‘যাবার সময় আমাকে কিছু বলেও যায় নি। ‘আমাকে বলে গেছে। আমি তােমাকে বললাম।
মাহিন সাহেব করুণ গলায় বললেন, কয়েক মিনিটের জন্যে তুই কি আমার পাশে বসবি?
নীতু কিছু না বলেই বাবার পাশে বসল। মাহিন সাহেব বললেন, তাের মা আমার ছাত্রীই ছিল। জানিস তাে?
‘জানি। তােমাকে বিয়ে করার পর মা’র আর পড়াশােনা হয় নি — তাও জানি। তুমি কি বলবে বল – আমি শুনে চলে যাব। আমার অফিসের দেরি হয়ে যাবে।
‘থাক। কিছু বলব না।
‘তুমি যা বলতে চাচ্ছ তা অনুমান করতে পারছি। তুমি বলতে চাচ্ছ, এক সময় তােমার ছাত্রী তােমার প্রেমে পাগল হয়েছিল – ঘুমের অষুধ পর্যন্ত খেয়েছিল – আজ সে রাজশাহী চলে গেল, তুমি কিছু জানলেও না। এটা বলার মত কোন ঘটনা, বাবা। তুমি এক সময় উদাহরণ দিয়েছিলে – মৃগনাভির গন্ধও এক সময় শেষ হয়ে যায়। পড়ে থাকে এক খণ্ড পচা মাংসপিণ্ড।
মাহিন বললেন, আচ্ছা তুই যা। নীতু উঠে চলে গেল। মাহিন সাহেব আবার ডাকলেন, নীতু! নীতু!
মেঘের ছায়া খন্ড-৩২
নীতু এসে দাঁড়াল। মাহিন সাহেব বললেন, একটা সিগারেট ধরিয়ে আমার ঠোটে দিয়ে দিবি? নীতু বলল, না। ঘরে সিগারেট নেই। থাকলেও দিতাম না।
‘তােকে দেখে এখন একটা কবিতা মনে পড়ছে – শুনবি? কোলরিজের কবিতা। বলব কয়েক লাইন ?
‘বল।
My heart leaps up when I behold
A rainbow in the sky; So was it when my life began,
So is it now I am a man, So be it when I shall grow old,
Or let me die! নীতু বলল, এটা কোলরিজের কবিতা না, বাবা। ওয়ার্ডসওয়ার্থের কবিতা। খুব কম করে হলেও দশ হাজার বার তুমি এই কবিতা আমাদের শুনিয়েছ। তােমার
স্মৃতিশক্তিও নষ্ট হয়ে গেছে, বাবা।
মাহিন সাহেব ক্লান্ত গলায় বললেন, ঠিক বলেছিস। স্মৃতিশক্তি নষ্ট হয়ে গেছে। পরজীবী প্রাণীর স্মৃতিশক্তির অবশ্যি তেমন প্রয়ােজন নেই। তুই শুভ্রকে টেলিফোন করিস মনে করে।
‘করব। ‘আজই করবি। অফিসে গিয়েই করবি। ‘আচ্ছ।”
শুভ্রদের বাসার সামনে ছােটখাট একটা ভীড়। কালােমত রােগা একজন তরুণী কাঁদছে। তরুণীর সঙ্গে দুটি মেয়ে। এদের বয়স ছ‘–সাত। এরা কাঁদছে না। তবে এদের দৃষ্টি ভয়ার্ত। মেয়ে দুটি মনিরুল ইসলামের কন্যা। তরুণী মেয়ে দুটির মা। তারা গত তিনদিন যাবৎ মনিরুল ইসলামের কোন খোঁজ পাচ্ছে না।
মেঘের ছায়া খন্ড-৩২
মানুষটা যেন হঠাৎ উধাও হয়ে গেছে। সকাল থেকে এরা ‘কান্তা ভিলা‘র সামনে দাঁড়িয়ে আছে। ‘কান্তা–ভিলা‘র গেট খােলা হচ্ছে না। যে কোন তরুণীকে কাঁদতে দেখলেই লােক জমে যায়। তরুণী রূপসী হলে তাে কথাই নেই। লােক জমে গেছে। অভিজাত এলাকা বলেই ভীড় তত বেশি হয়নি। মনিরুল ইসলামের স্ত্রী একটা জিনিসই চায়। তা হল – বড় সাহেবের সঙ্গে কথা বলবে। বড় সাহেবের সঙ্গে দুটা কথা বলে চলে যাবে।।
ইয়াজউদ্দিন খবর পেয়েছেন। তিনি ব্যাপারটায় কিছুমাত্র গুরুত্ব দিচ্ছেন না।
গুরুত্ব দেয়ার মত কোন বিষয় এটা নয়। তা ছাড়া বাড়িতে তিনি তাঁর অফিসের কিংবা কারখানার কোন কর্মচারীর সঙ্গে দেখা করেন না। তিনি গােমেজকে দিয়ে খবর পাঠালেন মেয়েটি যেন তার অফিসে ঠিক বারােটার সময় দেখা করে।
ইয়াজউদ্দিন সাহেব আজ অফিসে দেরি করে যাবেন। শুভ্র’র চোখ দেখাতে হবে। চোখের ডাক্তাররা সাধারণত বিকেলে বসেন। ইয়াজউদ্দিন সাহেবের জন্যে বিশেষ ব্যবস্থা হয়েছে। ডাক্তার সাহেব শুভ্রকে দেখবেন সকাল বেলা। তিনি শুভ্রকে নিয়ে যাবেন। রেহানা যাবেন না। কারণ ডাক্তার কি বলবেন বা বলবেন না ভেবে তাঁর খুব টেনশান হয় ।
Read More