হুমায়ূন আহমেদের লেখা মেঘের ছায়া খন্ড-৩৬

জাহেদ মহাবিপদে পড়েছেমিজান সাহেব দেশের বাড়িতে পৌঁছে ঘােষণা দিয়েছেন এখানেই থাকবেন আর শহরে ফিরবেন নাগ্রামে থাকার ব্যবস্থা নেই বললেই হয়। টিনের ঘর দুটির ভগ্নদশা। ভিটের ভেতর মানুষ সমান ঘাস গজিয়েছেবাড়ির দরজা জানালা লােকজনে খুলে নিয়েছেখাটচৌকি কিছুই নেইমেঝেতে বিছানা করে ঘুমুতে হবেমেঝেময় গর্তসাপের না ইদুরের, কে বলবে?

মেঘের ছায়া

জাহেদ বলল, এর মধ্যে কি থাকবে? চল কোন আত্মীয়স্বজনের বাড়ি গিয়ে উঠিখাওয়াদাওয়াতাে করতে হবেখাব কি? এখানেতাে আর হােটেল নেই। 

মিজান সাহেব বললেন, নিজের বাড়ি থাকতে পরের বাড়িতে থাকব, তাের কি ব্রেইন ডিফেক্ট হয়েছে, নিজের ভাঙ্গা বাড়িই হচ্ছে অট্টালিকাএইখানেই থাকব। 

আর খাওয়াদাওয়া

হাড়িকুড়ি কিছু আনইট পেতে আগুন করে রান্না হবেপিকনিক হবে, বুঝলি ? রােজ পিকনিকনিজের বাড়ি থাকতে অন্যের বাড়ি আমি খাব নাশেষে বিষটিষ মিশিয়ে দেবে। 

বিষ মিশাবে কেন?” 

আরে গাধা, চারদিকে শত্রুজমিজমা সব বেদখল হল কি জন্যে? কারা এইসব নিল? তবে এসেছি যখন সব শায়েস্তা করে যাবদরকার হলে মার্ডার করবমামা ভাগ্নে যেখানে বিপদ নেই সেইখানেকিরে, পারবি নাআমাকে সাহায্য করতে

জাহেদ চোখে অন্ধকার দেখছেএকি সমস্যা। 

মেঘের ছায়া খন্ড-৩৬

রাতে থাকার জন্যে চৌকি জোগাড় করা হয়েছেচৌকির উপর তােষক বিছিয়ে বিছানাখাবার ব্যবস্থা জাহেদের দূর সম্পর্কের এক খালার বাসায়মিজান সাহেব কিছুতেই সেখানে খেতে যাবেন নাজাহেদ একা গিয়ে খেয়ে এলবাটিতে করে খাবার নিয়ে এলমিজান সাহেব সেই খাবারও মুখে দিলন নাচোখ কপালে তুলে বললেন, অসম্ভবতুই কি আমাকে মারতে চাস? স্বপাক আহার করবনিজে বেঁধে খাব। 

তৃতীয় দিনের দিন সে প্রায় জোর করেই মামাকে নিয়ে ঢাকায় এসে নামলট্রেন থেকে তিনি নামলেন বদ্ধ উন্মাদ অবস্থায়রিকশায় উঠে রিকশাওয়ালাকে করুণ গলায় বললেন, এরা আমাকে খুন করতে নিয়ে যাচ্ছে, বুঝলেন ভাই সাহেবগ্রামের বাড়িতে সুখে ছিলাম, ভুলিয়ে ভালিয়ে এনেছেগরু জবেহ করার বড় ছুরি আছে ? ঐটা দিয়ে জবেহ করবেঘুমের মধ্যে কাম সারবেআল্লাহ হু আকবর বলে গলায় পােচ। 

তিনি বাসায় ঢুকলেন স্বাভাবিক ভঙ্গিতেমনােয়ারাকে দেখে খানিকক্ষণ চুপ করে থেকে বললেন, কি রে মাগী স্বামীকে খুন করাতে চাস? বেশ, খুন করকিছু বলব নাচিৎকারও দিব নাতবে খিয়াল রাখিস, আল্লাহর কাছে জবাব দিহি করতে হবেখুনের সময় আমাকে কিন্তু উত্তর দক্ষিণে শােয়াবিভালমত গােসল দিবিনাপাক অবস্থায় আল্লাহর কাছে যেতে চাই না

মেঘের ছায়া খন্ড-৩৬

 

মনােয়ারা মাথা ঘুরে মেঝেতে পড়ে গেলেনমিজান সাহেবের মেয়ে দুটি ভয়ে থরথর করে কাপতে লাগলতিনি তাদের দিকে তাকিয়ে হাসিমুখে বললেন খুকীরা, ভয়ের কিছু নেইনির্ভয়ে থাক। 

জাহেদ পাড়ার ডাক্তার সাহেবকে ডেকে আনলতিনি ঘুমের ইনজেকশন দিয়ে ঘুম পাড়িয়ে দিলেনজাহেদকে বললেন, রুগীর অবস্থা ভাল দেখছি নাযে কোন সময় ভায়ােলেন্ট পর্যায়ে চলে যেতে পারেআপনি বরং কোন একটা ক্লিনিকে ভর্তি করিয়ে দেনবাচ্চা কাচ্চার সংসারএকটা দুর্ঘটনা ঘটতে কতক্ষণ? ইনজেকশনের এফেক্ট বিকেল পর্যন্ত থাকবেএরমধ্যে একটা ব্যবস্থা করে ফেলুনবনানীতে একটা ক্লিনিক আছে নাম হল মেন্টাল হােমইলেকট্রিক শক দেবার ব্যবস্থা আছেঠিকানা আছে আমার কাছে চার্জ বেশিকিন্তু টাকাদিকে তাকালেতাে এখন হবে নাদেব ঠিকানা

 

Read More

হুমায়ূন আহমেদের লেখা মেঘের ছায়া শেষ খন্ড

 

 

 

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *