তাে?
তখন চারদিকে খুব ছেলেধরার কথা শােনা যেত। ছেলেধরারা নাকি ছেলে মেয়ে ধরে নিয়ে হােটেলে বিক্রি করে দেয়। সেখানে মানুষের মাংস রান্না হয়। বে অবির মাংস খেতে গিয়ে একটি বাচ্চা মেয়ের কড়ে আঙুল পেয়েছে। এই জাতীয় গল্প । রাহেলার কথা শুনে ভয় পেলেও হেসে উড়িয়ে দিয়ে বলেছি, ছেলেধরা এমন হয়
বুঝি? ভদ্রলােক গাড়ির দরজা খুলে আমাদের ডাকলেন। উঠে বসলাম দু জনেই।মিষ্টির দোকান দেখে তাে আমি হতভম্ব। মেঝেতে কার্পেট, দেয়ালে দেয়ালে ছােট ছােট লম্বা মাদুরে অদ্ভুত সব ছবি, টেবিলগুলির চারপাশে ধবধবে প্লাস্টিকের চেয়ার, প্রতিটি টেবিলে সবুজ কাঁচের ফুলদানিতে টাটকা ফুল।
ঘরের মাঝখানায় কাঁচের জারে রং–বেরংয়ের মাছ। রাহেলা পাংশু মুখে বলল, আমার বড় ভাই করছে ভাই।‘ | ‘বল খুকিরা, কী খাবে? কোনাে লজ্জা নেই, যত ইচ্ছে, আর যা খুশি। আমি নিজে মিষ্টি খাই না। তােমরা খাও।”
শঙ্খনীল কারাগার খন্ড-১৩
ভদ্রলােক হড়বড়িয়ে কথা বলতে বলতে সিগারেট ধরালেন। রাহেলার দিকে তাকিয়ে বললেন, ‘তােমার কী নাম খুকি ?
‘রাহেলা। পাংশু মুখে বলল রাহেলা। ‘খাও খাও, লজ্জা করাে না। রাহেলা কাঁদো–কাঁদো হয়ে বলল, ‘আমার ভয় করছে, আমি বাসায় যাব।‘
অল্প দিনেই ভয় ভেঙে গেল আমাদের। ভদ্রলােকের সঙ্গে রােজ দেখা হতে লাগল। তিনি যেন গাড়ি নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতেন আমাদের জন্যেই। দেখা হলেই বলতেন, গাড়িতে করে বেড়াতে ইচ্ছে হয় খুকি? ড্রাইভার, মেয়ে দু’টিকে নিয়ে একটু বেড়িয়ে আস।‘ | শুধু রাহেলাই নয়, মাঝে মাঝে অন্য মেয়েরাও থাকত। তারা বলত, ‘রাবেয়া, কেউ যদি দেখে ফেলে, তবে?
এর মধ্যে আমি অসুখে পড়লাম। এক মাসের মতাে স্কুল কামাই। হাড় জিরজিরে রােগা হয়ে গেছি। পায়ের উপর দাঁড়াতে পারি না এমন অবস্থা, মাথার সব চুল পড়ে গেছে, আঙুল ফুলে গেছে। অফিস থেকে ফিরেই বাবা আমাকে কোলে নিয়ে বেড়াতেন। এক দিন এমন বেড়াচ্ছেন, হঠাৎ দেখি ঐ লােকটি গটগট করে এসে ঢুকছে গেট দিয়ে, মুখে সিগারেট, ঘন ঘন ধোঁয়া ছাড়ছে। বাবা অবাক হয়ে বললেন, ‘কী চান আপনি?
মেয়েটির অসুখ করেছে? ‘হ্যাঁ।
শঙ্খনীল কারাগার খন্ড-১৩
কী অসুখ? লিভার ট্রাবল।
‘আপনি যদি বলেন তবে আমি এক জন বড়াে ডাক্তার পাঠাতে পারি, আমার এক জন বন্ধু আছেন।‘
বাবা একটু রেগে বললেন, ‘মেয়েকে বড়াে ডাক্তার দেখাব না টাকার অভাবে, এই ভেবেছেন আপনি?
ভদ্রলােক বললেন, ‘কাকে দেখিয়েছেন, আপনি যদি দয়া করে–– ‘শরাফত আলিকে। ভদ্রলােক খুশি হয়ে গেলেন। আমি শরাফতের কথাই বলছিলাম। বাবা বললেন, আপনি চলে যান। কেন এসেছেন এখানে?‘ ‘না, মানে–– ‘আর আসবেন না।
ভদ্রলােক খুব দ্রুত চলে গেলেন। কথাবার্তা শুনে মা বেরিয়ে বললেন, কী হয়েছে ? কার সঙ্গে কথা বলছিলে?‘
‘তবিদ হােসেন এসেছিল।
যদিও আমি তখন খুব ছােট, তবু বাবা–মা দু‘ জনের ভাবভঙ্গি দেখেই আচ করেছিলাম এই লােকটি তাদের চেনা এবং দু‘ জনের কেউই চান না সে আসুক।
তারপর আর দেখি নি তাঁকে। এই এত দিন পরে আবার এসেছেন চকোলেট নিয়ে।
‘লােকটি কে রে রাবেয়া ?
শঙ্খনীল কারাগার খন্ড-১৩
রাবেয়া জবাব দেবার আগেই বাবা ঢুকলেন, ভাত দিয়ে যাও মা। সকাল সকাল খেয়ে শুয়ে পড়ি।
‘আগে চকোলেট খাও বাবা। এই নাও।‘
কে এনেছে চকোলেট, খােকা তুই নাকি? “না বাবা, আবিদ হােসেন এনেছেন।
বাবা একটু অবাক হয়ে বললেন, ‘দেশে ফিরেছে জানি না তাে। এক জার্মান। মেয়েকে বিয়ে করেছিল শুনেছিলাম। সেখানেই নাকি থাকবে!
আমি বললাম, আবিদ হােসেন কে বাবা?
‘আমার এক জন বন্ধুমানুষ। রেলওয়ে ইঞ্জিনীয়ার, খুব ভালাে সেতার বাজাতে জানে।
সকাল সকাল খাওয়া সারা হল। একটিমাত্র হ্যারিকেনে চারদিক ভৌতিক লাগছে। আমাদের বড়াে বড়াে ছায়া পড়েছে দেয়ালে। বাইরে প্রচণ্ড বৃষ্টি। ঝড় উঠেছে হয়তাে,
Read More