শুভ্র মা‘র হাত ধরে থমকে দাঁড়াল। নিচু গলায় বলল, মা, তুমি আমার চশমাটা লুকিয়ে রেখেছিলে, যাতে আমি আমার বন্ধুর বিয়েতে যেতে না পারি। তুমি চাও না। আমি আমার দরিদ্র বন্ধুদের সঙ্গে মিশি। ওরা কিন্তু মা, আমাকে খুব পছন্দ করে। আমিও ওদের পছন্দ করি। তােমাকে যতটা করি ততটা করি না, কিন্তু করি .....
রেহানা চট করে কিছু বলতে পারলেন না। চশমার ব্যাপারটা শুভ্র এত সহজে ধরে ফেলবে তা তিনি অনুমান করেন নি। শুভ্র বলল, তুমি কি আমার কথায় রাগ করলে মা?
রেহানা জবাব দিতে পারলেন না। গাড়ির হর্ন শােনা যাচ্ছে। রিয়া চলে এসেছে। সে গাড়ি থেকে নামছে না – ক্রমাগত হর্ন বাজিয়ে যাচ্ছে। শুভ্র বলল, ছোট খালা চলে এসেছে – চল মা, নিচে যাই।
গাড়ির পেছনের সীটে রিয়া গা এলিয়ে বসে আছে। এই অন্ধকারেও সিনেমার নায়িকায় মত কাল চশমায় তার মুখ ঢাকা। চুল বাঁধা নেই। বাতাসে এলােমেলাে হয়ে
আছে। রিয়া জানালা দিয়ে মুখ বের করে বলল, শুভ্র, উঠে আয়।
শুভ্র বলল, আমি আজ কোথাও যাব না, ছােট খালা। | রিয়া ক্লান্ত গলায় বলল, মজুমদার সাহেব গাড়ি স্টার্ট দিন। মজুমদার সাহেব যাকে বলা হল, শুভ্র তাকে আগে কখনাে দেখেনি। ভদ্রলােকের মাথাভর্তি কঁাচা পাকা চুল। ভারিক্কি চেহারা। চোখে গােল্ডেন ফ্রেমের গােল চশমা। ভদ্রলােক বললেন, উঠে আসুন না। আপনার খারাপ লাগবে না।
রিয়া বলল, মজুমদার সাহেব, ওর সঙ্গে কথা বলে সময় নষ্ট করার কোন মানে হয় না। ও যখন বলেছে যাবে না, তখন যাবে না। ওকে আমি হাড়ে হাড়ে চিনি।
‘রাগ করেছ খালা?”
মেঘের ছায়া খন্ড-১৫
‘অফকোর্স রাগ করেছি। আমি তাে তাের মত সুপারম্যান না যে আমার মধ্যে রাগ, ঘৃণা থাকবে না। তুই চশমা পেয়েছিস?”
‘পাঞ্জাবীতে তােকে দারুণ লাগছে রে শুভ্র ! তােদের বাড়িতে কেন আসি না। জানিস? যতবার আসি ততবারই মনে হয় তুই আগের চেয়ে সুন্দর হয়েছিস। অন্যের সৌন্দর্য আমি সহ্য করতে পারি না। মজুমদার সাহেব, শুভ্রকে সিনেমার নায়কের মত লাগছে না?”
বাংলা ছবির নায়কের কথা বলছেন?” ‘না না, শুভ্রকে লাগছে পিটার ও টুলের মত। ফিগারেও মিল আছে। শুভ্র, উঠে আয় না। অনেকদিন তাের সঙ্গে গল্প করি না।।
‘আজ ইচ্ছা করছে না, ছােট খালা।
‘তাের জন্যে আমি মেয়ে দেখে বেড়াচ্ছি, তুই জানিস ? দুজন প্রাইমারী সিলেকশন পেয়েছে। তাের মা একজনকে দেখেছিল, আমি বাতিল করে দিয়েছি।”
‘ভাল করেছ। ‘তুই আয় শুভ্র – তাের সঙ্গে কথা আছে। ‘না, আজ না।
মজুমদার সাহেব গাড়ি স্টার্ট দিলেন। শুভ্র গাড়ি বারান্দায় দাঁড়িয়ে রইল। হঠাৎ করে তার মনে হচ্ছে কিছু করার নেই। ইদানীং এই অনুভূতি তার ঘন ঘন হচ্ছে। ছােট খালার সঙ্গে চলে গেলেও হত। না যাওয়ার পেছনে তার প্রধান যুক্তি হল – ছােট খালা রাতে তাকে ফিরতে দিত না। তার থেকে যেতে হত।
মেঘের ছায়া খন্ড-১৫
অন্যের বাড়িতে থাকতে তার ভাল লাগে না। তার নিজের ধারণা সে অন্ধ। কোন অন্ধ তার পরিচিত জায়গা ছাড়া স্বস্তি পায় না। সেও পায় না। | দারােয়ান গেট বন্ধ করে এগিয়ে আসছে। এই দারােয়ানের নতুন এ্যাপয়েন্টমেন্ট হয়েছে। দারােয়ান বলল, ভাইজান, বাগানে বসবেন? চেয়ার এনে দেব?
গােমেজ কৌতূহলী চোখে তাকে দেখছে। কি দেখছে এত আগ্রহ নিয়ে? শুভ্র বলল, কিছু বলবে গােমেজ ?
‘জি না। স্যার, আপনার চশমা পাওয়া গেছে ? ‘হ্যা, পাওয়া গেছে।
শুভ্র মনে মনে হাসল। তার চশমা হারানাে মনে হচ্ছে বিরাট ঘটনা হয়ে গেছে। কে জানে বাবা অফিস থেকে ফিরেও হয়ত জিজ্ঞেস করবেন, শুভ্র, চশমা পাওয়া গেছে?
বাবা আজ ফিরতে এত দেরি করছেন কেন? তাঁর অফিসে আবারাে কি কোন সমস্যা হয়েছে ? শুভ্র তাঁর জন্যে অপেক্ষা করতে লাগল। বাবার ফিরতে দেরি হলে সে মাঝে মাঝে গােটের কাছে অপেক্ষা করে। অপেক্ষা করতে তার ভাল লাগে।
ইয়াজুদ্দিন সাহেব রাত দশটায় ফিরলেন। বাড়িতে তখন এক ধরনের চাঞ্চল্য। দেখা দিল। তিনি অফিসের কাপড়ে দোতলায় উঠেন না। একতলায় তিনি গরম পানিতে গােসল সারেন। নতুন এক সেট
Read More