পাখি আমার একলা পাখি-পর্ব-(৮)-হুমায়ুন আহমেদ

প্রায়ই ব্রেইন শর্ট সার্কিট হয়ে যায়। 

রূপা গল্পগুচ্ছ নিয়ে এলহৈমন্তী গল্প বার করা হলআমি রূপার মুখের দিকে তাকিয়ে গড়গড় করে বলে যেতে লাগলাম কন্যার বাপ সবুর করিতে পারিতেন কিন্তু বরের বাপ সবুর করিতে চাহিলেন না

পাখি আমার একলা পাখি

তিনি দেখিলেন, মেয়েটির বিবাহের বয়স পার হইয়া গেছে, কিন্তু আর কিছুদিন গেলে সেটাকে ভদ্র বা অভদ্র কোনাে রকমে চাপা দিবার সময়টাও পার হইয়া যাইবেমেয়ের বয়স অবৈধ রকমে বাড়িয়া গেছে বটেকিন্তু পণের টাকার অপেক্ষিক গুরুত্ব এখনাে কিঞ্চিৎ উপরেআছে, সেই জন্যেই তাড়া...” 

রূপা বলল, থামুনআপনি ভুল করেছেন এখনাে তাহার এই দুটা শব্দ বাদ পড়েছেমেয়ের বয়স অবৈধ রকমে বাড়িয়া গেছে বটে, কিন্তু পণের টাকার আপেক্ষিক গুরুত্ব এখনাে তাহার চেয়ে কিঞ্চিৎ উপরে আছে, সেই জন্যেই তাড়া। 

আমি চুপ করে গেলামরূপা বলল, থামলেন কেন? আমি বললাম, আজ আর ইচ্ছা করছে নাআরেকদিন। 

রূপাদের বাড়ি থেকে বের হয়েই সফিক বলল, কি, আমার কথা ঠিক হয়েছে? দেখেছিস এমন রূপবতী মেয়ে

আমি বললাম, না, দেখিনিমেয়েটার চোখ নীল, তা লক্ষ করেছিস?” 

চোখ নীল কেন বল তাে? আমি কি করে বলব?” 

রূপার মা হচ্ছেন লেবানীজ মেয়েমেয়ে তার মারূপ পেয়েছেচোখ এই কারণেই নীল ড্রয়িং রুমে যে সব ছবি দেখেছিস, সবই ওর মার আঁকা। 

পাখি আমার একলা পাখি-পর্ব-(৮)-হুমায়ুন আহমেদ

রূপার সঙ্গে পরিচয়ের এই হচ্ছে শুরুরূপার চাচার সঙ্গে কথা হয়েছেভদ্রলােক রােবট জাতীয়এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকেন, কিছুক্ষণ পর খুব দ্রুত 

খানিকক্ষণ চোখ পিটপিট করেন, তারপর আবার তাকিয়ে থাকেনকথাবার্তা বলেন , বললেও এক অক্ষরে সীমাবদ্ধ থাকেরূপা যখন বলল, চাচা, ইনার নাম রঞ্জু। 

রােবট চাচা বললেন, হুউনি হলেন সফিক সাহেবের বন্ধুসফিক সাহেবকে তাে তুমি চেন, চেন না?

ঠিক আছে চাচা, তুমি এখন যাওএরা দুজন এসেছে ভি সি আরে একটা ছবি দেখতে এ্যামেডিউস। 

আমি বললাম, এই যে আমরা প্রায়ই আসি আপনার চাচা বিরক্ত হন না

অবশ্যই হনতবে বিরক্ত হলেও কিছু বলেন না, কারণ আমাকে তার বাড়িতে রাখার জন্য তিনি মাসে দশ হাজার করে ঢাকা পান এবং বাবা তাকে বলে দিয়েছেন আমাকে যেন আমার মত চলতে দেয়া হয়চাচার ভয়ঙ্কর মানসিক কষ্ট হচ্ছে কিন্তু তিনি আমাকে আমার মত চলতে দিচ্ছেনমােট কবার গিয়েছি রূপাদের বাড়িতে? অনেকবারতবে কখনো একা যাইনিসব সময় সফিক সঙ্গে ছিলএবং মজার ব্যাপার হচ্ছে প্রতিবারই রূপা বলেছে দেখি আপনার স্মৃতিশক্তি কেমন, হৈমন্তী গল্পটা আবার বলুন তােআমি মিলিয়ে দেখিএকটা না একটা ভুল আপনি প্রতিবারই করেছেনযেদিন কোনাে ভুল করবেন না সেদিন আপনার জন্যে পুরস্কার আছে। 

পাখি আমার একলা পাখি-পর্ব-(৮)-হুমায়ুন আহমেদ

কি পুরস্কার?| তা বলব নাতবে খুব ভাল পুরস্কারযা আপনি কখনাে কল্পনাও করেন নি। 

লাম একা অমিকে একা দেখে রূপা অত্যন্ত বিস্মিত হয়েছিল। 

কি ব্যাপার, একা যে! বন্ধু কোথায়

আমি বললাম, ব্যক্তিগত প্রয়ােজনে এসেছি, কাজেই একা| রূপা আগের চেয়েও বিস্মিত হয়ে বলল, কি প্রয়ােজন

হৈমন্তী গল্পটা ভুল ছাড়া আপনাকে শােনাব আচ্ছাগল্পগুচ্ছ নিয়ে আসুন। 

গল্পগুচ্ছ আনতে হবে নাআজ যে আপনি ভুল করবেন না তা আপনার চোখমুখ দেখেই বুঝতে পারছিআপনাকে একটা চমৎকার পুরস্কার দেব বলেছিলামতা দিতে আমি প্রস্তুত আছিপুরস্কারটা কি আপনি কি আন্দাজ 

করতে পারেন

না, আমি আন্দাজ করার চেষ্টাও করিনিকারণ আপনি বলেছিলেন পুরস্কারটা কি তা আমি কল্পনাও করতে পারব না। 

রূপা বলল, কিছু কল্পনাতাে তারপরেও করেছেনকরেননি? 

সত্যি বলছেন? হ্যা, সত্যি বলছি। 

বসুন চা খাই আগে, তারপর কথা হবেআমি যে একটা সিনেমা করছি তা কি আপনি জানেন

জানি সফিক বলেছেসজনে ফুলআজ সেই ছবির কিছু কাজ হবে বুড়িগঙ্গা নদীতেবিকেল তিনটা থেকে শিফটআপনি কি যাবেন?” 

না কেন ? অনেক লােকজন সেখানে থাকবেএত লােকজন আমার ভাল লাগে না। 

কি জন্যে লােকজনদের ভিড় আপনার ভাল লাগে না? লােকগুলিকে আপনার কি বােকা মনে হয়, না বেশি বুদ্ধিমান মনে হয়

বােকা মনে হয়। 

রূপা হেসে ফেললনিজেই চা নিয়ে এলটী পট থেকে চা ঢালতে ঢালতে বলল, আপনাকে যেমন বলেছি এমন সুন্দর একটা উপহার দেব যা আপনি কল্পনাও করতে পারবেন নাসে রকম কথা আমি অন্য পুরুষ মানুষদেরও বলেছিএটা বললে পুরুষদের মধ্যে অদ্ভুত একটা পরিবর্তন হয়এই পরিবর্তন দেখতে আমার ভাল লাগে। 

পাখি আমার একলা পাখি-পর্ব-(৮)-হুমায়ুন আহমেদ

কাউকে কি পুরস্কার দিয়েছেন

নাবাজি এমন বিষয়ে ধরি যা পূরণ করা সম্ভব নামুতালেব নামে আমার একজন বন্ধু আছে, তাকে একটা অঙ্কের ধাধা দিয়েছিসে এক বছর ধরে সেই ধাধার জবাব বের করার চেষ্টা করছে বিশেষ পুরস্কারের আশায়, যে পুরস্কারটা কি তা সে জানে না। 

বের করতে পারেনি?” 

কোনদিন পারবেও নাএই ধাধাটার কোনো উত্তর নেইতবে আপনি পারবেনআপনার চোখমুখ দেখেই মনে হচ্ছে আপনি তৈরি হয়ে এসেছেনতবে আজ হাতে একেবারেই সময় নেইকোনাে একদিন আপনাকে খবর দেববাসায় 

কি আপনার টেলিফোন আছে? থাকলে নাম্বারটা রেখে যান। 

তারপর একদিন অদ্ভুত এক ব্যাপার হলদুপুরে ঘুমিয়ে আছি মুনিয়া এসে ডেকে তুলল, টেলিফোনআমি বিরক্ত হয়ে বললাম, ঘুমুচ্ছি বলতে পারলি না

দিনে তো তুই কখনাে ঘুমাস নাকাজেই ভাবলাম বােধহয় মটকা মেরে পড়ে আছিস। 

কে টেলিফোন করেছে?

 নাম জিজ্ঞেস করিনি, তবে গলার স্বর অসম্ভব মিষ্টিআমি এরকম মিষ্টি গলার স্বর এর আগে শুনিনি। 

আমি টেলিফোন ধরতেই ওপাশ থেকে রূপা বলল, আপনার কি ইস্ত্রি করা পাঞ্জাবি আছে? শাদা পাঞ্জাবি

কেন?” আছে কিনা বলুন। 

আছেপাঞ্জাবি গায়ে দিয়ে চলে আসতে পারবেন? পারব, কিন্তু ব্যাপারটা কি

আপনাকে বিয়ে করতে হবেবিয়ে করতে হবে মানে

অসহায় একজন তরুণীকে উদ্ধার করতে হবে

 কিছু গুণ্ডাপাণ্ডা ধবনের ছেলে জোর করে মেয়েটিকে ধরে নিয়ে যাবার চেষ্টায় আছেতাদের একজন মেয়েটিকে বিয়ে করতে চায়। 

আমি বিস্মিত হয়ে বললাম, কি বলছেন আপনি, এই যুগে এটা কি সম্ভব? এই যুগেই সম্ভবঅন্য যুহলে সম্ভব ছিল নাপুলিশে খবর দিতে বলুন

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *