দুই দুয়ারী-পর্ব-(১৪)-হুমায়ুন আহমেদ

কোন কিছুতেই তার মন বসছে নাসাবেরের অসুখের এতটা যে বাড়াবাড়ি তা তিনি বুঝতেই পারেননিছেলের সঙ্গে ইদানীং তার যােগাযােগ নেই বললেই হয়। সাবের তাঁর ভয়ে অস্থির হয়ে থাকেএটা জানেন বলেই তিনি নিজেকে দূরে দূরে রাখেনদুই দুয়ারী

তার মানে এটা না যে সাবের অসুস্থ হলেও তিনি জানবেন নাডাক্তারের কথা শুনে তিনি বেশ বিচলিত বােধ করছেন। দুজন ডাক্তারই বললেন, ছেলেকে হাসপাতালে ভর্তি করিয়ে দিন। 

তিনি বললেন, কেন? বেটার কেয়ার হবেএইখানে কি বেটার কেয়ার হবে না বলতে চাচ্ছেন

তা নাহবে নিশ্চয়ই তবে হাসপাতালে সব সময় হাতের কাছে ডাক্তার থাকবে। 

প্রয়ােজন হলে এখানেও হাতের কাছে ডাক্তার রাখবতাছাড়া আমার ছেলে নিজেও একজন ডাক্তাররেকর্ড নম্বর পেয়ে এম.বি.বি.এস. পাশ করেছে। 

‘কোন ইমার্জেন্সি হলে হাতের কাছে সবকিছু থাকবেএই জন্যেই হাসপাতালের কথা বলাঅন্য কোন কারণ না। 

ইমার্জেন্সি হবে রকম আশংকা কি করছেন? হ্যা করছিঅবস্থা ভাল না” 

দুই দুয়ারী-পর্ব-(১৪)-হুমায়ুন আহমেদ

মতিন সাহেব ছেলেকে হাসপাতালে পাঠাননিসার্বক্ষণিক সেবার জন্যে 

একজন নার্স এনেছেনডাক্তার একজনও রাখতে চেয়েছিলেন, সাবের রাজি হয়নিআগ্রহ এবং আনন্দের সঙ্গে বলেছে ডাক্তার লাগবে কেন বাবা? আমি নিজেই তাে ডাক্তারআগে সব ভুলে গিয়েছিলাম এখন সব মনে পড়ছেফার্মাকোলজির বইটা হাতে নিয়ে যে কোন প্রশ্ন কর আমি বলে দেব। 

সাবেরের কথাবার্তা ঠিক সুস্থ মানুষের কথাবার্তা নয়যে ছেলে বাবার ভয়ে অস্থির থাকতাে আজ সে বাবার সঙ্গে বন্ধুর মত গলায় কথা বলছেস্বাভাবিক অবস্থায় এভাবে কথা বলা সম্ভব নয়। 

বাবা, আমার সমস্যাটা কি ডাক্তাররা তােমাকে বলেছে ?না। 

আমাকেও বলেনি তবে তারা সন্দেহ করছেন চিকেন পক্স দূষিত হয়ে গ্যাংগ্রীনের মত হয়ে গেছেতুমি কি আমার গা থেকে পচা গন্ধ পাচ্ছ?” 

না” 

পচা গন্ধ পেলে বুঝতে হবে গ্যাংগ্রীনগ্যাংগ্রীনের Causative Agents কি, বলব

বলতে ইচ্ছে হলে বলClostrodium welchii, gram positive, anaerobic bacilli ... 1 আমি কিন্তু সব মুখস্থ বলে যাচ্ছি। 

তাই তাে দেখছি। 

একজন ভাল ডাক্তারের যে জিনিসটা সবচে বেশী দরকার তা হচ্ছে তীক্ষ্ণ স্মরণশক্তি। 

কথা না বলে চুপচাপ শুয়ে থেকে রেস্ট নেয়াটা বােধ হয় ভাল। 

মতিন সাহেব ছেলের কাছ থেকে সরে এসে বারান্দায় বসেছেনসাবেরের পাশে তার মা এবং নার্স মেয়েটি আছেসুরমা অসম্ভব ভয় পেয়েছেননার্স মেয়েটিও ভয় পেয়েছে। 

দুই দুয়ারী-পর্ব-(১৪)-হুমায়ুন আহমেদ

মিতু আবার এসে বলল, বাবা তােমার টেলিফোনমতিন সাহেব বললেন, বল বাসায় নেইএক মিথ্যা দুবার বলা যায় না বাবামিস্টার আগস্ট বলেছেনতােমাকে যা বলতে বলেছি বলবড় আপা টেলিফোন করেছে নিশা আপু। 

মতিন সাহেব যন্ত্রের মত উঠে গিয়ে টেলিফোন ধরলেন। 

বাবা, কেমন আছ

বাসার সবাই ভাল ?” 

হ্যা। 

মিথ্যা কথা বলছ কেন বাবা ? সাবেরের তাে খুব অসুখ‘া ওর শরীরটা ভাল নেই। 

এই খবর তােমরা আমাকে জানাওনিভুল হয়ে গেছে। 

রকম ভুল ইদানীং তােমাদের খুব ঘন ঘন হচ্ছেতুমি একটা এ্যাকসিডেন্ট করেছিলেএকটা লােককে প্রায় মেরেই ফেলেছিলে তাকে তুলে এনেছএখন সে আমাদের বাসাতেই আছে এই খবরও দাওনি। 

এটা তেমন কোন খবর নাঅবশ্যই বড় খবরলােকটা অদ্ভুত অদ্ভুত সব কাণ্ড করে বেড়াচ্ছে ...কোনই অদ্ভুত কাণ্ড করছে নামিতু বলল করছে, মন্টু মামাকে নাকি বটগাছ বানিয়ে দিয়েছে ... মিতু কি বলছে তাই বিশ্বাস করে বসে আছিস?মিতু তাে বাবা কখনাে মিথ্যা কথা বলে না। 

বেশ, বাসায় এসে তাহলে তাের বটগাছ মন্টু মামাকে দেখে যাবটগাছের নীচে বসে খানিকক্ষণ হাওয়া খেয়ে যা। 

‘তুমি এমন রেগে রেগে কথা বলছ কেন বাবা?রাগ হচ্ছে বলেই রেগে রেগে কথা বলছিতুমি কি গাড়িটা পাঠাতে পারবে? নাগাড়ি নিয়ে এষা সকালে বের হয়েছে, এখনও ফেরেনি। 

দুই দুয়ারী-পর্ব-(১৪)-হুমায়ুন আহমেদ

মতিন সাহেব টেলিফোন রেখে আগের জায়গায় এসে বসলেনবুঝতে পারছেন নিশার সঙ্গে কঠিন ব্যবহার করা হয়েছেধরনের ব্যবহার তিনি তার মেয়েদের সঙ্গে কখনাে করেন নাসকাল থেকেই মেজাজ খারাপ হয়ে আছেবেলা যতই বাড়ছে মেজাজ ততই খারাপ হচ্ছেএখন দুপুর। 

মিতু ঢুকলাে, বাবা আবার টেলিফোননিশা আপা ফোন করেছেতুমি নাকি তাকে বকা দিয়েছ? সে কাদছে। 

কাদুক।’ 

মিতু ফিরে গেলনিশাকে বলল, বাবাকে বলেছিলাম তুমি কাঁদছবাবা বললেন কাঁদুক। 

সুরমা অফিসে হাজিরা দিতে গেছেন। 

ব্যাংকের চাকরিতে হুট করে এ্যাবসেন্ট করা যায় না.জি.এমকে জানাতে হবেআজকের দিন ছাড়াও আরাে দুদিন ছুটি নেবেনতাঁর মাথায় যন্ত্রণা অন্যদিন সন্ধ্যার পর হয়, আজ শুরু হয়েছে দুপুর থেকেসাবের তার ঘরে একানার্স মেয়েটি ঘরের বাইরে বারান্দায় চেয়ারে উদ্বিগ্ন মুখে বসে আছেমেয়েটি অসম্ভব রােগা শ্যামলা চেহারাসরল মুখচোখ দেখে মনে হয় কোন কারণে ভয়ে অস্থির হয়ে আছেবাইশ তেইশ বছর বয়স, রােগা বলেই বােধ হয় আরাে কম দেখা যায়নার্স এর পেশায় মেয়েটি দুবছর কাটিয়েছে এর মধ্যেই রােগ এবং রােগী সম্পর্কে নির্বিকার ভাব চলে আসা উচিত ছিল, তা আসেনি। 

 মেয়েটি চেয়ার ছেড়ে উঠে দাড়ালরুগীকে এন্টিবায়ােটিক খাওয়ানাের সময় হয়ে গেছেরুগী এখন ঘুমুচ্ছেঘুম ভাঙ্গিয়ে হলেও অষুধ খাওয়াতে হবেএক মিনিট এদিকওদিক হতে দেয়া যাবে না। 

সাবেরের গায়ে হাত দেয়া মাত্র সে চোখ মেললস্যার, আপনার অষুধ খাওয়ার সময় হয়েছে। 

সাবের বিস্মিত হয়ে বলল, আপনি আমাকে স্যার বলছেন কেন? আগেও বলব ভাবছিলামমনে থাকে না আপনি নাম ধরে ডাকবেনভাল কথা আপনার নাম কি

হৈমন্তীবাহ, চমৎকারহেমন্ত ঋতুতে জন্ম বলেই কি হৈমন্তী

 

Read more

দুই দুয়ারী-পর্ব-(১৫)-হুমায়ুন আহমেদ

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *