হুমায়ূন আহমেদের লেখা মেঘের ছায়া খন্ড-১৫

শুভ্র মাহাত ধরে থমকে দাঁড়ালনিচু গলায় বলল, মা, তুমি আমার চশমাটা লুকিয়ে রেখেছিলে, যাতে আমি আমার বন্ধুর বিয়েতে যেতে না পারিতুমি চাও নাআমি আমার দরিদ্র বন্ধুদের সঙ্গে মিশিওরা কিন্তু মা, আমাকে খুব পছন্দ করেআমিও ওদের পছন্দ করিতােমাকে যতটা করি ততটা করি না, কিন্তু করি ....

মেঘের ছায়া

রেহানা চট করে কিছু বলতে পারলেন নাচশমার ব্যাপারটা শুভ্র এত সহজে ধরে ফেলবে তা তিনি অনুমান করেন নিশুভ্র বলল, তুমি কি আমার কথায় রাগ করলে মা

রেহানা জবাব দিতে পারলেন নাগাড়ির হর্ন শােনা যাচ্ছেরিয়া চলে এসেছেসে গাড়ি থেকে নামছে না ক্রমাগত হর্ন বাজিয়ে যাচ্ছেশুভ্র বলল, ছোট খালা চলে এসেছে চল মা, নিচে যাই। 

গাড়ির পেছনের সীটে রিয়া গা এলিয়ে বসে আছেএই অন্ধকারেও সিনেমার নায়িকায় মত কাল চশমায় তার মুখ ঢাকাচুল বাঁধা নেইবাতাসে এলােমেলাে হয়ে 

আছেরিয়া জানালা দিয়ে মুখ বের করে বলল, শুভ্র, উঠে আয়। 

শুভ্র বলল, আমি আজ কোথাও যাব না, ছােট খালা| রিয়া ক্লান্ত গলায় বলল, মজুমদার সাহেব গাড়ি স্টার্ট দিনমজুমদার সাহেব যাকে বলা হল, শুভ্র তাকে আগে কখনাে দেখেনিভদ্রলােকের মাথাভর্তি কঁাচা পাকা চুলভারিক্কি চেহারাচোখে গােল্ডেন ফ্রেমের গােল চশমাভদ্রলােক বললেন, উঠে আসুন নাআপনার খারাপ লাগবে না। 

রিয়া বলল, মজুমদার সাহেব, ওর সঙ্গে কথা বলে সময় নষ্ট করার কোন মানে হয় না। ও যখন বলেছে যাবে না, তখন যাবে নাওকে আমি হাড়ে হাড়ে চিনি। 

রাগ করেছ খালা?” 

মেঘের ছায়া খন্ড-১৫

অফকোর্স রাগ করেছিআমি তাে তাের মত সুপারম্যান না যে আমার মধ্যে রাগ, ঘৃণা থাকবে নাতুই চশমা পেয়েছিস?” 

পাঞ্জাবীতে তােকে দারুণ লাগছে রে শুভ্র ! তােদের বাড়িতে কেন আসি নাজানিস? যতবার আসি ততবারই মনে হয় তুই আগের চেয়ে সুন্দর হয়েছিসঅন্যের সৌন্দর্য আমি সহ্য করতে পারি নামজুমদার সাহেব, শুভ্রকে সিনেমার নায়কের মত লাগছে না?” 

বাংলা ছবির নায়কের কথা বলছেন?না না, শুভ্রকে লাগছে পিটার টুলের মতফিগারেও মিল আছেশুভ্র, উঠে আয় নাঅনেকদিন তাের সঙ্গে গল্প করি না। 

আজ ইচ্ছা করছে না, ছােট খালা। 

তাের জন্যে আমি মেয়ে দেখে বেড়াচ্ছি, তুই জানিস ? দুজন প্রাইমারী সিলেকশন পেয়েছেতাের মা একজনকে দেখেছিল, আমি বাতিল করে দিয়েছি” 

ভাল করেছতুই আয় শুভ্র তাের সঙ্গে কথা আছেনা, আজ না। 

মজুমদার সাহেব গাড়ি স্টার্ট দিলেনশুভ্র গাড়ি বারান্দায় দাঁড়িয়ে রইলহঠাৎ করে তার মনে হচ্ছে কিছু করার নেইইদানীং এই অনুভূতি তার ঘন ঘন হচ্ছেছােট খালার সঙ্গে চলে গেলেও হতনা যাওয়ার পেছনে তার প্রধান যুক্তি হল ছােট খালা রাতে তাকে ফিরতে দিত নাতার থেকে যেতে হত

মেঘের ছায়া খন্ড-১৫

অন্যের বাড়িতে থাকতে তার ভাল লাগে নাতার নিজের ধারণা সে অন্ধকোন অন্ধ তার পরিচিত জায়গা ছাড়া স্বস্তি পায় নাসেও পায় না| দারােয়ান গেট বন্ধ করে এগিয়ে আসছেএই দারােয়ানের নতুন এ্যাপয়েন্টমেন্ট হয়েছেদারােয়ান বলল, ভাইজান, বাগানে বসবেন? চেয়ার এনে দেব

গােমেজ কৌতূহলী চোখে তাকে দেখছেকি দেখছে এত আগ্রহ নিয়ে? শুভ্র বলল, কিছু বলবে গােমেজ

জি নাস্যার, আপনার চশমা পাওয়া গেছে ? হ্যা, পাওয়া গেছে। 

শুভ্র মনে মনে হাসলতার চশমা হারানাে মনে হচ্ছে বিরাট ঘটনা হয়ে গেছেকে জানে বাবা অফিস থেকে ফিরেও হয়ত জিজ্ঞেস করবেন, শুভ্র, চশমা পাওয়া গেছে

বাবা আজ ফিরতে এত দেরি করছেন কেন? তাঁর অফিসে আবারাে কি কোন সমস্যা হয়েছে ? শুভ্র তাঁর জন্যে অপেক্ষা করতে লাগলবাবার ফিরতে দেরি হলে সে মাঝে মাঝে গােটের কাছে অপেক্ষা করেঅপেক্ষা করতে তার ভাল লাগে। 

ইয়াজুদ্দিন সাহেব রাত দশটায় ফিরলেনবাড়িতে তখন এক ধরনের চাঞ্চল্যদেখা দিলতিনি অফিসের কাপড়ে দোতলায় উঠেন নাএকতলায় তিনি গরম পানিতে গােসল সারেননতুন এক সেট

 

Read More

হুমায়ূন আহমেদের লেখা মেঘের ছায়া খন্ড-১৬

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *