বৃক্ষকথা-পর্ব-(১৩)-হুমায়ুন আহমেদ

নীলমণি লতা 

এই গাছের নামও রবীন্দ্রনাথের রাখা। নাম থেকেই বোঝা যাচ্ছে ফুলের রঙ নীল। অর্কিড় ধরনের থােকা থােকা ফুল দেখে রবীন্দ্রনাথের মাথায় নীলমণি নাম আসাই স্বাভাবিকলতাজাতীয় গাছ। ইংরেজিতে বলে Climbet. নুহাশ পল্পীতে আছে।

বৃক্ষকথা নীলমণি লতার বােটানিক্যাল নাম Paraea vxobxis. পরিবার হলে Verbenacea. একই পরিবারের একটি গাছ আছে সবাই চেনেন, গাছটার নাম রক্তাক্ত হৃদয়Bleeding Heart, 

নীলমণি লতার কোনাে ঔষধি ব্যবহারের কথা জানা নেই। 

মাধুরী লতা 

এই গাছের নামও রবীন্দ্রনাথের রাখা। রবীন্দ্রনাথ তাঁর প্রিয় কন্যা মাধুরীর স্মৃতিতে গাছটার নাম রাখেনঅনেকে মাধুরী তাকে মাধবী লতা বলে ভুল করেন। 

গাছটা লতাজাতীয় (Climber), বোটানিক্যাল নাম Quisqualis indica fata Combretaceae. 

লতানাে এই দৃষ্টিনন্দন ফুল গাছের কোনাে ঔষধি ব্যবহার নেই। 

বাগান বিলাস 

বাগান বিলাস গাছের নামও রবীন্দ্রনাথের রাখাআদি নাম বুগেনভিলিয়া। প্রধান প্রজাতি তিনটি পেরুভিয়ান, গাবরা এবং স্পেক্টাবিলিস । বাংলাদেশে সবকটি প্রজাতি আছে। ‘Bougairy illeaকি এই গাছের ইংরেজি নাম, নাকি বােটানিক্যাল নাম বুঝতে পারছি নাঔষধি কোনাে ব্যবহারও খুজে পাই নি। যেসব গাছের নাম রবীন্দ্রনাথ রেখেছেন সেই গাছগুন্সি সম্পর্কেই পরপর লিখলাম। কিছু গাছের বােটানিক্যাল নাম হিসেবে রবীন্দ্রনাথ এবং বিভূতিভূষণের নাম এলে ভালাে লাগতTagore indica, Biyhuti indica। পড়তেই ভালাে লাগে। 

বৃক্ষকথা-পর্ব-(১৩)-হুমায়ুন আহমেদ

জবা 

মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে একটা ছবি বানিয়েছিলাম ছবির নাম শ্যামল ছায়া ছবির এক ব্রাহ্মণ চরিত্র স্নানের সময় সূর্যমন্ত্র পাঠ করল— 

জবাকুসুম সংকাশং কাশ্যপেয়ং মহা দুতিং…’ বােঝাই যাচ্ছে জবা কোনাে সহজ ফুল না সূর্যপ্রণাম জবাফুল ছাড়া হবে নামা-কালীর পূজাতেও জবাফুল লাগবেসাধারণ জুবায় হবে না, রক্তজবা লাগবেকাপালিকদের প্রিয় ফুল জবীএই ফুলকে ভারী বশিকরণ এবং মরণ কার্যে ব্যবহার করতেন বলে ভারতীয় সংস্কৃত গ্রন্থে উল্লেখ পাওয়া যায়। সূত্র : আয়ুর্বের্পাচার্য শিবকালী

জবার বােটানিক্যাল নাম Hibiscus rosasinensis Linra, পরিবার Malvaceae. জবা মানেই লাল, অথচ এখন নানান বর্ণের জবা দেখছিনুহাশ পল্লীতে দুধের মতাে সাদা রঙের জবাও আছেগবেষণায় নানান পদ্ধতিতে ফুলের রঙ বদলানাে এখন কোনাে ব্যাপারই নাকুচকুচে কালাে রঙের গোলাপ পাওয়া গেলে সাদা জবা দোষ করল কী

পৃথিবীর পাঁচটি দেশের জাতীয় স্কুল জবা। জবর রসায়ন 2014 WIThiamine, Riboflavin, Niacin 49 Ascorbic acid, Cyanidin, digroside, Flavonoids

বৃক্ষকথা-পর্ব-(১৩)-হুমায়ুন আহমেদ

 পাতা এবং গাছে আছেBeta sistosterol, Stigmasterol, taraxerol acetate. কিছু yৈclopropana এবং তাদের Derivatives-এ পাওয়া গেছে। জবার ব্যবহার ভেষজ ওষুদের ভারতীয় গ্রান্ডমাস্টার যেমন চরক, অশ্রুত, বাগভেট জবার ব্যাপারে কিছু বলেন নি। সপ্তম শতাব্দী পর্যন্ত ভারতীয় কোনাে গ্রন্থে জবার ঔষধিগুণের উল্লেখ নেইএকাদশ শতাব্দীতে চক্রদত্ত জবার ভেষজ ব্যবহারের কথা বলেন। 

অনিয়মিত মাসিক স্রাবে ; জবাফুল বেটে কয়েকদিন খেতে হবে। । চুলে ফাংগাস ইনফেকশন : জবাফুল বেটে লাগাতে হবে। এলােপেসিয়া এরিয়েটা  চোখ উঠায় ; জবাফুল বেটে চোখের উপরের এবং নিচের পাতায় লাগাতে হবেআধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞান জবার কিছু গুণ আবিষ্কার করেছে, যেমনজুবার শিকড় যৌনউত্তেজক (aphrodisiac) এবং রাতকানা রােগে কার্যকরচোখের অসুখেও জবার পাতার রস কার্যকর। পাতার নির্যাস বাতের ভালাে ওষুধফেরিনজাইটিস এবং টনসিলাইটিসেও খুব কার্যকর। 

তৈলাকুচা 

এক ভােরবেলায় জনৈক ভদ্রলােককে দেখলাম ভ্রু কুঁচকে নুহাশ পল্লীর ঔষধি বাগানে ঘুরে বেড়াচ্ছেনতার হাতে কলম এবং একটা নােটকমাঝে মাঝে নােটবুকে কী সব লেখা হচ্ছেআমি আগ্রহ নিয়ে এগিয়ে গেলামভদ্রলােক হতাশ গলায় বললেন, আসল পাছটাই তাে আপনার এখানে নেই! 

বৃক্ষকথা-পর্ব-(১৩)-হুমায়ুন আহমেদ

আমি বললাম, আসল গাছ কোনটা ? আসল গাছ হলাে বিশ্বী’। কী বাগান করলেন যেখানে বিম্বী নেই। আমি বললাম, নামটা প্রথম শুনলাম । 

দ্রলােক বললেন, বিম্বী হলাে আমাদের দেশের তেলাকুচা । যার ফলের নাম মাকাল ফল। এখন চিনেছেন। 

মাকাল গাছ আসল গাছ । 

অবশ্যইডায়াবেটিসের যমতেলাকুচার তিনটা পাতা নিবেনআগুনের তাপে একটু গরম করে দুপুরে খাবার পর খাবেন। আপনার ডায়াবেটিস যদি না সারে, আমার একটা কান কেটে তেলাকুচা গাছের কাছে পুতে দিয়ে যাব। 

আমি বললাম, সেখান থেকে কর্ণগাছ’ বের হবার কোনাে সম্ভাবনা কি আছে। 

দ্রলােক বললেন, আমি শিক্ষক মানুষনিজে রসিকতা করি না। অন্যে যখন করে, সেটাও পছন্দ করি না তেলাকুচা গাছ সম্পর্কে যা বলেছি ঠিকই বলেছি। বইপত্র পড়ে দেখবেনগাছ বিষয়ে কিছু জানেন না, বাগান বানিয়ে বসে আছেন! 

ভদ্রলােক চলে যাবার পর আয়ুর্বেদাচার্যের বই খুললামসেখানে সত্যি সত্যি লেখা— 

‘অনেক সময় আমরা মন্তব্য করি, তেলাকুচার পাতার রস খেলাম, আমার ডায়াবেটিসের সুফল কিছুই হলাে না। একটা বিষয়ে যােগে ভুল হয়ে গিয়েছে এই রােগ তাে আর একরকম দোষে জন্ম নেয় না। এক্ষেত্রে তেলাকুচার পাতা ও মুলের রস তিন চামচ করে সকালে ও বৈকালে একটু গরম করে খেতে হবে এর দ্বারা রােগী তিন-চার দিনে সুস্থতা বােধ করবেন। 

তেলাকুচীর বােটানিক্যাল নাম Coccinia indica cogী, তেলাকুচা Cucurbitaceae পরিবারের গাছ। 

বৃক্ষকথা-পর্ব-(১৩)-হুমায়ুন আহমেদ

ঘৃতকুমারী 

এই লেখাটা কুইজ দিয়ে শুরু করা যাক। বৃক্ষবিষয়ক কুইজ। 

বলুন তাে, আদম এবং ইভ যে গাছটির পাতা দিয়ে লজ্জা নিবারণ করেছিলেন সেই গাছের নাম কী ? 

আমি নিশ্চিত বেশিরভাগ পাঠকই ক কুঁচকাচ্ছেনগাছের নাম তাদের জালা নেই। নাম বলে দিচ্ছি। গাছটির নাম “উদউদ নাম সহজে মনে থাকবে না। উট মনে রাখলেই উদ মনে পড়বে। 

দ্বিতীয় প্রশ্ন, “উদ বেহেশতের গাছ, পৃথিবীতে কি এই গাছ আছে

প্রশ্নটির জবাব না দিয়ে ঘৃতকুমারীতে চলে যাই। 

বেদে তরুণীকে বলা হয়েছে “ঘৃতকুম্ভ সমা নারীযার অর্থ সামান্য তাপেই এ গলে যান। ঘৃতকুমারী নাম সেখান থেকেই এসেছেএই গাছের পাতাও সামান্য চাপ এবং তাপে গলে যায়। গাছটির আরেক নাম গৃহকন্যা, কারণ গৃহের আশেপাশেই তার বাস। কেউ কেউ বলেন অমরা, গাছটি বহুবর্ষজীবি প্রায় মৃত্যুহীন। আরবিতে এই গাছের নাম সাতর, ইংরেজিতে Al০৪

In lands of palm and southern pine; In lands of palm, of orange blossom, Of olive, aloe, and maize and vine.‘ 

Tennyson ঘৃতকুমারী না চিনলেও c নামটির সঙ্গে আমাদের তরুণীদের পরিচয় আছে। তারা মুখের ত্বকের যত্নে দামি দামি যেসব লােশন ব্যবহার করেন, তাদের বেশিরভাগের ইনগ্রেডিয়েন্টের একটা Alee

গাছটার বােটানিক্যাল নাম এtba indica royle. Indica বলছে গাছটির মাতৃভূমি ভারতবর্ষে। যদিও নওয়াজেশ আহমেদ বলছেন, গাছটি এসেছে মাদাগাস্কার দ্বীপ থেকে।

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *