বাঘবন্দি মিসির আলি পর্ব:০২ হুমায়ূন আহমেদ

বাঘবন্দি মিসির আলি পর্ব:০২

ফতে যেমন নিঃশব্দে এসেছিল সেরকম নিঃশব্দেই চলে গেলেন। নিশাচর পশুরাই এমন নিঃশব্দে চলে। নিশাচরদের সঙ্গে ফতে মিয়ার কোথায় যেন খানিকটা মিল আছে। মিসির আলি বাড়িওয়ালা বদরুল সাহেবের হইচই চিৎকার শোনার জন্য অপেক্ষা করতে লাগলেন। বদরুল সাহেব তার ভাগ্নেকে গলাগলি না করে ঘুমাতে যাবেন তা হবার না। ছমাসের ওপর হল মিসির আলি এ বাড়িতে আছেন।

ছমাসে এ নিয়মের ব্যতিক্রম দেখেন নি। বদরুল সাহেবের মেজাজ এমনিতেই চড়া। বাড়িতে যতক্ষণ থাকেন, হইচই চিৎকার গালাগালির মধ্যেই থাকেন। নিজের ভাগ্লের ক্ষেত্রে সব সীমা অতিক্রম করে। তিনি শুরুই করেন—শুয়োরের বাচ্চা পাছায় লাথি মেরে তোমাকে আমি… দিয়ে। মাঝে মাঝে চড়থাপ্পড় পর্যন্ত গড়ায়। বদরুল সাহেব ছোটখাটো রোগা পটকা মানুষ। তাঁর নানান অসুখবিসুখ আছে। চুপচাপ যখন বসে থাকেন তখন বুকের ভিতর থেকে শা শা শব্দ আসে।

এরকম একজন মানুষের ফতে মিয়ার মতো বলশালী কাউকে চড় মারতে সাহস লাগে। সেই অর্থে বদরুল সাহেবকে সাহসী মানুষ বলা যায়।আশ্ৰিত মানুষকে নানান অপমানের মধ্যে বাস করতে হয়। সেই অপমানেরও একটা মাত্রা আছে। ফতে মিয়ার ব্যাপারে কোনো মাত্রা নেই! মিসির আলি একবার তাকে দেখলেন ঠোঁট অনেকখানি কাটা। স্টিচ দিতে হয়েছে। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, কী হয়েছে ফতে?

সে মাটির দিকে তাকিয়ে বলল, মামা রাগ করে ধাক্কার মতো দিয়েছিলেন। সিঁড়িতে পড়ে গেলাম। তেমন কিছু না। মামা প্রেসারের রোগী, রাগ সামলাতে পারেন না। তার ওপর মেয়েটা অসুস্থ। মেয়েটার জন্য মন থাকে খারাপ।বদরুল সাহেবের একটাই মেয়ে। ছ বছর বয়স-নাম লুনা। মেয়েটার মানসিক কোনো সমস্যা আছে। চুপচাপ একা বসে থাকে।

বাঘবন্দি মিসির আলি পর্ব:০২

তার একটাই খেলা-হাতের মুঠি বন্ধ করছে, মুঠি খুলছে। ঘণ্টার পর ঘণ্টা সে এই খেলা খেলে পার করে দিতে পারে। মেয়েটা পরীর মতো সুন্দর।মিসির আলি প্রায়ই মেয়েটাকে সিঁড়ির গোড়ায় বসে থাকতে দেখেন। একমনে হাতের মুঠি বন্ধ করছে, খুলছে। দৃশ্যটা দেখে মিসির আলির মন খুবই খারাপ।

আজ অনেকক্ষণ বসে থেকেও ফতে মিয়ার প্রেসারের রোগী মামার কোনো হইচই শোনা গেল না! আজ হয়তো তিনি সকাল সকাল শুয়ে পড়েছেন। বাড়িওয়ালার চিৎকারটাও রুটিনের অংশ হয়ে গেছে। কোনোদিন যদি শোনা না যায় তা হলে মনে হয়। দিনটা ঠিকমতো শেষ হয় নি। কোথাও ফাক আছে।মিসির আলি বারান্দা ছেড়ে ঘরে ঢুকলেন। রাত কত হয়েছে বোঝার উপায় নেই। ঘড়ি বন্ধ।

বিছানায় যাবার আগে এক কাপ গরম চা খেলে হত। বেশিরভাগ মানুষই কফি অথচ চা খেলে ঘুমাতে পারে না! অথচ গরম চা তার জন্যে ঘুমের ওষুধের মতো কাজ করে। ইয়াসিন থাকলে চা এক কাপ খাওয়া যেত। তাঁর নিজের এখন আর চুলার কাছে যেতে ইচ্ছা করছে না।খুব হালকাভাবে কে যেন দরজায় কড়া নাড়ছে। ইয়াসিনই ফিরে এসেছে কি না কে জানে। বাবাকে হয়তো খুঁজে পায় নি, কিংবা ভিক্ষা করে আজ তেমন সুবিধা করতে পারে নি।

কে?

স্যার আমি ফতে।

কী ব্যাপার?

আপনার জন্যে মোমবাতি নিয়ে এসেছি। স্যার।মিসির আলি বিস্মিত হলেন। মোমবাতির কথা কি তিনি ফতে মিয়াকে বলেছেন? না বলেন নি। মোমবাতি নিয়ে তার উপস্থিত হবার কোনোই কারণ নেই।ফতে মিয়া শুধু মোমবাতি আনে নি। ফ্লাঙ্কে করে চা এনেছে। আজকাল দুটা বিস্কুটের ছোট ছোট প্যাকেট পাওয়া যায়। এক প্যাকেট বিস্কুটও এনেছে। সে ঘরে ঢুকে ফ্লাস্কের মুখে চা ঢেলে মিসির আলির দিকে এগিয়ে দিল।

প্যাকেট খুলে বিস্কুট বের করুল। দুটা বড় বড় মোমবাতি সামনে রাখল। মোমবাতির পাশে রাখল দেয়াশলাই! কাজগুলো করল। যন্ত্রের মতো। যেন প্রতিদিনই এরকম কাজ সে করে। যে কোনো অভ্যস্ত কাজ করায় যে যান্ত্রিকতা থাকে তার সবটাই ফতের মধ্যে দেখা যাচ্ছে। মিসির আলি বললেন, তোমাকে কি মোমবাতি আনতে বলেছিলাম?

বাঘবন্দি মিসির আলি পর্ব:০২

ফতে লজ্জিত গলায় বলল, জি না বলেন নাই। দশ মিনিটের মধ্যে কারেন্ট চলে যাবে। লোডশেডিং হবে। অন্ধকারে কথা বলে আরাম পাওয়া যায় না, এই জন্য মোমবাতি নিয়ে এসেছি।দশ মিনিটের ভেতর লোডশেডিং হবে।জি। চা খান। আমি নিজে বানিয়েছি। চিনি ঠিক হয়েছে কি না একটু দেখেন।মিসির আলি চায়ে চুমুক দিলেন। তিনি চায়ে যতটুকু চিনি খান, ঠিক ততটুকু চিনিই আছে। তিনি কড়া একটু তিতকুট ধরনের চা পছন্দ করেন—এই চা কড়া এবং তিতকুট ধরনের।

ফতে।

জি স্যার।

তোমার চা খুব ভালো হয়েছে। আমি কোন ধরনের চা খাই তা তুমি জান?

ইয়াসিনকে জিজ্ঞেস করে জেনেছি।

এখন কটা বাজে?

এগারোটা পাঁচ।

তোমার হাতে ঘড়ি আছে?

জি না।

আমার এখানে আসার আগে কি ঘড়ি দেখে এসেছ?

জি না।

তা হলে কী করে বলছ-এগারোটা পাঁচ বাজে?

ঘড়ি না দেখেও আমি সময় বলতে পারি। ছোটবেলা থেকেই পারি। মৃত্যুঞ্জয় হাই স্কুলে যখন পড়ি তখন স্কুল পরিদর্শনে ইন্সপেক্টর সাহেব এসেছিলেন, তাকে ঘড়ির খেলা দেখিয়েছিলাম। উনি খুব খুশি হয়েছিলেন। বলেছিলেন আমাকে একটা ভালো ঘড়ি পাঠিয়ে দেবেন। পাঠান নাই। ভুলে গেছেন হয়তো।

ঘড়ির খেলাটা কী?

ঘড়ি না দেখে বলা সময় কত।

ও আচ্ছা।

স্যারের শরীর কি খারাপ?

সামান্য খারাপ।

শরীরের যত্ন নিবেন স্যার। যত্ন বিনা কোনো কিছুই ঠিক থাকে না। এই আমাকে দেখেন সকালে ফজরের নামাজ পড়ে হাঁটতে বের হই। চাইর থেকে পাচ মাইল হাঁটি। এই কারণে আমার কোনো অসুখবিসুখ হয় না। আপনে যদি অনুমতি দেন সকালে হাঁটতে যাবার সময় আপনাকে ডেকে সঙ্গে নিয়ে যাব।কোনো দরকার নেই ফতে মিয়া। হাঁটাহঁটি ব্যাপারটা আমার পছন্দ না। দীর্ঘদিন বেঁচে থাকার জন্যে মানুষ নানান কষ্টকর পদ্ধতির ভিতর দিয়ে যায়-ব্যায়াম করে, হাঁটাহঁটি করে। আমার দীর্ঘদিন বেঁচে থাকার কোনো বাসনা নেই।

বাঘবন্দি মিসির আলি পর্ব:০২

কথা শেষ করার আগেই কারেন্ট চলে গেল। ফতে মিয়া বলেছিল দশ মিনিটের মধ্যে কারেন্ট চলে যাবে। তাই হয়েছে। চমকানোর মতো কোনো ঘটনা না। ঢাকা শহরে রাতে পঁচ-ছবার করে ইলেকট্রসিটি চলে যাচ্ছে। এর মধ্যে কেউ যদি বলে দশ মিনিটের মধ্যে লোডশেডিং হবে তার কথা সত্যি হবার সম্ভাবনাই বেশি। মিসির আলি ভেবেছিলেন ফতে বলবে, দশ মিনিটের মধ্যে কারেন্ট চলে যাবে বলেছিলাম দেখলেন। স্যার কারেন্ট চলে গেছে।

ফতে তা করুল না। সে সাবধানে মোমবাতি জ্বালাল। পাশাপাশি দুটা মোমবাতি। তার মুখ হাসি হাসি। কোনো একটা বিষয় নিয়ে সে আনন্দিত। ফ্লাস্ক থেকে নিজের জন্যে চা ঢালতে ঢালতে বলল, স্যার আজ আমার মনটা খুব ভালো।

ভালো কেন?

আমি একটা দোকান নিয়েছি। সেলামির টাকা ছাড়াই দোকান পেয়েছি। আঠারো হাজার টাকা শুধু দিতে হয়েছে।

কিসের দোকান?

দর্জির দোকান। আমি দর্জির কাজ কিছু জানি না। ইনশাল্লাহ শিখে ফেলব। তবে একজন কর্মচারী আছে। কাজ ভালো জানে। দোকান নেওয়ার খবরটা স্যার আপনাকেই প্রথম দিলাম। আপনি নাদান ফতের জন্যে খাস দিলে একটু দোয়া করবেন।ফতের চোখ চকচক করছে। গলার স্বর ভারী হয়ে এসেছে। মনে হচ্ছে সে কেঁদেই ফেলবে। ফতে নিজেকে সামলে নিয়ে বলল, দোকানের টাকাটা খুবই কষ্ট করে যোগাড় করেছি। মামার সঙ্গে দুবছর ধরে আছি।

এই দুবছরে মামার বাজার করতাম। রোজ কিছু কিছু টাকা সরাতাম। কোনোদিন দশ টাকা কোনোদিন পনেরো টাকা। এই অনেক টাকা হয়ে গেল-ঐ কবিতাটা পড়েছেন না। স্যার বিন্দু বিন্দু বালিকণা বিন্দু বিন্দু জল গড়ে তুলে সাগর অতল। দৈনিক পনেরো টাকা সরালে দুই বছরে হয় দশ হাজার নয়শ পঞ্চাশ টাকা। আমার হয়েছে সাড়ে নয়। হাজার টাকা।

কিছু টাকা খরচ করে ফেলেছি। আমার আবার সিগারেট খাওয়ার বদভ্যাস আছে। নেশার মধ্যে সিগারেট আর জারদা দিয়ে পান। স্যার নেন আমার প্যাকেট থেকে একটা সিগারেট নেন। বাংলা ফাইভ ফাইভ।মিসির আলি সিগারেট নিলেন। ফতে আবারো কথা শুরু করুল-একবার করলাম কি স্যার বেশ কিছু টাকা একসঙ্গে সরিয়ে ফেললাম। পঁচিশ হাজার টাকা।

বাঘবন্দি মিসির আলি পর্ব:০২

আমাকে ব্যাংকে পাঠিয়েছে জমা দিতে, আমি ফিরে এসে বললাম টাকা হাইজ্যাক হয়ে গেছে। মামা-মামি দুজনই আমার কথা বিশ্বাস করল। বিশ্বাস না করে উপায়ও নাই-আমার হাত-পা কাটা সারা শরীর রক্তে মাখামাখি।নিজেই নিজের হাত-পা কেটেছ?

জি স্যার। একটা ব্লেড কিনে, ব্লেড দিয়ে কেটেছি। নিজের হাতে নিজের শরীর কাটাকুটি করা খুবই কষ্টের কিন্তু কি আর করা এতগুলি টাকা। এত রক্ত বের হচ্ছিল যে আমার মামি পর্যন্ত মামার উপরে রেগে গিয়ে বলল-কেন তুমি তাকে একা একা এতগুলি টাকা দিয়ে পাঠালে! একে তো মেরেই ফেলত। স্যার আমার কথা শুনে কি আপনার খারাপ লাগছে?

মিসির আলি কিছু বললেন না। তিনি আগ্রহ নিয়ে কথা শুনছেন। ফতের গল্প বলার ক্ষমতা ডালো। গলার স্বরের উঠানামা আছে। কথা বলার ফাঁকে ফাঁকে হঠাৎ কথা বন্ধ করে। রহস্যময় ভঙ্গিতে হাসে। এতে গল্পটা আরো জমে যায়।স্যার বোধহয় আমাকে খুব খারাপ মানুষ ভাবছেন! স্যার আমি খারাপ না। মামার কাছ থেকে আমি কত টাকা নিয়েছি। সব একটা খাতায় লিখে রেখেছি। ইনশাল্লাহ সব টাকা একদিন ফেরত দেব।

দরজির দোকান দেওয়ার ব্যাপারটা তোমার মামা জানে?

জি স্যার আজ বিকালে বলেছি।

উনি জিজ্ঞেস করেন নাই এত টাকা কোথায় পেয়েছ?

উনাকে বলেছি যে আমার এক বন্ধু আমাকে টাকাটা ধার দিয়েছে।

বন্ধুর কথা উনি বিশ্বাস করেছেন?

জি করেছেন। উনি জানেন আমার এক বন্ধু কুয়েতে কাজ করে। বাবুর্চি। সে আমাকে টাকা দিয়ে সাহায্য করবে। এটা মামাকে অনেক দিন থেকেই বলছিলাম। মামা এটা নিয়ে আমাকে অনেক ঠাট্টা-মশকরাও করতেন। প্রায়ই বলতেন-কই তোর বন্ধুর টাকা কবে অাসবে?

বাঘবন্দি মিসির আলি পর্ব:০২

আজ সন্ধ্যায় মামাকে পা ছুঁয়ে বলেছি টাকা এসেছে। মিষ্টি কিনে নিয়ে গিয়েছি। মামা খুশি হয়েছে। দরজির দোকানের কথা মামাকে বলেছি। মামা বলেছেন প্রয়োজনে তাঁর কাছ থেকে কিছু টাকা নিতে। এটা অবশ্য মামার মুখের কথা। মামা মুখে অনেক কথা বলেন।

ফতে।

জি স্যার।

তুমি আমাকে যেসব কথা বললে তার সবই তো গোপন কথা। প্রকাশ হয়ে পড়লে তোমার সমস্যা। কথাগুলি আমাকে কেন বললে? আপনার কাছ থেকে কোনো কথাই প্ৰকাশ হবে না। আপনি গাছের মতো। গাছের কাছ থেকে কোনো কথা প্রকাশ হয় না।আমাকে কথাগুলি বলার কারণ কী? কাউকে বলার ইচ্ছা করছিল। আমার স্যার কথা বলার লোক নাই। বাবা-মা শৈশবে গত হয়েছেন। একটা বোন আছে মাথা খারাপ। বন্ধুবান্ধব কেউ নাই!কাউকে বলতে হয় বলেই কি তুমি আমাকে কথাগুলি বললে?

জি স্যার।

কারেন্ট চলে এসেছে। ফতে ফু দিয়ে বাতি নিভিয়ে উঠে দাঁড়াল। বিনীত ভঙ্গিতে বলল, স্যার যাই। আমার জন্যে একটু দোয়া রাখবেন স্যার। গরিবের ছেলে যদি দোকানটা দিয়ে কিছু করতে পারি। আরেকটা ছোট্ট অনুরোধ। যদি রাগ না করেন তা হলে বলি।

বল।

দরজির দোকানের একটা নাম যদি দেন। সুন্দর কোনো নাম। আগে নাম ছিল বোম্বে টেইলারিং হাউস। আমি স্যার সুন্দর একটা নাম দিতে চাই। বাংলা নাম।নামটাম আমার ঠিক আসে না।আপনি যে নাম দিবেন। সেটাই আমি রাখব। আপনি যদি খারাপ নামও দেন কোনো অসুবিধা নাই। আপনি যদি নাম দেন-গু-গোবর টেইলারিং শপ আল্লাহর কসম সেই নামই রাখব।কেন?

এটা আমার একটা শখ। মানুষের অনেক শখ থাকে। আমার শখ আমার দরজির দোকানোর নামটা আপনি দিবেন।আচ্ছা দেখি মাথায় কোনো নাম আসে কি না।এত চিন্তাভাবনা করার কিছু তো নাই স্যার। এখন আপনার মাথায় যে নামটা আসছে সেটা বলেন।

এখন মাথায় কিছু নেই।

যা ইচ্ছা বলেন।

সাজঘর।

আলহামদুলিল্লাহ। আমার দোকানের নাম সাজঘর। স্যার উঠি?

আচ্ছা।

ফতে বিনীত গলায় বলল, দুটা মোমবাতি আর একটা দেয়াশলাইয়ের দাম পড়েছে পাচ টাকা। আপনার কথা ভেবে কিনেছিলাম। ভাংতি পাঁচ টাকা কি আছে স্যার?

 

Read more

বাঘবন্দি মিসির আলি পর্ব:০৩ হুমায়ূন আহমেদ

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *