ঢাকা শহর নষ্ট হয়ে গেছে, ছিনতাইকারী, মলম পার্টি, মরিচগুড়া পার্টি। এত রাইতে হোটেলে যাওয়ার চিন্তা বাদ দেন।রাতে থাকব কোথায়? আমার রাতে থাকার কোনো জায়গা নেই।আমার এই দোকানে থাকবেন? আমরা বাপ-বেটায় রাইতে দোকানে থাকি। নয়া একটা লুঙ্গি খরিদ করেছি। সেলাই হয় নাই বইল্যা পরি নাই। লুঙ্গি পেঁচায়া শুইয়া পড়বেন। এক ঘুমে রাইত পার।
আমি খুব আগ্রহের সঙ্গে এবং আনন্দের সঙ্গে আপনার দোকানে থাকব। এবং কৃতজ্ঞতার সঙ্গে আপনার দয়ার কথা সারাজীবন মনে রাখব।সামছু জিভে কামড় দিয়ে বলল, স্যার কি যে কন। আমি গরিব মানুষ, আমার কি দয়া করার কোনো ক্ষমতা আছে? গরম পানি দেই সিনান করেন।গরম পানি কোথায় পাবেন?
কেতলিতে গরম পানি বলক উঠতাছে। সিনান কইরা দোকানে উঠেন। তারপর খানা।রাশেদের হট বাথের শখ ছিল সে আয়েশ করেই হট বাথ নিল। বালতিতে গরম পানি, মাথায় পড়ছে ঠাণ্ডা পানি। একইসঙ্গে হিমশীতল পানি এবং গরম পানির ধারা স্নান। খেতে বসেও চমক। খিচুড়ি সঙ্গে ডিমের ভর্তা। রাশেদ আনন্দিত গলায় বলল, খিচুড়ি কোথায় পেয়েছেন?
সামছু বলল, বাপ-বেটা না খায়া থাকব? খিচুড়ি সইন্ধ্যা ওয়াক্তে আমরা খাইছি। সকালের নাশতার জন্য কিছু ছিল সেইটা আপনারে দিলাম! খাইতে কি সোয়াদ হইছে স্যার? অমৃতের মতো লাগছে। আপনাকে ধন্যবাদ।আমারে খামাখা ধন্যবাদ দেন কি জন্যে? আল্লাপাক আপনের রিজিক রাখছে এইখানে, প্রত্যেকটা দানার মধ্যে আপনার নাম লেখা।প্রতি দানায় আমার নাম লেখা?
জ্বে। যে দানায় নাম লেখা নাই সেই দানা মুখে দিতে পারবেন না। ভুলক্রমে মুখে দিলেও থু করে ফেলে দিতে হবে। আল্লাহ পাকের এমনই হিসাব।দোকানে পাটিপাতা। তার উপরে পত্রিকার কাগজ বিছানো হয়েছে। সামছু বলল, কম্বলটা গায়ে দেন। গত বছর শীতের সময় দুইটা কম্বল পাইছিলাম। কমিশনার সাব দিছিলেন। রাতটা কষ্টমষ্ট কইরা পার করেন।রাশেদ বলল, আমি খুব আনন্দ করে রাতটা পার করব।সামছু বলল, আমার পুলা কিন্তু গাতক আছে।গাতক কি?
সংগীত যে জানে তারে কয় গাতক। আপনেরে সরম পাইতেছে। সরম ভাঙলে গানে টান দিব। খুব ইচ্ছা ছিল তারে ক্ষুদে গান রাজ-এ দিব। ক্যামনে দিতে হয় জানি না বইল্যা পারলাম না।ক্ষুদে গান কি? টেলিভিশনে পুলাপানের গান। যারা ফার্স্ট সেকেন্ড হয় তারা লাখ লাখ টেকা পায়, বাড়ি পায় তারপর ধরেন লন্ডন যায়, বিলাত যায়।আপনার ছেলে কি ফাস্ট হওয়ার মতো গান গায়?
অবশ্যই। যদি না পায় তাইলে আমি একটা কান কাইট্যা আপনেরে দিয়া দিব। আপনে কুত্তারে দিয়া খাওয়ায় দিবেন। বাকি জীবন এক কান নিয়া ঘুরব। এই ওয়াদা করলাম।রাশেদ বলল, খোকা শুনি একটা গান।পামু না।কেন না?
আমি আপনেরে সরমাই।বৃষ্টির জোড় বেড়েছে। টিনের ছাদে ঝুমুর ঝুমুর শব্দ। রাশেদ বলল, I am a blessed person no doubt of that, what an experience. সামছু বলল, স্যার কি কইছেন বুঝি নাই।বললাম, আমি একজন সুখী মানুষ।সামছু বলল, অনেক বকর বকর করেছি। স্যার ঘুম দেন। মশা নাই। ঝুম বৃষ্টির মধ্যে মশা আসে না। আর যদিও আসে মশার কয়েল দিয়া দিব।বৃষ্টির শব্দ শুনতে শুনতে রাশেদ গভীর ঘুমে তলিয়ে গেল। ঘুমের মধ্যেই শুনল কে যেন গান করছে—
মানুষ ধর মানুষ ভজ শুন বলি এ পাগল মন।
মানুষের ভিতর মানুষ করিতেছে বিরাজন॥
সামছুর ছেলে গান করছে। সামছু একটু পর পর বলছে–সব্বাস ব্যাটা। সাব্বাস। স্যার ঘুমায়া পড়ছেন। স্যার জাগনা থাকলে পুরস্কার পাইতি।স্বর্গের অপ্সরাদের আরেক নাম কিন্নর। কিন্নরদের আছে ত্রিকাল ভুলানি কণ্ঠ। হতদরিদ্র সামছুর মাতৃহারা শিশুটি পৃথিবীতে এসেছে কিন্নর কণ্ঠ নিয়ে। সেই কিন্নর কণ্ঠ প্রকাশিত হবার জন্যেই হয়ত বৃষ্টিস্নাত রজনিতে রাশেদের প্রয়োজন ছিল। প্রকৃতি রাশেদকে নিয়ে এসেছে কিন্নর কণ্ঠের কাছে। প্রকৃতি লীলাময়, তার লীলা বোঝা বড়ই কঠিন।
সামছু মিয়া খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠে চুলা ধরাল। বৃদ্ধের দলের কেউ কেউ মর্নিং ওয়াকে যাবার সময় তার স্টলে চা খায়। দুধ চিনি ছাড়া লিকার চা, আদা চা এবং লেবু।আজ কেউ আসবে না, এখনো বৃষ্টি পড়ছে। আকাশ ঘন কালো। দীর্ঘ জীবন পিয়াসী বৃদ্ধের দল আজ এই বৃষ্টিতে বের হবে না। সকালের প্রথম ব্যবসা মার গেল।রাশেদ জেগেছে। তার চোখ খোলা। সামছু বলল, ঘুম ভাল হইছে স্যার? রাশেদ বলল, না। সারারাত আজেবাজে স্বপ্ন দেখেছি।স্বপ্ন কি দেখছেন?
জন্তুর মতো একটা কি যেন কামড়ে কামড়ে আমার পা খাচ্ছে। আমার প্যারালাইসিস। হাত পা নাড়াতে পারছি না। চিৎকার করে কাউকে ডাকতেও পারছি না। গলা দিয়ে স্বর বের হচ্ছে না।একটা মুরগি ছদকার ব্যবস্থা করেন স্যার।মুরগির ছদকা ব্যাপারটা কি? একটা মুরগি কিনবেন। গরিব মিসকিনরে দিয়া দিবেন। স্বপ্নের দোষ কাটা যাবে। স্যার চা খাবেন? না। আমার ধারণা আমার জ্বর এসেছে। মুখ দিয়ে ভাপ বের হচ্ছে। আপনার কাছে থার্মোমিটার আছে? জ্বর মাপার যন্ত্র?
জ্বে না। আমরা গরিব মানুষ। মাথায় হাত দিয়া জ্বর মাপি।আমার মাথায় হাত দিয়ে জ্বরটা মাপুন তো।সামছু রাশেদের মাথায় হাত রাখল। রাশেদ বলল, জ্বর আছে? আছে। বেশি? জী বেশি। খুব বেশি।আমার নিজেরও তাই ধারণা। নিঃশ্বাস নিতেও কষ্ট হচ্ছে। জনু থেকেই আমার লাংসে কিছু সমস্যা আছে। আপনি কি আমাকে ভালো কোনো হাসপাতালে নিয়ে যেতে পারবেন? অবশ্যই পারব।ঢাকার সবচে বড় হাসপাতালের নাম কি?
সেটা তো স্যার জানি না।সামছু লক্ষ করল মানুষটার চোখ লাল। ঘন ঘন নিঃশ্বাস নিচ্ছে। মুখ থেকে শাঁ শাঁ শব্দ আসছে।সামছু বলল, কি করি কিছুই তো বুঝতে পারতেছি না। স্যার পানি খাবেন? না। বমি আসছে। আপনি একজন ডাক্তারের ব্যবস্থা করতে পারবেন? স্যার পারব। ডাক্তারের ভিজিট ক্যামনে দিব? আমার কাছে ডলার আছে।রাশেদ কথা শেষ করতে পারল না। বমি শুরু করল। বমির সঙ্গে রক্ত আসছে।
সামছু বলল, ইয়া খোদা এখন কি করি? বাবা কেনতু! এখন করবটা কি? কেনতু বলল, ডাক্তার ডাক। দৌড় দেও।সামছু দোকান থেকে নেমে দৌড়াতে শুরু করল।রূপা ছবি আঁকতে বসেছে। জলরঙের ছবি আঁকার আয়োজন অনেক। পেপারে ট্রিটমেন্ট দিয়ে আয়োজনের শুরু। বাথটাবে হ্যান্ডমেড পেপার ভেজানো হয়েছে। ভেজা কাগজ রোদে খানিকটা শুকিয়ে রঙের প্রথম ওয়াশ দিতে হবে।
জলরঙ ছবির বিষয়বস্তু আগেভাগে ঠিক করা কঠিন। ছবি তার নিজের প্রাণে এগিয়ে চলে। তারপরেও রূপা ঠিক করে রেখেছে তার ছবির মূল বিষয় হবে জানালা। জানালা দিয়ে ঘরে রোদ ঢুকছে এ রকম ছবি। ছবির নাম রোদ্র। কিংবা রোদ। রোদের আলাদা কোনো ইংরেজি প্রতিশব্দ নেই। রোদ হচ্ছে Sunshine, একইভাবে জোছনা Moonshine. কবি-সাহিত্যিকরা নতুন নতুন শব্দ তৈরি করেন। ইংরেজি ভাষার কেউ রোদ এবং জোছনার কোনো প্রতিশব্দ কেন করলেন না ভাবতে ভাবতে রূপা একটা শব্দ নিজেই তৈরি করল, রোদ হল Sube. তার ছবির নাম Sube. কেউ যদি জিজ্ঞেস করে Sube কি? সে বলবে রোদ। একইভাবে জোছনা হল Mube.
রূপা ডিকশনারি খুলল, হয়ত দেখা যাবে sube বলে কোনো শব্দ আছে। Oxford Advanced Learners Dictionary-তে Sube বা Mube নামে কোনো শব্দ নেই। কাজেই ছবির নাম sube রাখা যেতে পারে।আফা, খালুজান আসছে। সাথে একটা মাইয়া নিয়া আসছে। মাইয়াটারে দেইখা মনে হয় দোয়াইতের কালি দিয়া সিনান কইরা আসছে। এমুন কালা মাইয়া আমি বাপের জন্মে দেখি নাই। মা কালীও এই মাইয়ার কাছে ফর্সা।
রূপা উঠে দাঁড়াল। বাথটাবে কাগজ আরো কিছুক্ষণ ভিজলেও ক্ষতি হবে না। এই মুহূর্তে তার ইচ্ছা করছে বাবার ব্যস্ত মুখ দেখতে। বাবা যেখানেই যান মাইক্রোবাস ভর্তি জিনিসপত্র নিয়ে আসেন, কলার কাদি, মানকচু। মাটির হাঁড়িতে জিয়ল মাছ। একবার দুটা রাজহাঁস নিয়ে এসেছিলেন। ছাড়া পেয়েই দুটা হাঁসের একটা ছুটে এসে রূপার হাঁটুতে ঠোকর দিয়েছিল।
রূপা বারান্দায় এসে দাঁড়াল। হারুন ব্যস্ত ভঙ্গিতে জিনিসপত্র নামাচ্ছেন। একটু দূরে কাপড়ের পুঁটলি হাতে দশ-এগারো বছরের এক বালিকা। বালিকার গাত্রবর্ণ ঘন কালো। তার মুখ গোলাকার। এতই গোল যে দেখে মনে হয় কাঁটা কম্পাস দিয়ে আঁকা।
গোলাকার মুখের সঙ্গে মিলিয়ে বড় বড় গোল চোখ। গোল চোখে আপনাতেই বিস্ময় ভাব চলে আসে। বালিকার চোখের বিস্ময় নেই, বিষণ্ণতা আছে।হারুন রূপার দিকে তাকিয়ে বললেন, হ্যালো ইয়াং লেডি।রূপা বলল, হ্যালো ওল্ড বাবা। এই কি তোমার ঘড়ি-কন্যা? হারুন বললেন, ইয়েস।জীবন্ত ঘড়ি নিয়ে চলে এসেছ? হুঁ। ঘরের টুকটাক কাজ করবে। স্কুলে ভর্তি করিয়ে দেব। পড়াশোনা করবে।বাবা-মা ছেড়ে দিল?
না দিয়ে করবে কি? একবেলা খাওয়া জুটে তো দুই বেলা জুটে না এমন অবস্থা। আমি যখন বললাম, মেয়েটাকে আমার কাছে দিয়ে দাও, তারা মনে হল আকাশের চাঁদ হাতে পেয়েছে। মেয়েটাকে কাছে ডেকে দুএকটা কথা বল। ঘড়ির সময় জিজ্ঞেস কর। ওর ভয়টা কাটিয়ে দে।সে ভয় পাচ্ছে না বাবা।ভয় অবশ্যই পাচ্ছে। বস্তি থেকে উঠে আসা মেয়ে। প্রথম ঢাকা শহরে এসেছে। ভয় পাবে না মানে? নাম মদিনা! তাই না বাবা? হুঁ। বাবা-মা ডাকে লতি।নাম মদিন, বাবা-মা লতি ডাকবে কেন? আমি জানব কীভাবে? আমাদের বাড়িতে তার স্টেটাস কি?
কাজের মেয়ে? তার স্টেটাস হচ্ছে A gifted child. হারুন গলা উঁচিয়ে ডাকলেন, লতি এদিকে আস। তোমার আপার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেই।মদিনা এগিয়ে এল। তার আসার মধ্যে কোনো জড়তা নেই। রূপার আবার মনে হল, নতুন পরিবেশে এসে মেয়েটা মোটেই ভয় পাচ্ছে না। ভয় না পেলেও কৌতূহল থাকবে। মেয়েটার চোখে কৌতূহলও নেই।হারুন বললেন, লতি! রাজকন্যার মতো যে মেয়েটাকে দেখছ সে হচ্ছে আমার মেয়ে। তার কথা তোমাকে বলেছি। ছবি আঁকে। আমার মেয়ের নাম রূপা তাকে তুমি আপা ডাকবে।
রূপা বলল, মদিনা এসো আমার সঙ্গে। আমি জরুরি কিছু কাজ করছি। কাজ করতে করতে গল্প করব।মদিনা মেঝেতে মাথা নিচু করে বসেছে। আরচোখে রূপার কাজ দেখছে। রূপা বাথটাব থেকে ভেজা কাগজ মেঝেতে বিছিয়ে দিল। কিছুক্ষণ এক দৃষ্টিতে মদিনার দিকে তাকিয়ে থাকলো। মদিনাও চোখ তুলে তাকালো। দুজন দুজনের দিকে তাকিয়ে আছে।রূপা বলল, নতুন জায়গায় এসে তোমার কি ভয় লাগছে?
মদিনা মুখে কিছু বলল না, তবে মাথা নেড়ে জানালো তার ভয় লাগছে। রূপা বলল, ভয় লাগার কিছু নেই। আমার বাবা অত্যন্ত ভাল মানুষ। ভাল মানুষের ছেলেমেয়েরাও ভাল মানুষ হয়। আমিও ভাল মেয়ে।মদিনা বলল, আপনি যে ভাল মেয়ে আমি জানি।রূপা বলল, কীভাবে জান? মদিনা জবাব দিল না।
রূপা বলল, এ বাড়িতে তোমার প্রধান কাজ কি হবে জান? তোমার প্রধান কাজ হবে আমাকে সাহায্য করা। কাগজ পানিতে ভেজানো, শুকানো, বোর্ডে কাগজ বসিয়ে টেপ লাগানো, রঙের টিউবের মুখ বন্ধ করা, ব্রাশ পরিষ্কার করা এইসব। আমি কি করি দেখবে। দেখে দেখে শিখবে।
মদিনা ঘাড় কাত করে জানালো সে শিখবে।তুমি কি লেখাপড়া জান? ক্লাস ফাইভ পাস করছি।খুব ভাল। এখন তুমি একটা কাজ কর। তোমার এই মুহূর্তে কি কি লাগবে একটা কাগজে লিখে আমার কাছে দাও। আমি আনিয়ে দেব। একই সঙ্গে তোমার হাতের লেখারও একটা পরীক্ষা হবে।আমার কিছু লাগবে না।
অবশ্যই লাগবে। তুমি খালি পায়ে এসেছ। তোমার একজোড়া স্যান্ডেল লাগবে। টুথপেস্ট, ব্রাশ লাগবে। মুখে মাখার ক্রিম লাগবে, নারিকেল তেল লাগবে, সাবান, তোয়ালে লাগবে।মদিনা হাসল। রূপা লক্ষ করল মেয়েটার হাসি অস্বাভাবিক সুন্দর। বেশির ভাগ মানুষ যখন হাসে শুধু তাদের ঠোঁট হাসে। চোখ হাসে না। এই মেয়েটার ঠোঁট এবং চোখ একসঙ্গে হাসছে।আফা একটা কথা বলব? বল।আপনার এই বাড়িতে ভূত আছে।তাই নাকি? জী। খারাপ ভূত।ভূতের ভাল-খারাপ আছে? হুঁ।তুমি কি ভূতটাকে দেখতে পাচ্ছি?
হুঁ! ঘরের কোনায় খাড়ায়া আপনার দিকে তাকায়াছিল। এখন নাই।রূপা হাতের কাজ বন্ধ করে কিছুক্ষণ মদিনার দিকে তাকিয়ে বলল, মদিনা শোন, ভূত-প্রেত, রাক্ষস-খোক্কস এইসব পৃথিবীতে নেই। মানুষ কল্পনা করতে ভালবাসে বলে এইসব কল্পনা করে। তুমি এখন মলিনার কাছে। যাও। মলিনা দেখিয়ে দেবে তুমি কোথায় থাকবে। তোমাকে যে লিস্ট করতে বলেছি লিস্টটা করবে। মলিনাকে বল আমাকে এক কাপ চা বানিয়ে দিতে। তুমি কি চা বানাতে পার? না।মলিনার কাছ থেকে শিখে নেবে কীভাবে চা বানাতে হয়। পারবে না?
পারব।রূপা মদিনার দিকে তাকিয়ে হঠাৎ অন্য রকম গলায় বলল, আমার চোখের দিকে তাকিয়ে থেকে বল কয়টা বাজে।মদিনা বলল, বলতে পারব না।বাবা বলছিল, জিজ্ঞাস করা মাত্র তুমি সময় বল।সবসময় পারি না। মাঝে মাঝে পারি।আচ্ছা যাও।
মদিনা উঠে দাঁড়াল। নীচু গলায় বলল, আফা ভূতটা আবার আসছে। ঐ যে কোনায় খাড়ায়া আছে।রূপা বলল, ভূত ভূতের মতো দাঁড়িয়ে থাকুক। তোমাকে যা করতে বলেছি কর।দুপুরে খেতে বসে হারুন বললেন, ঐ ছেলে রাশেদ না ফাসেদ কি যেন নাম, সে কি তার জিনিসপত্র নিয়ে গেছে? রূপা বলল, না।কতদিন হল গেছে? তিন দিন দুই রাত।টেলিফোনে কোনো খোঁজ খবর করেছে?
না।হারুন বিস্মিত হয়ে বললেন, আশ্চর্য তো।রূপা বলল, আশ্চর্যের কিছু নেই। উনি ইচ্ছা করেই এটা করছেন। আমার উপর মানসিক চাপ দেয়ার চেষ্টা। জিনিসপত্র ফেলে রেখে Mental pressure. তোকে মেন্টাল প্রেসার সে কেন দিবে? তুই তার কে? আমি তার কেউ না। তিনি আমার উপর মানসিক চাপ কেন দেবেন তাও। জানি না। হয়তো তিনি এক ধরনের খেলা খেলছেন। কিছু মানুষ আছে, আশেপাশের মানুষদের নিয়ে খেলতে পছন্দ করে, যেমন তুমি।আমি?
তুমি জীবন্ত ঘড়ি নিয়ে চলে এসেছ। এটা তোমার খেলার একটা অংশ। তাকে নিয়ে এসেছ তোমার সব আগ্রহের সমাপ্তি।তোর জ্ঞান তো বেশি হয়ে যাচ্ছে। কিছুদিন পর তোকে আর রূপা ডাকা যাবে না। ডাকতে হবে জ্ঞান রূপা।জ্ঞান রূপা নাম আমার পছন্দ হয়েছে। বাবা থ্যাংক য়্যু।ঐ ছেলেকে খুঁজে বের করতে হবে। আমার নেক্সট প্রজেক্ট–অপারেশন রাশেদ কিংবা ফাসেদ হান্ট।
রূপা বলল, ঢাকা শহরে এক কোটি মানুষ বাস করে। কেউ যদি এক কোটি মানুষের মধ্যে লুকিয়ে থাকতে চায় সে সারাজীবন লুকিয়ে থাকতে পারবে।হারুন বললেন, কোনো বুদ্ধিমান লোক চেষ্টা করলে খুঁজে বের করতে পারবে।রূপা বলল, বাবা তুমি বুদ্ধিমান মানুষ না। তুমি পারবে না।আমি বুদ্ধিমান না? না। যে কবিতায় ইতিহাসের বই লেখে সে বুদ্ধিমান না।হারুন কঠিন গলায় বললেন, আমি গাধা মানব?
রূপা বলল, বাবা তুমি রেগে যাচ্ছ।আমি তাকে কীভাবে খুঁজে বের করব শোন–ছবি দিয়ে পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দেব। শিরোনাম হবে–রাশেদ কিংবা ফাসেদ তোমাকে খুঁজছি।রূপা বলল, বারবার রাশেদ কিংবা ফাসেদ বলবে না। তার নাম রাশেদ। এখন বল তার ছবি কোথায় পাবে? থানায় ডায়েরি করাব। পুলিশ ছবি জোগাড় করবে।তোমার কি ধারণা ডায়েরি করানোর সঙ্গে সঙ্গে থানার সব পুলিশ হাতে রাশেদ সাহেবের ছবি নিয়ে তাকে খুঁজতে বের হয়ে যাবে?
Read more