বাঘবন্দি মিসির আলি পর্ব:০৬ হুমায়ূন আহমেদ

বাঘবন্দি মিসির আলি পর্ব:০৬

প্রফেসর স্টাইনার খুব ব্যস্ত হয়ে পড়েন তাঁর স্ত্রীর সঙ্গে মিসির আলির পরিচয় করিয়ে দেবার জন্যে। তিনি মিসির আলির হাত ধরে টেনে নিয়ে গেলেন তাঁর স্ত্রীর কাছে! মুগ্ধ গলায় বললেন-কেরোলিন ইনি হচ্ছেন-প্যারাসাইকোলজির গুরু। উনার কিছু প্ৰবন্ধ নিয়ে কলম্বিয়া ইউনিভার্সিটি একটি বই প্রকাশ করেছে। বইটির নাম দি থার্ড কামিং। আমি বইটি তোমাকেও পড়তে দিয়েছিলাম। আমি নিশ্চিত তুমি পড় নি। না পড়লেও পৃথিবী নামক এই গ্রহের কয়েকটি শুদ্ধতম ব্রেইনের অধিকারীদের একজনের সঙ্গে হ্যান্ডশেক কর।

এই ঘটনার পর মিসির আলির আর নাশতার জন্যে চিন্তা করতে হল না। বিশিষ্ট মেহমানদের সঙ্গে খাবার জন্যে তাঁকে আলাদা করে নেওয়া হল। কর্মকর্তাদের একজন এক ফাঁকে গলা নিচু করে বলল, মিসির আলি সাহেব সন্ধ্যার পর ফ্রি থাকবেন। এক্সক্লুসিভ ককটেল পার্টি।হুইস্কির মধ্যে ব্লু লেভেল যোগাড় হয়েছে।মিসির আলি বললেন, আমি তো হুইঙ্কি খাই না।লাইটার ড্রিংকসও আছে-খুব ভালো ওয়াইন আছে।আমি মদ্যপান করি না।কোকা-পেপসিও আছে। কোকা-পেপসি খাবেন।

মিসির আলি সহজ গলায় বললেন, মদের আসরে পেপসি-কোকওয়ালাদের না থাকাই ভালো।আপনার যে বই আছে তা জানতাম না। বইয়ের কপি কি আছে-একটা কপি আমাকে দেবেন তো।আমার কাছে কোনো কপি নাই। নিজের কপিও নাই।আচ্ছা ঠিক আছে-আমি বই যোগাড় করে নেব। আমার জন্যে আমেরিকা থেকে বই আনা কোনো ব্যাপার না। আমার মেয়ে জামাই থাকে আমেরিকায়। ইন্টারনেটে জানিয়ে দিলে নেক্সট উইকে বই এসে যাবে। আপনার জন্যে কি একটা কপি আনব?

না। আমার জন্যে কোনো কপি লাগবে না।মিসির আলি ভারপেট খাবার খেলেন? আরো এক কাপ কফি খেলেন। প্রফেসর বিখ্যাত মানুষটার সঙ্গে ছবি তুলল, এবং তাঁর অটোগ্রাফ নেব। ছবি সেশন এবং অটোগ্রাফ সেশনও শেষ হল। ফটোগ্রাফারদের ফ্ল্যাশ একের পর এক জ্বলতেই থাকল।মিসির আলি তাঁর মুখ হাসি হাসি করে রাখলেন।যে পূজার যে মন্ত্র।ফটো সেশান পূজার মন্ত্র হল-মুখভর্তি হাসি।মুখ হাসি হাসি করে রাখা যে এমন এক ক্লান্তিকর ব্যাপার তিনি জানতেন না।

বাঘবন্দি মিসির আলি পর্ব:০৬

সেমিনার হলে মিসির আলি যতটা বিরক্ত হয়েছিলেন তারচেয়ে অনেক বিরক্ত হলেন সেমিনার-পরবর্তী কর্মকাণ্ডে।হোটেল থেকে বের হয়ে তাঁর বিরক্তি কেটে গেল।আকাশে মেঘ করেছে।কার্তিক মাসের ঘোলাটে পাতলা মেঘ না, আষাঢ়ের ঘন কালো মেঘ।মেঘ দেখেই মনে হচ্ছে বৃষ্টি নামবে।বর্ষাকালের বৃষ্টির এক ধরনের মজা, শীতের অপ্রত্যাশিত বৃষ্টির অন্য ধরনের মজা।

বৃষ্টি দেখলে মানুষ উতলা হয় কেন?এরকম চিন্তা করতে করতে মিসির আলি হাঁটতে শুরু করলেন। বৃষ্টি দেখে মন উতলা হবার তেমন কোনো বাস্তব কারণ নেই! ব্যবস্থাটা প্রকৃতি করে রেখেছে। সমস্ত প্রাণিকুলের জিনে কিছু তথ্য দিয়েছে। এই তথ্য বলছে-আকাশ যখন মেঘে ঢেকে যায় তখন তোমরা উতলা হবে। শুধু প্রাণিকুল না। বৃক্ষকুলের জন্যেও একই তথ্য। এর কারণ কী?

প্রকৃতি কি আমাদের বিশেষ কিছু বলতে চাচ্ছে যা আমরা ধরতে পারছি না। প্রকৃতি কি চায় বর্ষা বাদলায় আমরা বিশেষ কিছু ভাবি? অন্য ধরনের চিন্তা করি। বর্ষা বাদলার সঙ্গে সৃষ্টি সম্পর্কিত কিছু কি জড়িয়ে আছে?শুধু মানুষকে সরাসরি কিছু বলে না। সে কথা বলে ইঙ্গিতে।সেই ইঙ্গিত বোঝাও কঠিন।বাসায় ফিরে মিসির আলি স্বস্তি পেলেন। ইয়াসিন চলে এসেছে।

বাসায় তালা খুলে ঢুকে পড়েছে। তালা খোলার ব্যাপারে এই ছেলেটির দক্ষতা ভালো। মিসির আলি সদর দরজার জন্যে তিন শ টাকা খরচ করে একটা আমেরিকান তালা লাগিয়েছিলেন। তালার প্যাকেটে লেখা ছিল—বাৰ্গলার প্রাফ লক। সেই কঠিন তালা এগোরো-বারো বছরের একটা ছেলে মাথার ক্লিপ দিয়ে খুঁচিয়ে কীভাবে খুলে ফেলে সেটা এক রহস্য। একই সঙ্গে চিন্তারও বিষয়।

বাঘবন্দি মিসির আলি পর্ব:০৬

ইয়াসিন যখন কাজ করে-মন লাগিয়ে কাজ করে, এবং অত্যন্ত দ্রুত কাজ করে। ঘর ঝাঁট দেওয়া হয়েছে। পানি দিয়ে মোছা হয়েছে। বিছানার চাদর বদলে নতুন চাদর টানটান করে বিছানো হয়েছে। দেয়াল ঘড়িতে ব্যাটারি লাগানো হয়েছে এবং ঘড়ি চলছে। ঠিক টাইম দিচ্ছে। ইয়াসিন যেহেতু ঘড়ির টাইম দেখতে পারে না কাজেই ধরে নেওয়া যায়-ঘড়ি নিয়ে দোকানে গিয়ে ব্যাটারি লাগিয়ে এনেছে।

মিসির আলি সাহেবের পড়ার টেবিলও গোছানো। টেবিলের ওপর চকচকে পাঁচ শ টাকার একটা নোট-কলম দিয়ে চাপা দেওয়া।গত সপ্তাহে এই টেবিল থেকেই পাঁচ শ টাকার একটা নোট হারিয়েছে। সেই নোটও কলম দিয়ে চাপা দেওয়া ছিল। তিনি যখন ইয়াসিনকে জিজ্ঞেস করলেন, একটা পাঁচ শ টাকার নোট রেখেছিলাম নোটটা কোথায় রে?

ইয়াসিন বলল, জানি না।

তুই নিয়েছিস নাকি?

না।

ভালো করে মনে করে দেখ নোটটা নিয়ে মনের ভুলে পকেটে রেখেছিস কি না।ইয়াসিন আবারো বলল, না। তারপর থমথমে মুখে রান্নাঘরে ঢুকে গেল। মিসির আলির সামান্য মন খারাপ হল–ছেলেটা কি চুরি করা শিখছে? এবং এই চুরি শেখার জন্যে নানান জায়গায় টাকা পয়সা ছড়িয়ে রেখে তাকে সাহায্য করছে? তিনি এই বিষয়ে ইয়াসিনকে আর কিছু বলেন নি।

ভেবে রেখেছিলেন, সময় সুযোগমতো নানান ব্যাখ্যা দিয়ে চুরি যে গুরুতর অপরাধের একটি তা বুঝিয়ে দেবেন। সেই প্রক্রিয়ার ভেতর দিয়ে আর যাওয়া হয় নি। তারপর ঘটনাটা ভুলেই গেছেন। আজ টেবিলে পঁচিশ টাকার নোট পড়ে থাকতে দেখে মনে পড়ল। তিনি ইয়াসিনকে ডাকলেন। শান্ত গলায় বললেন, টেবিলের ওপর পাঁচ শ টাকার নোট কে রেখেছে, তুই?

ইয়াসিন হ্যাঁ-না, কিছুই বলল না।মিসির আলি বললেন, যে নোটটা হারিয়েছিল, এটা কিন্তু সেই নোট না। হারানো নোটটা ছিল ময়লা। আর এই নোটটা চকচক করছে।ইয়াসিন তার পরেও মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে রইল।

বাঘবন্দি মিসির আলি পর্ব:০৬

তুই এখন করছিস কী?

রান্ধি।

কী, রাঁধিস?

হুকনা মরিচের ভর্তি, ডাইল আর ডিমের সালুন।রান্না শেষ করার পর আমার কাছে আসবি-পাঁচ শ টাকার নোটের বিষয়ে কথা বলব। আমাকে ভয় পাবার কিছু নেই। আমি কখনো কাউকে শাস্তি দেই না। তুই কি আমাকে ভয় পাস? না।

ইয়াসিন রান্নাঘরের দিকে চলে যাচ্ছে। আসন্ন বিচারসভা নিয়ে তাকে তেমন চিন্তিত মনে হচ্ছে না। তার পেট থেকে কোনো কথা বের করা যাবে এটাও মিসির আলির মনে হচ্ছে না। মানুষ দু শ্রেণীর-এক শ্রেণীর মানুষ কিছুতেই ভাঙবে না। তবে মাচকাবে। আরেক শ্রেণীর মানুষের চরিত্রে মাচকানোর ব্যাপারটি নেই। সে ভেঙে দুটুকরা হবে, কিন্তু কিছুতেই মাচকাবে না। ইয়াসিন দ্বিতীয় শ্রেণীর। পঁচিশ টাকার নতুন নোট প্রসঙ্গে তার মুখ থেকে একটি বাক্যও বের করা যাবে না। সে পাথরের মতো মুখ করে মেজের দিকে তাকিয়ে থাকবে। বিড়াল যেমন গড়গড় শব্দ করে, মাঝে মাঝে এই ধরনের শব্দ করবে।

বিজ্ঞান দ্রুত এগুচ্ছে—এমন যন্ত্র হয়তো খুব শিগগিরই বের হয়ে যাবে যার সামনে কাউকে বসালে তার মাথায় কী আছে সব পর্দায় পরিষ্কার দেখা যাবে। মস্তিষ্কে জমা স্মৃতি ভিডিওর মতো পর্দায় চলে আসবে। কোনো অপরাধী বলতে পারবে না–এই অপরাধ সে করে নি। মস্তিষ্ক থেকে স্মৃতি বের করে পর্দায় নিয়ে আসা খুব কঠিন কোনো প্রযুক্তি বলে মিসির আলির মনে হয় না। আগামী বিশ-পঁচিশ বছরেই গুরুত্বপূর্ণ এই ব্যাপারটা ঘটে যাবে।

কিছুদিন আগে মিসির আলি কাগজে পড়েছেন—দুই ভাড়াটে খুনির ফাঁসি হয়ে গেছে। যারা তাকে ভাড়া করেছে তাদের কিছু হয় নি। তারা বেকসুর খালাস পেয়েছে। কারণ প্রমাণ নেই। নতুন পৃথিবীতে প্রমাণের জন্যে মাথা ঘামাতে হবে না। আদালতের নির্দেশে মাথা থেকে স্মৃতির টেপ সরাসরি নিয়ে নেওয়া হবে। নতুন পৃথিবীতে নির্দোষ মানুষ কখনো শাস্তি পাবে না।

বাঘবন্দি মিসির আলি পর্ব:০৬

মিসির আলি বারান্দায় দাঁড়িয়ে আকাশের দিকে তাকালেন। মেঘ আরো ঘন হয়েছে। শীতের ধূলি ধূসরিত শুকনো শহর তৃষিতের মতো তাকিয়ে আছে আকাশের দিকে। এখন যদি কোনো কারণে বৃষ্টি না হয় তা হলে কষ্টের ব্যাপার হবে।স্যার গো।মিসির আলি চমকে তাকালেন। দরজা ধরে ইয়াসিন দাঁড়িয়ে আছে। তার মুখে দুশ্চিন্তার লেশমাত্র নেই। বরং মুখ হাসি হাসি।কী ব্যাপার ইয়াসিন?

একটা মেয়েছেলে আসছে। আপনেরে চায়।মিসির আলি বসার ঘরে চলে এলেন। খুবই আধুনিক সাজ পোশাকের একজন তরুণী! গায়ে বোরকা জাতীয় কালো পোশাক যা ঠিক বোরকাও না। মাথায় স্কার্ফ বাঁধা। স্কার্কের উজ্জ্বল রঙ। সাধারণত মরুভূমির মেয়েরা এমন উজ্জ্বল রঙ ব্যবহার করে।

মেয়েটি রূপবতী। তাকে দেখেই মিসির আলির মনে যে উপমা এল তা হল জ্বলন্ত মোমবাতি। মিসির আলি মেয়েটিকে চিনতে পারলেন না। মেয়েটি মিসির আলিকে দেখেই চট করে উঠে দাঁড়াল। এবং তিনি কিছু বুঝতে পারার আগেই তাকে এসে সালাম করে ফেলল।স্যার আমাকে চিনতে পারছেন? না।

ভালো করে আমার দিকে তাকান। ভালো করে না তাকালে আপনি আমাকে চিনবেন কী করে। আপনি তো কখনো কোনো মেয়ের দিকে ভালো করে তাকান না।মিসির আলি ভালো করে তাকালেন। লাভ হল না। তিনি তখনো চিনতে পারছেন না।মেয়েটি বলল, আমার নাম প্রতিমা। হিন্দু নাম। কিন্তু আমি মুসলমান মেয়ে এখন চিনতে পেরেছেন? না।

বাঘবন্দি মিসির আলি পর্ব:০৬

মাথায় স্কার্ফ আছে বলে আপনি হয়তো চিনতে পারছেন না। আপনার সঙ্গে যতবার দেখা হয়েছে কখনোই মাথায় স্কার্ফ ছিল না। মাথাভর্তি চুল ছিল। এখন স্কার্ফ থাকায় হয়তো অচেনা লাগছে।মেয়েটি মাথার স্কার্ক খুলে মাথায় ঝাঁকুনি দিল। সঙ্গে সঙ্গে মাথার চুল চারদিকে ছড়িয়ে পড়ল। মিসির আলি মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে রইলেন। এমন রূপবতী একজনকে দেখতে পাওয়াও ভাগ্যের ব্যাপার।স্যার আমাকে এখন কি চিনতে পেরেছেন? হ্যাঁ।কেন আমার নাম প্রতিমা, এটা মনে পড়েছে?

হ্যাঁ মনে পড়েছে। তোমার মা এক দুপুর বেলায় গান শুনছিলেন। প্রতিমা নামের একজন গায়িকার গান-একটা গান লিখা আমার জন্য। এই গান শুনতে শুনতে তোমার মা আবেগে দ্রবীভূত হলেন। তাঁর চোখে পানি এসে গেল।তার কিছুক্ষণ পর তোমার মার ব্যথা শুরু হল।

তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হল। মআট ঘণ্টা পর তোমার জন্ম হল।এই আট ঘণ্টা তীব্র ব্যথার মধ্যে তোমার মায়ের মাথায় একটা গান লিখা আমার জন্য ঘুরতে লাগল।যখন তিনি শুনলেন, তাঁর মেয়ে হয়েছে-গায়িকার নামে মেয়ের নাম রাখলেন, প্রতিমা।এই তো আপনার সবকিছু মনে পড়েছে। আপনার জন্যে আমি নেপাল থেকে একটা চাদর এনেছিলাম। চাদরটা আপনি ব্যবহার করছেন দেখে ভালো লাগছে। স্যার এখন বলুন আমি কবে থেকে কাজ শুরু করব?

মিসির আলি থমকে গেলেন।তিনি যে যন্ত্রণার কথা ভুলে গিয়েছিলেন, সেই যন্ত্রণা আবার শুরু হয়েছে।প্রতিমা বলল, আপনি পালিয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছিলেন-ভেবেছিলেন। আপনার ঠিকানাটা আমি খুঁজে বের করতে পারব না।দেখলেন, কীভাবে খুঁজে বের করেছি? দেখলাম।প্রতিমা বসতে বসতে বলল, স্যার আপনি আমাকে ভয় পান কেন?আমাকে ভয় পাবার কিছু নেই। আমি আপনাকে নিয়ে একটা বই লিখব। আপনার জীবনের বিচিত্র সব ঘটনার নোট নেব। ব্যস ফুরিয়ে গেল।

বাঘবন্দি মিসির আলি পর্ব:০৬

মিসির আলি কিছু বললেন না। চুপ করে রইলেন-প্রতিমা নামের এই মেয়েটি ভয়াবহ একটা সমস্যা নিয়ে তাঁর কাছে এসেছিল। তিনি সেই সমস্যার দ্রুত সমাধান করেছিলেন। তারপরই মেয়েটির মাথায় ঢুকে গেছে মিসির আলি তাঁর জীবনে যত সমস্যার সমাধান করেছেন সেগুলি সে লিখে ফেলবে।

প্রতিমা হাসতে হাসতে বলল, স্যার আপনি এমন হতাশ চোখে তাকাচ্ছেন কেন? আমি বাঘ-ভাল্লুক কিছু না। আমি খুবই সাধারণ একটা মেয়ে। সাধারণ হলেও ভালো মেয়ে। আমি নানানভাবে আপনাকে সাহায্য করব। মনে করুন সকালকেলা আপনার কাছে এলাম। আপনি কিছুক্ষণ কথা বললেন,আমি নোট নিলাম। তারপর আপনার ঘরের কাজকর্ম গুছিয়ে দিলাম। আমি রান্না করা শিখেছি। আপনার জন্য রান্না করলাম।তোমার এখনো বিয়ে হয় নি?

না। আমি তো আগেই বলেছি–আমি কখনো বিয়ে করব না।প্রতিমা খিলখিল করে হাসছে। মিসির আলি বললেন, হাসছ কেন? প্রতিমা বলল, আপনি হতাশ চোখে তাকাচ্ছেন। আপনাকে দেখে খুবই মায়া লাগছে। এই জন্যে হাসছি।চা খাবে?

না। চা খাব না। আমি চলে যাব। আপনি প্রথম ধাক্কাটা সামলে নিন। তারপর আমি আসব। স্যার, ভালো কথা আপনার সঙ্গে আমার সাক্ষাতের বিবরণ আমি গুছিয়ে লিখে ফেলেছি। কপি আপনার জন্যে নিয়ে এসেছি। কপি আপনি পড়বেন-এবং বলবেন কিছু বাদ পড়েছে কি না। স্যার ঠিক আছে? হ্যাঁ ঠিক আছে।আজই পড়বেন। স্যার, আপনি ঘুম থেকে কখন ওঠেন?

রাত করে ঘুমাতে যাই তো, ঘুম ভাঙতে নটা-দশটা বেজে যায়।আমি যখন চার্জ নেব, আপনাকে ঠিক রাত দশটায় ঘুমাতে যেতে হবে। ভোর ছটায় ঘুম থেকে তুলে দেব। এক ঘণ্টা আপনাকে হাঁটতে হবে। এক ঘণ্টা পর মর্নিং ওয়াক সেরে এসে দেখবেন–ব্রেকফাস্ট রেডি।মিসির আলি চিন্তিত গলায় বললেন, তুমি এখানে থাকবে নাকি?

 

Read more

বাঘবন্দি মিসির আলি পর্ব:০৭ হুমায়ূন আহমেদ

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *