‘বাবা, আমি ওদের দুজনকে খুব সুন্দর একটা উপহার দিতে চাই। ‘অবশ্যই দেবে। তােমার বন্ধুরা নিশ্চয়ই তােমার কাছে দামী গিফট আশা করে। ‘আমি নতুন ধরনের কোন গিফট দেবার কথা ভাবছি। দামী কিছু না। ‘যেমন?
‘জয়দেবপুরে আমাদের যে বাগানবাড়ি আছে আমি ভাবছি ঐ বাড়িতে তাদের আমি কয়েকদিন থাকতে বলব। ওরা খুব পছন্দ করবে, বাবা। এত সুন্দর বাড়ি। এত সুন্দর বাগান। জোছনা রাতে ঝিলে যে নৌকা আছে সেখানে ওরা চড়বে। আমার ভাবতেই ভাল লাগছে। ‘চা খাবে শুভ্র ?
না। ‘তােমার মাথা ধরা কি সেরেছে?”
এখন নেই। ‘একটু বস, আমি আমার নিজের জন্যে চায়ের কথা বলি। এই চা ঠাণ্ডা হয়ে গেছে।
‘বাবা, আমার বন্ধু বিয়ে করে খুব সমস্যার মধ্যে পড়েছে। আমাকে কিছু বলেনি। তবু আমার অনুমান জাহেদ কেয়াকে নিয়ে কোথাও উঠতে পারছে না। জয়দেবপুরের বাড়িতে ওরা যদি থাকতে পারে তাহলে জীবনের শুরুটা ওদের অসম্ভব সুন্দর হবে।”
মেঘের ছায়া খন্ড-২৫
‘আমার কিন্তু তা মনে হয় না, শুভ্র। আমার মনে হয়, ওরা যদি ঐ বাড়িতে ক’দিন থাকে তাহলে ওরা হতাশাগ্রস্ত হবে। ওদের জীবনের শুরু হবে ভুল দিয়ে। হুট করে বিয়ে করে ঐ ছেলে যে সমস্যা তৈরি করেছে – তােমার জয়দেবপুরের বাগানবাড়ি সেই সমস্যার কোন সমাধান নয়। তােমার বন্ধুর সমস্যা তাকেই সমাধান করতে হবে।
শুভ্র কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বলল, যে কোন সুন্দর জিনিস কিন্তু আমরা অন্যের সঙ্গে শেয়ার করি। একটা ভাল গান শুনলে আমরা সেই গান অন্যদের শােনাতে চাই। একটা ভাল বই পড়লে অন্যদের সেই বই পড়তে বলি। আমাদের এত সুন্দর একটা বাড়ি, সেই বাড়ি অন্যদের সঙ্গে শেয়ার করলে কি ক্ষতি বাবা?
সব জিনিস শেয়ার করা যায় না। আমি একটা Crude উদারহরণ দিয়ে ব্যাপারটা তােমাকে বােঝাই – মনে কর তুমি বিয়ে করলে। অসাধারণ একটি মেয়েকে বিয়ে করলে — যে মেয়ে তােমার কাছে মধুর সংগীতের মত। তুমি কিন্তু সেই মধুর সংগীত তােমার বন্ধুদের সঙ্গে শেয়ার করতে পারবে না।
মেঘের ছায়া খন্ড-২৫
বাড়ির বেলাও এই কথাটা সত্যি। বাড়ি হল খুবই ব্যক্তিগত সামগ্রীর একটি – নিজের পােশাকের মত। পােশাক যেমন তােমাকে ঢেকে রাখে, বাড়িও তােমাকে ঢেকে রাখে। তুমি কি আমার কথায় মন খারাপ করেছ?”
‘হ্যা, আমি সারা রাস্তা ভাবতে ভাবতে আসছিলাম ওদের দুজনকে কিছু বলব না। গাড়িতে করে জয়দেবপুরের বাড়িতে নামিয়ে রেখে বলব – আগামী এক সপ্তাহের জন্যে এই বাড়ি তােদের।
‘তুমি কি ওদের তুই করে বল ?” ‘জাহেদকে তুই করে বলি। ‘তােমার মুখে তুই শুনতে ভাল লাগে না, শুভ্র। ‘বাবা, আমি উঠি ?”
‘আচ্ছা যাও। আমার নিজেরও কিছু কাজ আছে। তােমার মাকে বল, আমার ফিরতে রাত হবে। সে যেন কোথায় যেতে চাচ্ছিল – একাই যেতে বলবে।”
মেঘের ছায়া খন্ড-২৫
‘আচ্ছা। . আর এই নিউজ উইকটা নিয়ে যাও। আর্টিফিসিয়েল ইন্টেলিজেন্স–এর উপর অসাধারণ একটা অর্টিকেল আছে। তােমার পড়তে ভাল লাগবে।
শুভ্র হাত বাড়িয়ে নিউজ উইক নিল। ইয়াজউদ্দিন সাহেব বেল বাজিয়ে মনিরুল ইসলামকে আসতে বললেন। মনিরুল ইসলাম ঢুকল। তার চোখে–মুখে ভীত ভাব
স্পষ্ট।
‘বস মনিরুল। | মনিরুল বসল। ইয়াজুদ্দিন ঘড়ি দেখলেন। এখনাে হাতে সময় আছে। তাকে চা দেয়া হয়েছে। চিনি ছাড়া চায়ে চুমুক দিতে দিতে বললেন, এই প্রতিষ্ঠানে তােমার চাকরি কতদিন হয়েছে?
“স্যার, প্রায় ছ‘বছর।
Read more