বৃষ্টি বিলাস (পর্ব-৬)- হুমায়ূন আহমেদ

সারারাত থাকতে দেবে নাঅবশ্যই দেবেনা দেবার কী আছে ? তুই তাে কচি খুকি নাআমাদের বাসা অন্যসব বাসার মতাে না কোনাে কথা শুনতে চাচ্ছি নাযেভাবেই হােক পারমিশন আদায় করবিআচ্ছা দেখি। 

বৃষ্টি বিলাসতুই একটু ধরতাে শামা, আমার হাতের তেঁতুল শেষ হয়ে গেছেতেঁতুল নিয়ে আসিএক মিনিট। 

শামা টেলিফোন ধরে বসে রইল, তৃণা ফিরে এল নাতৃণার সঙ্গে টেলিফোনে কথা হলে ব্যাপারটা প্রায়ই ঘটেতৃণা কথাবার্তার মাঝখানে হঠাৎ বলে, এক মিনিট, ধরআমি আসছিআর আসে নাতুণা কি এটা ইচ্ছা করে করে ? যাদের সঙ্গে তার কথা বলতে ইচ্ছা করে না তাদের সঙ্গে ধরনের ট্রিকস করে। 

আবদুর রহমান সাহেব দশটা বাজতেই ঘুমুতে যানআজ ঘুমুতে গেলেন সাড়ে এগারােটায় হিসেবের বাইরের দেড় ঘণ্টা কাটালেন টিভি দেখেকোনাে একটা চ্যানেলে বাংলা ছবি হচ্ছিলমাঝামাঝি থেকে দেখতে শুরু করেছেনদেখতে তেমন ভাল লাগছে না, আবার খারাপও লাগছে নাতার ইচ্ছা করছিল স্ত্রী এবং ছেলেমেয়ে সঙ্গে নিয়ে ছবি দেখেনসেটা সম্ভব হলাে নামন্টু বলল, তার পরীক্ষা সে টিভি দেখবে না এশা বলল, সে বাংলা ছবি দেখে নাশামা বলল, তার মাথা ধরেছেতিনি একা একাই টিভির সামনে বসে রইলেনসিনেমার গল্পে মন দেবার চেষ্টা করলেনবড়লােক নায়ক গাড়ি একসিডেন্ট করে অন্ধ হয়ে গেছে

বৃষ্টি বিলাস হুমায়ূন আহমেদ

তার সেবা শুশ্রুষা করার জন্যে অসম্ভব রূপবতী এক নার্স বাড়িতে এসেছেনার্স ছেলেটির প্রেমে পড়ে গেছেঅথচ ছেলেটির অন্য এক প্রেমিকা আছেগল্পে নানান ধরনের জটিলতাএর মধ্যে নায়কের এক বন্ধু আছে, যার প্রধান দায়িত্ব হাস্যকর কাণ্ডকারখানা করে লােক হাসানােযেমন সে ফ্রিজের ভেতর ঘাপটি মেরে বসে থাকেকেউ ফ্রিজ থেকে পানির বােতল আনতে গেলে সে নিজেই হাত বের করে বােতল তুলে দেয়আবদুর রহমান নায়কের বন্ধুর অভিনয়ে খুবই মজা পেলেনযে বার তাকে পর্দায় দেখা গেল সে বারই তিনি প্রাণ খুলে হাসলেন। 

শামা মাকে বলল, বাবার বােধহয় মাথা খারাপ হয়ে গেছেকী রকম বিশ্রী করে হাসছে! মা তুমি বাবার মাথায় পানি ঢেলে বিছানায় শুইয়ে দাও। 

সুলতানা হাসলেনশামা বলল, হাসির কথা না মাআমার সত্যি ভাল লাগছে না। 

সুলতানা বললেন, তাের বিয়ে ঠিক হওয়ায় বেচারা খুবই খুশি হয়েছেখুশি চাপতে পারছে না বলে রকম করছে। 

আমারতাে মা কোনাে রাজপুত্রের সঙ্গে বিয়ে হচ্ছে নাকেরানি টাইপ একজনের সঙ্গে বিয়ে ঠিক হয়েছে। 

তাের বাবার খুবই পছন্দের ছেলেমাঝে মাঝে এরকম হয়— কারণ ছাড়াই কোনাে একজনকে মনে ধরে যায়। 

কারণ ছাড়া কিছু হয় না মাসব কিছুর পেছনে কারণ থাকেমাঝে মাঝে কারণটা বােঝা যায়মাঝে মাঝে বােঝা যায় না। 

বৃষ্টি বিলাস হুমায়ূন আহমেদ

তাের কি ছেলেটাকে পছন্দ হয়েছে

তাের বাবাতাে এক্কেবারে বিয়ের তারিখ টারিখ করে ফেলল। 

করলেও কোনাে লাভ হবে নাআচ্ছা মা শােন, ওরা যে এক হাজার এক টাকা দিয়ে গেছে এই টাকাটা আমি খরচ করে ফেলি

সুলতানা মেয়ের দিকে তাকিয়ে রইলেনশামা বলল, আমার এক বান্ধবীর বিয়েতার বিয়েতে উপহার কিনতে হবে। 

সুলতানা শামার প্রশ্নের জবাব না দিয়ে নিজের প্রশ্নটা আবার করলেন, ছেলে কি তাের মােটেও পছন্দ হয় নি

না হয় নি। 

তাহলেতাে তাের বাবাকে বলা দরকার অপছন্দের একজনকে কেন বিয়ে করবি

বাবাকে কিছু বলার দরকার নেইযেহেতু আমার পছন্দের কেউ নেই, আমি শেষটায় খাতাউরের গলা ধরে ঝুলে বসতেও পারিমা শােন, আমি কি এক হাজার এক টাকাটা খরচ করতে পারি

তাের টাকা তুই খরচ করবি এতবার জিজ্ঞেস করার কী আছে

আমার বান্ধবীর বিয়ে হবে উত্তরায়আমরা সারারাত থেকে খুব হুল্লোড় করববাবার কাছে বলে আমার ভিসা করিয়ে রাখবে। 

আমি কিছু বলতে পারব নাতুই নিজে বলবিতাের বাবা রাজি হবে 

বলে আমার মনে হয় নাআর শােন তুই তাের বাবার সঙ্গে কথা বলে তারপর ঘুমুতে যা। 

কেন

তুই বাড়িওয়ালার বাসায় ছিলি, তাের বাবা কয়েকবার তােকে খোজ করেছেমনে হয় কিছু বলবে। 

বাবা খেজুরে আলাপ করবেখেজুরে আলাপ আমার একদম পছন্দ নাএইভাবে কথা বলছিস কেনছিঃ! খালি হাতে বাবার সামনে যেতে পারব নাপান টান কিছু দাও নিয়ে যাই। 

সুলতানা বললেন, এক কাজ করতাের বাবা যে শাড়িটা এনেছে এটা পরে যা তাের বাবা খুব খুশি হবে। 

শামা হাই তুলতে তুলতে বলল, বাবা এম্নিতেই খুশি আছেআরাে খুশি করার দরকার নেইবেলুনে বেশি বাতাস ভরলে বেলুন ব্রাস্ট করেবাবা এখন ব্রাস্ট করার পর্যায়ে চলে গেছেন। 

বৃষ্টি বিলাস হুমায়ূন আহমেদ

শামা খিলখিল করে হাসছেসুলতানা মুগ্ধ হয়ে মেয়ের হাসি দেখছেন। 

আবদুর রহমান মশারির ভেতর ঢুকে পড়েছিলেনবড় মেয়েকে দেখে মশারির ভেতর থেকে বের হলেনশামা বলল, বাবা তােমার জন্যে পান এনেছি। 

আবদুর রহমান আনন্দিত গলায় বললেন, পানতাে আমি একবেলা খাইশুধু দুপুরে ভাত খাবার পরযাই হােক, এনেছিস যখন খেয়ে ফেলিসমস্যা একটাইআবার দাঁত মাজতে হবেচলে যাচ্ছিস নাকি? বােস, পান খেতে খেতে গল্প করি। 

শামা বসল নাদাঁড়িয়ে রইলবসলেই বাবা দীর্ঘ কথাবার্তা শুরু করতে পারেনবাবাকে এই সুযােগ কিছুতেই দেয়া যাবে নাশামার মনে হলাে বাবার মেজাজ আজ শুধু যে ভাল না, অস্বাভাবিক ভাল। বান্ধবীর বিয়েতে সারা রাত কাটাবার অনুমতি নিতে হলে আজই নিতে হবেরকম সুযােগ আর পাওয়া যাবে না। 

আবদুর রহমান পান মুখে দিয়ে বললেন, এশার কাছে একটা টেলিফোন নাম্বার আছেআতাউরের নাম্বারযদিও বিয়ের আগে মেলামেশা মােটেও বাঞ্ছনীয় না, তারপরেও বিশেষ কিছু যদি জানতে চাস 

শামা বলল, কিছু জানতে চাই না। 

আবদুর রহমান বললেন, বিয়ে শাদি পুরােপুরি ভাগ্যের ব্যাপারঅনেক খোজ খবর করে বিয়ে দেবার পর দেখা যায় বিরাট ঝামেলাস্বামী তেল আর 

স্ত্রী জলঝাকাঝাকি করলে মিশে আবার ঝাকাঝাকি বন্ধ করলেই তেল জল আলাদা হয়ে যায়। 

শামা বাবার দিকে তাকিয়ে আছেআবদুর রহমান হড়বড় করে কথা বলেই যাচ্ছেনতার মুখ থেকে পানের রস গড়িয়ে শাদা গেঞ্জিতে পড়ছেথুতনিতে রস লেগে আছেতিনি তেল জল বিষয়ক কথাবার্তা বলেই যাচ্ছেনকী বলছেন নিজেও বােধহয় জানেন নাশামা ভেবে পাচ্ছে না তার বাবা এত খুশি কেনরহস্যটা কী! সে বাবাকে থামিয়ে দিয়ে বলল, বাবা তােমাকে একটা জরুরি কথা চট করে বলে নেই, পরে ভুলে যাব। 

বৃষ্টি বিলাস হুমায়ূন আহমেদ

আবদুর রহমান আগ্রহ নিয়ে বললেন, কী কথা

আমার এক বান্ধবীর বিয়েমীরা নামউত্তরায় ওদের বাড়িআমরা সব বন্ধুরা দল বেঁধে বিয়েতে যাচ্ছিমীরা বলে দিয়েছে আমাদের সারা রাত থাকতে হবে

(চলবে)

বৃষ্টি বিলাস (পর্ব-৫)- হুমায়ূন আহমেদ

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *