সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজের ভৌতিক গল্পসমগ্র খণ্ড-১১

তিনি বটগাছে লুকিয়ে থাকেন। 

মা করুণমুখে বললেন, তা হলে তুমি নিজেই সেই গানের মাটি এনে দাও না মােনা! 

ভৌতিক গল্পসমগ্র

মােনা হাসল।-“ওরে বাবা! আমাকে থানের ত্রিসীমানায় দেখলে বাবা কন্ধকাটা রে-রে করে তেড়ে আসবেন। তবে তাঁর থানের মাটি আনার সহজ উপায় আছে। বাবা কন্ধকাটা ছােটদের খুব ভালােবাসেন। এই খােকাবাবু থানে গিয়ে এক খাবলা মাটি তুলে রুমালে বেঁধে আনে, বাবা মােটেও রাগ করবেন না। 

খুলি যদি বদলে যায় 

কথাটা শুনে আমি আঁতকে উঠে বললুম,আমি একা ওখানে যেতে পারব 

ছােটমামা বললেন,“কী বােকামতাে কথা বলছিস পুঁটু? আমি তাের সঙ্গে যাব। তারপর আমি ঝােপের আড়ালে বসে থাকব। তুই থানের মাটি নিয়ে আসবি। কিছু ভাবিস নে! কন্ধকাটা হােক, আর যে ব্যাটাচ্ছেলেই হােক, আমার সামনে এলে অ্যায়সা একখানা ঝাড়ব নাকথা শেষ না করে ছােটমামা ফুটবলে কিক করার ভঙ্গি তে শূন্যে লাথি ছুড়লেন। 

তারপর ছােটমামা আমার একটা হাত ধরে হিড়হিড় করে টেনে নিয়ে বারান্দায় গেলেন। বললেন,—এক মিনিটের মধ্যে রেডি হয়ে নে। আমি রেডি হয়েই আছি। চারটে বাজে। স্টেশনে পৌঁছতে এখনও প্রচুর সময় আছে। এই ট্রেনটা দৈবাৎ লেট করলে তাে ভালােই হবে।… 

ভৌতিক গল্পসমগ্র খণ্ড-১১

তখনকার দিনে ট্রেনে বা বাসে মােটেও ভিড় হতাে না। লােকেরা পায়ে হেঁটেই যাতায়াত পছন্দ করত। ট্রেনে যে কামরায় আমরা উঠেছিলুম, তাতে মােটে জনাতিনেক যাত্রী। তারা পরস্পর দূরে জানালার কাছে বসে ছিল। ছােটমামা নিজে একটা জানালার ধারে বসে বললেন, তুই আমার পাশে বােস পুটু! জানালার ধারে বসলে কয়লার গুড়াে এসে চোখে ঢুকে যাবে। 

একটু তফাতে এক ভদ্রলোেক জানালার দিক থেকে মুখ ঘুরিয়ে বসে ছিলেন। তার মাথায় সিঁথিকরা লম্বা ঘাড় ছুঁই-ছুঁই কঁচাপাকা চুল। পরনে ধুতি আর ছাইরঙা পাঞ্জাবি। তিনি আমাদের দিকে তাকিয়ে ছিলেন। তার নাকের পাশে মােটা একটা জড়ল। কঁাধের ব্যাগটা পাশে সিটের ওপর রেখে তিনি চিবুকে একটা হাত এবং মাথায় একটা। হাত চেপে মাথাটা নড়িয়ে দিলেন। 

ব্যাপারটা ছােটমামারও চোখে পড়েছিল। ফিসফিস করে বললেন,—পাগল নাকি রে? 

আশ্চর্য ব্যাপার! ট্রেনের তুলকালাম শব্দের মধ্যেও কথাটা কি ভদ্রলােকের কানে গেল? তিনি একটু হেসে বললেন,-পাগল হইনি এখনও! তবে পাগল হতে বেশি দেরি নেই! 

 ছােটমামা বললেন, কিছু মনে করবেন না। আপনি নিজের মুন্ডুটা ধরে অমন করে নাড়ানাড়ি করছেন কিনা? তাই মুখ ফসকে কথাটা বেরিয়ে গেছে। 

ভৌতিক গল্পসমগ্র খণ্ড-১১

ভদ্রলােক এবার দুটো হাত দুই গালে চেপে মাথাটা কিছুক্ষণ নাড়ানাড়ি করে বললেন,—এই এক বিপদ হয়েছে আমার। মুন্ডুটা কিছুতেই ঘাড়ের সঙ্গে ফিট করছে 

 না। 

ছােটমামা জিগ্যেস করল,—আপনার ঘাড়ে কি বাত হয়েছে? 

—কেন? কেন? 

—মানে আমার মায়ের কোমরে বাত হয়েছে তাে! সাংঘাতিক বাত। মা দিদিকে বলেন, তার কোমর ধরে আপনার মতাে নাড়ানাড়ি করাে। কিন্তু তাতেও কাজ হয়নি। তাই আমরা যাচ্ছি কালিকাপুরে বাবা কন্ধকাটার থানে। 

ভদ্রলােক এবার খিকখিক করে হেসে বললেন,—আরে! আমিও তাে সেখানেই যাচ্ছি। 

ভৌতিক গল্পসমগ্র খণ্ড-১১

ছােটমামা গম্ভীরমুখে বললেন,—বাবা কন্ধকাটা তার থানে বড়দের দেখতে পেলেই রে-রে করে তেড়ে আসেন। তাই এই যে দেখছেন ভাগনে পুটু। একে সঙ্গে নিয়ে যাচ্ছি। বাবা কন্ধকাটা ছােটদের খুব ভালােবাসেন। 

—তাই বুঝি? তা তােমার ভাগ্নে সেখানে গিয়ে কী করবে? 

–থানের মাটি খাবলে তুলবে। রুমালে বেঁধে নিয়ে আসবে। সেই মাটি গুলে মায়ের কোমরে মাখিয়ে রাখলে বাত সেরে যাবে, বুঝলেন? 

ভদ্রলােক আবার দু-হাত দিয়ে তাঁর মুন্ডুটা নাড়ানাড়ি শুরু করলেন। তারপর বললেন,“উঃ! বড্ড জ্বালায় পড়া গেল দেখছি। মনে হচ্ছে যেন আমার মুণ্ডুটা ঘাড় থেকে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে। | ছােটমামা বললেন, আপনি কিছু ভাববেন না।

বাবা কন্ধকাটার থানে যাওয়া পর্যন্ত মুন্ডুটাকে চেপে ঘাড়ে বসিয়ে রাখুন। তারপর আপনি আর আমি ঝােপের আড়ালে বসে থাকব। আর পুঁটু আপনার জন্যও খানিকটা মাটি এনে দেবে। ওখানে একটা ঝিল আছে দেখেছি। আপনি মাটিগুলাে তুলে কাদা করে মুন্ডুর পেছনদিকে ঘাড় অব্দি মাখিয়ে রাখবেন। ব্যস!

 

Read More

সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজের ভৌতিক গল্পসমগ্র খণ্ড-১২

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *