মজিদকে ছাত্র হিসেবে পেলে বাবার লাভ হতো ।
মজিদ !
কী?
আমার হাতে একটা চাকরি আছে । করবি ?
কী চাকরি?
কী চাকরি জানি না । আমার বড়ফুপা বলেছিলেন জোগাড় করে দিতে পারেন । তিনি আমাকে চেনেন কীভাবে ?
চেনেন না । চাকরিটা আমার জন্যে । তবে আমি তোকে পাইয়ে দেব ।
দরকার নেই ।
দরকার নেই কেন ?
টাকাপয়সার টানাটানি তো এখন আর আগের মতো নেই । দেশে এবার থেকে আর টাকা পাঠাতে হবে না ।
কেন ?
বাবা মারা গেছেন ।
সে কী !
আমি বিস্মিত চোখে তাকিয়ে রইলাম । মজিদ বলল, এত অবাক হচ্ছিস কেন ? বুড়ো হয়েছে, মারা গেছে । কিছুদিন পর আর বোনকেও টাকা পাঠাতে হবে না । সেও কি মারা যাচ্ছে ?
না । তার ছেলে পাস করে গেছে । বিএ পাস করেছে । চাকরি বাকরি কিছু পেয়ে যাবে ।
তুই চাস না তোর একটা গতি হোক ?
আরে দূর দূর । ভালোই তো আছি । মজিদ হাই তুলল । আমি বললাম ভাত খেয়েছিস ?
না । চল খেয়ে আসি ।
রাস্তায় নেমেই মজিদ বলল, বিয়েবাড়ি-টাড়ি কিছু পাওয়া যায় কিনা খুঁজে দেখবি ?
বিরিয়ানি খেতে ইচ্ছা করছে । আমি বললাম, বিয়েবাড়ি খুঁজতে হবে না । চল পুরনো ঢাকায় নিয়ে গিয়ে তোকে বিরিয়ানি খাওয়াব । টাকা আছে ।
আবার অতদূর যাব ? আজ ছুটির দিন ছিল । একটু হাঁটলেই বিয়েবাড়ি পেয়ে যেতাম ।
তুই কি একটা বিয়ে করবি নাকি ?
আমি ? আরে দূর দূর । বিয়ে করা মানে শতেক যন্ত্রণা । শতেক দায়িত্ব । দায়িত্ব ভালো লাগে না ।
সিগারেট খাবি ?
মজিদ হ্যাঁ-না কিছুই বলল না । দিলে খাবে । না দিলে খাবে না । আমি রাস্তার মোড়ের দোকান থেকে সিগারেট কিনলাম । মজিদ নির্লিপ্ত ভঙ্গিতে টানছে । আমি বললাম, তুই দিন দিন কী হয়ে যাচ্ছিস বল তো ?
ময়ূরাক্ষী উপন্যাসের খন্ড- ১৯
কী হচ্ছি?
গাছ হয়ে যাচ্ছিস ।
সত্যি সত্যি গাছ হতে পারলে ভালোই হতো ।
আমরা রিকশার খোঁজে বড় রাস্তা পর্যন্ত চলে এলাম । রিকশা আছে তবে ওরা কেউ পুরনো ঢাকার দিকে যাবে না । দূরের ট্রিপে ওদের ক্ষতি । কাছের ট্রিপে পয়সা বেশি পরিশ্রমও কম । এত কিছু মাথায় ঢুকবে না এরকম বোকা একজন রিকশাআলার জন্যে আমাদের অপেক্ষা করতে হবে । মজিদ ।
বল ।
তুই দেখ রিকশা পাস কিনা । আমি চট করে একটা টেলিফোন করে আসি । আচ্ছা ।
আমি টেলিফোন করতে ঢুকলাম তরঙ্গিণী নামের ষ্টেশনারী দোকানে । আজকাল চমৎকার সব দোকান হয়েছে । এদের নাম যেমন সুন্দর, সাজসজ্জাও সুন্দর । আমাকে দেখেই দোকানের সেলসম্যান জামান এগিয়ে এল । এই ছেলের বয়স অল্প । সুন্দর চেহারা । একদিন দেখি দোকানে আর আসছে না । মাস দু-এক পরে আবার এসে উপস্থিত সমস্ত মুখভর্তি বসন্তের দাগ । ব্যাপারটা বিস্ময়কর, কারণ পৃথিবী থেকে বসন্ত উঠে গেছে । এই ছেলে সেই বসন্ত পেল কী করে ? সবসময় ভাবি জিজ্ঞেস করব । জিজ্ঞেস করা হয়ে ওঠে না । তবে তার মুখে দাগ হবার পর তার ব্যবহার খুব ভালো হয়েছে । আগে ব্যবহার খুব খারাপ ছিল ।
ময়ূরাক্ষী উপন্যাসের খন্ড- ১৯
জামান হাসিমুখে বলল, স্যার ভালো আছেন ?
হু ।
টেলিফোন করবেন ?
যদি টেলিফোনে ডায়াল টোন থাকে এবং টেলিফোনের চাবি থাকে তাহলে করব । দুটা টেলিফোন করব-এই যে চার টাকা ।
টাকা দিয়ে সবসময় লজ্জা দেন, স্যার ।
লজ্জার কিছু নেই । টেলিফোন শেষে আমি আপনাকে একটা কথা জিজ্ঞেস করব । প্রায়ই জিজ্ঞেস করব ভাবি কিন্ত্ত মনে থাকে না । আজ আপনি মনে করিয়ে দেবেন ।