দাদা তুমি নাকি এখন চারপায়ে হাঁটা। তুমি নাকি রাতে ঘুমাও না। মশাবি খাটিয়ে তার ভেতর চারপায়ে দাঁড়িয়ে থােক। মাঝে মাঝে ঘোড়ার মতো চিহি করে ডাক ছাড়।বলতে বলতে মিলির চোখে পানি এসে গেল। গলা ধরে গেল। তাহের বলল, তুমি ভাইজানকে আগে ভেতরে এসে বসতে দাও। দরজাতেই কী শুরু করলে? মোতালেবের সব কথা বিশ্বাস করতে হবে তার কোনো মানে আছে? ভাইজান আপনি এসে আরাম করে বসুন তো।আখলাক সাহেব বসার ঘরের সোফায় এসে বসলেন। তাহের গম্ভীর মুখে তাঁর সামনে এসে বসল। মিলি তার ভাইয়ের পাশে দাঁড়িয়ে আছে। এখনো চোখ মুছছে। তাহের বুকে এসে বলল, মোতালেবের কথা সত্যি না, তাই না ভাইজান?
আখলাক সাহেব গলা পরিষ্কার করে বললেন, চিহি করে ডাক দেয়ার ব্যাপারটা সত্যি না। ঐ অংশটা বানানো।বাকিটা সত্যি? মোটামুটি সত্যি বলা যেতে পারে।তাহেরের মুখ হা হয়ে গেল। অনেক কষ্টে সে মুখের হা বন্ধ করে বলল, আপনি তাহলে চারপায়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন?সব সময় না, মাঝে মাঝে।মাঝে মাঝে? হ্যাঁ। এটা এক ধরনের একসারসাইজ। এর নাম হলো তোমার ফিক্স হ্যান্ড একসারসাইজ। এই একসারসাইজের অনেক উপকারিতা। স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধির জন্যে এরচেয়ে ভালো কিছু হতে পারে না।মিলি চোখ মুছতে মুছতে ধরা গলায় বলল, কে শিখিয়েছে তোমাকে এই একসারসাইজ?
কেউ শেখায় নি, নিজে নিজেই বের করেছি।মিলি ফোঁপাতে ফোঁপাতে বলল, তুমি নিজে নিজে এই একসারসাইজ বের করেছ? ঠিক নিজে নিজে বলাটা ঠিক হবে না। ভূতেল সাহায্য নিয়েছি।দাদা, কার সাহায্য নিয়েছ? ঐ যে একটা ভূত যে আমার কাছে প্রায়ই আসে, নাম হলো গিয়ে— লেখক ৭৪… মিলি ভীত গলায় বলল, লেখক ৭৪?
ওদের নামকরণ পদ্ধতি আর আমাদের নামকবণ পদ্ধতি এক না। প্রথম দিকে ভুতদের নাম শুনলে একটু ধাক্কা লাগবেই।মিলি বলল, দাদা তুমি যা বলছ সব কিছুতেই আমার ধাক্কা লাগছে। একী সর্বনাশ হয়ে গেল! বলতে বলতে সে আবারো শব্দ করে কেঁদে উঠল। তাহের বলল, মিলি তুমি রান্নাঘরে যাও তো, ভাইজান এবং আমার জন্যে সুন্দর করে চা বানিয়ে আন। অকারণে অস্থির হয়ে না। মাথা ঠাণ্ড রাখ। বি লেভেল হেডেড।
সিচুয়েশন আন্ডার কনট্রোলে আছে। আর শোন, তুমি এখনো ভাইজানের মাথার উপর ফ্যানটা ছাড়ছ না কেন? সব কিছু বলে দিতে হবে? ফুল স্পিডে ফ্যান ছেড়ে দাও।মিলি ফ্যান ছেড়ে দিল। আখলাক সাহেব গম্ভীর হয়ে সেই ফ্যানের নিচে বসে রইলেন। তিনি খুবই বিরক্ত বোধ করছেন। এই বাড়িতে আসাটা তার জন্যে বোকামি হয়েছে।তাহের তার দিকে ঝুঁকে এসে প্রায় ফিসফিস করে বলল, ভাইজান একটা কথা বলি? আখলাক সাহেব বললেন, যা বলতে চাও বলো। ফিসফিস করছ কেন? ফিসফিস করার মতো কিছু কি হয়েছে? যা বলবে স্পষ্ট করে বলবে।ভাইজান, আপনার চিকিৎসা হওয়া দরকার।তোমার সে-রকম মনে হচ্ছে?
জি।তোমার ধারণা আমার মস্তিষ্ক বিকৃতি হয়েছে? জি আমার সেরকমই ধারণা। ঠিকমতো চিকিৎসা হলে আপনি আবার সুস্থ হয়ে উঠবেন। আমার পরিচিত একজন সাইকিয়াট্রিষ্ট আছেন। আমি আপনাকে তার কাছে নিয়ে যাব।কবে নিয়ে যাবে? যদি বলেন আজই নিয়ে যাব।উনাকে আপনার ব্যাপারে সব বলে রেখেছি।আখলাক সাহেব গম্ভীর গলায় বললেন, যদি সত্যি কোনোদিন পাগল হই তাহলে তোমাকে নিয়ে পাগলের ডাক্তারের কাছে যাব। এখন আমার সামনে থেকে যাও। আমাকে বিরক্ত করো না।আপনি কি একটা রিল্যাক্সেন খেয়ে ইজিচেয়ারে শুয়ে থাকবেন? এতে মাথাটা ঠাণ্ডা হতো।
আমার মাথা নিয়ে তোমাকে দুশ্চিন্তা করতে হবে না।জি আচ্ছা।আখলাক সাহেবের ইচ্ছা হচ্ছে বাড়ি থেকে বের হয়ে যেতে। যাচ্ছেন না, কারণ মিলি কষ্ট পাবে। এসেছেন যখন রাতে খেয়ে যেতে হবে। মিলি নিশ্চয়ই কুৎসিত কিছু রান্না করবে। যা মুখে দেয়া যাবে না। রাতে খাবাব সময় আবার বিয়ের প্রসঙ্গ তুলবে। আবারো–৫২। এমন কোনো বয়স না! অসহ্য।দরজার আড়াল থেকে তৃণা উঁকি দিচ্ছে। তার মুখ অস্বাভাবিক গম্ভীর। সে ফিসফিস করে ডাকল, বড় মামা।আখলাক সাহেব বললেন, ফিসফিস করছিস কেন? মা তোমার সঙ্গে কথা বলতে নিষেধ করেছে, এই জন্যেই ফিসফিস করছি। মা শুনলে বকা দেবে।কথা বলতে নিষেধ করেছে কেন?
তোমার যে খুব মেজাজ খারাপ। এই জন্যে।আমার মেজাজ খারাপ না। আয় কাছে আয়।তৃণা এগিয়ে এলো এবং কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বলল, বড় মামা তুমি নাকি পাগল হয়ে গেছ?আখলাক সাহেব বললেন, কে বলেছে? বাবা বলেছে। মা সেটা শুনে সারা দুপুর কেঁদেছে। বড় মামা, তুমি কি পুরোপুরি পাগল হয়ে গেছ, না একটু বাকি আছে?একটু বাকি আছে।মোতালেব বলছিল তুমি নাকি এখন ঘোড়ার মতো হাঁট আর চিহি করে ডাক দাও।ও একটু বেশি বেশি বলছে। চিহি করে ডাক দিই না।যখন চিঁহি করে ডাক দেবে তখন পুরোপুরি পাগল হয়ে যাবে, তাই না মামা?
হুঁ।ঐ ভূতটা কি তোমাকে পাগল বানিয়ে দিচ্ছে মামা?বুঝতে পারছি না, বোধহয় দিচ্ছে।মিলি অনেক কিছু রান্না করেছে। পাবদা মাছ, কাতলা মাছের মাথার মুড়িঘণ্ট। কই মাছের ঝোল। ইলিশ মাছের সর্ষে বাটা। প্রতিটি পদই হয়েছে অখাদ্য। শুধু শুধু যে ভাত খাবেন সে উপায়ও নেই। চাল কিছু সেদ্ধ হয়েছে, কিছু হয় নি। একই হাঁড়ির ভাত অর্ধেক সেদ্ধ হয়, অর্ধেক হয় না কেন তা বোধহয় শুধু মিলিই জানে।
আখলাক সাহেব রাত এগারোটার দিকে বাড়ি ফিরলেন। মোতালেবকে বললেন, চা করতে। মোতালেব চা বানিয়ে আনল। চায়ের কাপটা তাঁর সামনে বাখল। খুব ভয়ে ভযে। যেন তিনি ভয়ঙ্কব কোনো হিংস্ৰ জানোয়ার, এক্ষুনি মোতালেবের উপর ঝাঁপিয়ে পড়বেন। সে তার সামনেও আসছে না। দরজার আড়াল থেকে তাকিয়ে আছে। চোখের উপর চোখ পড়া মাত্র চোখ সবিয়ে নিচ্ছে। আখলাক সাহেব শীতল গলায় ডাকলেন, মোতালেব! মোতালেব চমকে উঠে বলল, জ্বে খালুজান।তুই আমার প্রতিটি কথায় চমকে চমকে উঠছিস কেন? কী হয়েছে?
কিছু হয় নাই খালুজান।তুই কি আমাকে ভয় পাচ্ছিস? অল্প অল্প পাইতেছি খালুজান।ভয় পাচ্ছিস কেন? মোতালেব কিছু না বলে মাথা চুলকাতে লাগল। আখলাক সাহেব বললেন, আচ্ছা যা, শুধু শুধু মাথা চুলকাতে হবে না। ঘুমাতে যা।মোতালেবেব মাথা চুলকানো আরো বেড়ে গেল। আখলাক সাহেব বললেন, আর কিছু বলবি? একটু দেশে যাব।হঠাৎ দেশে যাবি কেন? আমার পিতার শইল খুব খারাপ। মিত্যু ছজ্জায়।কার শরীর খারাপ? আমার পিতা, আকবাজান।আখলাক সাহেবের মেজাজ খুব খারাপ হলো, কারণ মোতালেবের বাবা গত বৎসর মারা গেছেন। এই খবর আখলাক সাহেব ভালোমতোই জানেন। মিথ্যা কথা বলে মোতালেব ছুটি নিচ্ছে কেন? তোর বাবা মৃত্যুশয্যায়? জ্বে।গত বৎসর যিনি মারা গেলেন। তিনি কে?
মোতালেব থাতমত খেয়ে বলল, আমার পিতা। এখন যার অসুখ হইছে সে আমার পিতার মতোই। আমার গেরাম সম্পর্কে চাচা। আমারে বড়ই ছেনেহ করে।আখলাক সাহেব গম্ভীর গলায় বললেন, যিনি ছেনেহ করেন, তার অসুখের খবরে ছুটে যাওয়া উচিত। আসবি কবে? এইটা অসুখের উপরে নির্ভর।আচ্ছা যা। কাল দিনটা থাক, বাজার টাজার যা দরকার করে দিয়ে চলে যা।জ্বে আইচ্ছা।মেজাজ টেজাজ খারাপ করে আখলাক সাহেব ঘুমাতে গেলেন। মিলির বাসা থেকে ফেরার সময় মেজাজ যত খারাপ ছিল, এখন তারচে পাঁচগুণ খারাপ।
এই অবস্থায় ঘুম আসার কথা না। আখলাক সাহেব মশারি ফেলে বিছানায় বসে রইলেন। তিনি আসলে মনে মনে ভূতের জন্যে অপেক্ষা করছেন। অপেক্ষা করলে কেউ আসে না। যে ট্রেনের জন্যে অপেক্ষা করা হয়, সেই ট্রেন আসে তিন ঘণ্টা লেট করে। অপেক্ষা করতে করতে বিরক্ত হয়ে তিনি যখন ঘুমুতে গেলেন তখনই ভূত এসে উপস্থিত। মশারির পাশে দাঁড়িয়ে সে খুকধুক করে দৃষ্টি আকর্ষণ জাতীয় কাশি কাশতে লাগল। আখলাক সাহেব বললেন, কে? স্যার আমি। আপনার কি শরীর টরির খারাপ নাকি? গলা কেমন ভারী ভারী শুনাচ্ছে।শরীর ঠিকই আছে, মনটা খারাপ।মন খারাপ কেন স্যার?
আছে নানান ব্যাপার, মোতালেব আমার নামে আজেবাজে কথা ছড়াচ্ছে। মিথ্যা কথা বলে আবার ছুটি নিয়ে নিল।মন কি বেশি খারাপ? হুঁ।আমার নিজেরো স্যার মন অতিবিক্ত খারাপ। ফা-৪০ আমার নামেও আজেবাজে জিনিস ছড়াচ্ছে। যে জন্যে গতকাল সারা রাত পুকুরে গলা পর্যন্ত ড়ুবিয়ে বসে ছিলাম। তারপর মনটা ঠিক হয়েছে।আখলাক সাহেব উৎসাহিত গলায় বললেন, এরকম করলে মন ঠিক হয় নাকি? জি হয়। ব্যাপারটা পরীক্ষিত। ব্যাখ্যা করলে আপনি বুঝতে পারবেন। ব্যাখ্যা করব?
কর।ধরুন আপনি পানিতে গলা পর্যন্ত ড়ুবিয়ে বসে রইলেন। পানিটা ঠাণ্ডা। এতে হবে কী আপনার শরীরের তাপ কমে যাবে, সেই তুলনায় মাথার তাপ থাকবে বেশি; ফলে একটা তাপ পার্থক্য তৈরি হবে। তাপ পার্থক্যের কারণে তৈরি হয় বিভব পার্থক্য বা জাংশন পটেনশিয়াল। তখন মাথা থেকে শরীরে ইলেকট্রিসিটি ফ্লো করে। এক ধরনের বায়োকারেন্ট। তার ফলে মাথার উপর জমে থাকা চাপ কমে যায়।তাই নাকি? খুব মন টন খারাপ হলে পরীক্ষা করে দেখতে পারেন স্যার।দেখি।
আপনার বাসায় তো চৌবাচ্চা আছে। পানি দিয়ে চৌবাচ্চা ভর্তি করে গলা পর্যন্ত ড়ুবিয়ে বসে থাকবেন। সকালে বসবেন সন্ধ্যাবেলা উঠবেন। দেখবেন মন পাখির পালকের মতো ফুরফুরে হয়ে যাবে। ফা-৪০ যখনই ঝামেলা করে তখনই আমি এই পদ্ধতি ব্যবহার করি। খুব ফলদায়ক পদ্ধতি।মেয়েটা কি ঝামেলা করছে? অতিরিক্ত ঝামেলা করছে। এখন আবার আমাকে দেখলে গান গায়।বলো কী? দারুণ লজ্জার মধ্যে পড়েছি। ভূত সমাজে আমাকে নিয়ে খুব হাসোহাসি।গান গায় কেমন? ভালো গায়। এটা স্বীকার না করলে অন্যায় হবে। অডিসনে পাশ করে রেডিওতে চান্স পয়েছে। আখলাক সাহেব বিস্মিত হয়ে বললেন, তোমাদের রেডিও আছে নাকি?
রেডিও টিভি সবই আছে। ভূত বলে আমাদের ছোট চোখে দেখবেন না স্যার।না তা দেখছি না।আমি আজ চলে যাই স্যার। কয়েকদিন আপনার সঙ্গে দেখা হবে না। ফা-৪০ এর হাত থেকে বীচার জন্যে কয়েকদিন দূরে কোথাও লুকিয়ে থাকব।ভূত চলে গেল। আখলাক সাহেব ঘুমিয়ে পড়লেন। কিছুক্ষণের মধ্যে ঘুম ভেঙে গেল। সারা রাত আর ঘুম হলো না। বারান্দায় চেয়ার পেতে বসে রইলেন। মন বেশি খারাপ। খারাপ ভাবটা যাচ্ছেই না।আখলাক সাহেব ভোরবেলা নাস্তা খেয়ে চৌবাচ্চায় পানি ভর্তি করালেন। ভূতের চিকিৎসাটা করে দেখা দরকার। মন খারাপ ভাবটা যদি এতে যায়। তিনি দুপুর পর্যন্ত গলা ড়ুবিয়ে বসে রইলেন। দুপুরবেলা মোতালেব গিয়ে মিলি এবং তাহেরকে ডেকে নিয়ে এলো।
মিলি ভীত গলায় বলল, দাদা কী হচ্ছে?
আখলাক সাহেব বিরক্ত গলায় বলল, কী হচ্ছে তাতো দেখতেই পাচ্ছিস?
তুমি পানিতে গলা ড়ুবিয়ে বসে আছ কেন?
মন টন খারাপ, এই জন্যে বসে আছি।
মন খারাপ হলে পানিতে বসে থাকতে হয়?
হ্যাঁ হয়। তুই কাঁদছিস কেন?
তুমি পানিতে বসে আছ। এই জন্যে কাঁদছি। একা একা থেকে তোমার এই অবস্থা মুম্বু দাদা। কতবার বলেছি একটা বিয়ে কর। আমার কথা তো কানে নেবে না। প্লিজ উঠে আস।তাহেরও শুকনো মুখে বলল, ভাইজান দয়া করে পানি থেকে উঠে আসুন। আজ সন্ধ্যায়। একজন সাইকিয়াট্রিন্টের কাছে আপনাকে নিয়ে যাব। এপয়েন্টমেন্ট করে রেখেলি আখলাক সাহেব বললেন, সন্ধ্যান্য নিয়ে যাবে সন্ধ্যায় উঠব। এখন উঠার দরকার কী? মিলি এমন কান্নাকাটি শুরু করল যে আখলাক সাহেবকে বাধ্য হয়ে পানি থেকে উঠতে হলো।
সাইকিয়াট্রিস্টের নাম জয়েনউদ্দিন। আখলাক সাহেব এত বেঁটে মানুষ তাঁর জীবনে দেখেন নি। ভদ্রলোক চেয়ারে বসে আছেন। টেবিলের উপর দিয়ে তাঁর চোখ দুটি শুধু বের হয়ে আছে। পাশাল পাগল ধরনের চোখ। ভদ্রলোক বসে আছেন একটা রোলিং চেয়ারে। স্থির হয়ে বসে নেই, সারাক্ষণ এদিক ওদিক করছে। চিড়িয়াখানার পশুদের যারা দেখাশোনা করে তাদের চেহারা এবং স্বভাব চরিত্র খানিকটা চিড়িয়াখানার পশুদের মতো হয়ে যায়।
মিরপুর চিড়িয়াখানায় যে লোকটা জিরাফের দেখাশোনা করে তার গলাটা প্ৰতিবছর কিছুটা করে লম্বা হয়। সাইকিয়াট্রিক্টরা পাগলের চিকিৎসা করেন, কাজেই তাদের হাব ভাব পাগলদের মতোই হবে বলাই বাহুল্য। আখলাক সাহেব বেশ কৌতূহল নিয়ে সাইকিয়াট্রিক্ট জালালউদিনের চেয়ারে নড়াচড়া দেখছেন।
ভদ্রলোক যেমন স্থির হয়ে বসতে পারেন না তেমনি স্থির চোখে তাকাতেও পারেন না। মনে হয় দুটা মাত্র চোখ থাকায় তার খুব অসুবিধা হচ্ছে। গোটা চারেক চোখ থাকলে সুবিধা হতো। আরাম করে এক সঙ্গে চারদিক দেখতে পারতেন।তাহের চেয়ারে বসতে বসতে বলল, জালাল সাহেব আমি পরিচয় করিয়ে দিই। ইনি আমার স্ত্রী বা বড়ভাই, নাম আখলাক হোসেন। অধ্যাপনা করেন। আপনাকে তার কথা বলেছিলাম।জালাল সাহেব হাসি মুখে বললেন, ও আচ্ছা আচ্ছা। বলেছিলেন তো বটেই। উনার কাছেই একটা ভূত আসে। গল্প গুজব করে। তাই না? ভূতের নাম লেখক সাতচল্লিশ।আখলাক সাহেব বিরক্ত গলায় বললেন, সাতচল্লিশ না চুয়াতুর।
ও আচ্ছা, আমার আবার সংখ্যা মনে থাকে না। আপনি দাঁড়িয়ে আছেন কেন? বসুন। আরাম করে বসুন। আজ অবশ্যি আমার হাতে সময় খুব কম। আমার মেয়ের জন্মদিন। এখান থেকে সরাসরি গুলশানে একটা খেলনার দোকানে যাব। খেলনা কিনব। কী কিনব ভেবে পাচ্ছি না। গত আধা ঘণ্টা ধরে শুধু তাই ভাবছি। তার পছন্দের খেলনা হচ্ছে বারবি ডল। গোটা বিশেক তার আছে বলে আমার ধারণা। আরো গোটা বিশেক পেলেও শখ মিটবে না। বারবি ডলই আজ আরেকটা কিনব। যাহা বাহান্ন তাহা একাশি।আখলাক সাহেব বসলেন। সাইকিয়াট্রিস্টের মাথা যে পুরোপুরি খারাপ তা বোঝাই যাচ্ছে। অকারণে এতগুলি কথা বলল। যাহা বাহান্ন তাহা একাশি আবার কী?
Read more