হুমায়ূন আহমেদের লেখা মেঘের ছায়া খন্ড-৩২

যাবার সময় আমাকে কিছু বলেও যায় নিআমাকে বলে গেছেআমি তােমাকে বললাম। 

মাহিন সাহেব করুণ গলায় বললেন, কয়েক মিনিটের জন্যে তুই কি আমার পাশে বসবি?

মেঘের ছায়া 

নীতু কিছু না বলেই বাবার পাশে বসলমাহিন সাহেব বললেন, তাের মা আমার ছাত্রীই ছিলজানিস তাে

জানিতােমাকে বিয়ে করার পর মাআর পড়াশােনা হয় নি তাও জানিতুমি কি বলবে বল আমি শুনে চলে যাবআমার অফিসের দেরি হয়ে যাবে। 

থাককিছু বলব না 

তুমি যা বলতে চাচ্ছ তা অনুমান করতে পারছিতুমি বলতে চাচ্ছ, এক সময় তােমার ছাত্রী তােমার প্রেমে পাগল হয়েছিল ঘুমের অষুধ পর্যন্ত খেয়েছিল আজ সে রাজশাহী চলে গেল, তুমি কিছু জানলেও নাএটা বলার মত কোন ঘটনা, বাবাতুমি এক সময় উদাহরণ দিয়েছিলে মৃগনাভির গন্ধও এক সময় শেষ হয়ে যায়পড়ে থাকে এক খণ্ড পচা মাংসপিণ্ড। 

মাহিন বললেন, আচ্ছা তুই যানীতু উঠে চলে গেলমাহিন সাহেব আবার ডাকলেন, নীতু! নীতু

 মেঘের ছায়া খন্ড-৩২

নীতু এসে দাঁড়ালমাহিন সাহেব বললেন, একটা সিগারেট ধরিয়ে আমার ঠোটে দিয়ে দিবি? নীতু বলল, নাঘরে সিগারেট নেইথাকলেও দিতাম না। 

তােকে দেখে এখন একটা কবিতা মনে পড়ছে শুনবি? কোলরিজের কবিতাবলব কয়েক লাইন

বল। 

My heart leaps up when I behold 

A rainbow in the sky; So was it when my life began

So is it now I am a man, So be it when I shall grow old

Or let me die! নীতু বলল, এটা কোলরিজের কবিতা না, বাবাওয়ার্ডসওয়ার্থের কবিতাখুব কম করে হলেও দশ হাজার বার তুমি এই কবিতা আমাদের শুনিয়েছতােমার 

স্মৃতিশক্তিও নষ্ট হয়ে গেছে, বাবা। 

মাহিন সাহেব ক্লান্ত গলায় বললেন, ঠিক বলেছিসস্মৃতিশক্তি নষ্ট হয়ে গেছেপরজীবী প্রাণীর স্মৃতিশক্তির অবশ্যি তেমন প্রয়ােজন নেইতুই শুভ্রকে টেলিফোন করিস মনে করে। 

করবআজই করবিঅফিসে গিয়েই করবিআচ্ছ” 

শুভ্রদের বাসার সামনে ছােটখাট একটা ভীড়কালােমত রােগা একজন তরুণী কাঁদছেতরুণীর সঙ্গে দুটি মেয়েএদের বয়স সাতএরা কাঁদছে নাতবে এদের দৃষ্টি ভয়ার্তমেয়ে দুটি মনিরুল ইসলামের কন্যাতরুণী মেয়ে দুটির মাতারা গত তিনদিন যাবৎ মনিরুল ইসলামের কোন খোঁজ পাচ্ছে না

 মেঘের ছায়া খন্ড-৩২

মানুষটা যেন হঠাৎ উধাও হয়ে গেছেসকাল থেকে এরা কান্তা ভিলাসামনে দাঁড়িয়ে আছেকান্তাভিলাগেট খােলা হচ্ছে নাযে কোন তরুণীকে কাঁদতে দেখলেই লােক জমে যায়তরুণী রূপসী হলে তাে কথাই নেইলােক জমে গেছে। অভিজাত এলাকা বলেই ভীড় তত বেশি হয়নিমনিরুল ইসলামের স্ত্রী একটা জিনিসই চায়তা হল বড় সাহেবের সঙ্গে কথা বলবেবড় সাহেবের সঙ্গে দুটা কথা বলে চলে যাবে। 

ইয়াজউদ্দিন খবর পেয়েছেনতিনি ব্যাপারটায় কিছুমাত্র গুরুত্ব দিচ্ছেন না। 

গুরুত্ব দেয়ার মত কোন বিষয় এটা নয়তা ছাড়া বাড়িতে তিনি তাঁর অফিসের কিংবা কারখানার কোন কর্মচারীর সঙ্গে দেখা করেন নাতিনি গােমেজকে দিয়ে খবর পাঠালেন মেয়েটি যেন তার অফিসে ঠিক বারােটার সময় দেখা করে। 

ইয়াজউদ্দিন সাহেব আজ অফিসে দেরি করে যাবেনশুভ্রচোখ দেখাতে হবেচোখের ডাক্তাররা সাধারণত বিকেলে বসেনইয়াজউদ্দিন সাহেবের জন্যে বিশেষ ব্যবস্থা হয়েছেডাক্তার সাহেব শুভ্রকে দেখবেন সকাল বেলাতিনি শুভ্রকে নিয়ে যাবেনরেহানা যাবেন নাকারণ ডাক্তার কি বলবেন বা বলবেন না ভেবে তাঁর খুব টেনশান হয়

 

Read More

হুমায়ূন আহমেদের লেখা মেঘের ছায়া খন্ড-৩৩

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *