থাকবি। বন্ধুবান্ধবের বিয়েতে মজা না করলে কার বিয়েতে করবি ? তাের বিয়েতেও ওদের সবাইকে বলবি। গায়ে হলুদের পর থেকে সবাই যেন থাকে। একটা ঘর তাের বন্ধুদের জন্যে ছেড়ে দেব। মেঝেতে টানা বিছানা করে দেব ঠিক আছে রে মা ?
শামা বলল, ঠিক আছে বাবা। আজকের পত্রিকা পড়েছিস? হ্যা। ইদানীং সব পত্রিকায় নতুন একটা ব্যাপার হয়েছে কার্টুন ছাপা হচ্ছে। বেশির ভাগ সময়ই খুব ফালতু টাইপ । মাঝে মাঝে আবার খুবই ভাল।
আজকেরটা কি ভাল ?
আজকেরটা খুবই ভাল । হাসতে হাসতে অবস্থা কাহিল। ঘটনাটা হলাে এক লােকের পা ভাঙা। হাসপাতালে পড়ে আছে। তার বন্ধু গিয়েছে তাকে দেখতে। বন্ধু বলল, কীরে পা কীভাবে ভাঙলি ?
সে বলল, সিগারেট খেতে গিয়ে পা ভাঙলাম। বন্ধু বলল, এটা আবার কেমন কথা? সিগারেট খেতে গিয়ে কেউ পা ভাঙে? সে বলল, ঘটনাটা হলাে— জিদানীং সব পত্রিকায় নতুন। বেশির ভাগ সময়ই খুব ফালতু টা
আজকেরটা কি ভাল ?
আজকেরটা খুবই ভাল । হাস লােকের পা ভাঙা। হাসপাতালে প বন্ধু বলল, কীরে পা কীভাবে ভাঙ
মিথ্যা দু‘রকমের আছে। হঠাৎ মুখে এসে যাওয়া মিথ্যা, আর ভেবে চিন্তে বলা মিথ্যা। হঠাৎ মিথ্যা আপনা আপনি মুখে এসে যায়। কোনাে পরিশ্রম করতে হয়
। ভেবে চিন্তে মিথ্যা বলাটাই কঠিন। এই মিথ্যা সহজে গলায় আসে না। বারবার মুখে আটকে যায়।
শামার মুখে অবশ্যি মিথ্যা তেমন আটকাচ্ছে না। সে গড়গড় করেই বলে যাচ্ছে এবং নিজেও খুব বিস্মিত হচ্ছে। সে কথা বলছে টেলিফোনে। ওপাশে ফোন ধরে আছে আতাউর । মাত্র সন্ধ্যা হয়েছে। সন্ধ্যাবেলা মিথ্যা বলতে নেই। শামাকে বলতে হচ্ছে।
বৃষ্টি বিলাস (পর্ব-৭)- হুমায়ূন আহমেদ
শামা বলল, আপনি আমাকে চিনবেন না। আমার নাম এশা। শামা আপু, যার সঙ্গে আপনার বিয়ের কথাবার্তা হয়েছে আমি তার ছােট বােন।
ও আচ্ছ। তুমি কেমন আছ ?
ভাল আছি। আপনার টেলিফোন নাম্বার আমি আপাকে দিয়েছিলাম, সে আপনাকে টেলিফোন করবে না। লজ্জা পায়। কাজেই ভাবলাম আমিই করি । আপনি বিরক্ত হচ্ছেন নাতাে?
বিরক্ত হব কেন?
আপনার চেহারা দেখে মনে হয় আপনি অল্পতেই বিরক্ত হন। আমি অল্পতে কেন বেশিতেও বিরক্ত হই না।
বিরক্ত না হলেই ভাল। কারণ বড় আপুর স্বভাব হলাে সবাইকে বিরক্ত করা। আপনাকে সে বিরক্ত করে মারবে। আপনার সঙ্গে সে নানান ধরনের ফাজলামি করবে। আপনার জীবন অতিষ্ট করে তুলবে।
তাই না-কি ? হ্যা তাই। সে আপনাকে কী ডাকছে জানেন ? ডাকছে খাতাউর। খাতাউর ?
হা খাতাউর। আপনাকে ডাকছে ন’আনির জমিদার মি, খাতাউর।
শােন এশা, আমরা জমিদার টমিদার না। আমার চাচার বেশি কথা বলা অভ্যাস। আমার খুবই লজ্জা লাগছে যে তিনি এ ধরনের কথাবার্তা বলেছেন।
বৃষ্টি বিলাস (পর্ব-৭)- হুমায়ূন আহমেদ
এখন জমিদার না হলেও এক সময়তাে ছিলেন। অনেক আগের কথা। আমরা এখন খুবই দরিদ্র মানুষ।
আপনার জমিদারি নিয়ে বড় আপা কিন্তু আপনাকে খুব ক্ষেপাবে। গতকালই আমাকে বলেছে— এই এশা, তুই আমাকে আপা ডাকবি না। আমি জমিদারের বউ । আমাকে ডাকবি মহামান্য ন‘আনির প্রাক্তন জমিদারনি।
তােমার কথা শুনে আমারতাে খুবই লজ্জা লাগছে।
আর আপনি খুব কাশছিলেন তাে, এই নিয়েও বড় আপু অনেক মজা করেছে— বলছে খাতাউর সাহেবের যক্ষা আছে। যক্ষা হচ্ছে রাজরােগ। সে রাজা মানুষ, তারতাে রাজরােগ থাকবেই। আচ্ছা শুনুন, আপনার কাশি কি কমেছে?
হ্যা কমেছে। আপাকে দেখে ঐ দিন আপনার কেমন লেগেছে ? বেশ সুন্দর।
আপনি তাে চোখ তুলে আপার দিকে তাকানই নি। আপার ধারণা আপনি পায়ে স্যান্ডেল পরেছিলেন সেই স্যান্ডেলের ফিতার ডিজাইন নিয়ে গবেষণা করে আপনি পুরাে সময় কাটিয়ে দিয়েছেন। আচ্ছা শুনুন, নাশতা দেবার সময় আপা যখন সবাইকে বাদ দিয়ে আপনাকে প্রথম প্লেটটা দিল তখন কি একটা ধাক্কার মতাে খেয়েছিলেন ?
তাহলে আপার হিসেবে ভুল হয়েছে। আপা আপনাকে চমকে দেবার জন্যে এই কাজটা করেছে। সে মানুষকে চমকাতে খুব পছন্দ করে। এখন বুঝতে পারছি আপা আপনাকে চমকাতে পারে নি।
অন্য সময় হলে অবশ্যই চমকাতাম। ঐ দিন ঘােরের মধ্যে ছিলাম। কিছু বুঝতে পারি নি।
আরেকটা কথা আপনারা যে আপাকে টাকা আর আংটি দিলেন— আপনারা যখনই মেয়ে দেখতে যান পকেটে টাকা আংটি নিয়ে যান ? আপার ধারণা আপনারা আগেও অনেক মেয়ে দেখেছেন। প্রতিবারই পকেটে করে টাকা আংটি নিয়ে গেছেন। আপার ধারণাটা কি ঠিক?
হ্যা ঠিক।
বৃষ্টি বিলাস (পর্ব-৭)- হুমায়ূন আহমেদ
আচ্ছা ধরুন, কোনাে কারণে বিয়ে হলাে না। তখন কি আপনারা টাকা আংটি ফেরত নেবেন ?
এমন কথা বলছ কেন?
এমি বলছি। রাগ করবেন না। রাগ করছি না। আমি এত সহজে রাগ করি না।
আপনার সঙ্গে যে আমার এত কথা হয়েছে এটাও আপাকে বলবেন না। সে জানলে খুবই রাগ করবে। আপা চট করে রেগে যায়। আপার স্বভাব আপনার উল্টো। আপনি রাগ করেন না। আপা করে। স্কুলে তার নাম ছিল R K.
R K. মানে কী? RK. মানে রাগ কুমারী । আপনি কিন্তু আপাকে কিছু বলবেন না। আমি কখনাে তাকে বলব না।
আচ্ছা শুনুন, আমার মাথায় একটা বুদ্ধি এসেছে। আপা যেমন আপনাকে চমকে দিতে চাচ্ছে আপনিও তাকে চমকে দিন। আমি আপনাকে সময় বলে দিচ্ছি ঠিক দেড়টার সময় আপা কলেজ থেকে বের হয়। কলেজ গেটের সামনে আপনি ফুল নিয়ে দাড়িয়ে থাকুন। আপনাকে দেখে আপার আক্কেলগুড়ুম হয়ে যাবে। আমার ধারণা হাত থেকে বই খাতা ফেলে দেবে।
এই কাজটা আমি করতে পারব না এশা, আমি খুবই লাজুক মানুষ। তাহলে কী করা যায় বলুন তাে? তােমাকে কিছু করতে হবে না।