হুমায়ূন আহমেদের লেখা শঙ্খনীল কারাগার খন্ড-১৩

তাে

তখন চারদিকে খুব ছেলেধরার কথা শােনা যেতছেলেধরারা নাকি ছেলে মেয়ে ধরে নিয়ে হােটেলে বিক্রি করে দেয়সেখানে মানুষের মাংস রান্না হয়বে অবির মাংস খেতে গিয়ে একটি বাচ্চা মেয়ের কড়ে আঙুল পেয়েছেএই জাতীয় গল্প রাহেলার কথা শুনে ভয় পেলেও হেসে উড়িয়ে দিয়ে বলেছি, ছেলেধরা এমন হয়

শঙ্খনীল কারাগার 

বুঝি? ভদ্রলােক গাড়ির দরজা খুলে আমাদের ডাকলেনউঠে বসলাম দু জনেইমিষ্টির দোকান দেখে তাে আমি হতভম্বমেঝেতে কার্পেট, দেয়ালে দেয়ালে ছােট ছােট লম্বা মাদুরে অদ্ভুত সব ছবি, টেবিলগুলির চারপাশে ধবধবে প্লাস্টিকের চেয়ার, প্রতিটি টেবিলে সবুজ কাঁচের ফুলদানিতে টাটকা ফুল

ঘরের মাঝখানায় কাঁচের জারে রংবেরংয়ের মাছরাহেলা পাংশু মুখে বলল, আমার বড় ভাই করছে ভাই| বল খুকিরা, কী খাবে? কোনাে লজ্জা নেই, যত ইচ্ছে, আর যা খুশিআমি নিজে মিষ্টি খাই নাতােমরা খাও” 

শঙ্খনীল কারাগার খন্ড-১৩

ভদ্রলােক হড়বড়িয়ে কথা বলতে বলতে সিগারেট ধরালেনরাহেলার দিকে তাকিয়ে বললেন, তােমার কী নাম খুকি

রাহেলাপাংশু মুখে বলল রাহেলাখাও খাও, লজ্জা করাে নারাহেলা কাঁদোকাঁদো হয়ে বলল, আমার ভয় করছে, আমি বাসায় যাব‘ 

অল্প দিনেই ভয় ভেঙে গেল আমাদেরভদ্রলােকের সঙ্গে রােজ দেখা হতে লাগলতিনি যেন গাড়ি নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতেন আমাদের জন্যেইদেখা হলেই বলতেন, গাড়িতে করে বেড়াতে ইচ্ছে হয় খুকি? ড্রাইভার, মেয়ে দুটিকে নিয়ে একটু বেড়িয়ে আস| শুধু রাহেলাই নয়, মাঝে মাঝে অন্য মেয়েরাও থাকততারা বলত, রাবেয়া, কেউ যদি দেখে ফেলে, তবে

এর মধ্যে আমি অসুখে পড়লামএক মাসের মতাে স্কুল কামাইহাড় জিরজিরে রােগা হয়ে গেছিপায়ের উপর দাঁড়াতে পারি না এমন অবস্থা, মাথার সব চুল পড়ে গেছে, আঙুল ফুলে গেছেঅফিস থেকে ফিরেই বাবা আমাকে কোলে নিয়ে বেড়াতেনএক দিন এমন বেড়াচ্ছেন, হঠাৎ দেখি লােকটি গটগট করে এসে ঢুকছে গেট দিয়ে, মুখে সিগারেট, ঘন ঘন ধোঁয়া ছাড়ছেবাবা অবাক হয়ে বললেন, কী চান আপনি

মেয়েটির অসুখ করেছে? হ্যাঁ। 

শঙ্খনীল কারাগার খন্ড-১৩

কী অসুখ? লিভার ট্রাবল। 

আপনি যদি বলেন তবে আমি এক জন বড়াে ডাক্তার পাঠাতে পারি, আমার এক জন বন্ধু আছেন‘ 

বাবা একটু রেগে বললেন, মেয়েকে বড়াে ডাক্তার দেখাব না টাকার অভাবে, এই ভেবেছেন আপনি

ভদ্রলােক বললেন, কাকে দেখিয়েছেন, আপনি যদি দয়া করেশরাফত আলিকেভদ্রলােক খুশি হয়ে গেলেনআমি শরাফতের কথাই বলছিলামবাবা বললেন, আপনি চলে যানকেন এসেছেন এখানে?না, মানেআর আসবেন না। 

ভদ্রলােক খুব দ্রুত চলে গেলেনকথাবার্তা শুনে মা বেরিয়ে বললেন, কী হয়েছে ? কার সঙ্গে কথা বলছিলে?‘ 

তবিদ হােসেন এসেছিল। 

যদিও আমি তখন খুব ছােট, তবু বাবামা দুজনের ভাবভঙ্গি দেখেই আচ করেছিলাম এই লােকটি তাদের চেনা এবং দুজনের কেউই চান না সে আসুক। 

তারপর আর দেখি নি তাঁকেএই এত দিন পরে আবার এসেছেন চকোলেট নিয়ে। 

লােকটি কে রে রাবেয়া

শঙ্খনীল কারাগার খন্ড-১৩

রাবেয়া জবাব দেবার আগেই বাবা ঢুকলেন, ভাত দিয়ে যাও মাসকাল সকাল খেয়ে শুয়ে পড়ি। 

আগে চকোলেট খাও বাবাএই নাও‘ 

কে এনেছে চকোলেট, খােকা তুই নাকি? না বাবা, আবিদ হােসেন এনেছেন। 

বাবা একটু অবাক হয়ে বললেন, দেশে ফিরেছে জানি না তােএক জার্মানমেয়েকে বিয়ে করেছিল শুনেছিলামসেখানেই নাকি থাকবে

আমি বললাম, আবিদ হােসেন কে বাবা

আমার এক জন বন্ধুমানুষরেলওয়ে ইঞ্জিনীয়ার, খুব ভালাে সেতার বাজাতে জানে। 

সকাল সকাল খাওয়া সারা হলএকটিমাত্র হ্যারিকেনে চারদিক ভৌতিক লাগছেআমাদের বড়াে বড়াে ছায়া পড়েছে দেয়ালেবাইরে প্রচণ্ড বৃষ্টিঝড় উঠেছে হয়তাে,

 

Read More

হুমায়ূন আহমেদের লেখা শঙ্খনীল কারাগার খন্ড-১৪

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *