সুনামগঞ্জের ইতিহাস অতি প্রাচীন। অসংখ্য কিংবদন্তী এবং ঐতিহাসিক ঘটনাবলী ও তথ্যাবলীতে সমৃদ্ধ।’ সুনামদি ‘ নামক জনৈক মোগল সিপাহীর নামানুসারে সুনামগঞ্জের নামকরণ করা হয়েছিল বলে জানা যায়।পাহাড়, নদী ও হাওয়রের জন্য প্রসিদ্ধ সুনামগঞ্জ জেলাটি।এখানকার উল্লেখযোগ্য দর্শনীয়,স্থানগুলো হলো: হাসহ রাজার জাদুঘর, ট্যাগুয়ার হাওর জাদুকাটা নদী, নীলাদ্রি লেক, বারিক্কা টিলা ইত্যাদ।
নিম্নে হাসন রাজার জাদুঘর ও টাঙ্গুয়ার হাওয়ের সৌন্দর্যের বর্ণনা করা হলো –
হাসন রাজার জাদুঘর:
বাংলাদেশের একজন বাউল শিল্পী ও মরমী কবি হচ্ছেন দেওয়ান হাসন রাজা।আর হাসন রাজার জন্ম এই সুনামগঞ্জে জেলার সুরমা নদীর তীরে তেঘরিয়া গ্রামে। হাসন রাজার পিতা ছিলেন একজন প্রতাপশালী জমিদার। হাসন রাজার পূর্বপুরুষেরা হিন্দু ধর্মালম্বী ছিলেন।তাদেরই একজন বীরেন্দ্রচন্দ্র সিংহদেব মতান্তরে বাবু রায় চৌধুরী ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন।হাসন রাজা ছিলেন স্বশিক্ষিত। তার প্রতিষ্ঠানিক শিক্ষা ছিল না। তিনি আঞ্চলিক ভাষা অনেক অনেক গান রচনা করেন।তিনি সংগীত রচনা শিরু করেন কৈশর থেকে। যৌবনে তিনি অত্যন্ত ভোগ বিলাসী ও সৌখিন ছিলেন।তিনি অতি অত্যাচারী রাজা হিসাবেই খ্যাত ছিলেন।হাসন রাজার মন মানসিকতার পরিচয় মিলে তার গানে। হাসন রাজা গভীর অনুভূতির মধ্য দিয়ে নিজের ব্যক্তিসত্তাকে তাঁর গানে প্রকাশ ও প্রচার করেছেন। তাঁর গানের ভাষারীতি সহজ সরল।বিশ্ব কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর স্বয়ং হাসন রাজার গানেরবপ্রশংসা করেছেন।
তিনি মোট কতটি গান রচনা করেছেন তার সঠিক হিসাব মিলেনি। তাঁর গানের সঙ্গে বাঙ্গলার লোকায়ত জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য সম্পর্ক রয়েছে।
সুনামগঞ্জ শহরে হাসন রাজার স্মৃতি বিজড়িত বাড়িটিই হাসন রাজা জাদুঘর হিসাবে দর্শনাথীদের জন্য উন্মুক্ত করা হয়েছে।এই জাদুঘরে রয়েছে হাসন রাজার ব্যবহৃত টেবিল, চেয়ার, তলোয়ার, পানি পরিশোধন পাত্র, রঙ্গির আলখাল্লা, জমিদারী কাজে ব্যবহৃত ক্যাশবাক্স পানদানিহাসন রাজার ব্যবহৃত লাঠি ও খড়ম, মোমদানি, বাদ্যযন্ত্রের মধ্য ঢোল, করতাল,মন্দিরা ইত্যাদি।
জাদুঘরটিতে হাসন রাজার একটি মাত্র আলোচিত্র রয়েছে। এটিও সংগ্রহ করা হয়েছে কলকাতা স্টুডিও থেকে ছবিটি সংগ্রহ করা হয়।জাদুঘরটি হাসন রাজার স্মৃতিজরিত বিভিন্ন জিনিসপত্র জীবন্ত হয়ে আছে।
টাঙ্গুয়ার হাওর:
সুনামগঞ্জ জেলার দ্বিতীয় বৃহত্তম মিঠা পানির জলাশয় হলো টাঙ্গুয়ার হাওর।টাঙ্গুয়ার হাওর পাখি,মাছ, অন্যান্য জলজ প্রাণীর অভয়াশ্রম।এই হাওরে প্রচুর মাছ পাওয়া যায়।বিশাল এলাকা জুরে রয়েছে এই হাওরটি।বর্ষাকালে এর আয়তন বেড়ে দাড়ায় ২০০০০ একরে।বিশাল জলরাশির তীর ঘেঁষে দাড়িয়ে আছে উঁচু উঁচু পাহাড়।
টাঙ্গুয়ার হাওরের পানি এতটাই স্বচ্ছ যে পানির তলদেশ দেখা যায়।মেঘালয়ের খাসিয়া ও জৈন্তা পাহাড়ের ছোট বড় ঝরনা হচ্ছে এই বিশাল জলরাশির উৎস।এতে দেখা যায় নানা প্রজাতির গাছ, পাখি, সরীসৃপ প্রাণী যা এই হাওরের সৌন্দর্য অনেক বাড়িয়ে দেয়। আরও রয়েছে বিশাল নলখাগড়ার বন।এই সবকিছু ও শীতকালে অতিথি পাখির আগমন ও চারদিকের সবুজ প্রকৃতি এই হাওরটিকে অপরূপ সাজে সাজিয়ে তুলে যা সত্যি চোখ জুড়িয়ে যাওয়ার মত।
বর্তমান সুনামগঞ্জ জেলার পূর্বে নাম ছিল বনগাঁও।১৮৭৭ সালে সুনামগঞ্জ মহুকুমা প্রতিষ্ঠিত হয়। খুবই মনোরম প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর সুনামগঞ্জ জেলা।বর্ষাকালে একানকার প্রকৃতিক দৃশ্য তার যৌবণ ফিরে পায়। ঢাকা থেকে সুনামগঞ্জ যাবার সারাসরি বাসও আছে এবং পথও বেশ ভালো।তাই এই জেলার প্রকৃতিক সৌন্দর্য নিজের চোখে দেখার জন্য একবার সুনামগঞ্জ ঘুরে আসা যায়।
লিখেছেন – ত্রোপা চক্রবর্তী