চশমা হারালে তার এ রকম হয়। মাঝে মাঝে নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসে। নিজেকে এত অসহায় লাগে ! মনে হয় অচেনা অজানা দেশের হাজার হাজার মানুষের মাঝখানে সে হারিয়ে গেছে। চোখে দেখতে পাচ্ছে না, কথা বলতে পারছে না। শুধু বুঝতে পারে অসংখ্য মানুষ তাকে পাশ কাটিয়ে যাচ্ছে। সে যেমন ওদের দেখতে পাচ্ছে না, ওরাও তাকে দেখতে পাচ্ছে না। সে ওদের কাছে অদৃশ্য মানব।
শুভ্র আতংকিত গলায় ডাকল, মা! মা!
রেহানা প্রায় সঙ্গে সঙ্গে ঘরে এলেন। শুভ্র ভাঙা গলায় বলল, আমার চশমা খুঁজে পাচ্ছি না, মা।
“তাের চিৎকার শুনেই বুঝেছি। শান্ত হয়ে বস তো এখানে। চশমা যাবে কোথায় ? ঘরেই আছে। চশমা’র তাে পাখা নেই যে উড়ে ঘর থেকে পালিয়ে যাবে।
‘বালিশের কাছে রেখেছিলাম। ‘বালিশের কাছে রাখলে, বালিশের কাছেই আছে।
রেহানা বিছানায় কোন চশমা দেখলেন না। খাটের নিচে পড়েছে বােধহয়। তিনি দ্রুত খাটের নিচটা দেখে নিলেন। শুভ্র বলল, মা, পাওয়া গেছে?
‘পাওয়া যাবে। তুই চুপ করে বসে থাকতাে। ঘামতে শুরু করেছিস। ‘সন্ধ্যা মেলাবার সঙ্গে সঙ্গে বরযাত্রী রওনা হবে। | ‘চশমা এক্ষুণি পাওয়া যাবে। তুই যথাসময়ে যেতে পারবি। তাছাড়া বরযাত্রী কখনাে সময়মত রওনা হতে পারে না। এক ঘণ্টা–দুঘণ্টা দেরি হবেই।
‘মা, তুমি কথা বলে সময় নষ্ট করছ। আমার খুব অস্থির লাগছে।
মেঘের ছায়া খন্ড-১২
শুভ্র’র আসলেই খুব অস্থির লাগছে। অন্যসময় এতটা অস্থির লাগত না। কারণ তখন শুভ্র জানত জরুরি অবস্থার জন্যে দুটা চশমা কাবার্ডে লুকানাে আছে। আজ সেই চশমা দু‘টি নেই। শুভ্র’র চোখ আরাে খারাপ হওয়ায় – ঐ চশমা দু‘টিতে নতুন গ্লাস লাগানাের জন্যে দোকানে পাঠানাে হয়েছে। ভেরিলাক লেন্স লাগানাে হবে। এক সপ্তাহ সময় লাগবে।
“মা, পাওয়া গেছে?”
‘এখনাে পাওয়া যায়নি। তবে পাওয়া যাবে। চশমা খুলে রেখে তুই কোথায় কোথায় গিয়েছিস বল তাে?”
‘কোথাও যাই নি। বাথরুমে গিয়ে চোখে পানি দিয়েছি।
‘তাহলে চশমা বাথরুমেই আছে। তুই হাতে করে নিয়ে বেসিনের উপর রেখে চোখে পানি দিয়েছিস। তারপর চশমার কথা ভুলে গেছিস।
রেহানা বাথরুমে ঢুকলেন। চশমা সেখানে নেই। তিনি বারান্দায় গেলেন। বারান্দায় ছােট একটা টেবিল আছে। শুভ্র মাঝে মাঝে ঐ টেবিলে চশমা রেখে ভুলে যায় – আজও নিশ্চয়ই তাই হয়েছে।
বারান্দার টেবিলে কিছু নেই। তিনি আবার শােবার ঘরে ঢুকলেন। চিন্তিত এবং ব্যথিত মুখে শুভ্র বসে আছে। তার ফর্সা কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম। শুভ্র বলল, কি হবে
ম!
মেঘের ছায়া খন্ড-১২
“কিচ্ছু হবে না। পাওয়া যাবে। তুই আমার সঙ্গে বারান্দায় এসে বস তাে দেখি। আর আমরা দুজন চা খাই। আমি কাজের লােকদের বলছি। ওরা খুঁজে দেবে।
‘আমার চা খেতে ইচ্ছা করছে না, মা। ‘তুই এত অল্পতে অস্থির হােস কেন বল তাে?” ‘চশমা ছাড়া আমি অন্ধ। অন্ধ হওয়াটা কি খুব অল্প ? ‘ইস্ ঘেমে–টেমে একেবারে কি হয়েছিস! আয় আমার সঙ্গে।
তিনি শুভ্রকে হাত ধরে বারান্দায় এনে বসালেন। দোতলা থেকে একতলায় নেমে বাবুচিকে বললেন খুব ভাল করে দুকাপ চা বানাতে। কাজের মেয়ে শাহেদা এবং কাজের ছেলে তােতামিয়াকে দোতলায় এসে শুভ্র‘কে চশমা খুঁজে দিতে বললেন। এ
রকম কখনাে করা হয় না। এ বাড়ির কাজের লােকদের কখনাে দোতলায় আসতে দেয়া হয় না। ওদের কর্মকাণ্ড একতলাতেই সীমাবদ্ধ। দোতলার যা কাজ রেহানাই করেন। তাঁর শুচিবায়ুর মত আছে।
Read More