কিটকির হাত ধরে হল থেকে বেরিয়ে এলাম। আলােয় এসেই লজ্জা পেয়ে গেল সে।
তুই একটা পাগল। বলেছে আপনাকে! আর একটা বাচ্চা খুকি। আর আপনি একটা বুড়াে।
‘তুই ভারি ভালাে মেয়ে কিটকি। তাের কান্না দেখে আমার এত ভালাে লেগেছে।
‘ভালাে হবে না বলছি। ‘আইসক্রীম খাবি কিটকি ?
–না। ‘না–না, খেতেই হবে। আয়, তুই সিনেমা দেখালি––আমি আইসক্রীম খাওয়াই।
দেখলেন তাে কুল্লে সিকিখানা সিনেমা। ‘আচ্ছা, তুই সিকিখানাই খাসা’
কিটকি সুন্দর করে হাসল। সবুজ রুমালে নাক ঘষতে ঘষতে বলল, ছবিটা বড় ভালাে, তাই না?
‘হ্যাঁ। ‘ইস্, সবটা যদি দেখতাম!”
শঙ্খনীল কারাগার খন্ড-১১
গরমে মন্দ লাগল না আইসক্রীম। বড়াে কথা, পরিবেশটি ভালাে। সুন্দর করে সাজান টেবিলে সাদা টেবিলক্লথ। বয়গুলি কেতাদুরস্ত। অসময় বলেই ভিড় নেই। কিটকি তৃপ্তির নিঃশ্বাস ফেলল, চলুন উঠি।‘
‘বস আরেকটু, আইসক্রীম আরাে একটা নে।” ‘ছেলেমানুষ পেয়েছেন আমাকে, না?‘ সবুজ রুমাল বের করে নাক ঘষল কিটকি।
‘আমার ভীষণ নাক ঘামে, খুব বাজে। ‘না, খুব ভালাে, যাদের নাক ঘামে তারা–– ‘জানি জানি, বলতে হবে না। যত সব মিথ্যে কথা। আপনি বিশ্বেস করেন?
‘আমিও না। আচ্ছা, যে–সব মেয়েদের গালে টোল পড়ে, তাদের হাসব্যাণ্ড নাকি খুব কম বয়সে মারা যায়?
‘কই, তাের তাে টোল পড়ে না? নাকি পড়ে? হাসি দে একটা।
আহা, আমার জন্যে বলছি না। আপনি ভারি বাজে। ‘বাসায় যাবি কিটকি ? চল যাই। ‘না, আজ থাক। আরেক দিন যাব।
শুক্রবারে আয়। ‘শুক্রবারে কলেজ খােলা যে, আচ্ছা, সন্ধ্যাবেলা আসব।‘
রাতে থাকবি তাে?
কিটকি রিকশায় উঠে হাত নাড়ল।
রাে েতেজ কমে আসছে। চারটে বেজে গেছে প্রায়। প্রচুর ঘেমেছি। বাসায় গিয়েই
কটা ঘ গােসল সারব। অবেলায় ভাত আর খাব না। চা–টা খেয়ে দীর্ঘ ঘুম দেব। রয়া ক’দিন ধরেই সিনেমা দেখার জন্যে ঘ্যানর ঘ্যানর করছে। তাকে নিয়ে এক দিন দেখলে হয় ইয়েলাে স্কাই‘।
শঙ্খনীল কারাগার খন্ড-১১
বাসায় এসে দেখি, গেটে তালা ঝুলছে। তালার সঙ্গে আটকান ছােট্ট চিরকুট, ‘খােকা, সবাই মিলে ছােটখালার বাসায় বেড়াতে গিয়েছি। সন্ধ্যার আগে ফিরব না। তুইও এসে পড়া–––রাবেয়া।।
ক্লান্তি লাগছিল খুব, কোথাও গিয়ে চা–টা খেলে হত।
এই চিঠিটি সম্ভবত তােমাকেই লেখা?
তাকিয়ে দেখি, বেশ লম্বা নিখুঁত সাহেবি পােশাকে এক ভদ্রলােক আমার পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন। কপালের দু‘ পাশের চুলে পাক ধরলেও এখনাে বেশ শক্ত সমর্থ চেহারা।
‘তুমি বলেছি বলে কিছু মনে কর নি তাে, ছেলের বয়সী তুমি।‘ ‘না–না, কিছু মনে করি নি আমি। আপনাকে ঠিক চিনতে পারছি না।
‘চিনবে কী করে, আমি তাে পরিচিত কেউ নই। রাবেয়া বলে এই বাড়িতে একটি মেয়ে আছে না?
‘জ্বি, আমার বােন।
ছােটবেলায়, সে যখন স্কুলে পড়ত, তখন তার সঙ্গে আমার পরিচয় হয়।
তাকে দেখলেই আমি গাড়িতে করে লিফট দিতাম।
‘তাই নাকি?
“হাঁ, বড়াে ভালাে মেয়ে। অনেক দিন দেশের বাইরে ছিলাম। কিছুদিন হল এসেছি, ভাবলাম মেয়েটিকে দেখে যাই।
Read More