পাখি আমার একলা পাখি-পর্ব-(১৮)-হুমায়ুন আহমেদ

আমি বললাম, জানি নাসত্যি জানিস না?” 

না।এখন তো জানলিএখন কি করবি?আমার করার কিছু নেইকি করবে না করবে সেটা ওর ব্যাপারতুই তাকে কিছুই বলবি না?” 

নাযে তােকে যাদু করে রেখেছে তা তুই বুঝতে পারছিস না ?না” 

বাবা বললেন, আমার এই বাড়িতে বাস করে তুমি যে উদ্ধত ভঙ্গিতে কথা বলছ তা আমার কাছে অত্যন্ত বিস্ময়কর বলে মনে হচ্ছেতুমি কি করবে না করবে তা তােমার ব্যাপারতবে আমি তােমার জায়গায় হলে কঠিন শাস্তির ব্যবস্থা করতামপাখি আমার একলা পাখিআমি বললাম, কি রকম শাস্তি? খুন করার কথা বলছেন

বাবা দীর্ঘসময় আমার দিকে তাকিয়ে রইলেনযাকে বলে বাক্যহারামুনিয়া অস্বস্তি নিয়ে একবার মার মুখের দিকে একবার বাবার মুখের দিকে তাকাচ্ছেবাবা বললেন, দেখি এক গ্লাস পানিমুনিয়া পানি আনতে গেলতার ফিরে আসতে বেশ সময় লাগলএই সময়টুক বাবা চুপচাপ রইলেনবােধহয় কি বলবেন, গুছিয়ে নিচ্ছেন। 

আমার অনেকদিন থেকেই মনে সন্দেহ তুমি মানসিক দিক দিয়ে ঠিক স্টেবল নওআজ নিশ্চিত হয়েছি‘ 

ইনসেনিটি এক ধরনের অসুখ যা দ্রুত বাড়তে থাকে। 

আমি হাসির একটা ভঙ্গি করলামবাবা হতভম্ব হয়ে বললেন, হাসছ কেন? চুপ করে থাকবে নাবল কেন হাসছ

পাখি আমার একলা পাখি-পর্ব-(১৮)-হুমায়ুন আহমেদ

মুনিয়া বলল, বাবা, তুমি বেশি রেগে যাচ্ছমা, মিটিংটা আজ থাক। 

বাবা বললেন, না আমার কথা শেষ হয়নি। এই বদছেলে সাদা চামড়ার এক মেয়ে বিয়ে করে ধরাকে সরা দেখছেওকে বাড়ি থেকে বের হয়ে যেতে বলসে যেন কালই তার বৌয়ের হাত ধরে বাড়ি থেকে বিদেয় হয়। 

আমি শান্ত ভঙ্গিতে ঘরে ফিরে এলামরূপা বলল, কি ব্যাপার তােমাদের 

কিসের মিটিং

আমি হাই তুলতে তুলতে বললাম, তেমন কিছু নাকোন সমস্যা হয়েছে?” 

সমস্যা হলে আমাকে বলতে পারআমি যেহেতু তােমাদের পরিবারের কোন সদস্য না, আমি তােমাদের সমস্যা অবজেকটিভলি দেখতে পারব। 

আমি সফিকের বই হাতে নিয়ে ইজিচেয়ারে গা এলিয়ে দিলামরূপা বলল, বইটা রাখ তােআমার দিকে তাকাও। 

আমি তাকালাম। 

রূপা বলল, বাবুর সঙ্গে আমার কথা হচ্ছিলসে বলল, তুমি নাকি একটা খুন করতে চাও? পারফেক্ট মার্ডারসত্যি

আমি জবাব দিলাম নারূপা বলল, কাকে খুন করতে চাও, আমাকে

আমি চুপ করে রইলাম। 

আপত্তি না থাকলে বলতে পারআমরা দুজন ব্যাপারটা নিয়ে ডিসকাস করতে পারিমানুষ হিসেবে তুমি বেশ অদ্ভুতএই জন্যেই তােমাকে আমার এত পছন্দতােমাকে যে আমি প্রচণ্ড রকম ভালবাসি সেটা কি তুমি জান ?

পাখি আমার একলা পাখি-পর্ব-(১৮)-হুমায়ুন আহমেদ 

তুমি আসলে কিন্তু জানশুধু মুখে বলছ নাতুমিও আমাকে প্রচণ্ড রকমভালবাস, তবে ভালবেসে সুখ পাচ্ছ নাতাই না?” 

আমি চুপ করেই রইলামরূপা বলল, সত্যিকার ভালবাসার একটা বড় লক্ষণকি জান? ভালবেসে সুখ পাওয়া যায় না, কখনাে নাআমি সারাক্ষণ তােমার পাশে থাকলেও তােমার মনে হবে নেই নেইপাশে কেউ নেইআর তখনি ভালবাসার মানুষকে খুন করে ফেলার ইচ্ছা হয়। 

আলােচনা অগ্রসর হল না, লাবণ্য এসে ঢুকলতার কোলে ছােট্ট বালিশরূপা বলল, কি খবর লাবণ্য

লাবণ্য গম্ভীর গলায় বলল, তােমাদের বিছানায় কি জায়গা আছে? কেন বল তাে?আমি তােমাদের সঙ্গে ঘুমুবপ্রচুর জায়গা আছে লাবণ্য, প্রচুর জায়গাআমি ঘুমিয়ে পড়লে মা যদি নিতে আসে তাহলে কিন্তু মাকে নিষেধ করবে। 

পাখি – 

অবশ্যই নিষেধ করব। 

লাবণ্য বিছানায় ঘুমিয়ে পড়লএবং তার প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই মুনিয়া উপস্থিত হলসে তার মেয়েকে নিয়ে যেতে এসেছেরূপা বলল, মেয়েকে তো দেয়া যাবে 

দেয়া যাবে না মানে?” 

ঘুমুতে যাবার আগে বলে গেছে ওকে যেন তােমার হাতে তুলে দেয়া না হয়আমি ওকে কথা দিয়েছি। 

রাতে ঘুম ভাঙ্গলে কাঁদবে। 

পাখি আমার একলা পাখি-পর্ব-(১৮)-হুমায়ুন আহমেদ

কাঁদলে তােমার কাছে দিয়ে আসবএখন তুমি একে নিতে পারবে নাআমি আমার মেয়ে নিয়ে যেতে পারবাে নাতুমি কি বলছ?আজ রাতে পারবে নাঅসম্ভবসম্ভব অসম্ভব তুমি আমাকে শেখাতে এসো না। 

মুনিয়া তার মেয়েকে তুলে নিয়ে গেলরূপা আমার দিকে তাকিয়ে সহজ গলায় বলল, ঘুমুতে আস। 

আমি বললাম, তুমি ঘুমাওআমি একটু পরে আসছিআমি সফিকের উপন্যাস নিয়ে বসলাম। 

 উপন্যাসটা গত দশদিন ধরে পড়ার চেষ্টা করছিকয়েক পাতা পড়ার পরই বাধা পড়ে, আবার গােড়া থেকে শুরু করিপ্রথম সাত পাতা আমার দশবার পড়া হয়েছেএতে মজার একটা ব্যাপার হয়েছে, কোন্ লাইনের পর কোন্ লাইন আমার জানা হয়ে গেছেএকটা পরিচিত গান শুনতে যেমন ভালো লাগে, পরিচিত উপন্যাস পড়তেও দেখি তেমুনি আনন্দ। 

রূপা বলল, সত্তর পৃষ্ঠার একটা বই শেষ করতে তােমার এতােদিন লাগছে? আমি বললাম, বইটা মুখস্ত করার চেষ্টা করছিআচ্ছারূপা বিছানায় শুতে শুতে বলল, সফিক কি কি তােমার খুব ভালো বন্ধু

একসময় ছিলো, এখন নাতােমার বন্ধু বান্ধব তেমন নেই, তাই না?কিছু কিছু আছেনাম বলাে তাে। 

আমি চুপ করে গেলামপড়ার মাঝখানে বাধা পড়েছেআবার গােড়া থেকে পড়া শুরু করা দরকারঠিক মন বসাতে পারছি নারূপা চুল আঁচড়াচ্ছেবার বার ঐদিকে চোখ চলে যাচ্ছে। 

পাখি আমার একলা পাখি-পর্ব-(১৮)-হুমায়ুন আহমেদ

রূপা বলল, চা খাবে

রূপা বলল, মনে হচ্ছে উপন্যাসটা আবার গােড়া থেকে শুরু করেছে। 

মুখস্ত হয়েছে খানিকটা

এখনাে নালিখে লিখে প্র্যাকটিস করোতাড়াতাড়ি হবে। 

উপন্যাসটা খুব সুবিধার লাগছে নানায়ক কোন কাজকর্ম করে নাঢাকা শহরে ঘুরে বেড়ায়কখনাে সাইকেলে, কখনাে পায়ে হেঁটেমনে হচ্ছে তার হাঁটাতেই আনন্দ

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *