হুমায়ূন আহমেদের লেখা মীরার গ্রামের বাড়ি খন্ড-১৬

“আচ্ছা আমি আর কোনাে কথাই বলব না। তুই গল্প কর আমি শুনি। বলে আছিস কেন? আয় শুয়ে শুয়ে গল্প করি।’ 

“তুমি শুয়ে থাকো। আমি বসে বসে গল্প করি । একটা শর্ত আছে মা।’

মীরার গ্রামের বাড়ি 

কী শর্ত?” গল্পটা শেষ করেই আমি ঘুমুতে যাব। “কি যে তাের পাগলের মতো কথা। গল্প শেষ করে ঘুমুতেই তো যাবি ।। ড্রাগ বলে হাকবি নাকি। 

“আমি জেগে বসে না-থাকলেও তুমি থাকবে। এবং আমার ধারণা আমাকে ঘুম থেকে ডেকে তােলার চেষ্টা করবে। দয়া করে এই কাজটা করবে না।” 

মনোয়ারা বিশিত হয়ে বললেন, কী এমন গল্পঃ গল্পের শুরুটা ইন্টারেস্টিং শেষটা তেমন ইন্টারেস্টিং না। মা শুরু করব? হ্যা শুরু করি। 

তুমি কিন্তু গল্পের মাঝখানে একটা কথাও বলবে না। হ্যা, হু বলারও দরকার নেই। আসলে আজ যে আমি তােমাকে আমার সঙ্গে ঘুমুতে বলেছি— এই গল্পটা করার জন্যেই বলেছি।’ 

মনােয়ারা উঠে বসলেন। তার বুক ধড়ফড় শুরু হয়েছে। সামান্যতেই আজকাল তার এই সমস্যা হয়। মেয়ে একটা গল্প বলবে, সেই গল্পের ভনিতা শুনেই তার বুক ধড়ফড় কবে কেন? 

মা শােনাে, গল্পটা খুব সাধারণ। আমি এক মিনিটে এ বলতে পারি আবার ইচ্ছা করলে এক ঘণ্টা লাগিয়েও বলতে পারি । 

মীরার গ্রামের বাড়ি খন্ড-১৬

এক মিনিটে বলতে হবে না। তুই সময় নিয়ে বল্।’ 

তােমাকে তো বলেছি মা গল্পের মাঝখানে ইন্টারেস্ট্র করতে পারবে না। একটি || না। সুঝতেই পারছু গল্পটা আম|কে নিয়ে। বুবা লাল লা?” 

‘ই বুঝতে পারছি। মীরা হেসে ফেলে বলল, এই তাে মা তুমি কথা বললে। শর্ত কী ছিল তুমি এ এল। পারবে না । LILITIENT । 

আশ্ব নব না। তাই এত শালি । ” “আচ্ছা যাও আর প্যাচাব না—গল্পটা আমাকে আর সাবেরকে নিয়ে। আমার এটালের যে কটা ছেলেকে আমি অপছন্দ করতাম তার মধ্যে সাবের একজন। তাকে অপছন্দ করার অনেক কারণ আছে। তার সবকিছুই সস্তা। কথাবার্তা সস্তা, রসিকতাগুলি সস্তা । সবকিছুতেই চালবাজি । গ্রাম থেকে যারা হঠাৎ করে ইউনিভার্সিটিতে আসে তাদের মধ্যে এই ব্যাপারটা খুব দেখা যায় ।

অতিরিক্ত অতিরিক্ত স্মার্টনেস দেখাতে চেষ্টা করে। ক্লাস চলার সময় লুকিয়ে সিগারেট টানার মধ্যে অনেক বাহাদুরি । আমার সঙ্গে তার প্রথম পরিচয় ধমকের মধ্যে। একদিন হ্যান্ডব্যাগ খুলে দেখি—ব্যাগের ভেতর দুটা গােলাপ ফুল। স্কচ টেপ দিয়ে গােলাপ আঁটার সঙ্গে একটা চিরকুট। সেখানে লেখা — বলুনত্রেী কে? 

মীরার গ্রামের বাড়ি খন্ড-১৬

আমি ক্লাস শেষ হওয়া মাত্র তাকে ধরলাম এবং কঠিন গলায় বললাম, আপনার কি ধারণা লুকিয়ে মেয়েদের ব্যাগে ফুল রেখে দেয়া বিরাট পৌরুষত্বের সে আমতা আমতা করে রসিকতার লাইন ধরতে চেষ্টা করল। আমি ধমক দিয়ে বললাম, আপনার সস্তা রসিকতগুলি অন্যদের জন্যে রেখে দিন। আমার -না না । 

দামী কোনাে রসিকতা যদি মাথায় আসে তাহলে কি করতে পারি? 

আমি বললাম, হ্যা পারেন। রসিকতা আমি পছন্দ করি। তবে আপনি যা করেন তার নাম ছ্যাবলামি | ছ্যাবলামির মধ্যে কোনাে মার্টনেস নেই । 

আমি ভেবেছিলাম তার সঙ্গে এটাই হবে আমার শেষ কথা। ‘তা হল না, কারণ সে আমাকে কেন্দ্র করে দ্বিতীয় রসিকতা শুরু করল। সবাইকে বলে বেড়াআনি তার সঙ্গে অত্যন্ত খারাপ ব্যবহার করেছি। আমি যদি আমার ব্যবহারের জন্যে ক্ষমা না চাই তাহলে সে চুল দাড়ি কিছুই কাটবে না। যেদিন আমি ক্ষমা চাইব সেদিনই সে চুল দাড়ি কাটবে। আমি ব্যাপারটাকে মােটেই পাত্তা দিলাম না।

সে সত্যি সত্যি চুল দাড়ি কাটা বন্ধ করে দিল এবং দেখতে লেখক তার 6ে হলি কি কি কাল হয়ে শীল। শাশারত সর সবাই খুব মজা পেতে লাগল । শুধু যে ছাত্ররা মজা গেল তা না, টিচাররাও মজা পেলেন। একদিন ক্লাসে মোতালেব স্যার বললেন, সাবের তােমার এই অবস্থা। কেন? সন্ন্যাস নিয়েছ? 

সাবের সঙ্গে সঙ্গে উঠে দাড়িয়ে বলল, জ্বি না স্যার। আমার দাড়ি গোঁফ হচ্ছে প্রতিবাদের ভাষা। ক্লাসের একজন আমার সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেছে। সে মা না চাওয়া পর্যন্ত দাড়িগোঁফ কাটব না। 

মীরার গ্রামের বাড়ি খন্ড-১৬

স্যার বললেন, প্রতিবাদের এই প্রক্রিয়া খারাপ না। অহিংস পদ্ধতি। আমার মই যার রণেই মা | তার মা চাওয়াটাই। 

স্যারের কথা শেষ হওয়া মাত্র সব ছাত্র-ছাত্রী একসঙ্গে আমার দিকে তাকাল । স্যাবের জানতে বাকি রইল না কার কারণে এই প্রতিবাদ। তারপর থেকে ক্লাসে এসেই তিনি সাবেরকে জিজ্ঞেস করেন— এখনাে ক্ষমা চায়নি? সবাই হো হাে করে হেসে উঠে। কিছুক্ষণ হাসাহাসির পর ক্লাস শুরু হয়। গল্পটা কেমন লাগছে না ইন্টারেস্টিং, না? 

#! হ্যা ইন্টারেস্টিং।”. 

তারপর একদিন আমি মহাবিরক্ত হয়ে ভাবলাম তাকে বলব দাড়িগোঁফ কামিয়ে ‘ভুল হতে। ক্লাসে তাকে কিছু বলা যাবে না। আমাকে সাবেরের সঙ্গে কথা বলতে দেখলেই চারদিকে হাসাহাসি হয়ে যাবে। আমি ঠিক করলাম একদিন তার বাসায় গিয়ে তার সঙ্গে কথা বলব। 

সাবের হলে থাকে না?” ‘মহসিন হলে তার সীট আছে কিন্তু সে হলে থাকে না। তার বড় মামার বাড়িতে থাকে—পাহারাদার। 

পাহারাদার মনে ‘ওর মামা উত্তরায় একটা বাড়ি করেছেন। বাড়ি করার পর পর ফ্যামিলি নিয়ে অস্ট্রেলিয়ায় চলে গিয়েছেন। সেই বাড়ির জন্যে দারোয়ান আছে। তারপরেও তিনি সাবেরকে দায়িত্ব দিয়ে গেছেন মাঝে মাঝে গিয়ে দেখলে আসতে। সাবের পুরােপুরি স্থায়ী হয়ে গেছে। 

তুই সেই বাড়িতে একা-একা গেলি?” 

হ্যা। বাবার গাড়ি নিয়ে গেলাম । সে আমাকে দেখেই বল—এপনিন এসেছেন এই যথেষ্ট। আপনাকে কিছু বলতে হবে না ।

 

Read More

হুমায়ূন আহমেদের লেখা মীরার গ্রামের বাড়ি খন্ড-১৭

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *