হুমায়ূন আহমেদের লেখা মেঘের ছায়া খন্ড-১২

চশমা হারালে তার রকম হয়মাঝে মাঝে নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসেনিজেকে এত অসহায় লাগে ! মনে হয় অচেনা অজানা দেশের হাজার হাজার মানুষের মাঝখানে সে হারিয়ে গেছেচোখে দেখতে পাচ্ছে না, কথা বলতে পারছে নাশুধু বুঝতে পারে অসংখ্য মানুষ তাকে পাশ কাটিয়ে যাচ্ছেসে যেমন ওদের দেখতে পাচ্ছে না, ওরাও তাকে দেখতে পাচ্ছে নাসে ওদের কাছে অদৃশ্য মানব। 

মেঘের ছায়া

শুভ্র আতংকিত গলায় ডাকল, মা! মা

রেহানা প্রায় সঙ্গে সঙ্গে ঘরে এলেনশুভ্র ভাঙা গলায় বলল, আমার চশমা খুঁজে পাচ্ছি না, মা 

তাের চিৎকার শুনেই বুঝেছিশান্ত হয়ে বস তো এখানেচশমা যাবে কোথায় ? ঘরেই আছেচশমাতাে পাখা নেই যে উড়ে ঘর থেকে পালিয়ে যাবে। 

বালিশের কাছে রেখেছিলামবালিশের কাছে রাখলে, বালিশের কাছেই আছে। 

রেহানা বিছানায় কোন চশমা দেখলেন নাখাটের নিচে পড়েছে বােধহয়তিনি দ্রুত খাটের নিচটা দেখে নিলেনশুভ্র বলল, মা, পাওয়া গেছে

পাওয়া যাবেতুই চুপ করে বসে থাকতােঘামতে শুরু করেছিসসন্ধ্যা মেলাবার সঙ্গে সঙ্গে বরযাত্রী রওনা হবে| চশমা এক্ষুণি পাওয়া যাবেতুই যথাসময়ে যেতে পারবিতাছাড়া বরযাত্রী কখনাে সময়মত রওনা হতে পারে নাএক ঘণ্টাদুঘণ্টা দেরি হবেই। 

মা, তুমি কথা বলে সময় নষ্ট করছআমার খুব অস্থির লাগছে। 

মেঘের ছায়া খন্ড-১২

শুভ্রর আসলেই খুব অস্থির লাগছেঅন্যসময় এতটা অস্থির লাগত নাকারণ তখন শুভ্র জানত জরুরি অবস্থার জন্যে দুটা চশমা কাবার্ডে লুকানাে আছেআজ সেই চশমা দুটি নেইশুভ্রচোখ আরাে খারাপ হওয়ায় চশমা দুটিতে নতুন গ্লাস লাগানাের জন্যে দোকানে পাঠানাে হয়েছেভেরিলাক লেন্স লাগানাে হবেএক সপ্তাহ সময় লাগবে। 

মা, পাওয়া গেছে?” 

এখনাে পাওয়া যায়নিতবে পাওয়া যাবেচশমা খুলে রেখে তুই কোথায় কোথায় গিয়েছিস বল তাে?” 

কোথাও যাই নিবাথরুমে গিয়ে চোখে পানি দিয়েছি। 

তাহলে চশমা বাথরুমেই আছেতুই হাতে করে নিয়ে বেসিনের উপর রেখে চোখে পানি দিয়েছিসতারপর চশমার কথা ভুলে গেছিস। 

রেহানা বাথরুমে ঢুকলেনচশমা সেখানে নেইতিনি বারান্দায় গেলেনবারান্দায় ছােট একটা টেবিল আছেশুভ্র মাঝে মাঝে টেবিলে চশমা রেখে ভুলে যায় আজও নিশ্চয়ই তাই হয়েছে। 

বারান্দার টেবিলে কিছু নেইতিনি আবার শােবার ঘরে ঢুকলেনচিন্তিত এবং ব্যথিত মুখে শুভ্র বসে আছেতার ফর্সা কপালে বিন্দু বিন্দু ঘামশুভ্র বলল, কি হবে 

মেঘের ছায়া খন্ড-১২

কিচ্ছু হবে নাপাওয়া যাবেতুই আমার সঙ্গে বারান্দায় এসে বস তাে দেখিআর আমরা দুজন চা খাইআমি কাজের লােকদের বলছিওরা খুঁজে দেবে। 

আমার চা খেতে ইচ্ছা করছে না, মাতুই এত অল্পতে অস্থির হােস কেন বল তাে?চশমা ছাড়া আমি অন্ধঅন্ধ হওয়াটা কি খুব অল্প ? ইস্ ঘেমেটেমে একেবারে কি হয়েছিস! আয় আমার সঙ্গে। 

তিনি শুভ্রকে হাত ধরে বারান্দায় এনে বসালেনদোতলা থেকে একতলায় নেমে বাবুচিকে বললেন খুব ভাল করে দুকাপ চা বানাতেকাজের মেয়ে শাহেদা এবং কাজের ছেলে তােতামিয়াকে দোতলায় এসে শুভ্রকে চশমা খুঁজে দিতে বললেনএ 

রকম কখনাে করা হয় নাবাড়ির কাজের লােকদের কখনাে দোতলায় আসতে দেয়া হয় নাওদের কর্মকাণ্ড একতলাতেই সীমাবদ্ধদোতলার যা কাজ রেহানাই করেনতাঁর শুচিবায়ুর মত আছে

 

Read More

হুমায়ূন আহমেদের লেখা মেঘের ছায়া খন্ড-১৩

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *