আমি পান নিলাম। তুমি বিছানায় বস তো। আমি তােমার ইজিচেয়ারটায় বসে দেখি কেমন লাগে। আমরা জায়গা বদল করলাম। রূপা বলল, তােমাকে বলতে ভুলে গেছি মুনিয়ার হাসবেণ্ড অর্থাৎ এক্স হাসবেও টেলিফোন করেছিলেন। তােমার সঙ্গে তাঁর নকি ভীষণ জরুরী কথা আছে। ঠিকানা দিয়ে দিয়েছেন। দেখা করতে বললেন।
‘কবে দেখা করতে হবে? ‘আজ। বিকেলে চলে যেও। “আচ্ছা। “তুমি কি ঘুমুবে ? ঘুমুতে চাইলে চাদর গায়ে শুয়ে পড়। আমি ইজিচেয়ারে শুয়ে শুয়ে তােমার দিকে তাকিয়ে থাকি।
‘ঘুম পাচ্ছে না। রূপা হাসল। আমি বললাম, হাসছ কেন?
রূপা হাসতে হাসতে বলল, তােমার পড়ুয়া ভাইকে কিছুক্ষণ আগে একটা ধাঁধা জিজ্ঞেস করলাম। সে ধাঁধা শুনে পুরােপুরি ভড়কে গেছে – আমার ধারণা পড়াশােনা বাদ দিয়ে এখন সে এইটা নিয়েই ভাববে। ‘কি ধাঁধা”
পাখি আমার একলা পাখি-পর্ব-(২৪)-হুমায়ুন আহমেদ
খুব সহজ ধাধা। দু‘জন ছেলেকে তাদের বাবারা কিছু টাকা দিয়েছিলেন। একজন তাঁর ছেলেকে দিলেন ১৫০ টাকা, অন্যজন দিলেন ১০০ টাকা। ছেলে দুজন তাদের টাকা গুনে দেখল একত্রে তাদের টাকা হয়েছে মাত্র ১৫০। কি করে সম্ভব হল? তুমি কি পারবে?”
‘না।
‘বাবুও পারবে না। কিছু কিছু মানুষ আছে যারা সহজ জিনিসগুলি খুব জটিল ভাবে চিন্তা করে। তাদের পক্ষে এই ধাধার উত্তর বের করা অসম্ভব।‘ আমি বিছানায় শুয়ে পড়লাম।
রূপা তাকিয়ে আছে আমার দিকে। তার মুখের ভাব সহজ। চোখের দৃষ্টি স্বাভাবিক। যেন কিছুই হয়নি। দুপুরের ঘটনাটা সে মাথা থেকে দূর করে দিয়েছে। রূপা বলল, চা খাবে?
‘খাও একটু। মতির মা’কে চা দিতে বলেছি। সে চা নিয়ে আসবে। ‘আচ্ছা।
মতির মা চা নিয়ে ঘরে ঢুকল। আমি এবং রূপা চা খাচ্ছি। চা খেতে খেতে রূপা বলল, আমি যখন কোন কথা বলি তখন কি তুমি মন দিয়ে শােন, না শুধু তাকিয়ে থাক ?
‘মন দিয়ে শুনি। সবার কথাই আমি মন দিয়ে শুনি। ‘তােমার মা আজ ভাত খাবার সময় যে কথাগুলি বলেছিলেন তুমি কি তা মন দিয়ে শুনেছ?”
‘আমার মা সম্পর্কে তিনি যা বললেন সেগুলি কি তােমার কাছে বিশ্বাসযােগ্য মনে হয়েছে?
“না।”
পাখি আমার একলা পাখি-পর্ব-(২৪)-হুমায়ুন আহমেদ
‘যদি বিশ্বাসযােগ্য মনে না হয়ে থাকে তাহলে কেন তুমি তােমার মাকে চুপ করতে বললে না ? আমি যে কি ভয়ংকর লজ্জা পাচ্ছিলাম তা তােমার চোখে পড়ে নি?
চোখে পড়েছে। তাহলে চুপ করে ছিলে কেন? প্রতিবাদ করনি কেন?
রূপার গলার স্বর বদলে যাচ্ছে। চোখের তারায় অন্য এক ধরনের আলাে। সে আজ বিশেষ কিছু বলবে। সেই বিশেষ কথাগুলি শােনার জন্যে আমি অপেক্ষা। করছি। রূপী চায়ের কাপ নামিয়ে রেখে ঠোট মুছল, তারপর আগের চেয়েও নিচু গলায় বলল, প্রতিবাদ আমি নিজেও করতে পারতাম। ভণ্ডামী, ভান এইসব আমার ভাল লাগে না। যেখানে এইসব দেখেছি কঠিন গলায় প্রতিবাদ করেছি।
তােমার মা‘র কথার কোন প্রতিবাদ করতে পারলাম না, কারণ তিনি যা বলেছেন সত্যি বলেছেন। এক বিন্দু মিথ্যা নয়। ‘তাতে কিছু যায় আসে না। ‘সবটা শােন তারপর বল, “তাতে কিছু যায় আসে না। আমার মা আর্ট স্কুলের ছাত্রী ছিলেন। অহংকারী জেদী একটি মেয়ে। অসম্ভব রূপবতী। আমি বলেছি না মা’র কিছু কিছু জিনিস আমি পেয়েছি। রূপ হচ্ছে তার একটা। কিন্তু মা ছিলেন দরিদ্র। তাদের পুরাে পরিবারটাই দরিদ্র। দু‘বেলা খাবার সামর্থও এই পরিবারের ছিল না।
এমন একটা পরিবারে রূপবতী মেয়ে হয়ে জন্মানাের হাজারো সমস্যা। মা আর্ট স্কুলের পড়ার খরচ চালাতে পারেন না। অনাহারের কষ্টও এক সময় অসহ্য বােধ হল। এক সময় দেখা গেল ছুটির দিনে নাইট ক্লাবগুলিতে তিনি নাচতে শুরু করেছেন। বাড়তি কিছু টাকা আসছে।
পাখি আমার একলা পাখি-পর্ব-(২৪)-হুমায়ুন আহমেদ
আমি বললাম, থাক এসব। | রূপা বলল, থাকবে কেন? আমি তাে বলতে লজ্জা পাচ্ছি না। তুমি শুনতে লজ্জা পাচ্ছ কেন? আমার মা প্রতিটি ঘটনা আমাকে বলেছেন।
আমি পান নিলাম। তুমি বিছানায় বস তো। আমি তােমার ইজিচেয়ারটায় বসে দেখি কেমন লাগে।
আমরা জায়গা বদল করলাম। রূপা বলল, তােমাকে বলতে ভুলে গেছি মুনিয়ার হাসবেণ্ড অর্থাৎ এক্স হাসবেও টেলিফোন করেছিলেন। তােমার সঙ্গে তাঁর নকি ভীষণ জরুরী কথা আছে। ঠিকানা দিয়ে দিয়েছেন। দেখা করতে বললেন।
‘কবে দেখা করতে হবে? ‘আজ। বিকেলে চলে যেও। “আচ্ছা।
“তুমি কি ঘুমুবে ? ঘুমুতে চাইলে চাদর গায়ে শুয়ে পড়। আমি ইজিচেয়ারে শুয়ে শুয়ে তােমার দিকে তাকিয়ে থাকি।
‘ঘুম পাচ্ছে না। রূপা হাসল। আমি বললাম, হাসছ কেন?
রূপা হাসতে হাসতে বলল, তােমার পড়ুয়া ভাইকে কিছুক্ষণ আগে একটা ধাঁধা জিজ্ঞেস করলাম। সে ধাঁধা শুনে পুরােপুরি ভড়কে গেছে – আমার ধারণা পড়াশােনা বাদ দিয়ে এখন সে এইটা নিয়েই ভাববে।
‘কি ধাঁধা”
পাখি আমার একলা পাখি-পর্ব-(২৪)-হুমায়ুন আহমেদ
খুব সহজ ধাধা। দু‘জন ছেলেকে তাদের বাবারা কিছু টাকা দিয়েছিলেন। একজন তাঁর ছেলেকে দিলেন ১৫০ টাকা, অন্যজন দিলেন ১০০ টাকা। ছেলে দুজন তাদের টাকা গুনে দেখল একত্রে তাদের টাকা হয়েছে মাত্র ১৫০। কি করে সম্ভব হল? তুমি কি পারবে?”
‘না।
‘বাবুও পারবে না। কিছু কিছু মানুষ আছে যারা সহজ জিনিসগুলি খুব জটিল ভাবে চিন্তা করে। তাদের পক্ষে এই ধাধার উত্তর বের করা অসম্ভব।‘
আমি বিছানায় শুয়ে পড়লাম।
রূপা তাকিয়ে আছে আমার দিকে। তার মুখের ভাব সহজ। চোখের দৃষ্টি স্বাভাবিক। যেন কিছুই হয়নি। দুপুরের ঘটনাটা সে মাথা থেকে দূর করে দিয়েছে। রূপা বলল, চা খাবে?
‘খাও একটু। মতির মা’কে চা দিতে বলেছি। সে চা নিয়ে আসবে। ‘আচ্ছা।
মতির মা চা নিয়ে ঘরে ঢুকল। আমি এবং রূপা চা খাচ্ছি। চা খেতে খেতে রূপা বলল, আমি যখন কোন কথা বলি তখন কি তুমি মন দিয়ে শােন, না শুধু তাকিয়ে
থাক ?
পাখি আমার একলা পাখি-পর্ব-(২৪)-হুমায়ুন আহমেদ
‘মন দিয়ে শুনি। সবার কথাই আমি মন দিয়ে শুনি।
‘তােমার মা আজ ভাত খাবার সময় যে কথাগুলি বলেছিলেন তুমি কি তা মন দিয়ে শুনেছ?”
‘আমার মা সম্পর্কে তিনি যা বললেন সেগুলি কি তােমার কাছে বিশ্বাসযােগ্য মনে হয়েছে?
“না।”
‘যদি বিশ্বাসযােগ্য মনে না হয়ে থাকে তাহলে কেন তুমি তােমার মাকে চুপ করতে বললে না ? আমি যে কি ভয়ংকর লজ্জা পাচ্ছিলাম তা তােমার চোখে পড়ে নি?
চোখে পড়েছে। তাহলে চুপ করে ছিলে কেন? প্রতিবাদ করনি কেন?