হিমু এবং একটি রাশিয়ান পরী পর্ব:১০ হুমায়ূন আহমেদ

হিমু এবং একটি রাশিয়ান পরী পর্ব:১০

এলিতা বলল, তোমার অসুস্থ অবস্থায় একটা ছবি আছে। ছবিটা প্রিন্ট করে তোমাকে দেখাব। ছবি দেখে সঙ্গে সঙ্গে তোমার চোখে পানি আসবে। তানিজা মেয়েটি তার মা’কে নিয়ে তোমাকে দেখতে এসেছিল।সে তোমাকে হলি জমজম ওয়াটার খাওয়াবে। বোতলে করে সে হলি ওয়াটার নিয়ে এসেছে। চামচে করে তোমার মুখে মেয়েটা পানি ধরেছে সেই পানি তোমার গাল বেয়ে নিচে নামছে।

একই সঙ্গে মেয়েটা কাঁদছে। তোমার গালের পানি এবং মেয়েটার গালের পানি চকচক করছে। ন্যাচারাল আলোয় তোলা ছবি। অসাধারণ।আমি বললাম, তোমার ছবির সাবজেক্ট হতে পেরেছি। এতে আমি খুশি। তুমি আমার চিকিৎসার খরচ কেন দিয়েছ ব্যাখ্যা করলে ডাবল খুশি হব।টাকা ফেরত দেবে?

কিভাবে দেব? আমি অন্যের টাকায় প্রতিপালিত ভিক্ষুক বিশেষ।অন্যের দয়া গ্রহণ করতে তোমার সমস্যা হয় না? সৃষ্টিকর্তার দয়া গ্রহণ করতে যদি আমার সমস্যা না হয় তাহলে অন্যের দয়া গ্ৰহণ করতে সমস্যা কেন? সব মানুষের মধ্যেই ঈশ্বর প্রকাশিত। কাজেই আমি শুধুমাত্র ঈশ্বরের দয়াই নিচ্ছি।এলিতা মুখ চোখ কুঁচকে বলল, ‘Oh God!’ এই বাক্যটি বলা মনে হয় তার মুদ্রা দোষ। কারণে অকারণে বলে।এলিতা বলল, তোমার প্রিয় রঙ কি?

নীল।এই রঙ প্রিয় হবার পেছনে কি কোনো কারণ আছে; না এমনিতেই প্রিয়।কারণ আছে, আমাদের দৃশ্যমান জগতের বড় অংশ আকাশ। আকাশ নীল।এলিতা বলল, তুমি শুনলে অবাক হবে। আমি তোমার প্রিয় নীল রঙের একটা শাড়ি কিনেছি।হঠাৎ শাড়ি কেন?

আমি ঠিক করে রেখেছিলাম যেদিন তোমার রোগমুক্তি হবে। আমি নীল শাড়ি পরে উপস্থিত হব।শাড়িতো পর নি।শাড়ি পরতে যে এত কিছু লাগে জানতাম না। স্কার্টের মত আন্ডার গার্মেন্টস। টপস্-এর মত একটা ড্রেস, যাই হোক হোটেলের সাহায্যে দর্জি ডেকে ব্যবস্থা করেছি। শাড়ির অন্য অংশগুলি দর্জি এখনো দেয় নি।আমি বললাম, কোনো অসুবিধা নেই। আমি কল্পনা করে নিচ্ছি। তুমি শাড়ি পরে আমার সামনে বসে আছ। আমি খুব ভাল কল্পনা করতে পারি।Oh God. ও গড বলে আঁৎকে উঠলে কেন?

হিমু এবং একটি রাশিয়ান পরী পর্ব:১০

এলিতা গভীর গলায় বলল, যে শাড়ি পরা অবস্থায় আমি বসে আছি কল্পনা করতে পারে সে নগ্ন অবস্থায় আমি বসে আছি। এই কল্পনাও করতে পারে। এ জন্যেই Oh God. বলেছি। হিমু এখন আমি উঠব। তোমার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করছি। সরি।হঠাৎ ক্ষমা প্রার্থনা কেন? অন্য আরেক দিন বলব। আজ না। তোমাকে রিলিজ করছে কবে?

জানি না।সমস্যা নেই। আমি জেনে নিচ্ছি; তোমাকে রিলিজ করার দিনে আমি নীল শাড়ি পরে আসব।আচ্ছা।হাসপাতাল থেকে মেসে ফিরেছি। নীল শাড়ি পরে এলিতার আসার কথা ছিল সে আসে নি।আলম সাহেব ঘরের দরজা বন্ধ করে বসে আছেন। আমি এসেছি জেনেও তিনি দরজা খুললেন না। আমার রোগমুক্তির জন্যে তিনি এক হাজার রাকাত নামাজ মানত করেছেন। দিনে ৭০ রাকাত থেকে ১০০ রাকাতের বেশি পড়তে পারেন না বলে মানত মাঝামাঝি পর্যায়ে আছে। মানত শেষ না হওয়া পর্যন্ত তিনি দরজা খুলবেন না।

কাদেরের কোনো খোঁজ পাওয়া গেল না।আমি হাসপাতালে ভর্তির দিন থেকে না-কি সে নিখোঁজ।দীর্ঘদিন হাসপাতালে থাকা অনেকটা বিদেশ বাসের মত। বিদেশ ভ্ৰমণ শেষ হলে দেশে ফেরার জন্যে প্রাণ ঘ্যান ঘ্যান শুরু করে।মেসে পা দিয়েও আমার প্রাণের ঘ্যানঘ্যাননি দূর হল না। ঢাকার পথে ঘাটে ঘুরতে ইচ্ছা করল।

শরীরের এই অবস্থায় হিন্টন’ প্রক্রিয়া সম্ভব না। আমি সারা দিনের জন্যে রিকশা ভাড়া করলাম সন্ধ্যা পর্যন্ত রিকশা নিয়ে ঘুরবে বিনিময়ে আমার সঙ্গে টাকা পয়সা যা আছে সব তাকে দিয়ে দেব। অনেকটা জুয়া খেলার মত।রিকশাওয়ালা মধ্যবয়স্ক, নাম ইছহাক। সে কিছুক্ষণ তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে থেকে রাজি হল। মিনমিনে গলায় বলল, চা নাশতা দুপুরের খানা এইগুলা কার?

আমি বললাম সব তোমার। আমার খাওয়ার পয়সাও তুমি দেবে। রাজি আছ? ইছহাক বলল, স্যার উঠেন।রিকশা নিয়ে ঘণ্টাখানেক শহরে ঘুরে মাজেদা খালার সঙ্গে দেখা করতে গেলাম।মাজেদা খালা বাসায় ছিলেন না। খালু সাহেব ছিলেন, তিনি আমাকে দেখেই বললেন, তোমার খালা বাসায় নেই। দয়া করে আমাকে বিরক্ত করবে না।আমি বললাম, আপনারা আছেন কেমন?

হিমু এবং একটি রাশিয়ান পরী পর্ব:১০

ভাল আছি। এখন বিদায় হও।বিদায় হলাম। মাজেদা খালা এবং খালু আমার অসুখের খবর পান নি।পরের স্টেশন বাদলদের বাড়ি। সেখানে বিরাট হৈ চৈ। মেজো খালু চার ব্যাগ বাজার নিয়ে ফিরেছেন। গাড়ি থেকে নেমেছে তিন ব্যাগ। আরেকটার খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। খালু সাহেব আমার দিকে তাকিয়ে বিরক্ত গলায় বললেন, এখন ঝামেলায় আছি, বিদায় হও তো।

আমি বললাম, দুপুরে আপনার এখানে খাব ভেবেছিলাম। সঙ্গে একজন গেস্ট আছে। আমার রিকশাওয়ালা বারান্দায় খাবার দিলেই হবে।গোট লস্ট, গোট লস্ট।ইছহাক আমাকে দুপুরের খাবার খাওয়ালো রাস্তার পাশের রেষ্টুরেন্টে। ইট বিছিয়ে খাবার দেয়া হয় বলে এইসব রেক্টরেন্টের আরেক নাম ইটালিয়ান রেস্টুরেন্ট।

আগুন গরম মোটা মোটা রুটি।

হিদুল শুটকির জিভ পুরে যাওয়ার মত ঝাল ভর্তা।

মুরগির গিলা কলিজা।

ইছহাক বলল, স্যার পেট পুরা হইছে?

আমি বললাম, আরাম করে খেয়েছি ইছহাক।

ইছহাক বলল, এখন ডাবল জর্দা দিয়ে একটা পান মুখে দিয়া একটা ছিরগেট ধরান। দেখবেন দুনিয়ার মধ্যে বেহেশত নামব। দশ পনরো মিনিট শুইয়া কি বিশ্রাম নিবেন?

বিশ্রাম নিতে পারলে ভাল হয়। রেস্টুরেন্টের সঙ্গেই নীল রঙের পলিথিনে তাবুর মত ঘর। মেঝেতে শীতল পাটি এবং বালিশ। বালিশ পরিষ্কার। আধঘণ্টার জন্যে বিশ্রামের ভাড়া দশ টাকা। ইছহাক দশ টাকা দিয়ে আমার বিশ্রামের ব্যবস্থা করল।ডবল জর্দার পান এবং সিগারেট হাতে আমি বিশ্রামে গেলাম। আধঘণ্টার জায়গায় এক ঘণ্টা কাটিয়ে ফিরলাম। ইছহাক রিকশার সীটে বসে চা খাচ্ছে। আমাকে দেখে বলল, আরাম হইছে স্যার।

হিমু এবং একটি রাশিয়ান পরী পর্ব:১০

আমি বললাম আরাম হয়েছে। মাঝে মাঝে এখানে বিশ্রামে আসব। ইছহাক এখন মূল কথা শোন। আমার কাছে টাকা পয়সা কিছুই নাই। চুক্তিমত তুমি আমাকে আমার মেসে নামিয়ে চলে যাবে।ইছহাকের কোনো ভাবান্তর হল না। হাসিমুখে বলল স্যার কোনো অসুবিধা নাই। একটা ঘটনা শুনেন স্যার পাঁচ ছয় বছর আগের কথা। আপনের মত চুক্তিতে এক স্যার আমার রিকশায় উঠল।

সন্ধ্যাবেলা রিকশা থাইকা নাইমা বলল, এই নাও আমার কাছে এগারো হাজার টাকা আছে। নিয়ে যাও। মালিকের রিকশা আর চালাবা না। নতুন রিকশা কিনবা।আমি নয়া রিকশা খরিদ করেছি। শাদী করেছি। ঘটনাটা কি এখন আপনার ইয়াদ হইছে? আপনারে চিনতে আমার দেরী হয়েছে। আমার দোষ নাই। আপনার চেহারা নষ্ট। দেইখা মনে হয় ছায়ার কচু গাছ। গায়ে চাদর থাকনে হলুদ পাঞ্জাবি চোখে পড়ে নাই। স্যার ভাল আছেন?

ভাল আছি।শহরে ঘুরতে ইচ্ছা করলেই মোবাইলে মিস কল দিবেন। চইলা আসব। নিয়া মোবাইল খরিদ করেছি।ইছহাক আমার মোবাইল নাই।আচ্ছা যান। ডিউটিতে বাহির হইয়া প্রথম আপনের খোঁজ নিব।কোন প্রয়োজন নাই ইছহাক। মাঝে মাঝে দেখা হওয়াই ভাল।ইছহাক বলল, আপনের শরীর বেশি খারাপ করেছে। শরীরের যত্ন নিবেন। গরীরের এই অনুরোধ।

রাশিয়ান পরী আমাকে দীর্ঘ এক চিঠি লিখেছেন। চিঠি ডাকে বা কুরিয়ার সার্ভিসে আসে নি। আমার অনুপস্থিতিতে সে নিজেই এসে দিয়ে গেছে। চিঠি ইংরেজিতে লেখা। মাঝে মাঝে কিছু বাংলা শব্দ ঢুকেছে। তার বাংলায় যে কোন উন্নতি হয়েছে তা বলা যাবে না। প্রিয় হিমু লিখতে গিয়ে লিখেছে ‘পিত্ত হিমু।’ আমি মোটামুটি ঠিক করে দিলাম।

এলিতার চিঠি

প্রিয় হিমু, তোমার দীর্ঘরোগভোগের পেছনে আমার ভূমিকা আছে। আগে ব্যাখ্যা করি। ধোঁয়া বাবাকে দিয়ে শুরু করা যাক। আমি যখন ক্যামেরা ফেরত পেলাম। তখনই বুঝলাম লোকটি ভয়ংকর এক ক্রিমিনাল। ঢাকা ক্রাইম ওয়ার্ল্ডের গড ফাদার। তা-না হলে হারানো ক্যামেরা এত দ্রুত আমার হাতে আসবে না। কিন্তু আমি ভান করলাম ধোঁয়া বাবার অলৌকিক ক্ষমতায় আমি মুগ্ধ। আমি তার শিষ্য হবার ইচ্ছাও প্রকাশ করলাম।

হিমু এবং একটি রাশিয়ান পরী পর্ব:১০

ধোঁয়া বাবার পরিচয় আমার কাছে প্ৰকাশ হয়ে গেছে। এই তথ্য নিশ্চয়ই আমি জানাব না। আমার অভিনয় ভাল হয়েছিল। মনে হয় তুমি ধরতে পার নি।তোমার সঙ্গে এমন একজন ক্রিমিনালের সখ্যতার বিষয়টা কিছুই বুঝলাম না। একজন সাধুর সঙ্গে পরিচয় হবে একজন সাধুর। ক্রিমিন্যাল চিনবে ক্রিমিন্যালকে।তোমার কাছ থেকে পুরো ব্যাপারটি আমি জানতে চাচ্ছিলাম বলেই তোমাকে রাতে হোটেলে থেকে যেতে বলি। আমার যৌন সঙ্গী হবার জন্যে না।

আমার প্রস্তাব শুনে তুমি অবাক হলে, আহত হলে এবং লজ্জিত হলে। আমার ধারণা তুমি ঘৃণাবোধও করেছ। তোমার সেই দৃষ্টি এখনো আমার চোখে ভাসে।ঝড় বৃষ্টির রাতে তুমি বের হয়ে গেলে এবং নিজেকে কষ্ট দেবার জন্যে সারারাত বৃষ্টিতে ভিজলে। কি করে জানলাম? নিজেকে কষ্ট দেবার এই ধরনের প্রক্রিয়ার ভেতর দিয়ে আমি কয়েকবার গিয়েছি। একবারের কথা বলি, মা’র উপর রাগ করে তুষারপাতের মধ্যেই ঘর ছেড়ে বের হয়েছি। অর্ধমৃত অবস্থায় পুলিশ আমাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যায়।

হিমু শোন! আমি একজন ব্রোকেন পরিবারের মেয়ে। আমার বাবা স্কুলের ফুটবল কোচ ছিলেন। এলকোহলিক হবার কারণে তার চাকরি চলে যায়। চরম অর্থনৈতিক সংকটে আমি এবং মা দিশাহারা হয়ে যাই। মা সমস্যার সুন্দর সমাধান করেন। তিনি বাবার এক বন্ধুর সঙ্গে গৃহত্যাগ করেন। আমাকে পাঠিয়ে দেয়া হয় ফোস্টার পিতামাতার কাছে।

আমার রূপ আমার কাল হয়ে দাঁড়ায়। তের বছর বয়সে আমার ফোস্টার পিতা এক দুপুরে আমার শোবার ঘরে ঢুকেন। দরজা বন্ধ করে আমার মুখ চেপে ধরেন যাতে আমি শব্দ করতে না পারি। আমার ফোস্টার মা বাড়িতে ছিলেন না। তিনি তাঁর বৃদ্ধ পিতামাতাকে দেখতে গিয়েছিলেন।

এই ঘটনা আমি গোপন করে যাই। আমি আমার ফোস্টার মা’কে কষ্ট দিতে চাই নি। আমি সরকারের কাছ কোনো কারণ না দেখিয়েই ফোস্টার পরিবার বদলাবার আবেদন করি।এক পরিবার থেকে আরেক পরিবারে সেখান থেকে অন্য জায়গায় এমন চলতেই থাকে। সব জায়গায় যে একই ঘটনা ঘটেছে তা না। আমার ভিতর তখন অস্থিরতা কাজ করছিল।

হিমু এবং একটি রাশিয়ান পরী পর্ব:১০

আমি আমার নারী সত্তার উপর এতই বিরক্ত হই যে পুরুষের পোশাক পরতে শুরু করি। নিজেকে পরিচয় দিতাম পুরুষ হিসেবে। আমার পুরুষ নাম ছিল ‘পিটার’। এই নাম আমি নিয়েছি পিটার দ্য গ্রেটের কাছ থেকে।রাশিয়ান জার পিটার দ্য গ্রেটকে নিশ্চয়ই চেন। তোমার ব্যাপক পড়াশোনা, না চেনার কথা না। এই মহান জার রাজকীয় নৌকায় করে প্রমোদ ভ্ৰমণে বের হয়েছিলেন। হঠাৎ দেখলেন দূরে একটা সাধারণ জেলে নৌকা ডুবে যাচ্ছে। নৌকার আরোহী একটা বাচ্চা ছেলে সাঁতার না জানার কারণে ডুবে যাচ্ছে।

পিটার তাকে রক্ষা করার জন্যে পানিতে ঝাঁপিয়ে পড়লেন। শিশুটি উদ্ধার পেল। কিন্তু পিটার দ্য গ্রেট মারা গেলেন।পুরুষ হতে গেলে এমন পুরুষই হতে হয়। তোমার মত পুতু পুতু পুরুষ না। বৃষ্টির পানি মাথায় লাগানো পনেরো দিনের জন্যে জ্বরে পড়ে কুকু করতে লাগলে।তোমাকে দীর্ঘ চিঠি লিখলাম। কারণ পরশু ভোরবেলা আমি চলে যাচ্ছি। তোমার সঙ্গে দেখা করতে ইচ্ছা করছে না।

এই চিঠি লিখতে লিখতে একবার মনে হচ্ছে কি দরকার ফিরে গিয়ে। অদ্ভুত সুন্দর এই দরিদ্র দেশটায় থেকে যাই না কেন। যে হিমু আমার সঙ্গে Hide and seek খেলছে তাকে গোপন কামরা থেকে খুঁজে বের করে আনি।আমি যখন হাইস্কুলে পড়ি তখন একটি প্রেমপত্ৰ পাই। শুনলে অবাক হবে আমি পুরুষদের ভাষ্যমতে ভয়ংকর রূপবতী হলেও একটি প্রেমপত্র ছাড়া দ্বিতীয় প্রেমপত্ৰ পাই নি। প্রেমপত্রটি কে পাঠিয়েছে তাও কিন্তু অজানা। বেচারা সম্ভবত নিজেকে প্ৰকাশিত করতে লজ্জাবোধ করছে। সে যাই হোক প্রেমপত্রে একটা কবিতা লেখা ছিল।

I am your man

That is what I am

And I am hare to do

Whater I can.

সুন্দরভাবে কবিতা না? ‘এই মেয়ে শোন। আমি তোমার পুরুষ। তোমার জন্যে সম্ভব যা কিছু সবই আমি করব।’

আমি সুন্দর রেডিও বন্ড কাগজে এই চিঠির একটি জবাব লিখে রেখেছি।

I am your girt

that is what I am

And I am here to do

Whlater I cairn.

হিমু এবং একটি রাশিয়ান পরী পর্ব:১০

এখন ভাবছি এই জবাবটা তোমাকে পাঠিয়ে দিলে কেমন হয়। ভয় নেই, ঠাট্টা করছি।এখন কি তুমি আমাকে কিছুটা বুঝতে পারছ? সাধারণত দেখা যায় একজন মানুষ অন্য একজনকে বুঝতে পারে না। মূল কারণ ‘হাইড এন্ড সিক’ গেম। মানুষ নিজেকে লুকিয়ে রাখতে পছন্দ করে। সে চায় অন্যরা তাকে খুঁজে বের করুক।

তোমাকে আমি একেবারেই বুঝতে পারছি না। একদিকে ধোঁয়া বাবার মত ভয়ংকর অপরাধীর সঙ্গে তোমার বন্ধুত্ব অন্যদিকে মানুষের প্রতি তোমার মমতা। তানিজা মেয়েটির কথা ভাব। তুমি চমৎকারভাবে তাদের বাবা মা’র সমস্যার সমাধান করে দিলে। Fairy tale এর মত তারা এখন সুখে আছে। এর মধ্যে তারা একদিন আমাকে লাঞ্চ খাইয়েছে। সারাদিন তাদের সঙ্গে থেকেছি। রাতেও থাকতে হয়েছে। কারণ তানিজা মেয়েটি কিছুতেই আমাকে হোটেলে ফিরতে দেবে না।

এই মেয়েটির মত আমারো বাবা মা’কে নিয়ে একটি সুখের সংসার হতে পারত। হয়নি। কারণ সেখানে হিমু বলে কেউ ছিল না।তোমার আশেপাশে যারা থাকে তারা তোমাকে কি চোখে দেখে তা নিশ্চয়ই তুমি জান। একটা বলার লোভ সামলাতে পারছি না। একদিন কাদেরের সঙ্গে গল্প করছি কি প্রসঙ্গে যেন তোমার কথা উঠল। আমি বললাম, তোমার হিমু ভাইজান একজন ধান্ধবাজ বদ লোক। কাদের বলল, হিমু ভাইজানেরে নিয়া কেউ যদি মন্দ কথা বলে আমি তার কল্লা ফালায়ে দিব।

আমি বললাম, সত্যি কল্লা ফেলবে।কাদের বলল, অবশ্যই। মাটির কসম, পানির কসম আর আগুনের কসম। আমি ফলের ঝুরিতে রাখা ছুরি বের করে বললাম, এই নাও ছুড়ি। এখন আমার কল্লা ফেল। সে ছুড়ি হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে রইল, তার চোখে আগুন ঝাক ঝক করছে। ঠিকমত দেখাশোনা না করলে এই ছেলেটি কিন্তু ভয়ংকর সন্ত্রাসী হয়ে বের হবে। সম্ভব হলে আমি তাকে নিয়ে আমেরিকা চলে যেতাম।এই ছেলেটির জন্যে কিছু কি করা যায়? কাদের আমাকে কি ডাকে জান? ‘মাইজি’। আমি বললাম ‘মাইজি’ শব্দের মানে কি?

সে জবাব দেয় না। হোটেলের বাঙালি কর্মচারীদের কাছে শুনলাম, মাইজি মানে মা। একটি অজানা অচেনা ছেলে দিনের পর দিন আমাকে মা ডেকে যাচ্ছে আর আমি বুঝতেই পারি নি। আশ্চর্য না?

হিমু এবং একটি রাশিয়ান পরী পর্ব:১০

কাদেরের জন্যে আমি দশ হাজার ডলার রেখে যাচ্ছি। তুমি ব্যবস্থা করো।

তুমি ভাল থেকো।

এলিতা।

আলেমের বড় ধরনের কোনো সমস্যা হয়েছে। তার মানদের নামাজ আগেই শেষ হয়েছিল এখন আবার নতুন কোনো মানতের নামাজ শুরু হয়েছে। দরজা জানালা পুরোপুরি বন্ধ। গভীর রাতে আলমের ঘর থেকে ধূপের গন্ধ পাওয়া যায়। গন্ধের সঙ্গে হুঁ হুঁ শব্দও ভেসে আসে। হুঁ হুঁ শব্দের কারণ পরিস্কার না, জিগির হতে পারে।আলমের ছোট ভাই বদরুল ভাইয়ের খোঁজ এসে ‘টাসকি’ খেয়েছে। সে কাঁদো কাঁদো গলায় বলল, ভাইজান আপনার কি হয়েছে?

আলম উদাস গলায় বলল, কিছু হয় নাই। ধর্ম কর্ম নিয়া আছি। মাঝে মাঝে চিন্তার জগতে যেতে হয়। চিন্তার জগৎ বড়ই বিচিত্র।এমনতো। আপনি ছিলেন না।আলম উপদেশ দেয়ার ভঙ্গিতে বলল, সব মানুষের জীবনে একবার একটা ঘটনা ঘটে। তখন শুরু হয় সমস্যা। লাইন বদল হয়।বদরুল বলল, লাইন বদল হয় মানে কি?

 

Read more

হিমু এবং একটি রাশিয়ান পরী শেষ:পর্ব হুমায়ূন আহমেদ

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *