আগামীকাল রাতে বান্দরবনের বাসে উঠুন, পরদিন সকালে বান্দরবন নেমে যাবেন। সকালে হোটেল ঠিক করার পর বিশ্রাম নেন কিছু, এরপর রী শং শং এ ব্রেকফাস্ট করে গাড়ি ভাড়া করে মেঘলা থেকে ঘুরে আসেন, সাথে সাথে নীলাচলও রাখতে পারেন। মনে রাখবেন, যেখানেই যান, ২টার মধ্যে শহর ফেরত আসবেন। এমনিতে মেঘলাতে ১ ঘন্টা, নীলাচলে ১ ঘন্টা আর যেতে আসতে ১ থেকে দেড় ঘন্টা লাগতে পারে।
শহরে এসে আবার রী শং শং এ লাষ্ণ করেন, এরপর ফ্রেস হয়ে নিতে পারেন হোটেল কাছাকাছি হলে। এরপর চলে যান স্বর্ণ মন্দির দেখতে, সূর্য থাকতে থাকতেই দেখে নেয়া বেস্টে। পারলেই এই রাস্তাটা রিকশা করে যাবেন, অনেক কিছু দেখতে দেখতে যাবেন। দম থাকলে আর ফটোগ্রাফীর শখ থাকলে স্বর্ণ মন্দিরের পাশের পাহাড়ে উঠবেন, অসাধারন কিছু ভিউ পাবেন কিন্তু সতর্কতা, ঐ পাহাড়টা কিন্তু অনেক উচু।
এটা দেখতে দেখতেই সন্ধ্যা হয়ে যাবে, আর তেমন দেখার নাই। ফেরার পরে ক্যান্টনমেন্ট ক্যাফেতে বসতে পারেন। শহর অনেক ছোট, দেখার তেমন কিছু নাই রাতে। ঐ দিনেই শহরে গিয়ে গাড়ি ভাড়া করবেন পরদিন নীলগিড়ি ঘুরে আসার জন্য।
পরদিন সকাল সকাল গাড়ী নিয়ে বের হয়ে পরবেন নীলগিড়িতে, যেতে আসতে সারাদিন লাগবে। এখন পাজেরো ভাড়া পাওয়া গেলেও চেস্টা করবেন হুডখোলা পিকআপ ভ্যান নিতে, রোদ লাগবে অনেক কিন্তু রাস্তায় অনেক কিছু দেখতে পারবেন। পথে প্রথমেই একটা জায়গা পড়বে থেকে সাঙ্গু নদীর অনেকখানি দেখা যায়, অসাধারন। গাড়ি থামিয়ে ছবি তুলতে পারবেন, মনে রাখবেন এখানে কেউ গাড়ি থামায় না তাই আপনাদেরকেই খেয়াল রাখতে হবে রাস্তা। এরপর একটা ঝর্ণা আছে, ফেরার পথে নামবেন। আর এরপর চিম্বুক পাহাড়ে নামবেন, কিন্তু বেশি সময় নিয়েন না। পাহাড়ে উঠে দেখেন চারদিক, সাথে ক্যান্টিনও আছে নিচে।
এরপর সরাসরি নীলগিড়ি, বাংলাদেশের বেস্ট রাস্তা। বলে বুঝানো যাবে না এই রাস্তায় কি দেখবেন আপনি, আর আমি একটা ধন্যবাদ পাব হুডখোলা গাড়ির উপদেশ দেয়ার জন্য। ভালো ক্যামেরা খাকলে রেডি রাখবেন, এক্সট্রা ব্যাটারী রাখবেন অবশ্যই। নীলগিড়ি পৌঁছে দেখতে পারেন অনেক কিছু, বাংলাদেশের সবচেয়ে উপরে বসে চা খেতে পারেন। নামার পথে পীক ৬৯ এর একটা সাইনবোর্ড আছে, থামবেন। এরপর ফেলে আসা ঝর্ণাতে, শৈলপ্রপাত নাম। তারপর তো একেবারে শহরে। আরেকটা অনেক সুন্দর জায়গা আছে পথে, ওখানে গাড়ি থামানো যায় না। আমরা আগেরবার গাড়ির টায়ার ফেসে যাওয়ার পর দেখেছিলাম, অসাধারন টু দি ইনফিনিটি।
দ্বিতীয় দিন শেষ। পরের দিন সকালে শহর ঘুরতে পারেন, আর কাছেই একটা প্যাগোডা আছে, অবশ্যই যাবেন। দুপুরেই বান্দরবনের পর্ব শেষ আপনাদের। হাতে সময় থাতলে আর দম থাকলে আরো জায়গা আছে, যা দেখলে এটা বান্দরবানের ৫% মাত্র। বগা লেক, কেউক্রাডং কিংবা শুধু রুমা বাজার অথবা থানচি আপ ডাউন।
চিম্বুক নীলগিরি, বগালেক ভ্রমণ
চিন্তা করতে পারেন আমাদের দেশেই রয়েছে এমন পাহাড়- যার চুড়ায় দাঁড়ালে দেখতে পাবেন চারপাশের মেঘের কুন্ডলী। অর্থাৎ মেঘের একটি স্তরের উপরে উঠে যেতে পারবেন পাহাড়ে দাঁড়িয়ে। মেঘের সেই কুন্ডলীর উপর দাঁড়িয়ে মেঘ ভেদ করে উঠে আসা অন্যান্য পাহাড়ের চুড়ায় ঠিকরে পড়া সূর্যের আলো। অসম্ভব স্বর্গীয় সেই দৃশ্য দেখতে হলে আপনাকে যেতে হবে বান্দরবান এলাকায়।
চিম্বুক
নাইট কোচের বান্দরবান। বান্দরবান থেকে চাঁদের গাড়ীতে চিম্বুক। সমূদ্র তল থেকে ৩০৫০ ফুট ঊঁচু চিম্বুক পাহাড়! বান্দরবান শহর থেকে ২৬ কিঃমিঃ পাহাড়ী পথ। খাড়া পাহাড় বেয়ে উঠার সময়েই কানের পর্দায় বায়ুচাপের তারতম্য অনুভব করা যায়।
আর্মিদের টিনশেড রেস্ট হাইজে রাতে থাকার সুবিধে আছে, তবে আগেই তা নিশ্চিত করে যেতে হবে। চিম্বুকের সকালেটা খুব সুন্দর! নীচে সাদা মেঘের জমাট মেলা, তার উপরে সকালের সূর্যকিরণ! আপনি এই দৃশ দেখবেন মেঘের লেভেলের-ও উপর থেকে। আপনি মুগ্ধ হয়ে দেখবেন সেই সৌন্দর্য!
নীলগীরি
সমূদ্র সমতল থেকে ৩৪৬০ ফুট উপরে মেঘের রাজ্যে নীলগীরি-এর অবস্থান। বান্দরবান শহর থেকে ৪২ কিঃমিঃ দূরে নীলগীরি। চিম্বুক ছাড়িয়ে থানচী যাবার পথে পড়বে এই নীলগীরি। সকালটা বাদে সারাদিন নীলগীরি থাকে মেঘের ভিতর। এ এক আশ্চর্য অনূভুতি। আপনাকে ঘিরে ঘন মেঘ! মেঘের ভিতর আপনি। বেশ মজা না! দেখবেন- মেঘের অনেক রং! নীলগীরি-এর বিকাল আর সন্ধেটা খুব উপভোগ্য!
এখানেও একমাত্র থাকার ব্যবস্থা আর্মিদের চারটি কটেজ। প্রতিটি কটেজে আটজনের থাকার ব্যবস্থা আছে, ভাড়া ৫০০০/- থেকে ৭৫০০/- টাকা। তাঁবুতিও থাকতে পারবেন, ভাড়া ১৫০০/- থেকে ২৫০০/- টাকা। তবে অবশ্যই আপনাকে আগে থেকেই বুকিং দিয়ে যেতে হবে। আর্মি রেফারেন্স থাকলে বুকিং পেতে সুবিধে হবে।
সাঙ্গু নদীতে নৌবিহার
স্বর্ণজাদি বৌদ্ধ মন্দির থেকে ফেরার সময় আপনাকে সাঙ্গু নদীর উপর দিয়ে ব্রিজ পেরিয়ে আসতে হবে। এই সময় আপনি বেবীট্যাক্সি বা জীপ দাড় করিয়ে নেমে পড়তে পারেন সাঙ্গু ( বা শঙ্খ) নদীর তীরে। নৌকা বা ইঞ্জিন চালিত দেশী বোটে ঘন্টা প্রতি ভাড়া নিয়ে যতদূর খুশী চলে যান, আপনার পাশে পাহাড় আর নীচে নদীও চলতে থাকবে।
বগা লেক
বান্দরবান শহর থেকে ৩৪ কিঃমিঃ দূরে কঙ্কনছাড়া ঘাট। চিম্বুক থেকে ৮ কিঃমিঃ আগেই ওয়াই জাংশন থেকে বাম দিকে টার্ন নিতে হবে। কঙ্কনছাড়া ঘাট হতে ইঞ্জিন বোটে সাঙ্গু নদী দিয়ে দেড় ঘন্টার পথ স্রোতের বিপরীতে রুমা বাজার। আপনি চাইলে অতিরিক্ত আধা ঘন্টা (যাওয়া-আসা অতিরিক্ত এক ঘন্টা) ভ্রমণ করে অনেক ঊঁচু থেকে পড়া রিঝুক ঝর্ণাটাও এই ফাঁকে দেখে আসতে পারেন। রুমা থেকে ১৬ কিঃমিঃ দূরে পাহাড়ের উপরে আশ্চর্য এক জলাধার- বগা লেক।
রুমা বাজার থেকে বগা লেক পর্যন্ত দুভাবে যাওয়া যায়। ঝর্ণর পথ অনুসরণ করে হেঁটে পাড়ী দিতে পারেন এই পথ, যাকে বলে ঝিরি পথ। অথবা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ রাস্তায় ১১ কিঃমিঃ চাঁদের গাড়ীতে গিয়ে তারপর আরও ৭ কিঃমিঃ পাহাড়ী পথে হেঁটে যেতে পারেন বগা লেক (এই পথের দূরত্ব ১৮ কিঃমিঃ) আপনি যেই পথেই যান না কেন… শারীরিক ফিটনেস খুবই জরুরী এখানে। বগা লেকে আসা আদৌ উচিত ছিল, কি ছিল না- মাঝপথে গিয়ে এমন চিন্তা করার সুযোগ নেই। রুমা বাজার থেকে গাইড পাবেন। আর্মিদের ক্যাম্পে গাইডের নামসহ আপনাদের নাম-ঠিকানা লিপিবদ্ধ করতে হবে। রেজিস্টার্ড গাইড ছাড়া সামনে এগুনো নিষিদ্ধ। গাইড-কে প্রতিদিনের জন্য দিতে হবে ৩০০/- থেকে ৬০০/- টাকা!
ভূ-তাত্ত্বিকগণের মতে প্রায় দুই হাজার বছর পূর্বে মৃত আগ্নেয়গিরি-এর জ্বালামূখে সৃষ্টি হয়েছে এই বগা লেক। বগা লেকের উচ্চতা ১৭২০ ফিট ! এই স্থানটি মূলতঃ কেউক্রাডাং পাহাড়ে ওঠার বেজক্যাম্প। কেউক্রাডাং জয়ের অভিযাত্রীরা এখানেই অবস্থান করে থাকেন। স্থানীয় মারমাদের পরিচালনায় কাঠ-বাঁশের তৈরী রেস্ট হাউজ পেয়ে যাবেন সহজেই। ভাত (অথনা খিচুরী), চাল কুমড়ার বা শিম এর তরকারী আর ডিম- এই হচ্ছে মোটামুটি প্রতি বেলার ম্যেনু! ধান, সবজী সবকিছুই জুম চাষ থেকে পাওয়া !
বগা লেক থেকে ৪০ মিনিটের হাঁটা পথ পেড়িয়ে সুন্দর একটা ঝর্ণা (চিংড়ি ঝর্ণা) দেখে আসতে পারেন। আর কেউক্রাডাং চুড়ায় উঠতে হলে বগা লেক হতে আরও ৪-৫ ঘন্টার পাহাড়ী হাঁটা পথ। সে পথও মাড়িয়ে আসতে পারেন। শরীর পারমিট করলে ও মনের জোড় থাকলে বগা লেক থেকে পুরো এক দিনের হাঁটা পথ মাড়িয়ে দেখে আসতে পারেন কাইখ্যাং ঝর্ণা ও পুকুর।
বান্দরবান বেড়ানোর টিপস
- সারাদিনের জন্য চাঁদের গাড়ীর ভাড়া ২৫০০/- টাকা। তবে পর্যটন মৌসুমে তা ৪০০০/- থেকে ৫০০০/- টাকা হতে পারে। রিজার্ভ গাড়ী ছাড়া লোকাল চাঁদের গাড়ীতে ভ্রমণের চিন্তা না করাই ভাল।
- বগা লেক যাবার পরিকল্পনা করার আগে রাস্তার অবস্থা এবং নিজের ও সহযাত্রীদের শারীরিক সখ্যমতা সম্পর্কে ভাল ধারণা থাকা প্রয়োজন। যাত্রার আগে ম্যালেরিয়া-এর প্রিভেনটিভ ঔষুধ খেয়ে নেয়া জরুরী। ভাল গ্রুপের কেডস এবং মোটা মোজা পায়ে থাকতে হবে। পাহাড়ী পথে জোক-এর উপদ্রব রয়েছে। অন্ততঃ দুই জোড়া মোজা সাথে নেয়া ভাল। সহযাত্রী সকলের নিতান্তই প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র একটি ব্যাগে ভরে বাকী মালপত্র রুমা বাজারে কোথাও রেখে কোথাও রেখে যাওয়া শ্রেয়ঃ।
চেম্বুক সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য
স্পট- মেঘলা, প্রান্তিক লেক, বগা লেক, সাঙ্গু নদী, শৈলপ্রপাত, ক্রেওক্রাডাং, চিম্বুক, নীলগিরি, মিলনছড়ি, স্বর্ণমন্দির, রাজবাড়ি, নীলাচল।।
চট্রগ্রাম বহাদ্দারহাট বাস টার্মিনাল থেকে বান্দরবনের বাস ছাড়ে। চট্রগ্রাম থেকে ২.৫ থেকে ৩ ঘন্টা লাগবে।
সস্তায় থাকতে হলে নীচে কিছু হোটেলের নাম ঠিকানা:
হোটেল পূরবী : ০৩৬১-৬২৫৩১ (সিঙ্গেল রুম ২৫০-৩০০ টাকা হবে)
হোটেল গ্রীন হিল : ০৩৬১-৬২৩৭৪
হোটেল অতিথি : ০৩৬১-৬২৫৩৫
হোটেল প্রু অবাসিকা : ০৩৬১-৬২২৫৭
এছাড়া মিলনছড়ি রিসোর্ট এর ভাড়া বেশী হলেও আলাদা চার্ম আছে কোন সন্দেহ নাই, গুলশান সার্কেল ২-এ তাদের অফিস।
বান্দরবান স্বর্ণ মন্দির -মন্দিরটি গ্রাউন্ড থেকে প্রায় ৩০০ ফুট উপরে। শহরে পৌছে রিক্সায় ৩০ টাকা। দর্শনাথীর সময়-এটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। যেমন : সময়- বিকাল ৪টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা।
চিম্বুক+নীলগিরি রুট : বান্দরবান থেকে চাঁদের গাড়ীতে চিম্বুক। সমূদ্র তল থেকে ৩০৫০ ফুট ঊঁচু চিম্বুক পাহাড়! বান্দরবান শহর থেকে ২৬ কিঃমিঃ পাহাড়ী পথ। আর্মিদের টিনশেড রেস্ট হাওজে রাতে থাকার সুবিধে আছে, তবে আগেই তা নিশ্চিত করে যেতে হবে।
সমূদ্র সমতল থেকে ৩৪৬০ ফুট উপরে মেঘের রাজ্যে নীলগীরি-এর অবস্থান। বান্দরবান শহর থেকে ৪২ কিঃমিঃ দূরে নীলগীরি। চিম্বুক ছাড়িয়ে থানচী যাবার পথে পড়বে এই নীলগীরি। এখানেও একমাত্র থাকার ব্যবস্থা আর্মিদের চারটি কটেজ। প্রতিটি কটেজ এই আটজনের থাকার ব্যবস্থা আছে, ভাড়া ৫০০০/- টাকা। তাবুতেও থাকতে পারবেন, ভাড়া ১৫০০/- টাকা। তবে অবশ্যই আপনাকে আগে বুকিং দিয়ে যেতে হবে। আর্মি রেফারেন্স থাকলে বুকিং পেতে সুবিধে হবে।
বগা লেক+ ক্রেওক্রাডাং রুট : বান্দরবান শহর থেকে ৩৪ কিঃমিঃ দূরে কঙ্কনছড়া ঘাট। চিম্বুক থেকে ৮ কিঃমিঃ আগেই ওয়াই জাংশন থেকে বাব দিকে টার্ন নিতে হবে। কঙ্কনছড়প ঘাট হতে ইঞ্জিন বোটে সাঙ্গু নদী দিয়ে দেড় ঘন্টার পথ স্রোতের বিপরীতে রুমা বাজার। আপনি চাইলে অতিরিক্ত আধা ঘন্টা (যাওয়া-আসা অতিরিক্ত এক ঘন্টা) ভ্রমণ করে অনেক ঊঁচু থেকে পড়া ঋঝুক ঝর্ণাটাও এই ফাঁকে দেখে আসতে পারেন। রুমা থেকে ১৬ কিঃমিঃ দূরে পাহাড়ের উপরে আশ্চর্য এক জলাধার- বগা লেক ! রুমা বাজার থেকে বগা লেক পর্যন্ত দুভাবে যাওয়া যায়। ঝর্ণার পথ অনুসরণ করে হেঁটে পাড়ী দিতে পারেন এই পথ, যাকে বলে ঝিরি পথ। অথবা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ রাস্তায় ১১ কিঃমিঃ চাঁদের গাড়ীতে গিয়ে তারপর আরও ৭ কিঃমিঃ পাহাড়ী পথে হেঁটে যেতে পারেন বগা লেক (এই পথের দূরত্ব ১৮ কিঃমিঃ)। রুমা বাজার থেকে গাইড পাবেন। আর্মিদের ক্যাম্পে গাইডের নামসহ আপনাদের নাম-ঠিকানা লিপিবদ্ধ করতে হবে। রেজিস্টার্ড গাইড ছাড়া সামনে এগুনো নিষিদ্ধ। গাইড-কে প্রতিদিনের জন্য দিতে হবে ৩০০/- টাকা!
বগা লেকের উচ্চতা ১৭২০ ফিট! এই স্থানটি মূলতঃ কেউক্রাডাং পাহাড়ে ওঠার বেজক্যাম্প। কেউক্রাডাং জয়ের অভিযাত্রীরা এখানেই অবস্থান করে থাকেন। স্থানীয় মারমাদের পরিচালনায় কাঠ-বাঁশের তৈরী রেস্ট হাউজ পেয়ে যাবেন সহজেই। ভাত (অথনা খিচুরী), চাল কুমড়ার বা শিম এর তরকারী আর ডিম- এই হচ্ছে মোটামুটি প্রতি বেলার মেনু!
বগা লেক থেকে ৪০ মিনিটের হাঁটা পথ পেড়িয়ে সুন্দর একটা ঝর্ণা (চিংড়ি ঝর্ণা) দেখে আসতে পারেন। আর কেউক্রাডাং চুড়ায় উঠতে হলে বগা লেক হতে আরও ৪-৫ ঘন্টার পাহাড়ী হাঁটা পথ! সে পথও মাড়িয়ে আসতে পারেন। বগা লেক থেকে পুরো এক দিনের হাঁটা পথ মাড়িয়ে দেখে আসতে পারেন কাইখ্যাং ঝর্ণা ও পুকুর!
থাকা- সিয়াম দিদির কটেজ। খাওয়া দাওয়ার দাম দর আগে থেকেই জিজ্ঞেস করে নিবেন। থাকা প্রতিজন প্রতিদিন ১০০ টাকা নিয়েছিল বলে মনে পড়ে। এখন কিছুটা বাড়তে পারে। তবে আরেকটা জিনিস, সবাই বগা লেক থেকে কেউক্রাডং অবশ্যি ঘুরে আসে। কেউক্রাডাং গেলে বগা লেক পৌছানোর পরদিন সকাল সকাল রওনা দিবেন। পায়ে হেটে যেতে ৪, সাড়ে ৪ ঘন্টা আসতে ৩ ঘন্টার মত লাগে। এ্যাডভেষ্ণার প্রেমী হবে ট্রেকিং করেই রুমা থেকে বগা যাওয়া ভাল।
চিম্বুক সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ টিপস
১. সারাদিনের জন্য চাঁদের গাড়ীর ভাড়া ২৫০০/- টাকা। তবে পর্যটন মৌসুমে তা ৪০০০/- থেকে ৫০০০/- টাকা পর্যন্ত হতে পারে। রিজার্ভ গাড়ী ছাড়া লোকাল চাঁদের গাড়ীতে ভ্রমণের চিন্তা না করাই ভাল।
২. যাত্রার আগে ম্যালেরিয়া-এর প্রিভেনটিভ ঔষুধ খেয়ে নেয়া জরুরী। ভাল গ্রীপের কেডস এবং মোটা মোজা পায়ে থাকতে হবে। পাহাড়ী পথে জোক-এর উপদ্রব রয়েছে। অন্ততঃ দুই জোড়া মোজা সাথে নেয়া ভাল। সহযাত্রী সকলের নিতান্তই প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র একটি ব্যাগে ভরে বাকী মালপত্র রুমা বাজারে কোনও বিশ্বস্ত স্থানে রেখে যাওয়া শ্রেয়।
বান্দরবানের আবাসিক ব্যবস্থা
বান্দরবানে পৌঁছে যাবার পরেই তো চিন্তা থাকবার জায়গা নিয়ে। শহরে ঢুকবারও ৪-৫ কি.মি. আগে মেঘলার কাছাকাছি আছে দুটা সুন্দর থাকবার জায়গা। একটা পর্যটন মোটেল-মেঘলা। সবচেয়ে খোলামেলা, সবচেয়ে ছিমছাম, ফ্যামিলি নিয়ে থাকবার একটা নিশ্চিন্ত ঠিকানা। ভাড়া যে খুব বেশী এমনও নয়। এখানে বেশীর ভাগ রুমই ডাবলস। টুইন বেড অর্থাৎ দুইটা পৃথক বিছানা। ভাড়া পড়বে নন এ.সি. ৮৫০/, এ.সি. ১৫০০/-। তিন বেডেরও রুম কয়েকটা আছে। গরম পানি, ফোন, টিভিতো আছেই, সামনের বিশাল বারান্দা এমনকি রুমের সাথেই লাগোয়া পেছনের বারান্দাতে বসেই নিরিবিলি পাহাড়কে উপভোগ করতে পারবেন এখানে।
ফোনঃ ০১৮১৭৭ ৭১৬৯১৬, ০১৫৫৬ ৫৪৫৭৪৬
এখানে না থাকলে আরেকটু এগিয়ে গিয়ে হলিডে ইন রিসোর্টে থাকতে পারেন। এখানে না থাকলে আরেকটু এগিয়ে গিয়ে হলিডে ইন রিসোর্টে থাকতে পারেন। এখানে বিভিন্ন কটেজ এমনকি টেন্ট্ও ভাড়া নিতে পারবেন। একটা ডাবলস রুমের কটেজ ১০০০ টাকা পড়বে। স্বাভাবিক ভাবেই এখানে ফোন, টিভি এসব পাবেন না। তবে কটেজের চারপাশটা দেখলেই ভাল লাগবে। লেক, গাছপালার ও কমতি নেই সেখানে।
ফোনঃ ০১৫৫৬ ৬৯৮০৪৩
এ দুটোই শহর একটু বাইরে। যাতায়াতের সামান্য কষ্ট মনে হলেও, রাতে বান্দরবান শহরে বেরুবেনই বা কোথায়? দিনের বেলায় সামান্য এগিয়ে মেঘলার সামনে থেকে বেবী ট্যাক্সি, এমনকি জীপও মিলে যাবে।
শহরের বাইরে আরেকটা রিসোর্ট পাওয়া যাবে শৈলপ্রপাত তথা চিম্বুক যাবার রাস্তায়, মিলনছড়িতে। শহর থেকে ৪ কিঃমিঃ দূরে এই ‘হিলসাইড’ রিসোর্টটি গাইডটুরস এর। গাইডটুরস নামই বলে দিচ্ছে নান্দিকতার কোন কমতি নেই এতে। কুড়ে ঘরে ঝকঝকে বাথরুম, গরম পানি সব ব্যবস্থাই আছে। রুম যেটাই নিন, ভাড়া একজন থাকলে ১০০০, দুইজন ১২০০, তিনজন ১৫০০ এধরনের হবে। আছে বিশাল দিগন্তজোড়া পাহাড়কে সামনে নিয়ে ঝোলান বারান্দায় খাবার সুবিধা।
ফোনঃ ০১১৯৯ ২৭৫৬৯২।
এছাড়া শহরের মধ্যেই পাবেন ফোরস্টার (০৩৬১ ৬২৪৬৬), রয়েল, পূরবী, গ্রীন হিল এরকম আরও কয়েকটা হোটেল। ফোরস্টারের কথা বলতে পারি ছোট্ট রুমেই সব ধরনের সুযোগ-সুবিধাই এখানে দেওয়া আছে। টিভি, ফোন, এমনকি খুব শীঘ্রিই লিফট আর গরম পানিও পাওয়া যাবে এখানে। ভাড়া- আপাতত একজন ৩০০, ডাবল বেড ৬০০, ট্রিপল বেড ১০০০ (এইটাই যা অদ্ভুত)। শহরের মধ্যে এসব হোটেল কম খরচে বেশী সুবিধা পাওয়া যাবে ঠিকই, তবে হোটেল থাকাকালীন মনেই হবে না বান্দরবানে আছি। হোটেলে আর কতক্ষণই বা থাকা- এটুকু যদি মেনে নিতে পারেন তবে থাকা-খাওয়া দুটোতেই খরচ বাঁচবে।
এছাড়া আরও কম খরচে থাকতে চাইলে শহরের মধ্যেই পাবেন বেশ কিছু হোটেল। এবার একনজর দেখে নিন কয়েকটি হোটেলের বিবরণ।
হোটেল হিল ভিউ: বান্দরবানে প্রবেশ করতেই দেখতে পাবেন শহরের সবচেয়ে বড় আবাসিক হোটেল হিল ভিউ। শহরের কাছেই এ হোটেলের ভাড়া রুমপ্রতি ১০০০-৪০০০ টাকা। ফোন: ০৩৬১-৬৩০৪৫।
পর্যটন মোটেল: পর্যটন স্পট মেঘলার পাশেই পর্যটন কর্পোরেশন কর্তৃক পরিচালিত পর্যটন মোটেল। যার ভাড়া রুম প্রতি ৮৫০ থেকে ২০০০ টাকার মধ্যে। ফোন: ০৩৬১-৬২৭৪১ এবং ০৩৬১-৬২৭৪২।
হলি ডে ইন: চারিদিকে পাহাড় আর প্রাকৃতিক লেকের কাছাকাছি থাকতে চাইলে যেতে পারেন মেঘলার কাছেই অবস্থিত হলি ডে ইন এ। যার ভাড়া রুম প্রতি ১৫০০-৩০০০ টাকা পর্যন্ত। ফোন: ০৩৬১-৬২৮৯৬।
ভেনাস রিসোর্ট: বান্দরবানের মেঘলা এলাকায় অবস্থিত ভেনাস রিসোর্ট। যেখানে রয়েছে পাহাড়ের চূড়ায় ৫ টি আধুনিক কটেজ। এছাড়াও রয়েছে ভেনাস চাইনিজ রেস্টুরেন্ট, যেখানে দেশি-বিদেশি মজাদার সব রকমের খাবার পাওয়া যায়। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের সঙ্গে শৈল্পিক ছোঁয়া এবং একাধিক ছোটবড় ভাস্কর্যে সাজানো হয়েছে ভেনাস রিসোর্ট। ফোন- ০৩৬১-৬৩৪০০, ০১৫৫২ ৮০৮০৬০।
হোটেল প্লাজা: এটি বান্দরবানের অন্যতম আধুনিক হোটেল। বান্দরবান শহরের কেন্দ্রেবিন্দুতে অবস্থিত এ হোটেলে রাত্রিযাপন করতে পারবেন ১০০০-৪০০০ টাকার মধ্যে। ফোন: ০৩৬১-৬৩২৫২।
হিলসাইড রিসোর্ট: চিম্বুক যাওয়ার পথে মিলনছড়ি এলাকায় পাহাড়ের বুবে গড়ে ওঠা এ রিসোর্ট বান্দরবানের অন্যতম দৃষ্টিনন্দন রিসোর্ট হিসেবে পরিচিত। যেখানে বসে পাহাড়, নদী আর মেঘের দৃশ্য উপভোগ করতে পারবেন সহজেই। যার ভাড়া রুম প্রতি ১৫০০-৪০০০০ টাকার মধ্যেই। ফোন : ০১৫৫৬ ৫৩৯০২২, ০১৭৩০-০৪৫০৮৩।
সাকুরা হিল রিসোর্ট: চিম্বুক রোডের মিলনছড়ি এলাকার কাছাকাছি এ রিসোর্ট অত্যন্ত দৃষ্টিনন্দন। প্রাকৃতিক ও কোলাহলমুক্ত পরিবেশে থাকতে চাইলে এ রিসোর্ট এর বিকল্প নেই। যার ভাড়া রুম প্রতি ১৫০০-৩০০০ টাকা।
হোটেল ফোর স্টার: এটি বান্দরবান বাজারে অবস্থিত। রুম প্রতি ভাড়া ৩০০-১২০০ টাকা। ফোন : ০৩৬১-৬৩৫৬৬, ০১৮১৩ ২৭৭৮৩১, ০১৫৫৩ ৪২১০৮৯ ।
হোটেল থ্রী স্টার: এটি বান্দরবান বাসস্ট্যান্ডের পাশে অবস্থিত। এটি ৮/১০ থাকার মতো ৪ বেডের এমন একটি ফ্ল্যাট । প্রতি নন এসি ফ্ল্যাট-২৫০০টাকা, এসি-৩০০০ টাকা। ফোন : ০১৫৫৩ ৪২১০৮৯।
পর্যটকদের জন্য জরুলী এবং প্রয়োজনীয় কিছু ফোন নাম্বার: ওসি, বান্দরবান সদর থানা : ০১৭৩০-৩৩৬১৬৬, ০৩৬১-৬২২৩৩, ওসি, রুমা থানা : ০১৮২০-৪২৫৬৪৩, ওসি, থানছি থানা : ০১৫৫৭-২৫৬৯৫৮, ওসি, লামা থানা : ০১৮২০-৪২৫৬৪৪, বান্দরবান সদর হাসপাতাল : ০৩৬১-৬২৫৪৪, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স ০৩৬১-৬২২২২, বান্দরবান প্রেসক্লাব : ০৩৬১-৬২৫৪৯।
বান্দরবান শহরের কয়েকটি হোটেল
১. ফোর স্টার হোটেল (বান্দরবান): ০৩-৬২৪৬৬, ০১৫৫৩ ৪২১০৮৯, ০১৮১৩ ২৭৮৭৩১
২. হোটেল হিলবার্ড (বান্দরবান): ০১৮২৩ ৩৪৬৩৮২
৩. হোটেল পূর্বাণী (বান্দরবান): ০১৫৫৮ ৬৪২৭৪৩
৪. রয়্যাল হোটেল (বান্দরবান): ০৩৬১ ৬২৯২৬
৫. হিলসাইড রিসোর্ট (বান্দরবান): ০১৭৩০ ০৪৫০৮৩ বুকিং, ঢাকা অফিস, ০১৭১১ ২৯৮০০০ (খোকন সাহেব, মালিক)
৬. হোটেল ঢাকা (বান্দরবান শহরে খাবার ভাল দোকান): ০৩৬১ ৬৩৩৫৪, ০১৫৫৬ ৫৩৪০৯১, ০১৫৫৩ ৪০২১৮৯
৭. হোটেল হিলটন (রুমা): ০১৮২৩ ৯২২৬৯১
৮. আল মামুন হোটেল (রুমাতে খাবার ভাল দোকান): ০১৫৫২ ৩৫৮৭৮৩, ০১৫৫২ ৩৮৫১৫৬
৯. সিয়াম দিদির রিসোর্ট (বগা লেক): ০১৫৫৩ ১০৮৫২৭, ০১৮৪০ ১৫৮৭৫৭
১০. গাইড জামাল (রুমা): ০১৫৫৩ ৭৪৮৫১১, ০১৮২৩ ৯৬৮৮৫০
১১. জনাব বক্কর (রুমাতে চান্দের গাড়িতে লইন ম্যান): ০১৫৫৩ ১০৩৪৫৪
১২. বান্দরবান থেকে রোয়াংছড়ি হয়ে রুমা যাওয়ার জন্য রিজার্ভ ল্যান্ড ক্রুজার গাড়ির ড্রইভার মোঃ জাহিদ: ০১৮৪০ ১৫৮৭৬৪
১৩. শ্যামলী বাস কাউন্টার (সায়েদাবাদ): ৭৫৪০৯৯৩, ৭৫৪০৯৯১, ৭৫৫০০৭১, ৭৫৪১০১৯