হুমায়ূন আহমেদের লেখা মেঘের ছায়া খন্ড-১৯

আচ্ছা। 

জাহেদ জড়সড় হয়ে বসে আছেকেয়া হাত বাড়িয়ে জাহেদের হাত ধরলকোন কথা বলল নাজাহেদ বলল, কেয়া, আমি খুব লজ্জিত। 

কেয়া বলল, তােমার মামা কি অসুস্থ?

মেঘের ছায়া 

জাহেদ বলল, নামামা খুবই সুস্থআজ এরকম কেন করলেন কিছু বুঝতে পারছি না। 

আমার মনে হয় তােমার মামা অসুস্থতাঁকে ভেতরে নিয়ে মাথায় পানি ঢালছিল। 

তুমি সারাক্ষণ বাইরেই বসেছিলে?” 

 একবার ভেবেছিলাম ভেতরে যাবতারপর মনে হল, আমাকে দেখে রেগে যান কিনাতুমি এক কাজ কর আমাকে রেখে বাসায় চলে এসােতােমার, মামার কি অবস্থা দেখহয়ত তাঁকে ডাক্তারের কাছে নিতে হবে। 

জাহেদ দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেললকেয়া বলল, ইচ্ছা করলেও আমি আপার বাসায় তােমাকে রাখতে পারব নাবাসায় ফিরে আপাকে কি বলব তাই বুঝতে পারছি নাকি বলা যায় বল তাে

জাহেদ কিছু বলল নাঅসংখ্য কথা সে জমা করে রেখেছিল আজ রাতে বলার জন্যেকোন কথাই এখন মনে পড়ছে নামনে পড়লেও বলা সম্ভব নাকেয়া বলল, তুমি মন খারাপ করাে নাআমাদের জীবনের শুরুটা খারাপ হয়েছে শেষটা ভাল হবেআমার মন বলছে ভাল হবে

মেঘের ছায়া খন্ড-১৯

ফ্ল্যাটবাড়ির কলাপসিবল গেট লাগিয়ে ফেলেছেঅনেক ডাকাডাকির পর গেট খােলা হলকেয়া বলল, তােমার উপরে আসার দরকার নেইতুমি এই বেবীটেক্সি নিয়েই বাসায় চলে যাওকেয়া অন্ধকার সিড়ি বেয়ে উপরে উঠে যাচ্ছেবিয়ের শাড়িতে তাকে যে কি অপূর্ব লাগছে তা কি সে জানে

বাসায় ফিরে জাহেদ দেখে সবকিছুই স্বাভাবিকমামা ভেতরের বারান্দায় বসে চা খাচ্ছেনমামার দুই মেয়ের ছােটটি ঘুমিয়ে পড়েছে। বড়টি বাবার পাশে বসে আছেমিজান সাহেব বললেন, জাহেদ, চা খাবি

জাহেদ বলল, নাবৌমাকে কোথায় রেখে এসেছিস? তার বােনের বাড়ি

ভাল হয়েছেতুই হাতমুখ ধুয়ে শুয়ে পড়বিয়েবাড়ির ধকল গেলটায়ার্ড হয়েছিস নিশ্চয়ইটায়ার্ড হবারই কথাবরং এক কাজ কর চা খাচা খেয়ে তারপর ঘুমুতে যাচা খেলে শরীরের টায়ার্ড ভাবটা কমবেআমি চা খাওয়া কখন ধরি জানিস? বিয়ের রাতেএর আগে কোনদিন চা খাইনি ... হা হা হা। 

জাহেদ বলল, মামা, তােমার শরীর কি খারাপ? | না, শরীর ঠিক আছেমাঝে মাঝে নিঃশ্বাসের কিছু কষ্ট হয়আজ হচ্ছে নাভাল আছিবেশ ভাল আছিতুই তাহলে শুয়ে পড়। আমি ঘুমুতে যাই। 

রাত দুটার দিকে জাহেদ ক্যাম্পখাটে ঘুমুতে এলসে নিশ্চিত, আজ রাতে তার ঘুম আসবে নাকিন্তু বিছানায় শােয়ামাত্র ঘুমে চোখ জড়িয়ে গেলসে ভাের নয়টা পর্যন্ত ঘুমুলঘুম ভেঙে দেখে মামা বারান্দায় বেশ আয়ােজন করে দাড়ি শেভ করতে বসেছেনবাটিতে গরম পানি, সামনে আয়নাতিনি জাহেদের দিকে তাকিয়ে হাসিমুখে বললেন, তাের ঘুম ভাঙল

মেঘের ছায়া খন্ড-১৯

তুই পুরাে সাতঘণ্টা ঘুমিয়েছিসঘুমুতে গেছিস রাত দুটায়এখন বাজে টাকাঁটায় কাঁটায় সাতঘণ্টামানুষের ঘুম দরকার ঘণ্টাতুই একঘণ্টা এক্সট্রা ঘুমিয়েছিস। 

জাহেদ বলল, তুমি আজ অফিসে যাবে না, মামা? আটটার সময়ই তাে অফিসে চলে যাও। 

মিজান সাহেব শরীর দুলিয়ে হাসলেনযেন জাহেদ খুব হাসির কথা বলছেরাতে তোর ঘুম কেমন হয়েছে?ভাল‘ 

আমার ঘুম ভাল হয়নিবুঝলি যখনি ঘুম আসে তখনি তাের মামী বলে, আস তােমার মাথায় একটু পানি ঢেলে দেইতার ধারণা হয়েছে, আমার মাথা খারাপ হয়ে গেছেকাল রাতে বৌমার সামনে হৈচৈ করলাম তাের মামীকে মাগীছাগী ডাকলাম সেই থেকে ভেবে বসে আছে, আমার মাথা খারাপপানি ঢাললে যদি মাথা ঠিক হত তা হলে কি দেশে এত পাগল থাকত? পানি ঢেলে সব পাগল ঠিক করে ফেলা যেতআমার মাথা ঠিকই আছেগত রাতে হৈচৈ আমি ইচ্ছা করে করেছি এবং আমি ঠিকই করেছিহৈচৈ না করলে বৌ নিয়ে তুই স্থায়ী হয়ে যেতিআর হৈচৈ যে করব সেটা তাে আগেই বলে দিয়েছিবলিনি আগে

জাহেদ চুপ করে রইলরান্নাঘর থেকে মামীর কান্নার শব্দ আসছেবড় মেয়েটা মাঝে মাঝে বারান্দায় এসে বাবাকে উকি দিয়ে দেখে চট করে সরে যাচ্ছেমনে হচ্ছে সে খুব ভয় পেয়েছেমামার মাথা সত্যি সত্যি খারাপ হয়ে গেছে কিনাজাহেদ বুঝতে পারছে নাকথা বেশি বলছেনক্রমাগতই কথা বলছেনক্রমাগত কথা বলা কি পাগলের লক্ষণ? হতে পারে। 

মেঘের ছায়া খন্ড-১৯

মিজান সাহেব দাড়ি শেভ করে টিফিন বক্সে খাবার নিয়ে অফিসে রওনা হয়ে গেলেনস্বাভাবিক মানুষমােড়ের দোকান থেকে একটা সিগারেট কিনলেন, পান কিনলেনএকটার দিকে অফিসের দুজন সহকর্মী তাঁকে বাসায় নিয়ে এলেনতাঁরা বিব্রত ভঙ্গিতে বললেন, উনার শরীরটা বােধহয় আজ ভাল নাকয়েকদিন বিশ্রাম করা দরকারজাহেদ বলল, কি হয়েছে?

তাঁরা বললেন, তেমন কিছু নাএকটু মাথা গরমের মত হয়েছে ; কয়েকটা জরুরী ফাইল ছিড়ে ফেলেছেনআমরা ডাক্তারের কাছে নিয়ে গিয়েছিলামঘুমের অষুধ দিয়েছেঅষুধ খাইয়ে দিয়েছিভাল ঘুম হলে সব ঠিক হয়ে যাবেবিছানায় শুইয়ে রাখুনঘুমিয়ে পড়বেনবেবীটেক্সীতেও ঘুমুচ্ছিলেন। 

মিজান সাহেব তখন থেকেই ঘুমুচ্ছেনমনােয়ারা কাঁদতে কাঁদতে চোখ ফুলিয়ে ফেলেছেনমেয়েরা এখনাে কিছু জানে নাতারা স্কুলেজাহেদ বারান্দায় কাঠের চেয়ারে চুপচাপ বসে আছেকেয়ার খোজে একবার যাওয়া উচিত, তাও যায় নিশুভ্রকে আসতে দেখে সে উঠে দাঁড়ালশুভ্র বলল, তাের কি হয়েছে? এমন লাগছে কেন

জাহেদ বলল, মনটা খুব খারাপমামার শরীর ভাল নাকি হয়েছে?” 

বুঝতে পারছি না কি হয়েছে

 

Read More

হুমায়ূন আহমেদের লেখা মেঘের ছায়া খন্ড-২০

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *