হুমায়ূন আহমেদের লেখা মীরার গ্রামের বাড়ি খন্ড-৮

আজহার সাহেব স্ত্রীর দিকে তাকিয়ে বললেন, মা নাস্তা বানাচ্ছেন, তুমি মাকে সাহায্য কর। আর আমার জন্যে এখানে চা পাঠিয়ে 

“কুয়াশা থাকবে না, রোদ উঠবে।’

মীরার গ্রামের বাড়ি 

মনোয়ারা চলে গেলেন। বাগানে একা-একা হাটতে আজহার সাহেবের খারাপই লাগছে। মটরশুটি খাবার আইডিয়াটা ভালাে ছিল। মেয়েরা রাজি হল না । মেয়েরা অনেক দূরে সরে গেছে। গ্রামের মধ্যে বন্ধু বান্ধব নেই, টেলিফোন নেই, টিভি দেই, মি\ | জকন সিম বা শপিং কই, কাজেই তি | বাণী করেছিলেন তারা কাছাকাছি আসবে। বাধ্য হয়েই বাবার সঙ্গে কিছু সময় কাটাবে। তিনি তাদের সঙ্গে নানান গল্প-গুজব করবেন। ওরা কী বনের গল্প পছন্দ করে তা তিনি জানেন না। মামলার কিছু ইন্টারেস্টিং গল্প আছে, সেইসব গল্প করা যেতে পারে।

স্টেট ভার্সেস শিউলি রানীর মামলাটা তাদের পছন্দ হবার কথা। এই মামলাটায় কিছু অস্বাভাবিক এবং নােংরা ব্যাপার আছে। এই ব্যাপারলি বাদ দিয়ে বলতে হবে। মামলার যেদিন রায় হয় তার আগের দিন শিউলি রানী হঠাৎ ঘােষণা দিল সে আসলে নারী না, পুরুষ এবং বিজ্ঞ আদালতকে বলল কেন ড্রাজারি পরীক্ষা করানাের দল। আলল শুতি | কারণ শিউলি রানী বিবাহিতা, তার দুটা ছেলে আছে। স্বামী জীবিত… এই গল্প এলের লহন না হয়েই পারে না। 

মীরার গ্রামের বাড়ি খন্ড-৮

চায়ের কাপ হাতে শেফা আসছে। এক হাতে চায়ের কাপ এন হাতের পিরিচে লুটা ভাপা পিঠা । মেয়েকে দেখে আজহার সাহেবের মন খারাপ ভাবটা দূর হয়ে গেল। তিনি অনিন্দিত গলায় বললেন, ভ মনিং মা । শেষকা বলল, গুড মনি। তােমার জন্যে চা আর পিঠা নিয়ে এসেছি। 

“খুব ভালাে করেছিল। আu ‘চা মনে হয় আনতে আনতে ঠাণ্ডা হয়ে গেছে। তােমাদের গ্রামে এত শীত কেন বাবা TE “তােমাদের গ্রাম বলছিস কেন? এটাতাে তােরও গ্রাম। তাের গ্রাম কি আলাদা? মীরার ঘুম ভাঙে নি ?” 

ভেঙেছে। চা খেয়ে আবার লেপের ভেতর ঢুকে গেছে। আপা বলেছে রােদ না উঠলে সে লেপ থেকে বের হবে না।”

“তাের রাতে ঘুম কেমন হয়েছেঃ

ঘুম ভালো হয়েছে। তবে ঘুমুতে গেছি অনেক রাতে।’ 

‘রােদ ওঠেনি। তুমি কুয়াশার মধ্যে একা বসে থাকবে? ঠাণ্ডা লাগবে তাে। ঘরে চলে এলাে। 

‘কাল শােয়া নিয়ে খুব সমস্যা হয়েছে। প্রথমে গেলাম আপার সঙ্গে ঘুমানাের জন্যে। আশা রাজি হল না । এরপর এক-একা ঘুমুতে গেলাম। প্রায় 

ঘুম চলে এসেছে তখন দরজায় ঠকঠক শব্দ। দরজা খুলে দেখি দাদীমা, উনি 

-কি আমার সঙ্গে ঘুমুবেন। দাদীমা অনেক রাত জেগে গল্প করলেন। – “তাহলে তাে ভালােই মজা হয়েছে। 

মুবই মজা হয়েছে বাবা।” IT শেফার আসলে কোনােই মজা হয় নি। দাদীমা রাতে একফোটা ঘুমায়নি, সারাক্ষণ কথা বলেছে। মাঝে মাঝে এমন সব কথা বলেছেন যে শেফা হতভম্ব। যেমন হঠাৎ শেফার বুকে হাত দিয়ে বলেছেন—“কিরে বেটি দুধ এত ছােট ক্যান? শেফা প্রায় লাফিয়ে উঠতে যাচ্ছিল, দাদীমা যেন কিছুই হয়নি এমন ভঙ্গিতে বললেন। 

হরিণ সুন্দর চোখে। নারী সুন্দর বুকে। এ শেফা বলল, দাদীমা গায়ে হাত দিও না। কাতুকুতু লাগে। তিনি কুটকুট করে হাসতে হাসতে বললেন, জামাটা খোলু বুক কেমন দেখি । 

মীরার গ্রামের বাড়ি খন্ড-৮

কী আশ্চর্য কথা। এইসব তাে আর কাউকে বলা যায় না। বলা ঠিকও হবে । দাদীমা কিছু উদ্ভট কাণ্ডকারখানা করলেও মানুষটা খুবই ভালো। শেফার তাকে মােটামুটি পছন্দ হয়েছে। | ‘দাদীমার সঙ্গে কী গল্প হল রে শেফা ?” 

অনেক গল্প হয়েছে। বেশির ভাগ গল্পই দাদাজানকে নিয়ে। দাদাজান নাকি ৩ার জন্যে একেবারে পাগল ছিল। তিনি চোখের আড়াল হলেই মেজাজ খারাপ হয়ে যেত। চিৎকার চেচামেচি শুরু করতেন । বাইরের লােকজন এসেছে দাদাজানের সঙ্গে কথা বলতে, তখনাে নাকি দাদীজানকে খুব কাছেই পর্দার আড়ালে দাঁড়িয়ে থাকতে হত । এমন জায়গায় দাঁড়াতে হত যেন পর্দার নিচে দিয়ে দাদাজান তাঁর পা দেখতে পান কিন্তু বাইরের লােকজন কিছু দেখতে পায় 

না। বাবা এইসব কি সত্যি ? 

ই সত্যি। বাবা স্ত্রৈণ প্রকৃতির ছিলেন। আমার মা অত্যন্ত ভাগ্যবতী। 

এইরকম ভাগ্যবতী হলে আমি বিষ খেয়ে মরে যাব। একটা পুরুষ সারাক্ষণ চারপাশে ঘুরপাক খাচ্ছে ভাবতে তাে কুৎসিত লাগছে। ছিঃ। 

আজহার সাহেব হেসে ফেললেন। শেফার কথাবার্তা তার ভালাে লাগছে। মেয়েটা তো বেশ মজা করে কথা বলে। 

‘দাদাজান নাকি মৃত্যুর আগে-আগে ঘােষণা করেছিলেন এই পুকুরের মাছ তার বংশধররা কেন্দ্র খেতে পারবে না। তাদের জন্যে পুরের মাছ নিষিদ্ধ।’ – “তা বলেছিলেন। 

কেন বলেছিলেন ? “তাতে মা জানি না। বাবা মারা যাবার সময় আমি গ্রামে ছিলাম না। আমি থাকলে জিজ্ঞেস করতাম।’ 

মীরার গ্রামের বাড়ি খন্ড-৮

তুমি এই পুকুরের মাছ খাও না? আমি কি এখানে থাকি যে মাছ অল?” “মাছ যদি মারা হয় তুমি যাবে ? 

কী দরকার একজন মানুষ মৃত্যুর আগে একটা কথা বলে গেছে। কথাটা মানতে অসুবিধা কী ? 

‘আমি ঠিক করেছি বড়শি দিয়ে পুকুর থেকে মাছ ধরব। তারপর নিজেই মাছ রান্না করব। সবাইকে খাওয়াব। তােমাকেও খাওয়াব। 

আজহার সাহেব হাসলেন। রােদ উঠেছে। আশ্চর্য ব্যাপার, রােদ ওঠার সঙ্গে সঙ্গে কুয়াশা কেটে গেছে। চারদিক ঝকঝক করছে। কুয়াশায় ভেজা গাছের পাতায় আলাের ঝলমলানি। 

আজহার সাহেব আনন্দিত গলায় বললেন, শেফা যা মীরাকে ডেকে নিয়ে আয়। রােদ উঠেছে। তােদের দুই বােনকে আমি অদ্ভুত একটা কাহিনী বলব— স্টেট ভার্সাস শেফালি রানীর বিখ্যাত মামলা। ইংরেজের আমলের মামলা। কোলকাতা হাইকোর্ট থেকে শেষ পর্যন্ত প্রিভি কাউন্সিল পর্যন্ত গিয়েছিল। যেমন সেনসেশনাল মামলা, তেমনি সেনসেশনাল রায়। যা মীরাকে ডাক। 

ডেকে লাভ হবে না বাবা। আপা আসবে না।” TKET ITAL. আসবে না কেন ?”  আসবে না কারণ তার আসলে খুব মন খারাপ। 

কেন ?

 

Read more

হুমায়ূন আহমেদের লেখা মীরার গ্রামের বাড়ি খন্ড-৯

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *