সেই সময় দেখলুম, একটু দূরে বাঁশবনের ভেতর গুড়ি মেরে মােনা বাঘের মতাে চুপিচুপি হাঁটছে। তারপর সে লাফ দিয়ে যেন কিছু ধরল। তারপর চেঁচিয়ে উঠল,এবার? এবার বাছাধন যাবে কোথায়? খােকাবাবু! ছােটবাবু! চলে আসুন।
সাড়া দিয়ে বললুম,—এই যে এখানে আছি।
মােনা আমাকে দেখতে পেয়ে অদ্ভুত শব্দে হাসতে-হাসতে চলে এল। ছিপি আঁটা শিশিটা আমাকে দিয়ে বলল,-এবার কিন্তু সাবধান। তা খােকাবাবু কোথায় গেল?
বললুম, কালাে বেড়ালটা দেখতে পেয়ে ছুটে গেছে। তুমি খুঁজে দেখাে তাে ওকে।
মােনা বলল,—সর্বনাশ! আপনি খােকাবাবুকে যেতে দিলেন? পেতনিটার পাল্লায় পড়লে বিপদ হবে যে!
সে হন্তদন্ত হয়ে জঙ্গলে গিয়ে ঢুকল। একটু পরে সে ডনকে নিয়ে ফিরে এল। বলল,আর একটু হলেই পেতনি খােকাবাবুকে ধরে ফেলত। পেতনিদের স্বভাব জানেন তাে? ছেলেপুলে দেখলেই কুড়মুড় করে মুন্ডু চিবিয়ে খায়। আপনারা শিগগির চলে যান। আর একটা কথা, পাঁচুকে তেরাত্তির উপােস করিয়ে রাখবেন।
ডন এসেই আমার হাত থেকে শিশিটা ছিনিয়ে নিল।… ব্যাপারটা এখানেই শেষ হলে ভালাে হতাে। কিন্তু তা হল না।
ভৌতিক গল্পসমগ্র খণ্ড-৩১
রাত্তিরে ডন আমার কাছে শােয়! শিশিটা বালিশের পাশে রেখে সে ঘুমােচ্ছিল। আমি ঘুমুতে পারছিলুম না। সেই বেড়ালটার কথা ভাবছিলুম। আরও ভাবছিলুম পাঁচু চোরের কথা। পাঁচুকে একটু-একটু মনে পড়ে! লম্বা সিড়িঙে চেহারার লােক ছিল সে। মাথার চুল খুঁটিয়ে ছাঁটা। কেউ যাতে চুল ধরে তাকে বেকায়দায় না ফেলে, সেইজন্য ওইরকম করে চুল ছাঁটত। শুনেছি, দুদে দারােগা বন্ধুবিহারী ধাড়া তাকে শায়েস্তা করেছিলেন। কিন্তু কথাটা হল, পাঁচু মরে কালাে বেড়াল সেজে বেড়ায় কেন?
ই, ওই যে কথায় বলেস্বভাব যায় না মলে। মরার পরেও পাঁচু বেড়াল সেজে দুধ-মাছ-মাংস চুরি করে বেড়াচ্ছে না তাে? তবে তার আগে দেখা দরকার, সত্যি উনের শিশি থেকে কালাে বেড়াল বেরােয় কি না। রাত্তিরটা ছিল জ্যোত্সার। জানলার বাইরে ঝকঝকে জ্যোৎস্নায় চুপিচুপি বালিশের পাশ থেকে শিশিটা নিয়ে ছিপি খুলে দিলুম।
অমনি দেখলুম, ফের একটা কালাে বেড়াল জানালা গলিয়ে পালিয়ে গেল। এবার আমার শরীর শিউরে উঠল। তক্ষুণি ছিপি এঁটে শিশিটা যথাস্থানে রেখে জানালায় উঁকি দিলুম। বেড়ালটা পাঁচিলে বসে নীল জ্বলজ্বলে চোখে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। তক্ষুণি জানলা থেকে সরে এসে শুয়ে পড়লুম। নাহ! সত্যি তাহলে ভূত আছে।
সকালে উঠে শুনি, রান্নাঘরে চোর ঢুকেছিল। সকালের চায়ের দুধ রাখা ছিল। এক ফোটা নেই। ন’টার আগে গয়লা দুধ দিতে আসে না। জামাইবাবু—ডনের বাবা খুব বকাবকি করলেন দিদিকে। দিদি নাকি রান্নাঘরের দরজা-জানালা আটকাতে ভুলে গিয়েছিল। শুধু দুধ নয়, ফ্রিজ থেকে মাছ-মাংস সব নিপাত্তা হয়ে গেছে।
ভৌতিক গল্পসমগ্র খণ্ড-৩১
ডন ছােটছেলে। সে এ নিয়ে মাথা ঘামাল না। কারণ শিশির ভেতর বন্দি পাঁচুকে তেরাত্তির উপােস রাখতে হবে। কাজেই সে ছিপি খােলেনি। সে তাে জানে , আমি ছিপি খুলে এই কেলেঙ্কারিটি বাধিয়েছি। ডন ভেবেছে পাঁচু শিশির ভেতর রয়ে গেছে।
চুপিচুপি মােনার ডেরায় চলে গেলুম।।
মােনা আজ তার ডেরাতে বসে চোখ বুজে তপজপ করছিল। ডেরা মানে মন্দিরের লাগােয়া একটা পুরােনাে জরাজীর্ণ একতলা ঘর। জপ শেষ হলে সে চোখ খুলে আমাকে দেখে বলল,-পাঁচু পালায়নি তাে ছােটবাবু? পালিয়েছে। আসলে আমারই বােকামি। মােনা, ডন এখনও জানে না আমি ফের ছিপি খুলেছিলুম-বলে যা ঘটেছে, তার মােটামুটি একটা বিবরণ দিলুম।
মােনা গুম হয়ে গেল। একটু পরে বলল,—ঠিক আছে। তিনটে টাকা ছাড়ন ছােটবাবু। আমি পেতনিটাকে শিশিতে ভরেছি। আপনি বরং এই শিশিটা আপনার ভাগনেবাবাজির শিশির সঙ্গে পাল্টে ফেলুন। খালি শিশিটা আমাকে ফেরত দিন। আর যা, পেত্নি কিন্তু দুধ-মাছ-মাংস খায় না! একটু শুকনাে গােবর আর হাড়গােড় এর খাদ্য।
তিনটে টাকা গচ্চা গেল। কী আর করা যাবে? বাড়ি ফিরে এক সুযােগে ডনের শিশিটা নিয়ে এই শিশিটা রেখে দিলুম ডনের পড়ার টেবিলে। ডন তখন স্কুলে।
মােনাকে খালি শিশিটা ফেরত দিয়ে এলুম। মােন আমাকে সাবধান করে দিল।
সে-রাত্তিরে আবার আমার মনে হল, সত্যি এই শিশির ভেতর
Read More