‘রেহানা।
‘শুভ্র–র ঘরে বাতি জ্বলছে কেন? ওকি জেগে আছে?” ‘হঁ্যা, জেগে আছে।
‘এত রাত পর্যন্ত তাে জেগে থাকার কথা না। আমার মনে হয় সে বাতি জ্বালিয়ে ঘুমিয়ে পড়েছে। তুমি একটু দেখে এসাে তো।” | রেহানা উঠে চলে গেলেন। খালিগায়ে বারান্দায় বসে থাকায় তাঁর একটু শীত শীত লাগছে। বুকের চাপ ব্যথা একটু কমেছে বলে মনে হচ্ছে। পানিতে গুলে একটা এ্যাসপিরিনের চার ভাগের এক ভাগ এবং ঘুমের জন্যে দু‘টা পাঁচ মিলিগ্রামের ফ্রিজিয়াম খেয়ে শুয়ে পড়লে হয়।
যে কোন শারীরিক অসুস্থতায় গাঢ় ঘুম সাহায্য করে। শরীর তার নিজস্ব পদ্ধতিতে তার বিকল অংশ ঘুমের মধ্যে ঠিক করে ফেলে, কিংবা ঠিক করে ফেলার চেষ্টা করে। তিনি রেহানার জন্য অপেক্ষা করছেন। রেহানা ফিরছেন না। ইয়াজউদ্দিন সাহেব নিশ্চিত হলেন – শুভ্র জেগে আছে, সে মা‘র সঙ্গে গল্প করছে।
তারা দুজন কি কথা বলছে ইয়াজউদ্দিন সাহেবের শােনার ইচ্ছা। করল। সেই ইচ্ছা স্থায়ী হল না। তাঁর বয়স চুয়ান্ন। এই পৃথিবীতে তিনি যে দীর্ঘ জীবন। কাটিয়েছেন, তা বােধহয় বলা চলে। এই দীর্ঘ জীবনে তিনি অন্যায় এবং অনুচিত ইচ্ছাকে প্রশ্রয় দেন নি। মা এবং ছেলের গল্প আড়াল থেকে শােনার ইচ্ছা অবশ্যই অন্যায় ইচ্ছা। শুভ্র খাটে হেলান দিয়ে বসে আছে।
মেঘের ছায়া খন্ড-২
তার কোলে শাদা রঙের বালিশ। শুভ্রের গায়ের ফুলহাতা শার্টটাও ধবধবে শাদা। শুভ্র কনুই–এ ভর দিয়ে মার দিকে ঝুঁকে আছে। তার মাথাভর্তি এলােমেলো চুল। চোখে চশমা নেই বলে শুভ্র‘র বড় বড় কালাে চোখ দেখা যাচ্ছে। রেহানা মনে মনে নিঃশ্বাস ফেলে বললেন, আমার এই ছেলেটা এত সুন্দর হল কেন? ছেলেদের এত সুন্দর হতে নেই। শারীরিক সৌন্দর্য ছেলেদের মানায় না।
শুভ্র বলল, তাকিয়ে আছ কেন মা?
রেহানা বললেন, মানুষ তাে একে অন্যের দিকে তাকিয়েই থাকবে, বােকা। কখনাে কি দেখেছিস দু’জন চোখ বন্ধ করে মুখােমুখি বসে আছে?
শুভ্র হাসল। রেহানা চোখ ফিরিয়ে নিলেন। শুভ্র যখন হাসে, তিনি চোখ ফিরিয়ে নেন। মা–বাবার নজর খুব বেশি লাগে। তাঁর ধারণা, শুভ্রকে হাসতে দেখলেই তিনি এত মুগ্ধ হবেন যে নজর লেগে যাবে।
‘শুয়ে পড়, শুভ্র।
‘ঘুম আসছে না মা। ঘুমের চেষ্টা করলে ঘুম আরাে আসবে না। কাজেই আমি ঘণ্টাখানিক জেগে থাকব। একটা কঠিন বই পড়ে ক্লান্ত হয়ে ঘুমুতে যাব।
‘এত রাতে বই পড়বি? চোখের উপর চাপ পড়বে তাে।
‘পড়ুক চাপ। যে ভাবে চোখ খারাপ হচ্ছে, আমার মনে হয়, এক সময় অন্ধ হয়ে যাব। অন্ধ হয়ে যাবার আগেই যা পড়ার পড়ে নিতে চাই না।‘
মেঘের ছায়া খন্ড-২
রেহানার বুক ধক করে উঠল। শুভ্রকে কঠিন ধমক দিতে গিয়েও দিলেন না। ধমক দিলে বা কঠিন কিছু বললে শুভ্র বিষন্ন চোখে তাকিয়ে থাকে। দেখতে খুব খারাপ লাগে।
‘মা।
‘তুমি কি আমাকে হালকা করে এক কাপ চা খাওয়াতে পারবে।‘ ‘এত রাতে চা খেলে তাে বাকি রাত আর ঘুমুতে পারবি না।
ঘুমুতে না পারলেই ভাল। বইটা শেষ করে ফেলতে পারব। ‘চায়ের সঙ্গে কিছু খাবি?”
‘হা। এক স্লাইস রুটি গরম করে দিও। রুটির ওপর খুব হালকা করে মাখন দিতে পার। চিনি দিও না। গােল মরিচের গুড়া ছড়িয়ে দিও।
ইয়াজউদ্দিন বারান্দায় বসে আছেন। এ্যাসপিরিন খাননি। তবে দুটা ফ্রিজিয়াম খেয়েছেন। নিজেই শােবার ঘরে ঢুকে ট্যাবলেট বের করেছেন। হাতের কাছে পানি। ছিল না। তেতুলের সরবত দিয়ে ট্যাবলেট গিলতে হয়েছে। ঘুমের অষুধ খাবার
Read More