সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজের ভৌতিক গল্পসমগ্র খণ্ড-৭

বললুম,—এখন পাচ্ছি না। কিন্তু আমার কথা থেমে গেল। এরপর যা ঘটল তা কল্পনাও করিনি। হঠাৎ টর্চ 

ভৌতিক গল্পসমগ্র

নিভিয়ে অশােকবাবু আমার কানের নিচে শক্ত এবং ঠান্ডা কী একটা জিনিস ঠেকিয়ে চাপা গর্জন করে বললেন,—টু শব্দটি নয়। ট্রিগারে আঙুল আছে। একটু চাপ দিলেই তােমার মুন্ডু উড়ে যাবে। আগে ক্যামেরাটা দাও। হ্যা—তারপর রিস্টওয়াচ। আর মানিব্যাগটা বের করাে। 

মুহূর্তে আমি টের পেয়ে গেছি, এক ভদ্রবেশী গুণ্ডার পাল্লায় পড়েছি। হােটেলের ম্যানজার মিঃ ঠাকুর আমাকে সাবধান করে দিয়েছিলেন কেন, এতক্ষণে তার মর্ম বুঝতে পারলুম। সেই ফকিরও হয়তাে আমাকে সাবধান করে দিতে চেয়েছিলেন। 

কিন্তু এখন আর কোনও উপায় নেই। ক্যামেরাটা গলা থেকে ঝুলছিল। সেটা হাতে ধরে কাপতে কাপতে বললুম,দয়া করে এটা নেবেন না। মানিব্যাগে হাজারখানেক টাকা আছে। তা নিন। ঘড়িটাও নিন। কিন্তু ক্যামেরায় লােড করা ফিল্মে অনেক ছবি আছে। দয়া করে অন্তত ফিল্মের রােলটা বের করে নিতে দিন আগে। 

ভৌতিক গল্পসমগ্র খণ্ড-৭

অশােকবাবুরূপী দুবৃত্ত আগ্নেয়াস্ত্রের নল আমার কানের নিচে আরও চেপে হিসহিস করে বলে উঠল,চুপ! শিগগির! আর একটা কথা বললে তােমার লাশ পড়বে। আর সেই লাশের কথা কেউ জানতেও পারবে না। কারণ তােমার লাশ আমি চোরাবালিতে ফেলে দিয়ে আসব। চোরাবালিতে তােমার মতাে কত লাশ আমি ফেলে দিয়ে এসেছি। সব তলিয়ে গেছে। 

বলেই সে ধমক দিল,আবে জলদি কর! 

এতক্ষণে মনে হল, লােকটার মাতৃভাষা বাংলা নয়। তার বাংলা কথাবার্তায় কেমন যেন একটু হিন্দির টান ছিল। কিন্তু এবার ডান কানের নিচে ব্যথা পেয়ে যন্ত্রণায় ককিয়ে উঠেছিলুম। তারপরই আবার একটা অদ্ভুত ঘটনা ঘটে গেল। আচমকা শপাং করে একটা প্রচণ্ড শব্দ হল। তারপর দেখলুম, দুবৃত্তটার হাতের অস্ত্র ছিটকে পড়ল এবং সে আর্তনাদ করে পড়ে গেল। 

তারপর আবার শপাং করে প্রচণ্ড শব্দ হল। গুণ্ডাটা লাল ধুলােয় গড়াতে শুরু করল। এ এক বিস্ময়কর ঘটনা। কোনও অশরীরী অদৃশ্য চাবুক মেরে চলেছে তাকে। সে একবার কাত হচ্ছে। একবার উপুড় হচ্ছে। হাঁটু মুড়ে ওঠার চেষ্টা করছে। তারপরই সেই প্রচণ্ড শব্দ এবং তার মুহুর্মুহু আর্তনাদ শুনতে পাচ্ছি। জ্যোৎস্নায় স্পষ্ট দেখছি, লােকটার গায়ের টি-শার্ট ফালাফালা হয়ে কালােকালাে ক্ষতরেখা ফুটে উঠছে। 

ভৌতিক গল্পসমগ্র খণ্ড-৭

আমি হতবুদ্ধি হয়ে দাঁড়িয়ে আছি। লাল ধুলােভরা রাস্তায় নােকটা ক্রমাগত। গড়াচ্ছে এবং তার গলা দিয়ে গোঁ-গোঁ শব্দ বেরুচ্ছে শুধু। অশরীরীর চাবুকের শব্দ ক্রমশ প্রচণ্ডতর হয়ে উঠছে। 

লাল ধুলাের ঝড় বয়ে যাচ্ছে এবার। তার আড়ালে চাবুকের ক্রমাগত শব্দ আর গােঙানি শুনতে-শুনতে একসময় আমার চেতনা ফিরে এল। তখনই দৌড়ে নেমে এসে কালাে পাথরটার পাশ দিয়ে বেরােলাম। তারপর ধ্বংসস্তুপের ভেতর দিয়ে ভােলা জায়গায় ছুটে চললুম। 

আজমগড়ের অশরীরী 

কেল্লাবাড়ির ভাঙা ফটকের কাছে গিয়ে প্যান্ট শার্ট থেকে ধুলাে ঝেড়ে হােটেলে ফিরে চললুম। না, কাউকে এসব অবিশ্বাস্য ঘটনার কথা বলা উচিত হবে না।… 

রাতে ডিনার খাইনি। ম্যানেজার খবর নিতে এসেছিলেন আমার রুমে। বলেছিলুম,—ঘুরে-ঘুরে খুব ক্লান্ত। খিদে নেই। 

সারারাত যতবার ঘুম এসেছে, চমকে উঠেছি। আবার বুঝি কোনও অদ্ভুত ঘটনা ঘটবে। ভাের ছটায় আসলাম খান বেড-টি আনল। তারপর গম্ভীরমুখে বলল, খবর আছে স্যার! সুখবর। তাই বলা উচিত মনে হল। 

বললুম,কী সুখবর আসলাম? সে বলল,—আজমগড়ে একজন সাংঘাতিক গুণ্ডা ছিল। তার নাম কাল্প। সে আমাদের হােটেলে এসেও ম্যানেজারসায়েবের কাছে টাকা দাবি করত। কাল সন্ধ্যার আগে সে নাকি আপনার সঙ্গে কথা বলছিল। ওয়েটার রমেশ দেখেছে। কিন্তু আপনাকে সাবধান করার সুযােগ পায়নি। 

—কিন্তু সুখরবটা কী? 

কাক্কু গুণ্ডাকে কে বা কারা রাত্রে মেরে কেল্লাবাড়ির ভেতরে লাশ ফেলে এসেছে। পাগলা ফকির খুব ভােরে সেই লাশ দেখে থানায় খবর দিয়েছিল। আশ্চর্য ঘটনা স্যার, তার পিস্তল আর টর্চটা সেখানেই পড়ে ছিল। 

—আচ্ছা আসলাম! কাল্লু কি বাঙালি ছিল? 

 

Read More

সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজের ভৌতিক গল্পসমগ্র খণ্ড-৮

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *