আচ্ছা।
জাহেদ জড়সড় হয়ে বসে আছে। কেয়া হাত বাড়িয়ে জাহেদের হাত ধরল। কোন কথা বলল না। জাহেদ বলল, কেয়া, আমি খুব লজ্জিত।
কেয়া বলল, তােমার মামা কি অসুস্থ?
জাহেদ বলল, না। মামা খুবই সুস্থ। আজ এরকম কেন করলেন কিছু বুঝতে পারছি না।
‘আমার মনে হয় তােমার মামা অসুস্থ। তাঁকে ভেতরে নিয়ে মাথায় পানি ঢালছিল।
‘তুমি সারাক্ষণ বাইরেই বসেছিলে?”
একবার ভেবেছিলাম ভেতরে যাব। তারপর মনে হল, আমাকে দেখে রেগে যান কিনা। তুমি এক কাজ কর – আমাকে রেখে বাসায় চলে এসাে। তােমার, মামার কি অবস্থা দেখ। হয়ত তাঁকে ডাক্তারের কাছে নিতে হবে।
জাহেদ দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলল। কেয়া বলল, ইচ্ছা করলেও আমি আপার বাসায় তােমাকে রাখতে পারব না। বাসায় ফিরে আপাকে কি বলব তাই বুঝতে পারছি না। কি বলা যায় বল তাে?
জাহেদ কিছু বলল না। অসংখ্য কথা সে জমা করে রেখেছিল আজ রাতে বলার জন্যে। কোন কথাই এখন মনে পড়ছে না। মনে পড়লেও বলা সম্ভব না। কেয়া বলল, তুমি মন খারাপ করাে না। আমাদের জীবনের শুরুটা খারাপ হয়েছে – শেষটা ভাল হবে। আমার মন বলছে ভাল হবে।
মেঘের ছায়া খন্ড-১৯
ফ্ল্যাটবাড়ির কলাপসিবল গেট লাগিয়ে ফেলেছে। অনেক ডাকাডাকির পর গেট খােলা হল। কেয়া বলল, তােমার উপরে আসার দরকার নেই। তুমি এই বেবীটেক্সি নিয়েই বাসায় চলে যাও। কেয়া অন্ধকার সিড়ি বেয়ে উপরে উঠে যাচ্ছে। বিয়ের শাড়িতে তাকে যে কি অপূর্ব লাগছে তা কি সে জানে?
বাসায় ফিরে জাহেদ দেখে সবকিছুই স্বাভাবিক। মামা ভেতরের বারান্দায় বসে চা খাচ্ছেন। মামার দুই মেয়ের ছােটটি ঘুমিয়ে পড়েছে। বড়টি বাবার পাশে বসে আছে। মিজান সাহেব বললেন, জাহেদ, চা খাবি?
জাহেদ বলল, না। “বৌমাকে কোথায় রেখে এসেছিস? তার বােনের বাড়ি?
‘ভাল হয়েছে। তুই হাত–মুখ ধুয়ে শুয়ে পড়। বিয়েবাড়ির ধকল গেল। টায়ার্ড হয়েছিস নিশ্চয়ই। টায়ার্ড হবারই কথা। বরং এক কাজ কর – চা খা। চা খেয়ে তারপর ঘুমুতে যা। চা খেলে শরীরের টায়ার্ড ভাবটা কমবে। আমি চা খাওয়া কখন ধরি জানিস? – বিয়ের রাতে। এর আগে কোনদিন চা খাইনি ... হা হা হা।
জাহেদ বলল, মামা, তােমার শরীর কি খারাপ? | ‘না, শরীর ঠিক আছে। মাঝে মাঝে নিঃশ্বাসের কিছু কষ্ট হয়। আজ হচ্ছে না। ভাল আছি। বেশ ভাল আছি। তুই তাহলে শুয়ে পড়। আমি ঘুমুতে যাই।
রাত দু‘টার দিকে জাহেদ ক্যাম্পখাটে ঘুমুতে এল। সে নিশ্চিত, আজ রাতে তার ঘুম আসবে না। কিন্তু বিছানায় শােয়ামাত্র ঘুমে চোখ জড়িয়ে গেল। সে ভাের নয়টা পর্যন্ত ঘুমুল। ঘুম ভেঙে দেখে মামা বারান্দায় বেশ আয়ােজন করে দাড়ি শেভ করতে বসেছেন। বাটিতে গরম পানি, সামনে আয়না। তিনি জাহেদের দিকে তাকিয়ে হাসিমুখে বললেন, তাের ঘুম ভাঙল ?
মেঘের ছায়া খন্ড-১৯
‘তুই পুরাে সাতঘণ্টা ঘুমিয়েছিস। ঘুমুতে গেছিস রাত দুটায়। এখন বাজে ন‘টা। কাঁটায় কাঁটায় সাতঘণ্টা। মানুষের ঘুম দরকার ছ‘ঘণ্টা। তুই একঘণ্টা এক্সট্রা ঘুমিয়েছিস।।
জাহেদ বলল, তুমি আজ অফিসে যাবে না, মামা? আটটার সময়ই তাে অফিসে চলে যাও।
মিজান সাহেব শরীর দুলিয়ে হাসলেন। যেন জাহেদ খুব হাসির কথা বলছে। ‘রাতে তোর ঘুম কেমন হয়েছে?” ‘ভাল।‘
‘আমার ঘুম ভাল হয়নি। বুঝলি – যখনি ঘুম আসে তখনি তাের মামী বলে, আস তােমার মাথায় একটু পানি ঢেলে দেই। তার ধারণা হয়েছে, আমার মাথা খারাপ হয়ে গেছে। কাল রাতে বৌমার সামনে হৈচৈ করলাম – তাের মামীকে মাগী–ছাগী ডাকলাম – সেই থেকে ভেবে বসে আছে, আমার মাথা খারাপ। পানি ঢাললে যদি মাথা ঠিক হত তা হলে কি দেশে এত পাগল থাকত? পানি ঢেলে সব পাগল ঠিক করে ফেলা যেত। আমার মাথা ঠিকই আছে। গত রাতে হৈচৈ আমি ইচ্ছা করে করেছি এবং আমি ঠিকই করেছি। হৈচৈ না করলে বৌ নিয়ে তুই স্থায়ী হয়ে যেতি। আর হৈচৈ যে করব সেটা তাে আগেই বলে দিয়েছি। বলিনি আগে?
জাহেদ চুপ করে রইল। রান্নাঘর থেকে মামীর কান্নার শব্দ আসছে। বড় মেয়েটা মাঝে মাঝে বারান্দায় এসে বাবাকে উকি দিয়ে দেখে চট করে সরে যাচ্ছে। মনে হচ্ছে সে খুব ভয় পেয়েছে। মামার মাথা সত্যি সত্যি খারাপ হয়ে গেছে কি–না। জাহেদ বুঝতে পারছে না। কথা বেশি বলছেন। ক্রমাগতই কথা বলছেন। ক্রমাগত কথা বলা কি পাগলের লক্ষণ? হতে পারে।
মেঘের ছায়া খন্ড-১৯
মিজান সাহেব দাড়ি শেভ করে টিফিন বক্সে খাবার নিয়ে অফিসে রওনা হয়ে গেলেন। স্বাভাবিক মানুষ। মােড়ের দোকান থেকে একটা সিগারেট কিনলেন, পান কিনলেন। একটার দিকে অফিসের দুজন সহকর্মী তাঁকে বাসায় নিয়ে এলেন। তাঁরা বিব্রত ভঙ্গিতে বললেন, উনার শরীরটা বােধহয় আজ ভাল না। কয়েকদিন বিশ্রাম করা দরকার। জাহেদ বলল, কি হয়েছে?
তাঁরা বললেন, তেমন কিছু না। একটু মাথা গরমের মত হয়েছে ; কয়েকটা জরুরী ফাইল ছিড়ে ফেলেছেন। আমরা ডাক্তারের কাছে নিয়ে গিয়েছিলাম। ঘুমের অষুধ দিয়েছে। অষুধ খাইয়ে দিয়েছি। ভাল ঘুম হলে সব ঠিক হয়ে যাবে। বিছানায় শুইয়ে রাখুন। ঘুমিয়ে পড়বেন। বেবীটেক্সীতেও ঘুমুচ্ছিলেন।
মিজান সাহেব তখন থেকেই ঘুমুচ্ছেন। মনােয়ারা কাঁদতে কাঁদতে চোখ ফুলিয়ে ফেলেছেন। মেয়েরা এখনাে কিছু জানে না। তারা স্কুলে। জাহেদ বারান্দায় কাঠের চেয়ারে চুপচাপ বসে আছে। কেয়ার খোজে একবার যাওয়া উচিত, তাও যায় নি। শুভ্রকে আসতে দেখে সে উঠে দাঁড়াল। শুভ্র বলল, তাের কি হয়েছে? এমন লাগছে কেন?
জাহেদ বলল, মনটা খুব খারাপ। মামার শরীর ভাল না। “কি হয়েছে?”
বুঝতে পারছি না কি হয়েছে।
Read More