হুমায়ূন আহমেদের লেখা মেঘের ছায়া খন্ড-২

রেহানা। 

শুভ্রঘরে বাতি জ্বলছে কেন? ওকি জেগে আছে?হঁ্যা, জেগে আছে

মেঘের ছায়া  

এত রাত পর্যন্ত তাে জেগে থাকার কথা নাআমার মনে হয় সে বাতি জ্বালিয়ে ঘুমিয়ে পড়েছেতুমি একটু দেখে এসাে তো| রেহানা উঠে চলে গেলেনখালিগায়ে বারান্দায় বসে থাকায় তাঁর একটু শীত শীত লাগছেবুকের চাপ ব্যথা একটু কমেছে বলে মনে হচ্ছেপানিতে গুলে একটা এ্যাসপিরিনের চার ভাগের এক ভাগ এবং ঘুমের জন্যে দুটা পাঁচ মিলিগ্রামের ফ্রিজিয়াম খেয়ে শুয়ে পড়লে হয়

যে কোন শারীরিক অসুস্থতায় গাঢ় ঘুম সাহায্য করেশরীর তার নিজস্ব পদ্ধতিতে তার বিকল অংশ ঘুমের মধ্যে ঠিক করে ফেলে, কিংবা ঠিক করে ফেলার চেষ্টা করেতিনি রেহানার জন্য অপেক্ষা করছেনরেহানা ফিরছেন নাইয়াজউদ্দিন সাহেব নিশ্চিত হলেন শুভ্র জেগে আছে, সে মাসঙ্গে গল্প করছে

তারা দুজন কি কথা বলছে ইয়াজউদ্দিন সাহেবের শােনার ইচ্ছাকরলসেই ইচ্ছা স্থায়ী হল নাতাঁর বয়স চুয়ান্নএই পৃথিবীতে তিনি যে দীর্ঘ জীবনকাটিয়েছেন, তা বােধহয় বলা চলেএই দীর্ঘ জীবনে তিনি অন্যায় এবং অনুচিত ইচ্ছাকে প্রশ্রয় দেন নিমা এবং ছেলের গল্প আড়াল থেকে শােনার ইচ্ছা অবশ্যই অন্যায় ইচ্ছা। শুভ্র খাটে হেলান দিয়ে বসে আছে

মেঘের ছায়া খন্ড-২

তার কোলে শাদা রঙের বালিশশুভ্রের গায়ের ফুলহাতা শার্টটাও ধবধবে শাদাশুভ্র কনুইভর দিয়ে মার দিকে ঝুঁকে আছেতার মাথাভর্তি এলােমেলো চুলচোখে চশমা নেই বলে শুভ্রবড় বড় কালাে চোখ দেখা যাচ্ছেরেহানা মনে মনে নিঃশ্বাস ফেলে বললেন, আমার এই ছেলেটা এত সুন্দর হল কেন? ছেলেদের এত সুন্দর হতে নেইশারীরিক সৌন্দর্য ছেলেদের মানায় না। 

শুভ্র বলল, তাকিয়ে আছ কেন মা

রেহানা বললেন, মানুষ তাে একে অন্যের দিকে তাকিয়েই থাকবে, বােকাকখনাে কি দেখেছিস দুজন চোখ বন্ধ করে মুখােমুখি বসে আছে

শুভ্র হাসলরেহানা চোখ ফিরিয়ে নিলেনশুভ্র যখন হাসে, তিনি চোখ ফিরিয়ে নেনমাবাবার নজর খুব বেশি লাগেতাঁর ধারণা, শুভ্রকে হাসতে দেখলেই তিনি এত মুগ্ধ হবেন যে নজর লেগে যাবে। 

শুয়ে পড়, শুভ্র। 

ঘুম আসছে না মাঘুমের চেষ্টা করলে ঘুম আরাে আসবে নাকাজেই আমি ঘণ্টাখানিক জেগে থাকব। একটা কঠিন বই পড়ে ক্লান্ত হয়ে ঘুমুতে যাব। 

এত রাতে বই পড়বি? চোখের উপর চাপ পড়বে তাে। 

পড়ুক চাপযে ভাবে চোখ খারাপ হচ্ছে, আমার মনে হয়, এক সময় অন্ধ হয়ে যাবঅন্ধ হয়ে যাবার আগেই যা পড়ার পড়ে নিতে চাই না‘ 

মেঘের ছায়া খন্ড-২

রেহানার বুক ধক করে উঠলশুভ্রকে কঠিন ধমক দিতে গিয়েও দিলেন নাধমক দিলে বা কঠিন কিছু বললে শুভ্র বিষন্ন চোখে তাকিয়ে থাকেদেখতে খুব খারাপ লাগে। 

মা। 

তুমি কি আমাকে হালকা করে এক কাপ চা খাওয়াতে পারবেএত রাতে চা খেলে তাে বাকি রাত আর ঘুমুতে পারবি না। 

ঘুমুতে না পারলেই ভালবইটা শেষ করে ফেলতে পারবচায়ের সঙ্গে কিছু খাবি?” 

হাএক স্লাইস রুটি গরম করে দিওরুটির ওপর খুব হালকা করে মাখন দিতে পারচিনি দিও নাগােল মরিচের গুড়া ছড়িয়ে দিও। 

ইয়াজউদ্দিন বারান্দায় বসে আছেনএ্যাসপিরিন খাননিতবে দুটা ফ্রিজিয়াম খেয়েছেননিজেই শােবার ঘরে ঢুকে ট্যাবলেট বের করেছেনহাতের কাছে পানিছিল নাতেতুলেসরবত দিয়ে ট্যাবলেট গিলতে হয়েছেঘুমের অষুধ খাবার 

 

Read More

হুমায়ূন আহমেদের লেখা মেঘের ছায়া খন্ড-৩

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *