্ডা করলেই হবে

জাফর সাহেব মেয়েকে ট্রেনে তুলে দিতে এসেছেনতিথি অস্বস্তিতে মরে যাচ্ছে যদি মারুফের সঙ্গে দেখা হয়ে যায়বাবাকে তাহলে সে কি বলবে? বাবাই বা কি মনে করবেন? তিথি ভয়ে ভয়ে চারদিক দেখছে মারুফকে দেখা যাচ্ছে নাএত মানুষের মাঝে চট করে দেখা পাওয়াও মুশকিলকোথাও নিশ্চয়ই আছেদু নম্বর প্ল্যাটফরম থেকে ট্রেন ছাড়বেসে নিশ্চয়ই দু নম্বর প্ল্যাটফরমে ঘোরাঘুরি করছেতিথিকে দেখতে পেয়ে হাসি মুখে এগিয়ে আসবেতখন তিথি তার বাবাকে কি বলবে

দু নম্বর প্ল্যাটফরমেও মারুফকে দেখা গেল নাতবু তিথির অস্বস্তি দূর হল নাযে কোন মুহুর্তে সে উদয় হতে পারেজাফর সাহেব যখন মেয়ের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে চলে গেলেন তখনই শুধু তিথি খানিকটা স্বস্তি বোধ করলমারুফ এখন এসে উপস্থিত হলে তেমন অসুবিধা হবে নানুরুজ্জামানকে সামলানাে যাবেসরল ধরনের মানুষ, এদের কে যা বলা হয় তাই তারা বিশ্বাস করেসে সাড়ে টায় বাসায় ফিরেছে তাকে বলা হয়েছে সিলেট যেতে হবে, সে সঙ্গে সঙ্গে ব্যাগ গুছিয়ে প্রস্তুতএকবার জিজ্ঞেসও করে নি কেন যেতে হবে? দিন থাকতে হবে ? হলুদ রঙের একটা কোট তার গায়েকোর্টের বােতামগুলি মেরুন রঙের

কোন সুস্থ মাথার মানুষ রকম একটা কেটি গায়ে দিতে পারে? সে আবার সুযােগ পেলেই তিথিকে কোট সম্পর্কে জ্ঞান দিচ্ছে| রাস্তার সাইডে বিক্রি করছিলহ্যাঙ্গারে ঝুলিয়ে রেখেছেএকটা দুইটা না শত শত কোটআমি শুধু শুধু জিজ্ঞেস করলাম দাম কত? বলল দুটাকাআমি চলে আসছি, দোকানদার বলল, চলে যাচ্ছেন কেন, একটা দাম বলেন তারপর চলে যানযদি দরে বনে দিয়ে দিবনা বলে নাইআমি বললাম, পঞ্চাশ টাকা। কেনার ইচ্ছা নাই এই জন্য বললাম, পঞ্চাশআগে একবার স্যান্ডেল কিনে ঠক খেয়েছিলামতাই বুদ্ধি করে এমন কম দাম বললামসে সাথে সাথে পলিথিনের 

ব্যাগের ভেতর ঢুকায়ে কোট দিয়ে দিলপরলাম এমন বিপদে না কিনেও পারি নানিজের মুখে দাম বলেছিজিনিসটা কেমন হয়েছে

ভালঠিক বলেছেন ভালখুব গরমগরমের চোটে ঘাম ছুটেছে। 

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *